আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জাকির নায়েক কি আসলেই ভ্রান্ত ???

পিস মিসাইল আমাদের এক ভাই abdullah Ibn Mahmud এর কাছ থেকে আমি এটা সংগ্রহ করেছি । তাকে এই সুন্দর লেখার জন্য ধন্যবাদ । সাম্প্রতিক সময়ে কিছু মাসিক পত্রিকায় বরেণ্য ইসলামিক ব্যক্তিত্ব ড জাকির নায়েক কে নিয়ে কটু সমালোচনা করা হচ্ছে। Love Islam এর post থেকে নেয়া, চ্যানেল আইয়ের ইসলামী অনুষ্ঠান "শান্তির পথ" এর উপস্হাপক নূরুল ইসলাম ফারুকী আজকের অনুষ্ঠানে বলেছেন ,ডা. জাকির নায়েক ইসলামের বড় শত্রু ... ইসলামের দুশমন ইহুদী এবং খ্রিস্টানরা মুসলমানদের দিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করাচ্ছে... আরও মিথ্যা অভিযোগ আছে। পত্রিকাগুলোতে ড নায়েকের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে তাঁর মধ্যে একটি আমার কাছে খুবই আশ্চর্যজনক লেগেছে, জাকির নায়েক মিশনারি প্রতিষ্ঠানে পড়েছেন... এজন্য তাঁকে অনুসরন করা যাবে না!! এটা খুবই insulting. আমি নিজে Notre Dame College থেকে পাশ করেছি, তাই বলে কি আমি ভালভাবে ইসলাম মানব না? এজন্য কি মানুষ আমার কথা শুনবে না, ইসলামের কথা বললে? কারণ আমি মিশনারি কলেজ থেকে পাশ করেছি বলে? এটা ভাবা এটা খুবই নিম্ন মানসিকতা।

I am PROUD of my College. আমি surely বলতে পারি আমার কলেজে ধর্ম নিয়ে কোন সমস্যা হয় না। আমি মিশনারি কলেজ এ পরেছি তাঁর মানে এই না যে, আমাকে যীশুর (আ) বাণী শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। কখনো না। Holy Cross School & College, St. Joseph ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানেও আমার বিশ্বাস একই অবস্থা। এখানে পড়ালেখা আর ভাল মানুষ হয়ে ওঠা শেখান হয়, ধর্ম নয়।

জাকির নায়েক মিশনারি প্রতিষ্ঠানে পড়েছেন বলে আমরা তাঁকে মানব না, এটা কখনো হবে না। যারা এমন বললেন, তাদের জ্ঞানের অভাব আছে। ড জাকির নায়েক তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছেন ইসলাম প্রচারের জন্য, আর আমরা তাঁর প্রতিদান দিব সমালোচনা করে? যারা এমন করছেন তারা নিজেরা কতটুকু সফলভাবে ইসলাম প্রচার করছেন সেটা দেখার বিষয়... তাঁদের জ্ঞানের গভীরতা কতটুকু। ড জাকির নায়েকের পক্ষে আজকের এ লেখাটা লিখলাম এবং সংগ্রহ করলাম, বেশি বড় হয়ে যাওয়ায় দুঃখিত। ড নায়েক এর বিরুদ্ধে ভারতে একটি আন্দোলন হয়েছে, কেন জানেন? কারণ, নায়েক বলেছেন, “একজন মুসলিম এর একমাত্র আল্লাহ্‌ ছাড়া আর কারও কাছে সাহায্য চাওয়া যাবে না, এমনকি রাসুল এর কাছেও না।

” এ কথার বিরুদ্ধে আন্দোলন!! আমি এ কথার মধ্যে কোন সমস্যা পাই নি। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমি আমার এ কথা প্রত্যাহার করব না। ড নায়েকের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগগুলোর মধ্যে কয়েকটি হলঃ ১. জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে ফতোয়া, কারণ তিনি নাকি ওসামা বিন লাদেনের সমর্থক! ২. জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে ফতোয়া, কারন তিনি নাকি কুরআন-বিরোধী শিক্ষা দেন। ৩. জাকির নায়েক আলেম নন। ৪. তিনি পড়াশোনা করেছেন খৃষ্টান মিশনারী ও হিন্দুদের স্কুল-কলেজে।

৫. কুরআন হাদীস নিয়ে অধ্যয়ন করার জন্য একজন অভিজ্ঞ শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে থাকা প্রয়োজন কিন্তু এ ব্যাপারে তার কোন শিক্ষক নেই। ৬. “ড. জাকির নায়েকের কুরআন তিলাওয়াত শুদ্ধ নয়। ” ৭. “ড. জাকির নায়েকের অপব্যখ্যা : প্যান্ট-শার্ট-টাই পড়া জায়েয। ৮. পর্দার ব্যাপারে ড. জাকির নায়েকের শিথীলতা। তার অনুষ্ঠানে পুরুষ-মহিলাদের অংশগ্রহণ।

৯. “ডা. জাকির নায়েক চতুর্থ খলীফা হযরত আলী রা. কে উম্মতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে দাবী করেছেন- যা মূলত: ভ্রান্ত শিয়া ফিরকার আকীদাবিশ্বাস। -নাউযুবিল্লাহ। ১০. “তিনি গায়রে মুকাল্লিদ (আহলে হাদীস) সম্প্রদায়ের লোক হিসেবে এ সম্প্রদায়ের মতাদর্শের প্রচার-প্রসারকে নিজের মেনুফেক্ট নির্বাচন করে। ১১. “যারা হিন্দুস্থানে বাস করে তারা সকলেই হিন্দু, কাজেই আমাকেও (ধর্মীয় দিক থেকে) হিন্দু বলতে পারেন। ” ১২. “ড. জাকির নায়েক নাকি কাজা নামায অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন যে, কাজা নামায পড়ার দরকার নেই।

