আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাঝে মাঝে যদি তব দেখা পাই - ৫ম ও শেষ পর্ব

[৫] “কিন্তু কবির বিধি যদি হয় বাম, কিছুতে পূর্ণ হয় না মনস্কাম । মানুষ তো নয় চির-সংযমে সাধা, তাই তো চোখের অশ্রু মানে না বাঁধা । ” “রিফাত , তোর কবিতার পেঁচপেঁচানি থামাবি ?” গলায় যতটুকু জোর আছে, তা দিয়ে চিৎকার করে বলার চেষ্টা করলাম । কিন্তু আমার গলা দিয়ে আশানুরূপ আওয়াজ বের হল না । ভেঙ্গে গেছে কণ্ঠস্বর ।

“এটা আমার লেখা না । নির্মলেন্দু গুণ স্যারের লেখা । ” ভাবলেশহীন ভাবে বলল রিফাত । তা দেখে আমার মেজাজ আরও চড়ে গেল । “যারই হোক ।

আমার কানের কাছে পেক পেক না করে দূরে কোথাও কর । ” ভাঙ্গা গলাতেই চিৎকার করার আরেকটা ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালালাম আমি । ইদানীং মন মেজাজ খুব খারাপ থাকে আমার । যখন-তখন সবার সাথে মেজাজ দেখাচ্ছি । রিফাত মাথা নিচু করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ।

স্যরি বলা দরকার, কিন্তু বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না । আজকাল আমার কোন কিছুতেই ইচ্ছে হয় না । লাবণীর সাথে সেদিন কথা বলার পর আজ ষষ্ঠ দিন । এর মাঝে একবারের জন্যও লাবণী ফোন করে নি । আমিও সেদিনের কথা আর জানতে চাই নি ।

শুধু নিজে অনেকটা বদলে গেছি । জানিনা, কেন এরকম হচ্ছে । লাবণীর কথা কেন এতো মনে পড়বে আমার ? ওর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। তো যাক না । ওর কথা ভেবে কষ্ট পাওয়াতেও একরকম অপরাধ বোধ কাজ করছে আমার ভেতর ।

আমি নিজেকে বারবার জিজ্ঞেস করেই যাচ্ছি, কেন আমার এরকম হচ্ছে ? কেন আমি কষ্ট পাব ? গত কয়েকদিন ধরে বেশ বৃষ্টি হচ্ছে । প্রতিদিনই বৃষ্টি-বিলাস পালন করছি । বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে যখন আকাশের দিকে তাকাই, তখন চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করে । বারবার লাবণীকে দেখতে ইচ্ছে করে । টানা বৃষ্টিতে ভেজার কারণেই হোক বা যে কারণেই হোক আমার গলা বসে যায় ।

দু’দিন জ্বরও ছিল । ভাবতেও অবাক লাগে, লাবণী আমাকে একটাবারের জন্যও ফোন করল না কেন, তা ভেবে । বিয়ে করার আগেই এতোটা পর হয়ে গেল ? হল থেকে বেরিয়ে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করি, ফজল মামুর দোকানে গিয়ে চা খাই, গিটারে টুং টাং করি । কিন্তু কোনোটাই মন মত হয় না । মাথা ফ্রেশ করার জন্য এক সময় লেখাপড়া শুরু করে দিলাম, কিন্তু বই এর ভেতর থাকা লাবণীর লেখা নোট গুলো দেখে আবারও সব মনে পড়ে যায় ।

কিচ্ছু ভাল্লাগে না আমার । এখন বিকাল । চারুকলার সামনে এসেছি, অনেকদিন পর । লাবণীর সাথে প্রথম দেখা তো এখানেই, যদি আজও আসে একবার – সে আশায় । দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে একসময় ক্লান্ত হয়ে পড়ি ।

কিন্তু, লাবণীর দেখা পাই না । একসময় আমিও ফিরে যেতে থাকি । ফেলে আসতে চাই সেই সব স্মৃতিগুলো, যা আজ আমাকে বদলে দিয়েছে । হলে ফিরে বিছানায় শুয়ে পরলাম । ঘুম পাচ্ছে খুব ।

চিরতরে ঘুমিয়ে যেতে পারলে খারাপ হত না । একসময় ঘুমিয়ে গেলাম । ঘুম ভাঙল মোবাইলের রিং টোনের শব্দে । ঘুম ঘুম চোখে মোবাইলের স্ক্রিনে নামটা দেখে ঘুম পালালো আমার । লাবণী ! কাঁপাকাঁপা হাতে কল টা রিসিভ করে কানে দিতেই লাবণীর চিৎকার, “ঐ পাঞ্জাবী ।

