আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দাম্পত্য জীবনে ইহসান ( সকলের পড়া উচিৎ)

নয়া যামানার নয়া পথিক,পথ হারিয়ে ছুটনা দিক্বিদিক হযরত ডাঃ আব্দুল হাই আরেফী(রহ) এ যুগের ঐ সমস্ত মহান ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম, যাঁরা আজীবন যশ, খ্যাতি,লৌকিকতা ও প্রচার থেকে দূরে থেকে জীবন অতিবাহিত করেছেন। কিন্তু তাঁর চরিত্র-মাধুর্য ও পুণ্যময় কর্মের সুরভি স্বতঃস্ফুর্তভাবে হৃদয়কে আকর্ষণ করে এবং পরিবেশকে বিমোহিত করে। তিনি হাকিমুল উম্মাত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহ) এর নিকট দীক্ষাপ্রাপ্ত এবং তাসাওউফ ও আধ্যাত্মিকতায় তাঁর খলীফা ও অনুমতিপ্রাপ্ত। মানুষ আমল ও আখলাক তথা নীতি ও কর্মের সংশোধনের জন্য তাঁর শরণাপন্ন হত এবং ফয়েজপ্রাপ্ত হতো। একদা জৈনিক ব্যক্তি হযরত ডাক্তার সাহেবের কাছে উপস্থিত হয়ে নিজের অবস্থা বলতে গিয়ে বলে যে, ' আলহামদুলিল্লাহ আমার 'ইহসানের' মাকাম হাসিল হয়েছে' ।

( 'ইহসান' কোরআনের একটি পরিভাষা। হাদিসে এর ব্যাখ্যা এই দেওয়া হয়েছে যে, এমন মনোযোগিতার সাথে আল্লাহর ইবাদাত করাকে 'ইহসান' বলে, যখন ইবাদাতকারী ব্যক্তি আল্লাহ্‌ তা'আলাকে দেখছে অথবা নূনতমপক্ষে এ অনুভূতি তার হয় যে, আল্লাহ্‌ তা'আলা তাকে দেখছেন। ) সে ব্যক্তি একথা বুঝাতে চেয়েছে যে, আলহামদুলিল্লাহ ইবাদাত করার সময় আমার এমন মনোযোগ লাভ হয়েছে, যাকে হাদিসের পরিভাষায় ইহসান বলা হয়। প্রতিউত্তরে হযরত ডাঃ সাহেব তাকে মুবারকবাদ জানান এবং বলেন যে, 'ইহসান সত্যিই অত্যন্ত দামি একটি নিয়ামত, যা লাভ হলে আল্লাহর শোকর আদায় করা উচিৎ। কিন্তু আপনার নিকট আমার জিজ্ঞাসা- ইহসানের এই মাকাম আপনার কি শুধু নামাযের মধ্যেই লাভ হয়েছে নাকি যখন আপনি আপনার পরিবার-পরিজন কিংবা বন্ধু-বান্ধবের সাথে কোন কাজ-কারবার করেন, তখনও এই মনযোগ বহাল থাকে?' তখন লোকটি বলল যে, আমি তো এই শুনেছি যে, ইহসানের সম্পর্ক শুধুমাত্র নামায ও অন্যান্য ইবাদাতের সঙ্গে।

তাই আমি শুধুমাত্র নামাযের মধ্যেই তার অনুশীলন করেছি এবং আল্লাহর মেহেরবানীতে সফলও হয়েছি। কিন্তু নামাযের বাইরে জীবনের সাধারণ কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে ইহসানের অনুশীলন করার কথা আমার মনেই আসেনি। হযরত ডাঃ সাহেব বললেনঃ এই ভ্রান্ত ধারণা খণ্ডন করার জন্যই আমি আপনাকে এই প্রশ্ন করেছি। নামায ও অন্যান্য ইবাদাতের মধ্যে নিঃসন্দেহে এই মনযোগ কাংখিত বস্তু। কিন্তু এই মনযোগের প্রয়োজনীয়তা শুধুমাত্র নামাযের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং জীবনের প্রত্যেক কাজে এর জরুরত রয়েছে।