তাওবা করে নিলেই চলবে। ” ১৩. “রাসূল সা. এর একাধিক বিবাহ ছিলো রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য। ” ১৪. ড. জাকির নায়েক নাকি বলেছেন, “ইসলামে দাঁড়ির তেমন একটা গুরুত্ব নেই। ” ১৫. জাকির নায়েক হায়াতুন নাবী সা. অস্বীকার করেছেন। এখানে তাঁর বিরুদ্ধে করা এসব অভিযোগের জবাব কিছু ব্লগ থেকে সংরহ করে এবং কিছুটা এডিট করে উপস্থাপন করলাম... আদর্শনারী পত্রিকায় জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে আরোপিত অভিযোগের ক্ষেত্রে জাকির নায়েকের কথা গুলো কখন কোথায় বলেছেন, তার সূত্র ও রেফারেন্স না পেয়ে আমরা ‘পাক্ষিক মুক্ত আওয়াজ’ নামক একটি ইসলামিক পত্রিকার পক্ষ থেকে মাসিক আদর্শ নারী পত্রিকার সম্পাদক জনাব মুফতী আবুল হাসান শামসাবাদী সাহেবের কাছে ফোন করেছিলাম।

তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিলো যে, তিনি তার পত্রিকায় জাকির নায়েকর কথার যেই উদ্ধৃতি দিয়েছেন সেগুলো জাকির নায়েক কখন, কোথায়, কোন আলোচনায় বলেছেন? তিনি বলেছিলেন, আমরা বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছি। আমরা তখন তার কাছে এর প্রমাণ চাইলাম এবং সূত্র দিতে বললাম। তখন তিনি আমাদের এই বলে আশ্বস্ত করলেন যে, এ ব্যাপারে আরো গবেষণা হচ্ছে, আগামী মাসে সূত্র জানানো হবে। এরপর এলো জুন মাস। এ মাসের আদর্শ নারী পত্রিকায়ও পূর্বের মতোই জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে “জাকির নায়েক সম্পর্কে উত্থাপিত প্রশ্নাবলীর জবাব” শিরোনামে আরেকটি গবেষণা প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে স্বয়ং সম্পাদক আবুল হাসান শামসাবাদী সাহেবের নিজ নামে।

ভালো কথা। আশা করলাম এখন হয়তো জাকির নায়েকের কোন ভুলের প্রমাণ পাওয়া যাবে। জাকির নায়েক প্রতিবেদনের প্রথম পাতাতে জাকির নায়েকের পরিচয় উল্লেখ করে উইকি পিডিয়ার সূত্র দেয়া হযেছে। মেনে নিলাম। কারণ বিশ্বের যে কোন বরেণ্য ব্যক্তির জীবন বৃত্তান্তই উইকিপিডিয়াতে পাওয়া যাবে।

একটি উদ্ধৃতি পেয়ে খানিকটা খুশিই হয়েছিলাম। যে যাক এবার হয়তো আরো কিছু যৌক্তিক কোন পয়েন্ট পাওয়া যাবে। কিন্তু উইকিপিডিয়া ও অন্যান্য সূত্রের ইংরেজি লিংক দেখে খানিকটা দ্বিধান্বিত হয়েছি। কারণ যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন তারা সকলেই জানেন যে ইন্টারনেটে যে কোনো ওয়েব সাইট বা লিঙ্কের ইরেজি অক্ষর গুলো সব ছোট হাতের হয় এবং সেখানে মাঝখানে কোন স্পেস থাকে না। কিন্তু আদর্শ নারী পত্রিকায় দেয়া সূত্রে দেখা যাচ্ছে ইংরেজি বানানে মাঝে মাঝে বড় অক্ষর এবং একটু পর পর স্পেস।

এর চেয়েও বড় অসঙ্গতি মনে হলো অধিকাংশ লিংকেই কোন ওয়েব পেজ এর নাম নেই দেখে। দ্বিতীয় লিঙ্কটি হলোhttp://Is/ the Logic of Zakir Naik Reliable? দ্বিতীয় এই লিঙ্কটি একটু যাচাই করে দেখার জন্য লিঙ্কটি হুবহু কপি করে আমার ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার এ পেষ্ট করলাম। এন্টার দিলাম। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে কিছু আসলো না। উইকিপিডিয়াতে দিলাম সেখানেও নো রেসাল্ট শো করলো।

শেষ পর্যন্ত গুগল এ সার্চ এর ঘরে এটা পেষ্ট করে এন্টার দিলাম। তারা কয়েকটা ওয়েবের নাম দেখালো যেখানে নাকি এই লেখাটি আছে। সেটি হলো:http://www.unchangingword.com/aboutus.php তো এই ওয়েব পেজে এসে দেখলাম জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে অনেক কথাই এখানে লেখা হয়েছে। ওয়েব পেজটির প্রথম পাতা কুরআনের ছবি দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। আরবীতে কালিমাতুল্লাহ শব্দটিও লেখা হয়েছে।

তার মধ্যে খৃষ্টানদের বিরোধীতা করে তিনি যে সব কথা বলেছেন তাও খন্ডন করার চেষ্টা করা হয়েছে। এটা দেখে একটু থমকে গেলাম। এবার আগের চেয়ে ভালো করে দেখার চেষ্টা করতে লাগলাম এই ওয়েব পেজটা কাদের? কারা জাকির নায়েকের বিরোধীতা করছে? একটু খুঁজতেই দেখলাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ কলেবরে একটি লিঙ্ক দেয়া, লিঙ্কটির নাম The Titles of Hazrat Isa Masih In the Qur’n এটা দেখে আমি এমন শক খেয়েছি! খোদার কসম করে বলতে পারি, আমার সামনে সিংহ দেখলেও আমি এতোটা আঁতকে উঠতাম না। পাঠক হয়তো এর মধ্যেই বুঝে গেছেন। এটা হচ্ছে খৃষ্টানদের একটি ওয়েব সাইট।

