আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্পঃ ট্রাই বেকার কিক!

দুষিছে সবাই, আমি তবু গাই শুধু প্রভাতের ভৈরবী! স্টেডিয়াম জুড়ে পিনপতন নীরবতা যেন! অথচ প্রায় বিশ হাজার লোক দেখতে এসেছে স্বাধীনতা কাপের ফাইনাল। জয়ী দল পাবে ৭৫ লক্ষ টাকা। তার উপর বড় কথা অনেক দিন পর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দল ফাইনালে। আর সেই খেলা গড়ালো ট্রাই বেকারে। ঢাকা আবাহনীর হয়ে শট নিতে আসছে তরুণ স্টার ফয়সাল।

ফয়সাল পেনাল্টি শট নিতে পারলে খেলা সামনে এগোবে। নতুবা আবাহনীর ১০ বছর পর কোন কাপ জিতার স্বপ্নটার সমাপ্তি ঘটবে। ফয়সালের মধ্যে কোন চাপ অবশ্য কাজ করছে না। পুরা টুর্নামেন্টে তার জন্যই দল আজ ফাইনালে। কোচের আদেশ ছিল শেষ শট টা নিবে ফয়সাল।

ধীর পায়ে এগোচ্ছে সে। মনে দুটা চিন্তা আপাতত, বাংলাদেশের কোচ আজ স্টেডিয়ামে। এইবার জাতীয় দলে ঢুকে যেতে বাধ্য সে। কিন্তু তার চেয়ে ও বড় কথা সেই গুজব টা। ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের ক্লাব অ্যাস্টন ভিলার কেউ একজন আছেন আজ স্টেডিয়ামে।

বাংলাদেশ থেকে তারা একটা খেলোয়াড় নিবেই। তাই পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই ছিল টপ প্লেয়ারদের মাঝে উত্তেজনা । বল টা হাতে নিয়ে ঠিক জায়গায় রাখলো ফয়সাল। গভীর একটা শ্বাস নিলো। তাকালো স্টেডিয়ামে বসা মানুষের দিকে।

দর্শকের মুখ দেখা পুরোনো দিনের অভ্যাস। এখান থেকে বুঝা যাচ্ছে যেন তাদের মুখ গুলো, সবার মাঝে উত্তেজনা। কেউ চাই ও গোল দিতে পারুক, কেউ চাই না । মুচকি এক হাসি ফুটে উঠল ফয়সালের মুখে। কিন্তু হাসি ফুটে উঠার সাথে সাথে চমকে গেল সে।

এ কি করে সম্ভব! দর্শকদের একজন অবিকল মনসুর, সে এখানে কি করে? ক্ষণিকের মধ্যে মন টা চলে গেল তিনবছর আগে। পাড়ার মাঠে। ঈদ পরবর্তী ফুটবল ম্যাচ। ফয়সাল কে নিয়ে টানাটানি দু দলের ভিতর। যাই হোক সেদিন খেলতে এসেছিলো মনসুর নিজেই।

পেশায় ইঞ্জিনিয়ার, সেই সাথে পাড়ার নতুন জামাই। হাতে গোনা কয়েকজন জানতো মনসুরের স্ত্রী মিলি ছিল ফয়সালের এক তরফা ভালোবাসা। তাই মনসুর কে কিছুটা ঈর্ষা করতে ফয়সাল। রেফারীর বাঁশির শব্দ কানে গেল। শট নিতে হবে ফয়সাল কে।

গত তিন বছরে যে কথা মনে আসেনি আজ কেন আসছে? তাছাড়া মনসুর এইখানে কি করে থাকে? মনসুরের মারা যাওয়াটা যে ছিল সম্পূর্ণ দুর্ঘটনা। সেদিন সেদিন সে চাইনি... ঈদ পরবর্তী সে খেলায় পুরা মাঠ জুড়েই যেন খেলছিলো ফয়সাল। গোলের দেখা অবশ্য পায়নি। হঠাৎ করে বাম উইং দিয়ে দৌড়ানো শুরু করল । দূর থেকে ওকে আটকাতে আসলো মনসুর।

মনসুর কাছে আসতেই ফয়সালের পা দিয়ে যেন বুলেট শট বের হল। ডিরেক্ট যেয়ে লাগল মনসুরের বুকে। মনসুর ঐ খানেই অজ্ঞান হয়ে যায়। তিনদিন পরেই পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে যেতে হয় মনসুর কে। কেউ অবশ্য দোষারোপ করেনি ফয়সাল কে।

বরং কিছুদিন পর মিলিদের পরিবার এলাকা ছেড়ে চলে যায়। শট নেওয়ার জন্য দৌড়ানো শুরু করল ফয়সাল। কিন্তু চোখ গ্যালারীর দিকে। সবাই চুপ, কিন্তু এ কি? মনসুরের মুখে মিটি মিটি হাসি। যেন ব্যঙ্গ করতে আজ সে আসছে ধরণীতে।

অন্যমনস্ক ভাবে নেওয়া শট, আর গোল মিস!!! চিৎকার করে উঠল গোটা স্টেডিয়াম, বিপক্ষ দলের উল্লাস শুরু। আবাহনীর প্লেয়াররা মাটিতে বসে গেল । কিন্তু সেদিকে খেয়াল নেই ফয়সালের। ধরতে ধরতে হবে মনসুর কে। দৌড় দিলে ড্রেসিং রুমের দিকে।