মানুষের সঙ্গে জীবন কাটাতে এবং তাদের সঙ্গে বিভিন্ন কর্ম সম্পাদন করার ক্ষেত্রেও এ কথার প্রতি মনযোগ থাকা উচিৎ যে, মহান আল্লাহ্‌ আমাকে দেখছেন। বিশেষ করে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক তো এমন যে, তারা পরস্পরের জন্য সারাজীবনের সঙ্গী। জীবনের প্রতি মুহূর্তের সাহচর্যে তাদের মধ্যে বিচিত্র ধরনের ঘাত-প্রতিঘাত এসে থাকে। নানা রকমের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। দাম্পত্য জীবনে এমনও অনেক মুহূর্ত আসে, যখন মানুষের রিপু তাকে এ সমস্ত অপ্রীতিকর আচরণের উত্তরে অন্যায় আচরণ করতে প্ররোচিত করে।

এ সমস্ত মুহূর্তে এই মনযোগের প্রয়োজনীয়তা আরো অধিক যে, আল্লাহ্‌ তা'আলা আমাকে দেখছেন। সে মুহূর্তে যদি এই উপলব্ধি অন্তরে বদ্ধমূল না থাকলে সাধারণত তার পরিণাম অবিচার ও অধিকার হনন রূপে আত্মপ্রকাশ করে থাকে। তারপর হযরত ডাঃ সাহেব বলেন যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত এই যে, তিনি সারাজীবনে কখনো আযওয়াজে মুহতারাত (পবিত্রা স্ত্রীগণের) সাথে সহজাত ক্রোধ ও কঠোর আচরণ করেননি। এই সুন্নাতের উপর আমলের চেষ্টায় আমিও এই অনুশীলন করেছি যে, আমি আমার ঘরের লোকদের সাথে ক্রোধান্বিত হব না। আল্লাহর শুকরিয়া, আমি আমার একান্ন বছরের বৈবাহিক জীবনে আলহামদুলিল্লাহ আমি কখনো তার সঙ্গে ঝাঁজালো কণ্ঠে কথাও বলিনি।

পরবর্তীতে একবার ডাঃ সাহেবের মুহতারামা স্ত্রী নিজে হযরতের আলোচনা করতে গিয়ে বলেন যে, ডাঃ সাহেব কখনো আমার সাথে রাগতস্বরে কথা বলেছেন বলে আমার স্মরণ নেই। সারাজীবনে কখনো আমাকে কোন কাজের কথা বলেছেন বলেও আমার স্মরণ হয় না। আমি নিজেই স্বতঃস্ফুর্তভাবে তাঁর খেদমত করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তিনি নিজে কোন কাজ করতে বলতেন না। হযরত ডাঃ সাহেবের একথাগুলো স্মরণ রাখা জরুরী, কারণ আনন্দপূর্ণ ও মধুময় দাম্পত্য জীবনের জন্য তাকওয়া জরুরী।

হযরত ডাঃ সাহেবের এই আমল যা শূন্যে উড়া কিংবা পানির উপর দিয়ে হাঁটার মত হাজার হাজার কারামতের চেয়ে উঁচু পর্যায়ের কারামত। বস্তুত এই আমল তাকওয়ারই ফল এবং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিচের হাদিসের বাস্তব চিত্র- خيركم خيركم لاهله " তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি, যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম। " নিঃসন্দেহে পবিত্র কোরআন পুরুষদেরকে নারীদের তত্ত্বাবধায়ক বানিয়েছে, কিন্তু মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বিভিন্ন হাদিস ও আমল দ্বারা একথা পরিস্কার করে দিয়েছেন যে, তত্ত্বাবধায়ক হওয়ার অর্থ এই নয় যে, পরুষ সর্বদা নারীদের উপর আদেশের লাঠি ঘুরাতে থাকবে,স্ত্রীর সাথে চাকরানীর ন্যায় আচরণ করবে বা তাকে নিজের কর্তৃত্বের শিকলে কষে বেঁধে রাখবে। বাস্তবিকপক্ষে পবিত্র কোরআন নিজেই অন্য জায়গায় স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে " মাওয়াদদাত" অর্থাৎ বন্ধুত্ব ও রহমত বলে উল্লেখ করেছে। উপরন্তু এ আয়াতেই স্ত্রীকে স্বামীর প্রশান্তির উপকরণ বলে আখ্যা দিয়েছে।