যেখানে কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের বিকৃত ব্যখ্যা করে হযরত ঈসা আ. কে আল্লাহর পূত্র সাব্যস্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে এবং কুরআনে হযরত ঈসা আ. এর নাম আছে দেখিয়ে মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এছাড়াও এই ওয়েবের বিভিন্ন লেখায় বাইবেলের পক্ষে প্রচারণা চালানো হয়েছে খুব সুক্ষ্মভাবে। যা অভিজ্ঞ কেউ ছাড়া সাধারণ কোন মুসলমানের জন্য বুঝা ও উপলব্ধি করা খুবই কঠিন। প্রায় অসম্ভব। খৃষ্টানদের গোমর ফাঁক করে দেয়ার কারণে তারা যে জাকির নায়েকের উপর ক্ষুব্ধ এটা আমি আগেই শুনেছি।

কিন্তু মাওলানা আবুল হাসান শামসাবাদী সাহেবের মতো এমন বিচক্ষণ একজন আলেম এবং আদর্শনারী পত্রিকার মতো এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি মাসিক পত্রিকা তাদের মত প্রমাণের জন্য খৃষ্টানদের ওয়েবের সাহায্য নিয়েছে! এটা আমি কি করে মেনে নেই? আমার মনে হচ্ছে আমি মাটির নিচে চলে যাই। আল্লাহ তাদেরকে হেদায়াত দিন। আগ্রহী পাঠকরা চাইলে আমার কথার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য এই লিঙ্কে গিয়ে দেখে আসতে পারেন। http://www.unchangingword.com/aboutus.php তবে খৃষ্টানদের এই চতুর ওয়েব দেখে বিভ্রান্ত হবেন না যেনো! এ ছাড়া আদর্শ নারী পত্রিকায় আর যেসকল লিঙ্ক দেয়া হয়েছে তার অধিকাংশই হলো ভারত পাকিস্তানের কবর-মাজার ও পীর-ফকীর পুজারী ভন্ড বিদআতীদের ওয়েব সাইট। কিছু ব্লগের লিঙ্কও দেয়া হয়েছে।

যারা তাদের পার্থিব স্বার্থে জাকির নায়েক ব্যাঘাত ঘটানোয় সাংঘাতিক ক্ষুব্ধ হয়ে অনলাইনে জাকির নায়েকের সমালোচনার ঝর তুলেছেন। এছাড়া দেওবন্দ মাদ্রাসাসহ পাকিস্তানের কিছু মাদ্রাসা থেকেও ইখতিলাফী ও মতবিরোধপূর্ণ মাসআলায় জাকির নায়েকের সমালোচনা করা হয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে হানাফী মাযহাবের লোকদেরকে ইখতেলাফী মাসআলায় জাকির নায়েকের মত অনুসরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এটা হতেই পারে। সুন্নাত-নফল মাসআলা গত ক্ষেত্রে জাকির নায়েকের উদ্ধৃত প্রমাণ্য আলোচনার চেয়েও বেশি প্রামাণ্য কোন বক্তব্য থাকলে সে বিষয়ে আমল করা যেতে পারে। কিন্তু তাই বলে কুরআন-হাদীসের দলীল নির্ভর বক্তব্য প্রদানকারী কাউকে গোমরাহ বলাটা তো অবশ্যই অনুচিত ও হারাম কাজ।

এছাড়াও আদর্শ নারী পত্রিকার এই রিপোর্টের শেষে বলা হয়েছে “এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে fatwa against dr zakir naik অথবা fatwa about dr zakir naik লিখে সার্চ দিলে অনেক তথ্য পাওয়া যাবে। ” আমার বলতে হচ্ছে যে, ইন্টারনেটে fatwa against islam/quran/muhammad অথবা fatwa about islam/quran/muhammad লিখে সার্চ দিলে আরো অনেক অনেক বেশি তথ্য পাওয়া যাবে। তাহলে এখন এগুলোও কি বাতিল ও অগ্রহণযোগ্য হবে -নাউযুবিল্লাহ। আসলে আমাদের দুর্ভাগ্য, যে আমরা এমন কিছু ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক নেতৃবৃন্দের অনুসরণ করছি, যারা না বুঝে ইখলাসের সাথে জাতিকে গোমরাহ করছেন। এই আদর্শ নারী পত্রিকা বাংলাদেশের ইসলামপ্রিয় জনগণের মাঝে প্রায় ৫০/৬০ হাজার কপি বিক্রি হয়।

এখন একজন আবুল হাসান শামসাবাদী সাহেবের অন্ধ আক্রোশের কারণে আজ এই পত্রিকার এক বিশাল পাঠক শ্রেণী বিভ্রান্ত হচ্ছে। তারা যদি খৃষ্টানদের সেই ওয়েব সাইট দেখে বিভ্রান্ত হয় তাহলে এর দায়ভার কে নেবে? একজন মুসলমানকে বাতিল ও ভ্রান্ত বলার জন্য কি আমাদের এখন খৃষ্টানদের সহযোগিতা নিতে হবে? অথচ তারা যদি একটু চিন্তা করতেন তাহলে নিজেরাই বুঝতেন যে, যেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে খৃষ্টানরা সমালোচনা করেছে, বিদআতী ভন্ড মাজার পুজারীরা যার বিরুক্ষে লিখেছে, বৃটেন যাকে যেতে দিচ্ছে না, ভারতের মত কুফর দেশের সরকার ও তার আদালত যার বিরুদ্ধে একটি মামলায় ওয়ারেন্ট জারী করেছে সেই ব্যক্তি ড. জাকির নায়েক যে সত্যের উপর আছে এর জন্য তো এগুলোই প্রমাণ হিসেবে যথেষ্ট। আল্লাহ এদেরকে কবে সঠিক বুঝ দিবেন? ড. জাকির নায়েক ও তার কার্যক্রম: ডা. জাকির নায়েক ১৮ অক্টোবর ১৯৬৫ সালে ভারতের মুম্বাইয়ে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি মুম্বাইয়ের সেন্ট পিটার’স হাই স্কুল (আই.সি.এস.ই) থেকে মাধ্যমিক এবং চেল্লারাম কলেজ, মুম্বাই থেকে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা লাভ করেন। এরপর টপিওয়ালা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ, নায়ের হসপিটাল, মুম্বাই থেকে পড়াশুনার পর মুম্বাই ইউনিভার্সিটি থেকে চিকিৎসা শাস্ত্রে ডিগ্রি অর্জন করেন।