তোর নাকি জ্বর ?” ছয় দিন পর শুধুমাত্র কারও কণ্ঠ শুনে যে আমার মত অনুভূতিহীন কোন ছেলের চোখে পানি আসতে পারে,সেটা প্রথম টের পেলাম আমি । “কিরে,কথা বলছিস না কেন ?” আমি ‘হ্যাঁ,হু’ কিছু একটা বলার চেষ্টা করলাম,গলা বসে যাওয়ায় গলা থেকে তেমন আওয়াজ বের হল না । লাবণী একমনে বলতে লাগল। “সিরিয়াস কথা আছে তোর সাথে । ভাবছি, বিয়েটা না করলে কেমন হয় ? তোর মতামত জানতে চাইছি ।

” কথাটা শোনার পর আমার গলা দিয়ে শুধু ঘ্যা-ঘ্যা শব্দ হতে লাগল । তারমানে কি পুরাটাই লাবণীর ফাজলামি ? “অবাক হচ্ছিস, তাই না ? আসলে বাবা আমার বিয়ে দিতে চাইছে খুব । জানতে চেয়েছিল, আমার পছন্দের কেউ আছে কি না । আমি সাত দিন সময় চেয়েছিলাম । আজ তার শেষ দিন ।

আমি ছেলে ঠিক করে ফেলেছি । বলতো কে ?” আমি একেবারে চুপ মেরে গেলাম । তাহলে কি আমি আবারও লাবণীকে হারাতে যাচ্ছি ? “হয় নাই বুদ্ধু । ছেলেটা তুই । ” এইবার আমার মাথা ঘুরতে লাগল ।

মাধ্যাকর্ষণ শক্তি যেন বিশ্বাসঘাতকতা করতে লাগল, আমার সাথে । আমি হাজার চেষ্টা করেও কিছু বলতে পারলাম না । এটাই কি আনন্দে বাকরোধ অবস্থা ? ঠিক এরকম সময়ে অর্ক ওর কম্পিউটারে একটা গান ছাড়ল । লাবণী বলল, “কোন কথা না বলে, গান শুরু করে দিলি ? আচ্ছা, গাইতে থাক । গান শেষে চারুকলার সামনের রোডে আসবি ।

আমরা রাস্তায় আলপনা আঁকছি । ” আমি যে গান গাওয়ার মত অবস্থায় নাই, সেটা বুঝানোর চেষ্টাও করলাম না । উলটো বিছানা থেকে উঠে মোবাইলটা কম্পিউটারের স্পিকারের কাছে নিয়ে, কানের পাশে রেখে দাঁড়ালাম । অর্ক আমার দিকে তাকিয়ে ইশারা করল, ঘটনা কি । আমিও হাত নেড়ে বুঝিয়ে দিলাম, পরে বলব ।

গান শুরু হল । “ভালো যদি না-ই বা বাসিস, মিছে কেন কাছে আসিস, ভালবাসার পেঁচ খেলাতে, মিছে কেন আমায় বাঁধিস । ” লাবণী ফোনে বলতে লাগল, “এখন থেকে কথা দিচ্ছি ইরফু, তোকে আর কখনও উল্টোপাল্টা কিছু বলব না । মিছিমিছি নয়, সত্যিই তোকে ভালবেসেছি । ” “নিজের চলন করে বাঁকা, অভিনয়ে তুলসী পাতা, হর-হামেশা করিস বসে আমার পকেট ফাঁকা ।

” লাবণী বলল, “মাঝে মাঝে তোর পকেট ফাঁকা করিই । তাই বলে এভাবে বলবি ? আমি অভিনয়ে তুলসী পাতা সাজি ?”......ঘটনা কোনদিকে যাচ্ছে, বুঝতে পারছিলাম না । গানটা চেনা চেনা লাগছে, মনে করতে পারছি না । “ভালোবাসার কচকচানি ভাল্লাগে না আর, তোরে নিয়া স্বপ্ন দেখার পড়ছে ঠেকা কার । ” “ও... তা...ই না ? আমি ভালবাসা নিয়ে কচকচাই ? আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখার তোর ঠেকা নাই ? ঠিক আছে ।

