আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জন্মদিনটি হাসপাতালে বাবার পাশে উৎযাপন করলাম

১৬ এপ্রিল ১৯৮৬ সালের এক মেঘাচ্ছন্ন দুপুরে এই ধরায় আগমন আজকে ১৬ এপ্রিল'১২ তে ২৬ বছর পেরিয়ে ২৭ বছরে পা দেয়া এই যুবকের । জন্মদিনটা প্রত্যেক মানুষের জীবনেই আসে...... এই দিনটিকে সকলেই বিভিন্ন ভাবে কাটিয়ে দেয়। আমি পালন করলাম তবে একটু ভিন্ন ভাবে........ যেদিনে এই পৃথিবীতে আগমন সেদিনটাকে স্মরণ রাখতে কার না ভালো লাগে........... বিভিন্নজন বিভিন্ন ভাবে কাটায় এই দিনকে । কেহ কেক কেটে , কেহ আর অনুষ্ঠান করে, পার্টি দিয়ে, আবার অনেকেই এই দিনটিকে বেমালুম ভুলেই যায়................ ফেবু আর অন্যান্য অনলাইন মাধ্যমের কারণে এই দিনটিকে নিজে সহ অন্যান্যরাও স্মরনে রাখতে পারে। ফেবুই স্মরন করিয়ে দেয় জন্মদিনের কথা।

সুন্দর এই দিনটিকে আজ কাটিয়ে দিচ্ছি হাসপাতালে বসে। না ........... আমি অসুস্থ না । অসুস্থ আমার বাবা। ষ্টোক করেছিলেন এক সপ্তাহ পূর্বে............ ষ্টোকের ফলাফল হলো বাম হা পা অবস হয়ে গিয়েছে। যখন ষ্টোক করেছেন তখন ছিলাম আমি রাস্তায়।

বাড়ীর ফোন পেয়ে রওয়ানা হয়ে যখন হাসপাতালে পৌছলাম তখন রাত ৯ টা বাজে। অসুস্থ বাবার সাথে সিসিইউতে সে রাতটা কাটালাম। সকাল হতেই ডাক্তারের পরামর্শে ঢাকা নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিলাম। ঢাকা পৌছলাম তখন রাত ১২.৪৫ বেজে গেল। ...................... এরপর থেকে আজ পর্যন্ত ডাক্তার , ওষুধ , থেরাপি নিয়েই চলে গেল বেশ কয়েকটি দিন........ ২৬ বছরে আমি আমার বাবাকে চিনেছি , তার কাছ থেকে শিখেছি জীবন গড়া, পড়ালেখা, মানুষের মতো মানুষ হতে, ...... বাবাকে আরো ভালোভাবে চিনেছি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর.......... তিনি শিক্ষকতা করে যে অসংখ্য ছাত্র তৈরী করেছেন তারাই আজ অনেক বড় বড় মানুষ হয়েছেন।

যখন তারা এসে তার বিছানারা পাশে দাড়িয়ে কেঁদেছেন, যখন তাদের উৎকন্ঠিত কন্ঠস্বর শুনেছি , যখন অসংখ্য ছাত্র আর স্নেহের মানুষগুলো হাসপাতালের বেডের পাশে এসে তার খোঁজ নিয়েছেন ...... তখন অনুভব করেছি তিনি কত বড় মানুষ, কত মহৎ আর কত মানুষ তিনি তৈরী করেছেন......... ছোটবেলায় বাবার চওড়া বুকটায় মাথা রেখে শান্তিু খুঁজতাম, মোটা হাতে মাথা রেখে ঘুমিয়ে যেতাম, বাবার হাত ধরে মসজিদে যেতাম, স্কুলে যেতাম, হাটিহাটি পা করে কমদ ফেলা শিখতাম যে বাবার কাছে ............. সে বাবাই আজ আমার হাত ধরে শক্তি পেতে চান, স্বস্তি পেতে চান, মজবুত করে আমার হাত ধরে আবার হাঁটার চেষ্টা করেন, বসার চেষ্টা করেন বা খাবার গ্রহন , পানি পান করার চেষ্টা করেন। ১৯৯৯ সালে বাবা আমাকে যেভাবে ঢাকা নিয়ে এসেছিলেন সময়ের পরিক্রমায় আমিই বাবাকে ঢাকা নিয়ে আসলাম । বাবা আমাকে শক্তি যোগাতেন , সাহস দিতেন, অনেক কিছু শিখাতেন আজ আমি বাবাকে শক্তি যোগাই , সাহস দেই................ আমি কি আমার বাবার মতো হতে পেরেছি ................ ???????? না বাবা যত উদার, মহৎ, মহান , জ্ঞানী আমি তার তুলনায় কোন পারসেণ্টেই পরি না। আজ বাবা আমার শয্যাশায়ী অনেকটাই উন্নতি হলেও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেননি....... আমার জন্মদাতা পিতা পাশেই কাটালাম আমার এ বছরের জন্মদিনটি। খুব ভালো ভাবে না কাটলেও জন্মদিনটি বাবার পাশে কাটাতে পেরে ভালো লাগলো আর বাবার সেবা যন্ত্র করে কাটিয়ে নিজের জন্মদিনটি উৎযাপন করার আনন্দ পেয়েছি ।

আজকের জন্মদিনটি উৎযাপন করলাম সন্ধ্যার পরে বাবা আর আমার দুই ভাই মিলে হাসপাতালের ক্যান্টিনের বুটমুড়ি এবং নুডুলস খেয়ে। এ যেন ভিন্ন স্বাদ। ভিন্ন এক আনন্দ............ ভিন্ন এক আবেগ। কাল রাত থেকেই ফেবুর অনেক বন্ধুরা আবার অনেক ব্লগার বন্ধুগন পাশাপাশি কিছু কাছের মানুষ ফোনে বা মেজেসে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তাদের সকলের জন্য অফুরন্ত ভালবাসা রইল। সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি আর জন্মদিনে জন্মদাতা বাবার জন্য দোয়া করার জন্য অনুরোধ করছি।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.