ডা. জাকির নায়েক বর্তমানে ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন (আইআরএফ) এর প্রেসিডেন্ট। তিনিই এর মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বর্তমানে আইআরএফ এডুকেশনাল ট্রাষ্ট, মুম্বাইয়ের চেয়ারম্যান এবং ইসলামিক ডাইমেনশন মুম্বাইয়ের প্রেসিডেন্ট। এছাড়াও তিনি ইসলামি রিসার্চ ফাউন্ডেশন নামক আইআরএফ নামক একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা যেটি পিস টিভি পরিচালনা করে থাকে। ড. জাকির নায়েক চিকিৎসা শাস্ত্রের উপর পড়াশোনা করে একজন সফল ডাক্তার হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু করলেও তার আগ্রহের বিষয় ছিলো ইসলাম।

বিশ্বখ্যাত সুবক্তা ও তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের বিশ্লেষক শেখ আহমাদ দীদাতের প্রাঞ্জল ভাষার অনলবর্ষী বক্তব্য এবং ইসলাম বিষয়ে তার জ্ঞানগর্ভ আলোচনা ড. জাকির নায়েককে আরো উদ্বুদ্ধ করে। দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসকারী ভারতীয় বংশোদ্ভূত শেখ আহমদ দিদাত ছিলেন একজন খ্যাতনামা ইসলামী চিন্তাবিদ। ইসলামের উপর তার পড়াশুনা ছিল ব্যাপক। ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে ইসলাম বিদ্বেষীদের ছড়ানো সমালোচনা ও কটুক্তি খন্ডন করতেন ও অকাট্য জবাব দিতেন। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের সুন্দর উদ্ধৃতির মাধ্যমে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরতেন সন্দেহাতীতভাবে।

দীনের অক্লান্ত দায়ী শেখ আহমাদ দীদাতের জীবন ও কর্মে অনুপ্রাণিত হয়ে ড. জাকির নায়েকও এগিয়ে আসেন দীন প্রচারে। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের কাছে ইসলামের অবস্থান ও সত্য দীনকে তুলে ধরতে ডা. জাকির নায়েক আত্মনিয়োগ করেছেন। একজন ডাক্তারের পরিবর্তে আত্মপ্রকাশ করেন দীনের একজন দায়ী হিসেবে। ড. জাকির নায়েকের গভীর অধ্যয়ন আর পান্ডিত্যপূর্ণ শালীন ও সুন্দর উপস্থাপনায় ইসলামের স্বরূপ সম্পর্কে অমুসলিম বিশ্ব এবং ইসলাম সম্পর্কে উদাসীন মুসলিম সমাজ আকৃষ্ট হয় আবারও দীনের প্রতি। এভাবে দীনের দাওয়াত দেয়ার মাধ্যমে ড. জাকির নায়েকও ধীরে ধীরে নিজ আধ্যাত্মিক গুরু আহমাদ দীদাতকে এক সময় ছাড়িয়ে যেতে লাগলেন।

ড. জাকির নায়েকের এতো অগ্রগতি দেখে স্বয়ং শেখ আহমদ দিদাত ১৯৯৪ সালে ডা. জাকির নায়েককে ‘দিদাত প্লাস’ হিসেব উল্লেখ করেন। জাকির নায়েকের দাওয়ার উপর যে বুুৎপত্তি অর্জিত হয়েছে এবং ধর্মসমূহের তুলনামূলক বিশ্লেষণের উপর তার যে পড়াশুনা তাতে জনাব দিদাত ২০০০ সালের মে মাসে জাকির নায়েককে দেয়া এক স্মারক উপহারের খোদাই-করে লিখেছিলেন, “"Son what you have done in 4 years had taken me 40 years to accomplish – Alhamdullilah." ৪৬ বছর বয়সের ড. জাকির নায়েক ইতোমধ্যেই কুরআন-হাদীস এবং বিভিন্ন ধর্ম গ্রন্থের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়াবলীর উপর প্রায় ১০০০ এরও বেশি বক্তব্য দিয়েছেন। গত ১০ বছরে ড. জাকির নায়েক কানাডা, ইউ কে, সৌদি আরব, মিশর, ইউ এক ইউ, ইতালি, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, ওমান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যাণ্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, বতসোয়ানা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হং কং, থাইল্যাণ্ড, গায়ানা, (দক্ষিণ আমেরিকা), ত্রিনিদাদ, ভারতসহ বিশ্বের প্রায় ১৫০ টি দেশে ইসলাম সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন ও ভুল ধারণার অপনোদন কল্পে যুক্তি, বিশ্লেষণ ও বিজ্ঞানের দ্বারা অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় বক্তব্য দিয়েছেন। ড. জাকির নায়েক অন্যান্য ধর্মের পন্ডিত ব্যক্তির সাথে সংলাপ ও বিতর্কে অংশ নিয়ে থাকেন। এর মধ্যে অন্যতম একটি বিতর্ক অনুষ্ঠান হয়েছিলো আমেরিকার শিকাগোতে ২০০০ সালের ১ এপ্রিল।