কোন খেয়াল নেই ফয়সালের। যেন ভুলেই গেল তার ক্লাবের আজ কি ক্ষতিটা হল। ওয়াহেদ সাহেবের এ যেন বিরল অভিজ্ঞতা, দ্রুত পায়ে ভিড়ের মধ্যে মিশে যেয়ে স্টেডিয়াম ছাড়লো । গাড়িতে উঠেই হোটেলের দিকে ছুটাতে বলল ড্রাইভার কে। কাচ দিয়ে স্পষ্ট দেখতে পেল ফয়সালের মুখ টা কে, উদ্ভ্রান্তের মত খুঁজছে তাকে ।

কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে জনতা তার দিকে এগিয়ে আসছে দেখে পুনরায় স্টেডিয়ামে ঢুকতে বাধ্য হল সে। ওয়াহেদ সাহেব এখন বুঝতে পারলেন ফয়সাল ছেলেটার কি ক্ষতি তিনি করলেন। কৌতূহল বসতই কাজ টা করতে গেছিলেন তিনি। গাড়িতে বসে ভাবতে থাকলেন, যে মিশন নিয়ে আসছিলেন তার জন্য বিভিন্ন ক্লাবে তাঁকে ঘুর ঘুর করতে হয়েছে। ১০ বছর পর তার দেশে আসা।

ঠিক সময় আকবর চৌধুরী সাহেবের সাথে দেখা, কফির টেবিলে বসে অদ্ভুত সেই প্রস্তাব। “ ওয়াহেদ সাহেব, আপনাকে কিছুই করতে হবে না। আপনি গোল পোষ্টের পিছনের নিচের গ্যালারীতে বসে থাকবেন। চুপচাপ বসে থেকেন। টিকিট ম্যানেজ করে দিচ্ছি।

ফয়সালের স্বভাব আছে গ্যালারী তে তাকানোর । ৯০ মিনিটের মধ্যে কোন এক সময় আপনাকে দেখবেই। তখনই বুঝবেন!” না ৯০ মিনিট না, একেবারে ট্রাইবেকারে শুটের সময় ফয়সাল দেখলো তাকে। ঘন্টা খানেক পর তার রুমে আসলও আকবর চৌধুরী। ওয়াহেদ কে দেখেই জোরে হেসে উঠে বলে উঠল, “ আপনি তো সেই কাজ করেছেন, খালি ফয়সাল না আবাহনী কে কাপ ছাড়া করলেন, শত্রু ক্লাব কে হারতে দেখে ভালই লাগছে আমার”।

“ কিন্তু কেন আপনি এ কাজ করলেন?” “ শুনবেন কেন করলাম, মনসুরের চেহারার সাথে যে আপনার বড্ড মিল ওয়াহেদ সাহেব, আমার প্রিয় ভাতিজা মনসুরের সাথে”। আকবর চৌধুরী বলা শুরু করেন মনসুরের মারা যাওয়ার ঘটনা। তার মন বলে, কিছুটা হলেও ফয়সালের দায় ছিল মনসুরের মারা যাওয়ার পিছনে। বড্ড ভালোবাসতেন মনসুর কে তিনি। তাই চেয়েছিলেন সামান্য প্রতিশোধ।

ওয়াহেদ সাহেবের চেহারা মনসুরের সাথে মিল হওয়ায় এই খেলা রচনা করেন তিনি। সব শুনে ওয়াহেদ সাহেব বলে উঠল,” কিন্তু এ যে লঘু পাপে গুরু দণ্ড হয়ে গেল আকবর সাহেব, আমাকে যে প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে”। “ হয়ত দণ্ড টা বেশি হয়ে গেছে, কিন্তু প্রায়শ্চিত্ত করবেন কি করে? আপনি কি ফয়সালের বা আবাহনীর কানে এ কথা পৌছাতে চান”। “সেই কাজ কেন করব আকবর সাহেব, আপনার কি মনে হয় আমি কেন ক্লাব গুলোতে ঘুরাঘুরি করেছি, আবার এসে থাকছি শেরাটনে”? কিছুটা চমকালো আকবর সাহেব, একবারেও তার মনে হয়নি কে এই ওয়াহেদ। তাই বলে উঠল, “তাইতো আপনি কে”? “আমি অ্যাস্টন ভিলার পক্ষ থেকে আসছি একজন প্লেয়ার নিতে, সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি কাকে নিতে হবে”।

কয়েকদিন ধরে ঘরের মধ্যে বসে আছে ফয়সাল। চারিদিকে তার সমালোচনা। আজকে এক জাতীয় দৈনিক তো তাকে ধুয়ে দিয়েছে বলা চলে, সে নাকি টাকা খেয়েছে। তবে এইগুলোর চেয়ে বড় বিস্ময় টিকে সে হাতে ধরে বসে আছে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের ক্লাব অ্যাস্টন ভিলার চিঠি! তারা চায় ফয়সাল তাদের সাথে যোগ দিক।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।