তুই তোর সব স্বপ্ন রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে যেসব মেয়েদের দেখিস, তাদের নিয়েই দেখ । রাখলাম । চিরতরের জন্য । ” এতক্ষণে মনে পড়লো আমার । গানটা রি-কল ব্যান্ডের ।

শুধু অকুস্টিক গিটারে বাজানো হয় বলে, গানটা আমার কাছে একটু বেশীই ভালো লাগে । ... কিন্তু, ততক্ষণে এই গানটাই আমার যা সর্বনাশ করার করে ফেলেছে । আমি কল দিলাম । দুবার রিং হওয়ার পর লাবণী কেটে দিল । লাবণী মনে করছে, গানটা আমারই গাওয়া ।

যে মেয়ে অর্থহীনের সুমনের নাম শোনেনি, সে মেয়ে রি-কল এর নাম শুনবে, এমনটা আশা করা যায় না । আমি বসে বসে দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে কামড়ে ভাবতে লাগলাম । আমি পুরোপুরি নিশ্চিত হলাম, আমি লাবণীকে সত্যিই অনেক ভালবাসি । ওকে আমার পক্ষে হারানোও সম্ভব না । কালকে পহেলা বৈশাখ ।

আমাদের প্রায় সবাই সেই উৎসবের কাজেই ব্যস্ত থাকবে । লাবণীও তো সেখানেই আছে । ভেবে-চিন্তে চারুকলাতেই যাবো, সিদ্ধান্ত নিলাম । ... অর্ককে কিছু জিজ্ঞেস করার সুযোগ না দিয়ে প্রায় দৌড়ে হল থেকে বের হলাম । মনে মনে বিসমিল্লাহ বলে ঝেড়ে দৌড় দিলাম একটা ।

লাবণীকে আমার পেতে হবেই । ওকে হারানো যাবে না । কোনোদিন না । রাত ১২ টা ১১ মিনিট । আমি চারুকলার সামনে দাঁড়িয়ে ।

লাবণীকে পাচ্ছি না । তবে আমাদের ব্যাচের রাফি, রিয়া, তাফসীর ওদের পেলাম । ওদেরকে কি বলব, তা ও ভেবে পেলাম না । হঠাৎ করেই রিফাতকে দেখে খুশি হয়ে উঠলাম । চার-পাঁচবার স্যরি বলার পর লাবণীর সাথে আমার সব কথা ওকে জানালাম ।

সব শুনে রিফাত খুব একটা অবাক হল বলে মনে হল না । ঠাণ্ডা মাথায়ই বলল যে, লাবণী ছয়-সাত মিনিট আগে রিকশা নিয়ে চলে গেছে । আমি আবারও পড়ে গেলাম চিন্তায় । ততক্ষণে আমাদের সাথে আরও অনেকে এসে যোগ দিল । প্রায় সবাইই জেনে গেল, আমাদের কথা।

আমিও আর লুকোনোর চেষ্টা করলাম না । কিন্তু লাবণীকেই তো ম্যানেজ করা হয় নি । আমরা দলবল বেঁধে লাবণীর হোস্টেলের সামনে এসে দাঁড়ালাম । কি করা যায়, সেটা নিয়ে সবাই ভাবছি । সব সময় আমি সবাইকে পরামর্শ দেই, আর আজ কি না আমি নিজেই অসহায় ! আমাদের মাঝ থেকে রাফি বলে উঠলো, কারো কাছে ফসফরাস আছে কি না ।

রাফি কি এই সময়ে ফসফরাস দিয়ে কি করবে, বুঝতে পারলাম না । খুঁজে-টুজে রাজিয়ার কাছে পাওয়া গেল । রাফি আমার কাছে এসে বলল, “নে, এইটা দিয়ে কাজ কর । এটা অন্ধকারে জ্বলবে । ” ফসফরাস যে কোন বিক্রিয়া ছাড়াও জ্বলতে পারে, সেটা আমি আজই প্রথম জানলাম ।

কিন্তু, শুধু এটা দিয়ে কি করব, তা ও বুঝতে পারছিলাম না । ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে কিছু বের করা যায় কি না দেখলাম। বাকি সবার সাথে কথা বলে ঠিক করলাম । রিফাত একটা বড় পুরনো কাপড়ের টুকরো খুঁজে আনলো । আমার পরিকল্পনা অনুযায়ী, জায়গাটা অন্ধকার করতে হবে।