‘দি বাইবেল এন্ড দি কোরআন ইন দি লাইট অব সায়েন্স’ শীর্ষক এই বিতর্কে ড. জাকিরের প্রতিপক্ষ ছিলেন আমেরিকার একজন চিকিৎসক ও মিশনারি ব্যক্তিত্ব ডা. উইলিয়াম ক্যাম্পবেল। এই অনুষ্ঠানে ড. জাকির অত্যন্ত সফলভাবে উইলিয়াম ক্যাম্পবেলকে পরাজিত করতে সক্ষম হন। ড. জাকির নায়েকের আরেকটি ঐতিহাসিক বিতর্ক হয়েছিলো ভারতের ব্যাঙ্গলোরে। ‘প্রধান ধর্ম গ্রন্থের আলোকে হিন্দুইজম এবং ইসলাম’ শীর্ষক এই বিতর্কে তার প্রতিপক্ষ ছিলেন ভারতের আর্ট অব লিভিং ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা শ্রী রবী শংকর। এই বিতর্ক অনুষ্ঠানেও ড. জাকির নায়েক অত্যন্ত সুন্দরভাবে তাকে পরাস্ত করেন।

তার এসব বক্তৃতার অডিও ও ভিডিও ক্যাসেট দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে ইসলামপ্রিয় মানুষের কাছে তিনি প্রতিনিয়ত জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন। বাংলাদেশেও সম্প্রতি তিনি পরিচিতি পেয়েছেন। তাকে স্যাটেলাইট টিভি চ্যালেন ‘পিস’ টিভিতে প্রায় প্রতিদিনই দেখা যায়। এছাড়াও ডা. জাকির নায়েক ইসলামের উপর এবং তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের উপর বেশ কয়েকটি বই লেখেন।

তার প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ মধ্যে আছে, পিপলস টু দি মোস্ট কমন কোশচেনস আস্কড বাই নন-মুসলিম, কোরআন এন্ড মডার্ন সায়েন্স - কম্পেটিবল অর ইনকম্পেটিবল, উইমেনস রাইটস ইন ইসলাম - প্রোটেক্টেট অর সাবজুগেটেড, আল-কোরআন -শূড ইট বি রেড উইথ আন্ডারস্টান্ডিং, ইস দি কোরআন গডস ওয়ার্ড, ইসলাম এন্ড টেররিজম, কনসেপ্ট অফ গড ইন মেজর রিলিজিয়নস। সহজ ও সাবলীল ভঙ্গিমায় আলোচনাকারী প্রখ্যাত এই মনিষী নিজেকে সব সময় ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ অধ্যয়নকারী একজন ছাত্র হিসেবে পরিচয় দিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। সত্যের সাহসী উচ্চারণে তিনি বর্তমান বিশ্বের শীর্ষ সন্ত্রাসী আমেরিকার সন্ত্রাসবাদ সম্পকেও স্বরব। তিনি বলেন, বিন লাদেন যদি যুক্তরাষ্ট্রের মতো সন্ত্রাসী রাষ্ট্রকে সন্ত্রাসের মাধ্যমে হুমকির সম্মুখীন করে তাহলে তিনি বিন লাদেনের পক্ষে। এমনকি ইসলামের শত্র“ বা যুক্তরাষ্ট্রকে যে কোন উপায়ে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোকে সন্ত্রাস বলা হলে তিনি প্রত্যেক মুসলিমেরই সন্ত্রাসী হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন।

তার এমন সাহসী উচ্চারণের জন্য ব্রিটেনের কয়েকটি অনুষ্ঠানে তিনি যেতে পারেন নি। এছাড়াও মাযহাব ও মাসআলা সংক্রান্ত বিভিন্ন বক্তব্যের কারণে তিনি ভারত ও বাংলাদেশের কয়েকজন আলেম ও প্রতিষ্ঠানের দ্বারা সমালোচিত হয়েছেন। তবে সমালোচকরাও ভিন্ন ধর্মের লোকদের সাথে ড. জাকির নায়েকের যুক্তিপূর্ণ ও তথ্যবহুল বিতর্কের প্রশংসা করেছেন এবং তাকলীদ, মাযহাব ও ইখতিলাফপূর্ণ মাসআলার বিষয় বাদ দিয়ে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গবেষণা ও আলোচনায় অধিক মনোযোগ দেয়াই তার জন্য শ্রেয় বলে মন্তব্য করেছেন। দীনের এই দায়ী সকল প্রকার বিতর্কের উর্ধ্বে উঠে ইসলামের খেদমত করুন এবং মহান আল্লাহ তাকে হায়াতে তাইয়্যিবা দান করুন এই প্রত্যাশা করছি। ড. জাকির নায়েকের ব্যাপারে অভিযোগ সমূহের গতি-প্রকৃতি মিডিয়ার কল্যাণে দ্রুত থেকে দ্রুততার সাথে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া নামটি হলো ড. জাকির নায়েক।

বর্তমানে আমাদের দেশেও ড. জাকির নায়েকের সমর্থক, শুভাকাঙ্খীর সংখ্যা একেবারে কম নয়। দিন দিন এ সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। আমাদের দেশের ইসলামী অঙ্গনে এতোদিন ড. জাকির নায়েক কেবল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে অবস্থান করলেও বর্তমানে তিনি আলোচনার পাশাপাশি সমালোচনার লক্ষ্যবস্তুতেও পরিণত হয়েছেন। ড. জাকির নায়েকের বিপক্ষে আমাদের দেশের শীর্ষ উলামায়ে কিরাম বলে পরিচিত এবং হক্কানী আলেম বলে সুবিদিত বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে বেশ কড়া ভাষায় সমালোচনা ও বিরুদ্ধাচারণ শুরু হয়েছে। ভারতের আল্লামা সাইয়্যিদ খালিক সাজিদ বোখারী কর্তৃক ড. জাকির নায়েকের বিপক্ষে ‘হাকীকতে ড. জাকির নায়েক’ নামক একটি বই লেখার পর তার সূত্র ধরে আমাদের দেশে এব্যাপারে প্রথম কলম ধরেন, আমাদের সকলের শ্রদ্ধেয় আলেম ও শীর্ষ ইসলামী চিন্তাবিদ হযরত মাওলানা নূরুল ইসলাম ওলীপুরী দা. বা.।

