আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্পঃ ছবি

শারদশশীর অনন্ত অপেক্ষায় তোর চোখের সবুজ রঙ আকাশনীল হয়ে গেলে ঠিক ধরে নিস আমি হারিয়ে গেছি ঘাসেদের দলে...
নিউমার্কেটের “অ্যান্টিক শপ” নামের দোকানটায় চোখ আটকে গেল আরশাদের। দোকানটা নতুন, আগে দেখেনি এদিকে। বাইরে থেকে দেখে তো কালেকশন ভালই মনে হচ্ছে, ভেতরে গিয়ে দেখতে হবে। আরশাদ উঠতি ব্যবসায়ী। টুকটাক অ্যান্টিক আর শো-পিস সংগ্রহের বাতিক আছে, এটা অবশ্য উত্তরাধিকার সুত্রে প্রাপ্ত।

আরশাদের দাদা বিখ্যাত অ্যান্টিক কালেক্টর ছিলেন তার আমলে। ওদের বাড়িটা ছিল একটা খুদে জাদুঘরের মত। আরশাদ আরো সম্বৃদ্ধ করেছে সেই সংগ্রহ। দোকানটায় ঢুকে মন খুশি গেল আরশাদের। চমৎকার কালেকশন এদের, ও যতটা আন্দাজ করেছিল তার চেয়েও অনেক বেশী।

অনেক্ষণ ঘুরে একটা তলোয়ার, একটা পুরোনো আমলের দাবার বোর্ড ও ঘুটি, প্রাচীন একটা স্যন্ডক্লক আর একটা ছবি পছন্দ হল আরশাদের। ছবিটা আগের দিনের সাজ-পোশাকে সজ্জিত এক কিশোরী মেয়ের, কোন এক রাজকুমারী হবে হয়ত- ভাবল আরশাদ। ছবিটার মিধ্যে কি যেন আছে- কাছে টানে। জিনিসগুলো নিয়ে কাউন্টারে পৌছল সে। কাউন্টারে এক টাক মাথা বৃদ্ধ বসে আছে।

আরশাদ তার কাছে দাম মিটিয়ে জিনিস গুলো বাসায় নিয়ে এল। বাড়ি ফিরে জিনিসগুলো জায়গা মত সাজিয়ে রাখে আরশাদ। ছবিটা টানায় নিজের বেডরুমের দেয়ালে। সন্ধ্যা লাগি লাগি করছে, আরশাদ চায়ে চুমুক দিতে দিতে টিভি দেখছিল। আরশাদ উঠতি ব্যবসায়ী।

বাবা-মা মারা যাবার পর বাসায় একাই থাকে সে। বিয়ে করেনি, তাই স্ত্রী-সন্তান নেই। একটা বুয়া আছে, দুপুরে আসে, মোটামুটি সব কাজই করে দিয়ে যায়। আর সংগ্রহশালার তদারকি করে আরশাদ নিজেই। রাতের খাবারটা সে তাড়াতাড়িই খায়, ন’টার দিকে, তারপর ব্যক্তিগত লাইব্রেরীতে বসে ঘন্টা দুয়েক।

এরপর ঘুমিয়ে পড়ে। এভাবেই দিন কাটছে তার। আজও ব্যতিক্রম হল না। লাইব্রেরী থেকে যখন বেরোল আরশাদ, তখন এগারোটা বাজে। আনুসঙ্গিক কাজকর্ম শেষে ঘুমিয়ে পড়ল সে।

মধ্যরাত। হঠাৎ করেই ঘুম ভেঙ্গে গেল আরশাদের। কেমন ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে। ঘরটা অতিরিক্ত শীতল হয়ে উঠেছে। কিন্তু কেন, কোন কারণ খুজে পায়না সে।

আজ পূর্ণিমা। চাদের উপচে পড়া আলো জানালা দিয়ে ঘরের দেয়ালে পড়ছে, যেখানে ছবিটা লাগান আছে। ছবিটার দিকে তাকাল আরশাদ। একি! ছবিটা এত জীবন্ত কেন? চোখ কচলে ধীরে ধীরে উঠে দাড়াল সে, তারপর আবার তাকাল। কিন্তু না, ছবিটা আসলেই জীবন্ত হয়ে উঠেছে।

কী এক আকর্ষণে ছবিটার দিকে আস্তে আস্তে এগুতে লাগল আরশাদ। মেয়েটি যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে তাকে। ছবিটার একদম কাছে চলে এল আরশাদ। এবারে শুনতে পেল, মেয়েটা বলছে “আমাকে বাচাও আরশাদ! আমাকে বাচাও! আমি এই ছবিতে আটকে গিয়েছি। আমাকে বের কর!” “কে তুমি?” আরশাদ জিজ্ঞেস করে।

“সে অনেক কথা... আগে তুমি আমাকে এখান থেকে মুক্তি দাও! আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে!” আরশাদ জিজ্ঞেস করে “কিন্তু কিভাবে?” মেয়েটা ফিসফিস করে বলে “এই ছবিটা স্পর্শ কর, তাহলেই আমি মুক্তি পাব” আরশাদ সাত-পাচ না ভেবেই ছবিটা স্পর্শ করে। সাথে সাথে একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। ফ্রেমের কাচের ভেতর দিয়ে কে যেন টেনে নেয় আরশাদ কে। অনেক আলোর মাঝে গভীর থেকে গভীরে পড়তে পড়তে একসময় জ্ঞান হারায় সে। অনেক পরে ঘুম ভাঙ্গে আরশাদের।

সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে। কিন্তু এ কোথায় সে? ধীরে ধীরে জায়গাটা চিনতে পারে আরশাদ। এতো সেই ছবিতে যে জায়গাটা ছিল, সেই জায়গা। এখানে কিভাবে এল সে? ভাবতে ভাবতে সামনে কিছুদুর এগোনোর পর একটা জানালা মত দেখতে পেল আরশাদ। আস্তে আস্তে ওর সব মনে পড়তে থাকে, ছবিটা ছোয়ার পর থেকেই যত অদ্ভুত কান্ড ঘটছে।

জানালাটার কাছে এসে বাইরে তাকিয়ে আরশাদ দেখল, এ তো ওরই শোবার ঘর! বিছানায় কে যেন ঘুমিয়ে আছে। এবার বুঝতে পারল আরশাদ, ও আসলে ওই ছবিটার মধ্যে বন্দি! তাহলে বিছানায় কে ঘুমিয়ে? আরশাদের প্রশ্নের উত্তর দেবার জন্যই যেন উঠে এল “সে”। আরশাদ ভয়ানক বিস্মিত হয়ে দেখল, ওর সামনে ঠিক ওর নিজেরই এক প্রতিচ্ছবি এসে দাড়িয়েছে! কারো বিরক্তির উদ্রেক করে থাকলে দুঃখিত। সবসময় হরর গল্প পড়ার মুড নাও থাকতে পারে।
 



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।