কিন্তু রাস্তার পাশের বাতিগুলোর জন্য সেটা সম্ভব হচ্ছে না । লোডশেডিং নামক যন্ত্রণাটার খুব অভাব বোধ করতে লাগলাম । এই সময় রিয়া আসলো আমাকে সাহায্য করতে । কাছাকাছি একটা ল্যাম্পপোস্টের এক্সট্রা বাল্বের উপর কয়েন রেখে তার উপর বাল্ব বসিয়ে মেইন লাইটটা ফিউজ করে দিল । ছোটবেলায় জাফর ইকবাল স্যারের লেখা একটা বই এ এরকম একটা ঘটনা পড়েছিলাম ।

আজ তার চাক্ষুষ প্রমাণ পেলাম ! আমি আমার কাজে লেগে গেলাম । কাপড়ের টুকরোটার উপর যতটা সম্ভব বড় করে লিকুইড ফসফরাসটা ঢেলে লিখতে লাগলাম, “ভালবাসি তোকে” । লেখা শেষে লাবণীকে কল দেওয়ার পর আবারও কেটে দিল । আমি বাধ্য হয়েই রাহাতকে দিয়ে ফোন করিয়ে মোবাইল লাউডস্পিকারে দিতে বললাম । লাবণীকে রাহাত যখন জানালা খুলে রাস্তায় তাকাতে বলল, তখন প্রচণ্ড ধমক দিয়ে উলটো বলল, ইরফু, মানে আমি কেন এ কথাটা বলছি না ।

রাহাত বলল, “তুই তো ফাগার কোন কল ই রিসিভ করছিস না”। তখন লাবণী আরও তেতে গিয়ে বলল, “গাধাটা কি একটা মেসেজ দিতে পারে না ? জিজ্ঞেস কর তো, কোনোকালে একটা মেসেজ দিয়েছে কি না আমাকে ?” বলেই ফোন রেখে দিল । সবাই আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসতে লাগল । আমিও একটা দেঁতো হাসি দেখিয়ে, একটু আড়ালে গিয়ে মেসেজ এ লিখলাম, “তোর পাঞ্জাবী-ওয়ালাও তোকে ভালবাসে পাগলী । বিশ্বাস কর, কোনোদিন কষ্ট দিব না তোকে ।

জানালার পর্দা সরিয়ে একবার নিচে তাকা । ফিরিয়ে দিবি না তো আমাকে ?” আমার বুক ধকধক করছে । জীবনের প্রথম ভালোবাসাময় বার্তা লিখন ! লাবণীর রুম দোতলায় । সেখান থেকে আমার লেখাটা স্পষ্টভাবে দেখবারই কথা । অন্ধকার থাকার ফলে, লাবণী জানালার পর্দা সরিয়ে নিচে তাকিয়ে ছিল কি না, তা আমরা বুঝতে পারলাম না ।

তবে কিছুক্ষণ পর হোস্টেলের গেটের নিচে, আলো জ্বলতে দেখা গেল । গেট খুলে কয়েকজন বেরিয়ে আসল । প্রথমে স্পষ্ট বুঝতে না পারলেও একটু পর আলোতে যা দেখলাম, তা আমার সারা জীবনের সবচেয়ে বিস্ময়কর দৃশ্য গুলোর মধ্যে একটা ! লাবণী, সম্পূর্ণ সাদা একটা শাড়ি পরেছে । চোখে কাজল দিয়েছিল । হয়তো কাঁদছিল, তাই চোখে সেই কাজল লেপ্টে আছে ।

চশমার কাঁচের ফাঁক দিয়ে দেখা সেই চোখ দু’টোর মাঝে কিছু একটা ছিল, যা আমাকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল । সব মিলিয়ে লাবণীকে অপার্থিব মনে হচ্ছে । বিশুদ্ধতার এক মূর্ত প্রতিমা যেন । লাবণীকে এর আগে কখনও আমি শাড়ি পরতে দেখিনি । শুধু একটা শাড়ি, একটা মেয়ের সৌন্দর্যে এতোটা পরিবর্তন করতে পারে ! আমি আমার হাত-পা নাড়ানোরও শক্তি পাচ্ছিলাম না ।

