আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বস্ত্রহীন হওয়া টু সিনেমা হলে যাওয়া, আহ! আমার ছাত্রবেলা!

খোঁচাইলে উষ্টা দিমু .. আমার বয়স ৫ বছর পর্যন্ত বড়ই বিপদজনক একটা অভ্যাস ছিল। যখনি গরম লাগত তখনি গরম গরম বলে চিৎকার করতে করতে গায়ের জামা - কাপড় খুলে একদম বস্ত্রহীন হয়ে বড় বালতির ভেতর শরীর ভিজিয়ে বসে থাকতাম। ভাইয়া,আপুকে ৪বছর বয়সে স্কুলে পাঠালেও জামা-কাপড় খুলে দিগম্বর হয়ে যাবার বদ অভ্যাসের কারণে আমার ৫বছর হয়ে গেলেও আমাকে স্কুলে পাঠানোর সাহস করলেন না আম্মু। কিন্তু আর কতদিন! ৫বছররের বুইড়া (!) ছেলে সারাদিন টোঁ টোঁ করে ঘুরে বেড়ায় আর সমবয়সী ছেলেরা ক্লাস ওয়ান শেষ করে টু’তে যাবে। তাই একদিন সকালে মা জননী আমাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে গোসল করিয়ে বাড়ির পাশে স্কুলে ভর্তি করাতে নতুন জামা কাপড় পরালেন।

ঘর থেকে বেরুবার আগে কপালের বাম পাশে বড় করে গোল টিপের মত করে কাজল লাগিয়ে দিলেন। যেন আমার নাদুস নদুস শরীরে কারো নজর না লাগে!স্কুলে নিয়ে ভর্তি করিয়ে ক্লাসে বসিয়ে দিয়ে বাড়িতে চলে যাবার প্রস্তুতি নিতেই আম্মুর আঁচল ধরেই দিলাম কান্না জুড়ে। কারণ,আমি আবার মা পাগলা ছেলে ছিলাম কিনা! আমার একটায় দাবী ক্লাসে আমার পাশে আম্মুকেও বসতে দিতে হবে! ক্লাস টিচার যতই বোঝায় কিন্তু আমি আমার দাবী থেকে একচুল ছাড় দিতেও নারাজ। শেষে ১০টাকার বিনিময়ে রাজী হলাম আম্মু দরজার বাইরে দাঁিড়য়ে থাকবে আমি ক্লাস করব! শর্ত মেনে আম্মু স্কুলের বারান্দায় হাঁটাহাটি শুরু করলেন আর আমি একটু পরপর উঁিক দিয়ে দেখি আম্মু আমাকে রেখে পালিয়ে যায়নিতো! বাংলা,অংক ক্লাস শেষে ইংরেজী ক্লাস যখন শুরু হল তখন বেলা ১১টা। ক্লাসের মধ্যে একগাদা ছেলে-মেয়ের শরীরের তাপমাত্রা সাথে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাইরের তাপমাত্রাও বাড়ার কারণে প্রচন্ড গরম লাগতেই ‘আম্মু ,গরম গরম’ বলে চিৎকার দিয়ে মিনিটের মধ্যেই জামা কাপড় খুলে বস্ত্রহীন হয়ে গেলাম! ক্লাসের ছেলেদের মধ্যে হাসির রোল পড়ে গেলেও মেয়েরা লজ্জা পেয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রইল।

৫বছরের একটা ছেলে গরম গরম চিৎকার করে বস্ত্রহীন হয়ে যাবার ঘটনা ম্যাডামের শিক্ষকতা জীবনে প্রথম ছিল বলে তব্দা খেয়ে কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেললেন। আম্মু তড়িঘড়ি করে ক্লাসের ভেতর ঢুকে আমাকে কোলে নিয়ে আঁচল দিয়ে ঢেকে শার্ট,প্যান্ট তুলে সোজা বাড়িতে নিয়ে এলেন। চাচা,চাচী,চাচাত ভাই-বোনেরা কাহিনী শুনে হাসতে হাসতে বেহুঁশ হয়ে যাবার দশা। বুঝলাম,আমার ইজ্জতের ফেলুদা হয়ে গেছে। মনে মনে শপথ করলাম, এই অকর্ম আর কোনদিন করিবনা।

কিন্তু সর্বনাশ যা হবার হয়ে গিয়েছিল। স্কুল জুড়ে কাহিনী ফাঁস হয়ে যাওয়ায় বদ পোলাপাইনের দল আমার নাম রাখল ‘নেংটু আরিফ!’ ক্লাসের মেয়েরা আমার আশপাশ দিয়েও ঘেঁষতনা। প্রাইমারী স্কুলের পুরো ৫টা বছর ‘নেংটু আরিফ’ নাম নিয়ে শেষ করে ক্লাস সিক্সে ভর্তি হলাম নতুন স্কুলে। একদিন আমাদেরই এলাকার ক্লাস এইটের ছাত্র সোহেল ভাই জানাল, ক্লাস ফাঁিক দিয়ে সিনেমা হলে চিত্রনায়ক রুবেলের ছবি দেখতে যাবে। চাইলে আমিও যেতে পারব।