তিনি সিলেট থেকে প্রকাশিত ‘কালকণ্ঠ’ নামক আঞ্চলিক একটি ম্যাগাজিনে পর পর দু’বার ’ড. জাকির নায়েক আলেম বলে আমি কোনো প্রমাণ পাইনি’ এবং ‘জাকির নায়েক সম্পর্কে আমার বক্তব্যের ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই’ শিরোনামে সাক্ষাতকার দেন। এরপর তার এই সাক্ষাতকারটির বক্তব্য লিফলেট আকারে দেশের বিভিন্ন মসজিদে ছাড়া হয়। আরো কিছু সংযোজনী দিয়ে এটিকে একটি ছোট বই আকারে ‘জাকির নায়েকের আসল চেহারা’ নামে প্রথম এডিশনেই ১২ হাজার কপি ব্যাপকভাবে বাজারে ছাড়া হয়। এরপর এ বিষয়ে গত মে মাসে ড. জাকির নায়েক সম্পর্কে ভারতের বেশ কিছু শীর্ষ উলামায়ে কিরামের কিছু মন্তব্য ও অভিব্যক্তি একত্র করে মুফতী মীযানুর রহমান কাসেমী দা. বা. “ডা. জাকির নায়েকের ভ্রান্ত মতবাদ : পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ” নামে একটি বই প্রকাশ করেন। আমাদের দেশের ইসলামী অঙ্গনে বহুল প্রচলিত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী ম্যাগাজিন ‘মাসিক আদর্শ নারী’ মত্রিকায়ও গত মে মাসে “ডা: জাকির নায়েকের দ্বীনী কথাবার্তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য?” শিরোনামে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

উপরোক্ত বই ও প্রতিবেদন গুলোতে বেশ কিছু পয়েন্ট উল্লেখ করে ড. জাকির নায়েকের ব্যাপারে সমালোচনা করা হয়েছে। কিন্তু দু:খজনক হলো অধিকাংশ পয়েন্টের ক্ষেত্রেই কোনো সূত্র উল্লেখ করা হয়নি। মাওলান নূরুল ইসলাম ওলীপুরীকে প্রায় ১০ বার ফোন করার পর তিনি কল রিসিভ করেন। এপাশ থেকে সাংবাদিক শুনে অনেকটা ক্ষেপে গিয়ে বলেন, আপনি সাংবাদিক না ওসি আমি বুঝব কি করে। আমি আপনাকে চিনিনা তাই কথা বলতে চাই না।

এ পাশ থেকে দ্বিতীয়বার অনুরোধ করা হয়, স্যার আপনার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে আমরা কথা বলতে চাই, প্লিজ এক মিনিট সময় দিন। এ কথা শুনে তিনি বলেন আমার অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে। আপনার সঙ্গে বাজে কথা বলার সময় আমার নেই। এই বলেই ওপাশ থেকে লাইন কেটে দেন। মুফতী মীযানুর রহমান কাসেমী’র কাছে ‘রাসূল সা. এর একাধিক বিবাহ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে’ কথাটি কোথায় আছে কিভাবে পেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা ভারতের ওলামায়ে কেরাম এভাবে লিখেছেন।

আমার বইটি আংশিক অনুবাদ। আমি ওলামায়ে দেওবন্দের অনুসরণ করেই বইটি লিখেছি। কিন্তু নিজে যাচাই না করে এভাবে লিখা কি ঠিক হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা অবশ্যই যাচাই বাচাই করেছি। কিন্তু তার বইতে দেয়া অনেক বক্তব্যেরই কোন সূত্র তিনি দিতে পারেন নি। মাসিক আদর্শ নারী পত্রিকার কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের গবেষণা প্রতিবেদনে প্রদত্ত জাকির নায়েক সম্পর্কে কয়েকটি মন্তব্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তার সূত্র জানতে চাইলে তারা পরে জানাবেন বলে আশ্বস্ত করেন।

এই সকল পত্রিকা, বই ও তার লেখক-প্রতিষ্ঠান সমূহ নি:সন্দেহে অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ও সম্মানীত হলেও তাদের বক্তব্যের বেশ কিছু অসঙ্গতি, দূর্বল ও অসত্য তথ্যের উপস্থিতি আমাদেরকে ব্যথিত করেছে। ড. জাকির নায়েকের প্রতি অতিরিক্ত কোন দরদ কিংবা পার্থিব স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা আগেও ছিলো না, এখনও নেই। কিন্তু একজন মুসলিম এবং দায়ী হিসেবে তিনি এখন পর্যন্ত যেই চেষ্টা-প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন -একজন পর্যবেক্ষক হিসেবে অবশ্যই তার নির্মোহ মূল্যায়ন হওয়া উচিত। একইভাবে ইসলামী আকীদা কিংবা কুরআন ও সুন্নাহর সুস্পষ্ট কোন বক্তব্যের ক্ষেত্রে তার কোন ভিন্নমত বা ভুল বক্তব্য পাওয়া গেলে অবশ্যই তার বিরোধী করতে হবে ঈমানের তাগিদেই। কিন্তু নফল ও মুস্তাহাব পর্যায়ের কোন বিষয়ের জন্য কিংবা ইমামদের মতবিরোধপূর্ণ কোন মাসআলায় নিজ ইমামের মতের কোন অংশের সাথে তার মিল না হলেই কাউকে ‘ষড়যন্ত্রকারী’ ‘ভিন্ন ধর্মের এজেন্ট’ বা তার বক্তব্যকে ‘অমার্জনীয় ধৃষ্টতা’ বলে কটাক্ষপূর্ণ মন্তব্য বা যৌক্তিক ও তথ্য প্রমাণহীন কেবল বিদ্বেষ মূলক আক্রমণাত্মক বক্তব্য প্রদান কোন মতেই সমর্থন যোগ্য হতে পারে না।