স্থবির হয়ে হা করে তাকিয়ে দেখছিলাম, এমন একটা মেয়েকে, যাকে দেখলেই নিজের মাঝে পবিত্র পবিত্র ভাব অনুভূত হয় । লাবণী আমার সামনে এসে দাঁড়ালো । কড়া গলায় জিজ্ঞেস করল, “লিখেছিস ‘ভালোবাসি তোকে’। আমাদের এখানে প্রায় বিশটা মেয়ে থাকে। তাদের প্রায় সবাইকেই তুই চিনিস।

এর মধ্যে কাকে ভালবাসিস ?” আমি ঘোর থেকে বেরিয়ে ফ্যাসফ্যাসে গলায় বললাম, “তোকে । ” “সত্যি ?” ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল । আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লাম । “কসম ?” “কসম । ” “কিসের কসম ?” আমি হড়বড় করে বলতে লাগলাম, “আকাশের কসম ।

মাটির কসম...” এরপর অভ্যাসবশত বলে ফেললাম, “তোর পাশের রুমের সুন্দরী মেয়েটার কসম । ” ঠাশ শব্দে আমার গালে চড় বসিয়ে দিল লাবণী । গালে হাত রেখে লাবণীর দিকে তাকাতেই দেখি, ও কাঁদছে । আমাকে চড় মেরে নিজেই কাঁদছে ! নিউটন কাগুর গতি’র তৃতীয় সূত্র সার্থক ! লাবণী তারপর আমাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল । আর আমাদের সাথের বাকি সবাই হৈ-হৈ করে উঠল ।

চিৎকার করে বলতে লাগল, “পার্টি চাই, পার্টি চাই । ” প্রায় আনন্দ মিছিল টাইপ শুরু করে দিল । ভাগ্য ভাল যে, পহেলা বৈশাখের আগের রাত দেখে এই চিৎকার-চ্যাঁচামেচি কে পাত্তা দিচ্ছেন না স্যাররা । আমি লাবণীর কান্না-ভেজা চোখের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম, কত্তবড়ো বোকা আমি ! জলজ্যান্ত প্রতিমা পাশে রেখে শাঁকচুন্নি খুঁজে বেড়িয়েছি এতদিন । লাবণী আমাকে ছেড়ে চোখ মুছে, হাসিমুখে সবার আনন্দ উল্লাস দেখতে লাগল ।

আমি কোনোভাবেই লাবণীর থেকে চোখ সরাতে পারছিলাম না । হাত নেড়ে নেড়ে কথা বলেই যাচ্ছে ও । একটা সময় খেয়াল হল যে, লাবণী বলছে, “এই সেমিস্টারটা শেষেই বিয়ে করে ফেলব আমরা । আংকেল-আন্টিকে আজকেই জানাবি...” আমি প্রায় আঁতকে উঠে বললাম, “এতো তাড়াতাড়ি! আর কয়েকটা দিন যাক... তারপর...” আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই লাবণী খেঁকিয়ে উঠল, “আর কয়েকটা দিন তুমি মনের শখ মিটায়া লুইচ্চামী করবা, না ? সেই সুযোগই দিবো না আর...” আমাদের কাছাকাছি যারা ছিল লাবনীর কথা শুনে হেসে উঠল । এমনকি আমিও ।

... আনন্দ-মিছিল থামিয়ে রিফাত গলার স্বর উঁচু করে বলতে লাগল, “বন্ধুগণ, আজ আমাদের ফাগা ওরফে ইরফান এবং মিস কটকটি ওরফে লাবণীর ভালোবাসাময় শুভক্ষণ উপলক্ষে আমি দু’লাইনের একটা কবিতা লিখেছি । অনুমতি পেলে আবৃত্তি করতাম...” সমস্বরে চিৎকার শোনা গেল, “অনুমতি দেওয়া হইল !!!” রিফাত তখন গলা খাঁকারি দিয়ে বলতে লাগল, “খুঁজিয়া ফিরি তোমায়, ফিরিয়া খুঁজি, মাঝে মাঝে যদি তব দেখা পাই । ” আশ্চর্য ! আজ আমার কাছে রিফাতের পেক পেক মার্কা কবিতাও ভালো লাগছে । আমাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ বলে উঠল, “মারহাবা, মারহাবা । ” আবার কেউ কেউ বলতে লাগল, “এইটা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা ।

রিফাত, তুই হালা চোর...” সবার এতো চিৎকার-চ্যাঁচামেচি উপেক্ষা করে আমি একমনে তাকিয়ে আছি লাবণীর দিকে । উফফফ... মেয়েটা এত সুন্দর কেন ?! ~ সমাপ্ত ~ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.