(সুরা রূম, আয়াত-২১)। যার সারকথা এই যে, স্বামী-স্ত্রীর মাঝের সম্পর্ক মূলত প্রেম ও ভালবাসার সম্পর্ক। উভয়ে পরস্পরের জন্য শান্তি ও আরামের মাধ্যম। কিন্তু ইসলামেরই আরেকটি শিক্ষা এও যে,সম্মিলিতভাবে বা যৌথভাবে কোন কাজ সম্পাদন করা হলে, তখন কাউকে নিজেদের আমীর বা দল-প্রধান বানিয়ে নেওয়া উচিৎ। যেন কাজটি নিয়ম-শৃংখলার সাথে ও সুসংহতভাবে সম্পন্ন হয়।

এমনকি দুই ব্যক্তির কোথাও সফরে যাওয়ার পথেও কোন একজনকে আমীর নির্ধারণ করাকে শরীয়ত 'মুসতাহসান' বা উত্তম বিবেচনা করেছে। চাই তারা দু'জন পরস্পরের বন্ধুই হোক না কেন। এ পর্যায়ে যাকেই আমীর নিযুক্ত করা হোক না কেন, তাকে সবসময় হুকুম করার জন্য নয়,বরং সফরকালীন বিভিন্ন বিষয়ের দায়িত্ব বহন করার জন্য আমীর নিযুক্ত করা হয়েছে। সাথীদের দেখাশোনা করা, সবার জন্য আরামদায়ক ও সুবিধাজনক সফরের সুব্যবস্থা করা এখন তার দায়িত্ব। সফরের আমীর তার এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলে এ সমস্ত কাজে তার আনুগত্য করা ও তার সহযোগিতা করা তখন সবার কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়।

ইসলাম যেখানে একটা সাধারণ সফরের জন্যও এই তালীম দিয়েছে, সেখানে জীবনের দীর্ঘ সফর কি এই তালীম থেকে শূন্য থাকতে পারে? তাই স্বামী ও স্ত্রী যখন নিজেদের যৌথ 'জীবন-সফর' শুরু করতে যায়, তখন তাদের উভয়ের মধ্য হতে স্বামীকে সফরের আমীর তথা তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত করা হয়। কারণ, এই সফরের দায়িত্ব বহনের জন্য যে দৈহিক শক্তি, যোগ্যতা ও গুণাবলীর প্রয়োজন, তা কুদরতীভাবে পুরুষের প্রকৃতির মধ্যে অধিক গচ্ছিত রাখা হয়েছে। কিন্তু দাম্পত্য জীবনের সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনার জন্য স্বামীকে তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত করায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার প্রকৃত প্রেম ও ভালবাসা এবং মায়া ও করুণার সম্পর্ক ম্লান হয়ে যায় না। তাদের কারুরই এই অধিকার লাভ হয় না যে, সে অপরের সংগে একজন চাকরের মত আচরণ করবে। কিংবা স্বামী তার কর্তৃত্বের কারণে এরূপ মনে করবে যে, তার সমস্ত নির্দেশ পালনার্থেই স্ত্রীকে সৃষ্টি করা হয়েছে, কিংবা স্ত্রী দ্বারা যাবতীয় জায়েয ও নাজায়েয ইচ্ছা পূর্ণ করার অধিকার রয়েছে।