কিন্তু সমালোচনা গুলোতে প্রায় তাই করা হয়েছে। ড. জাকির নায়েকের ব্যাপারে সমালোচকদের বক্তব্য কথা-বার্তায় দেখা যাচ্ছে যে, আসলে তারা অনেকেই ড. জাকির নায়েক সম্পর্কে অনেক ক্ষেত্রেই না জেনে, ধারণা প্রসূত এবং তৃতীয় কারো বক্তব্যে প্রভাবিত হয়ে মন্তব্য করেছেন এবং অবশ্যই গুনাহগার হচ্ছেন। ড. জাকির নায়েকের ব্যাপারে আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি সমালোচনাকারী হযরত মাওলানা নূরুল ইসলাম ওলীপুরী সাহেব তার ‘জাকির নায়েকের আসল চেহারা’বইতে স্পষ্টভাবে এটা স্বীকার করেও নিয়েছেন। এতে তিনি বলেছেন, “আমি তার কোন অনুষ্ঠানও দেখতে যাই না, কোনো বই পুস্তকও পড়তে চাই না। ” (জাকির নায়েকের আসল চেহারা, পৃষ্ঠা নং ১৮) “জাকির নায়েক নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ বা মন্তব্যের কথা কখনো কি তার সঙ্গে শেয়ার করেছেন? কখনো যোগাযোগ করার ভাবনা আছে?” এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, “তিনি একজন আলেম, একথা আমার কাছে প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত ইসলাম ধর্ম অথবা ইসলামী শিক্ষা সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা বা মতবিনিময়ের জন্য তার সঙ্গে আমার যোগাযোগের কোনো প্রশ্নই আসে না।

” (জাকির নায়েকের আসল চেহারা, পৃষ্ঠা নং ১৯) একই বইয়ের ২৩ পৃষ্ঠায় তিনি এটাও স্বীকার করেছেন যে, কেবলমাত্র তৃতীয় পক্ষের থেকে ‘শোনা’ কথার উপর ভিত্তি করেই তিনি সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমি যেহেতু তার বইও পড়িনা, প্রোগ্রামও দেখিনা, তাই এগুলো যারা পড়েন বা দেখেন তাদের বাচনিকের ভিত্তিতেই আমার মন্তব্য করতে হবে। ” এই যদি হয় একজন শীর্ষ আলেমের পক্ষ থেকে কারো ব্যাপারে সমালোচনার ভিত্তি, তাহলে কি অবস্থা আমাদের, ভাবতে খুবই কষ্ট লাগে। এছাড়াও ড. জাকির নায়েকের ব্যাপারে আমাদের দেশের যারা সমালোচনা করেছেন তারা যে সকল বিষয়ে সমালোচনা করেছেন তার অধিকাংশই জাকির নায়েক কখন কোথায় বলেছেন তার কোন উদ্ধৃতি নেই। অনেক ক্ষেত্রে জাকির নায়েকের ব্যাপারে এমন কথা বলা হয়েছে যা আসলে জাকির নায়েক বলেন নি।

আবার অনেক ক্ষেত্রে জাকির নায়েকের একটি দীর্ঘ একটি আলোচনার মাঝখান থেকে বিচ্ছিন্নভাবে অস্পষ্ট করে উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে যার মাধ্যমে আসলে জাকির নায়েকের মুল বক্তব্যকে বিকৃত করা হয়েছে। অনেক সমালোচনা করা হয়েছে অযৌক্তিকভাবে কেবলমাত্র ধারণার উপর ভিত্তি করে। আর বাকি অধিকাংশ ইখতিলাফ তথা মতবিরোধপূর্ণ মাসআলার ক্ষেত্রে ক্ষেত্রেই ড. জাকির নায়েক কর্তৃক কুরআন ও হাদীসের রেফারেন্স দিয়ে বিভিন্ন মত উল্লেখ শেষে তার মধ্যে একটিকে প্রাধান্য দেয়ার বিষয়টিকে বলা হয়েছে মনগড়া ব্যখ্যা বা কুরআন-হাদীসের অপব্যখ্যা। এসম্পর্কে এখন সমালোচকদের কিছু সমালোচনা ও আমার স্বল্প জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আলোকে তার বিপরীত বাস্তবতা বা তুলে ধরা হচ্ছে। অনেক পাঠকই হয়তো আমার দেয়া জবাবের চেয়েও ভালো জবাব দিতে পারবেন।

তাদের জন্য শেয়ার করার সুযোগ রইলো। ১। “জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে ফতোয়া, কারণ তিনি নাকি ওসামা বিন লাদেনের সমর্থক!” হাস্যকর কথা। যারা তাঁর ‘সন্ত্রাসবাদ কি মুসলিমদের একচেটিয়া সম্পত্তি’ লেকচার দেখেছেন, তারাই জানেন এখানে প্রসঙ্গ ছাড়া তাঁর কথা তুলে দেয়া হয়েছে। প্রসঙ্গ জানলেই বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে যায়।

তাঁর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ তিনি বলেছেন, সব মুসলিম কে সন্ত্রাসী হতে হবে... এটাও প্রসঙ্গ ছাড়া উক্তি। একই লেকচার। ২। “জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে ফতোয়া, কারন তিনি নাকি কুরআন-বিরোধী শিক্ষা দেন। ” তিনি কুরআন-হাদিস থেকে রেফারেন্স দেন, আর তাঁর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ!!!! ৩. “জাকির নায়েক আলেম নন।