বললাম,যদি ধরা পড়ে যায়। কেন ধরা পড়ার কোন সম্ভাবনা নেই তা বেশ যুক্তি দিয়ে বুঝিয়েও আমার ভয় দূর করতে না পেরে শেষে জানালানে, উনারা ক্লাস সেভেন থেকেই এই কর্ম করে আসছেন কিন্তু একবারও ধরা পড়েনি। আর যদি ধরাও পড়ি তাহলে ক্লাস টেনের বড় ভাইয়েরা সব দোষ উনাদের ঘাড়ে নিয়ে জুনিয়রদের বাঁিচয়ে দেবেন। তবুও কিছুতেই মন সায় দিচ্ছিলনা। ক্লাস ফাঁিক দেওয়া তাও আবার সিনেমা দেখতে যাবার জন্য! আব্বু জানলে ঘরের সিলিংয়ের সাথে বেঁেধ নিশ্চিত রামধোলাই দিবেন।

একদিকে আব্বুর ভয় অপরদিকে জীবনে প্রথম সিনেমা হলে গিয়ে প্রিয় নায়কের ছবি দেখার সুযোগ! শেষমেষ নায়ক রুবেলের আ্যকশনের কাছেই পরাজিত হল ভয়। কপালে যা আছে পরে দেখা যাবে! ১ম ঘন্টায় হাজিরা খাতায় নাম উঠিয়ে ক্লাস শেষ হতেই প্ল্যান মত আলাদা আলাদা ভাবে স্কুলের বাউন্ডারির দেয়াল টপকে কয়েক মাইল দূরের সিনেমা হলের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম আমরা ১০জন। ৬জন ক্লাস টেনের,৩জন ক্লাস এইটের আর ক্লাস সিক্সের পুচকে আমি! পিকনিকের আমেজ নিয়ে সবাই সিনেমা হলের সামনে যখন পৌছালাম তখনও ছবি শুরু হতে আধঘন্টা বাকী। টিকেটের টাকা সবার কাছ থেকে নিয়ে ক্লাস টেনের বড় দুই ভাই গেলেন টিকেট আনতে। ব্যাপক ইচ্ছা ছিল জীবনের প্রথম সিনেমা দেখার টিকেট নিজেই কাটব! কিন্ত পুচকে আমাকে টিকেটতো দিবেইনা উল্টো বেঁধে রেখে গার্জিয়ানকে খবর দিবে জানার পর ইচ্ছা বুক চাপা দিলাম! নির্ধারিত সময়ে হলের ভেতর ঢুকে সিটে বসার একটু পরই সিনেমা শুরু হতেই রীতিমত টাস্কিত খেয়ে গেলাম।

ওরে বাপরে কত্তবড় পর্দা! কত্ত বড় বড় মানুষ। সব যেন সামনেই ঘটছে। আহা ! কত্ত মজা। রুবেল গুন্ডাদের গুসি দিলেই ঘমঘম করে যে শব্দ হয় তাতে ব্যাপক আবেগ তাড়িত হয়ে গুন্ডাদের আরো মারার জন্য চিৎকার করে করে রুবেলকে উৎসাহ দিতে দিতেই কিভাবে যে ৩টা ঘন্টা শেষ হয়ে গেল টেরও পেলাম না। সিনেমা হল থেকে বেরিয়ে সোহেল ভাইকে ধন্যবাদ দিয়ে জানিয়ে দিলাম, আমাকে ছাড়া যদি কোনদিন ছবি দেখতে আসে তাহলে দাবী থাকবে! বিকেলে বাসায় এসে সবকিছু স্বাভাবিক দেখে ধরে নিলাম কেউ কিছু টের পায়নি।

কিন্তু, ভুল সবই ভুল! সন্ধ্যা হতেই আব্বুর রুমে ডাক পড়তেই ধুরুধুরু বুকে গেলাম। ব্যাপক ধোলাইয়ের মাঝখানে দাদী এসে উদ্ধার না করলে আজকে ঠাট্টার পাঠকদের জন্য ছাত্রজীবনের গল্প লেখা হতনা! পাঠককে জানাতে পারতাম না, পরদিন শত শত ছাত্রছাত্রীর সামনে স্কুলের মাঠে প্রচন্ড রোদের মধ্যে পাক্কা ১ঘন্টা একে অন্যের কান ধরে দাঁিড়য়ে ছিলাম আমরা ১০জন ! ঠাট্টা, দৈনিক ইত্তেফাক ..বিশেষ সংখ্যা ছাত্র জীবন । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।