বরং মহান আল্লাহ্‌ পুরুষকে যে সমস্ত শক্তি ও গুণাবলী দিয়েছেন, তার আবেদন এই যে, সে জায়েয সীমার মধ্যে থেকে স্ত্রীর মনোরঞ্জনের কাজে তার এই পদকে ব্যবহার করবে। স্ত্রীর জায়েয ইচ্ছাসমূহ যতদূর সম্ভব পূরণ করবে। এমনিভাবে আল্লাহ্‌ তা'আলা স্ত্রীকে এই মর্যাদা ও অধিকার প্রদান করেছেন, তার দাবীও এই যে, সে তার খোদাপ্রদত্ত যোগ্যতাসমূহকে তার জীবনসঙ্গীর সহযোগিতার কাজে এবং তাকে সন্তুষ্ট করার কাজে ব্যয় করবে। স্বামী ও স্ত্রী এভাবে কাজ করলে তাদের গৃহ যে জান্নাতে পরিণত হবে শুধু তাই নয়, বরং তাদের এই কর্মপন্থা স্বতন্ত্র একটি ইবাদাত। বিধায় এটি তাদের জন্য আখেরাতের প্রকৃত জান্নাত লাভের উসীলা হবে।

আর তাই তাদেরকে বিবাহের খুৎবায় তাকওয়া অবলম্বনের নির্দেশ দান করা হয়েছে। এ জন্যই হযরত ডাঃ সাহেব ইরশাদ করেছেন যে, শুধু নামাযেই ইহসান এর ক্ষেত্র নয়, বরং স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য জীবনও ইহসানের ক্ষেত্র। পবিত্র কোরআনের অসংখ্য আয়াতের মধ্য থেকে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিবাহের খুৎবার জন্য বিশেষভাবে তিনিটি আয়াতকে নির্বাচন করার মধ্যে নিশ্চয়ই বড় কোন হিকমত ও উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে। চিন্তা করলে দেখা যায় যে, এই আয়াতত্রয়ের মধ্যে যে বিষয়টি যৌথভাবে পাওয়া যায় তা হলো তাকুওয়ার নির্দেশ। এ তিনটি আয়াতই তাকওয়া অবলম্বনের নির্দেশদানের মাধ্যমে আরম্ভ হয়েছে।

কোন নির্বোধ ব্যক্তি বলতে পারে যে, বিবাহ-শাদীর সাথে তাকওয়ার কি সম্পর্ক? কিন্তু যে ব্যক্তি জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত ও চড়াই-উতরাই এবং স্বামী-স্ত্রীর মাঝের স্পর্শকাতর বিষয়সমূহের ব্যাপারে সম্যক অবগত এবং যার দাম্পত্য জীবনের জীবনের জটিলতাসমূহের গভীরে যাওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাকে এ সীদ্ধান্তে উপনীত হতেই হবে যে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সুমধুর সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য তাকওয়া একটি আবশ্যকীয় শর্ত। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বড়ই নাজুক। স্বামী-স্ত্রীর অন্তরের মাঝের গুপ্ত আবেগ-স্পৃহাসমূহ এবং সেগুলোর মূল উৎস পরস্পরের সম্মুখে এমন স্পষ্ট হয়ে দেখা দেয় যে, অন্য কারো সম্মুখে তা এত স্পষ্ট হয়ে দেখা দেয় না। কোন ব্যক্তি নিজের মুচকি হাসির আড়ালে নিজের মন্দ প্রকৃতিকে অন্যদের থেকে আড়াল করে রাখতে পারে। নিজের ভিতরের মানুষের মানুষের উপর সুন্দর বাক্য এবং কৃত্রিম সদাচরণের নিকেল লাগাতে পারে।