” (মাওলানা নূরুল ইসলাম ওলীপুরী লিখিত, জাকির নায়েকের আসল চেহারা, পৃষ্ঠা নং ৫) = ‘ড. জাকির নায়েক আলেম নন’ -এই কথাটি কতটুকু সত্য? যারা বলছেন যে, তিনি আলেম নয়, তাদের কাছে আলেম হওয়ার মানদন্ড ও মাপকাঠি কি? আলেম হওয়ার জন্য কোন কওমী মাদ্রাসায় পড়াই কি একমাত্র পথ? আমরা জানি আরবদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের স্কুল-কলেজ আমাদের দেশের স্কুল-কলেজের মতো নয়। সেখানকার স্কুল-কলেজের সিলেবাস থেকে আমাদের দেশের স্কুল-কলেজের সিলেবাস রাতদিন ব্যবধান। আমার জানামতে সউদী আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশের সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে মাদরাসাহ বলা হয়। আর সেই সকল প্রতিষ্ঠানের পড়াশোনা আমাদের অনেক কওমী মাদ্রাসার চেয়েও যে শ্রেষ্ঠতর, তা না মেনে উপায় নেই। সুতরাং কুরআন-সুন্নাহর উপর দীর্ঘ পড়াশোনার মাধ্যমে যে কেউ আলেম হতে পারেন।

ড. জাকিরও এই হিসেবে আলেম বলে গণ্য হতে পারেন। উপরন্তু তার গবেষণা প্রতিষ্ঠানে আরব-আজমের এক ঝাঁক নবীন ও প্রবীণ মুহাক্কিক আলেমের স্বরব উপস্থিতি বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয়ার মতো। ড. জাকির নায়েকের প্রতিষ্ঠান ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন বা আইআরএফ এর গবেষক প্যানেলে যে সকল আলেম আছেন তার কয়েকজন হলেন, আল্লামা সিরাজ ওয়াহহাজ, হুসাইন ইয়ে, ইয়াসির কাজী, সালীম আল আমরী, আসীম আল হাকিম, শেখ জাফর ইদ্রিস, রিয়াজ আনসারী, মুহাম্মাদ আল জিবালী, ওয়াজদি গাজ্জায়ি, ওয়ালিদ বাসইউনি প্রমুখ বিশ্ববরেণ্য আলেম। যাদের অনেকেই মধ্যপ্রাচ্যের শীর্ষ ইসলামী ব্যক্তিত্ব। ড. জাকির নায়েকের গবেষণা ও আলোচনা প্রস্তুত করার অনেক ক্ষেত্রেই এই সকল বিজ্ঞ আলেমের ভূমিকাও থাকে।

এছাড়াও দীনী গবেষণা ও পর্যালোচনার জন্য রয়েছে বিচক্ষণ আলেমদের তত্ত্বাবধানে আলাদা টীম। ড. জাকির নায়েকের সমালোচকগণ একটু কষ্ট করলেই এই সকল তথ্য জানতে পারতেন। কিন্তু তারা তা না করেই সম্পূর্ণ কল্পনা প্রসূত বলে দিয়েছেন যে, জাকির নায়েক আলেম নন, তার সাথে আলেমদের সম্পর্ক নেই। যা নি:সন্দেহে দু:খজন। আমাদের দেশের অনেক আলেমের মধ্যকার এ ধরণের একটি সংকীর্ণ মানসিকতা প্রায় সময় কাজ করে থাকে।

কারো মতের সাথে পুরোপুরি না মিললেই তাকে আলেমদের কাতার হতে আলাদা করে ফেলা হয় তার গবেষণায় আরবের অনেক বড় বড় আলেমের সম্পৃক্ততা থাকলেও তাদেরকে ধর্তব্যের বাইরে রাখা হয়। আল্লাহ আমাদের এই সংকীর্ণ মানসিকতা পরিহার করার তাওফীক দিন। আর যদি ড. জাকির নায়েক যদি বিজ্ঞ আলেম নাও হয়ে থাকেন তদুপরি পবিত্র কুরআনের সূরায়ে তাওবার ১২২ নং আয়াতের মাধ্যমে আমরা জানি যে, দীনের উপর তাফাক্কুহ বা গভীর জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজে আইন নয়, বরং ফরজে কিফায়া। কিন্তু সূরায়ে ইউসূফের ১০৮ নং আয়াত, সূরায়ে নাহল এর ১২৫ নং আয়াতসহ আরো অনেক আয়াতের দ্বারা এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে প্রতিটি মুসলিমের জন্য দীনের দাওয়াত দেয়া ফরজ। অন্যের কাছে দীনের কথা পৌঁছে দেয়ার নির্দেশ রাসূল সা. তার হাদীসেও দিয়ে গেছেন।

সুতরাং ড. জাকির নায়েক যদি আলেম নাও হন, তিনি তো একজন মুসলিম, আর মুসলিম হিসেবে কুরআন ও হাদীসের নির্দেশনার আলোকে তিনি তার জানা অধ্যায় প্রমাণ সহকারে অন্যদের কাছে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করছেন। (আর ড. জাকির নায়েকও তার বিভিন্ন আলোচনায় নিজেকে সব সময় বিভিন্ন ধর্মের একজন ছাত্র বলে পরিচয় দেন, ফকীহ বা বিরাট মুহাদ্দিস হিসেবে নন। ) এটা কি করে নিন্দনীয় ও সমালোচনার বিষয় হতে পারে ? ৪. “তিনি পড়াশোনা করেছেন খৃষ্টান মিশনারী ও হিন্দুদের স্কুল-কলেজে। ” এরপর তিনি ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা করেছেন এবং কুরআন হাদীস দিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন। (মুফতী মীযানুর রহমান কাসেমী লিখিত বই, ডা. জাকির নায়েকের ভ্রান্ত মতবাদ, পৃষ্ঠা ০৬) = উলামায়ে কিরামগণ এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, শরীয়তের কোন বিধান লংঘন না হলে স্বাভাবিকভাবে ও সাধারণত: স্কুল-কল।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৩৮ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.