কিন্তু স্ত্রীর সঙ্গে দিবস-রজনীর নিরবিচ্ছিন্ন কার্যকালাপে এই নিকেলের প্রলেপ ধরে রাখা যায় না। একসময় না একসময় তাকে বাইরের এই খোল ছেড়ে বের হতেই হয়। তার ভিতরের মানুষটি তাকওয়ার গুণে সজ্জিত না হলে জীবনসঙ্গীনীর জীবনকে সে দুর্বিষহ করে দেয়। একজন স্ত্রী তার স্বামীর দ্বারা যে সমস্ত কষ্ট পেয়ে থাকে তার বিচার সবসময় আদালতের মাধ্যমে করা সম্ভব হয় না। এমন অসংখ্য কষ্ট রয়েছে, যা আদালত তো দূরের কথা নিকটতম আত্মীয়ের কাছেও প্রকাশ করা যায় না।

এমনিভাবে একজন স্বামীর স্ত্রীর বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগ থাকতে পারে, অনেক সময় তার কোন সমাধান স্বামীর কাছে থাকে না এবং অন্যের মাধ্যমেও তার সমাধানের কোন পথ করতে পারে না। এ সবের সমাধান অন্তরের তাকওয়া ছাড়া আর কিছুতেই হতে পারে না। অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রীর উভয়ের অন্তরে এ অনুভূতিতে পরিপূর্ণ থাকতে হবে যে, তারা উভয়ে পরস্পরের জন্য আমানত। তাদেরকে আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে এ আমানত সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। নিজের জীবন্সঙ্গীকে নিজের কোন কর্ম দ্বারা কষ্ট দিয়ে দুনিয়ার জবাবদিহি থেকে হয়ত বেঁচে যেতে পারবে,কিন্তু এমন একদিন আসবে যেদিন তাকে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে এবং যে সব হক সে নষ্ট করেছে তার প্রত্যেকটির শাস্তি ভোগ করতে হবে।

এ অনুভূতির নামই তাকওয়া। আর কেবলমাত্র এটিই এমন এক জিনিস, যা মানুষের অন্তরে এমন নির্জনেও পাহারা বসিয়ে দেয়, যেখানে তাকে দেখার মত অন্য কেউ থাকে না। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইচ্ছা এই যে, যখন একজন পুরুষ এবং একজন নারী জীবন সফরে পরস্পরের সঙ্গী হতে চলছে, তখন তার যাত্রা আরম্ভ করার পূর্বে নিজেদের অন্তরে অদৃশ্যের এই পাহারা বসিয়ে নিক। যাতে করে তাদের বন্ধুত্ব স্থায়ী হয়। তাদের অন্তরে পরস্পরের প্রতি ভালবাসা সাময়িকভাবে নিছক প্রবৃত্তির চাহিদার না হয়ে-যা কিনা নতুন জীবনের আবেগ-উত্তেজনা ঠাণ্ডা হয়ে গেলে নিঃশেষ হয়ে যায়-তাকওয়ার ছায়াতলে প্রবৃদ্ধি লাভকারী স্থায়ী ভালবাসায় পরিণত হোক।

যা স্বার্থপরতার নোংরা মনোবৃত্তি থেকে পবিত্র হবে এবং এবং ত্যাগ স্বীকার করা, অন্যকে নিজের উপর প্রাধান্য দেওয়া, বিশ্বস্ততা ও কল্যাণকামিতার সদাবসন্ত আবেগ দ্বারা সুসজ্জিত হবে এবং তা দেহ থেকে অতিক্রম করে সত্যিকার অর্থেই অন্তরের অন্তঃস্থলের গভীরতায় বিস্তার লাভ করবে। আর এজন্যই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিবাহের খুৎবার মধ্যে এমন তিনটি আয়াতকে নির্বাচন করেছেন, যার প্রত্যেকটি আয়াত তাকওয়ার নির্দেশ দানের মাধ্যমে আরম্ভ হয়েছে এবং এটিই হলো তার মৌলিক পয়গাম। এটি শাইখুল ইসলাম তাকী উসমানী (দা,বা) কর্তৃক লিখিত একটি প্রবন্ধ  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।