আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জাকির আবু জাফরের বাংলাদেশ

আফসার নিজাম ক. বাংলা সহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদের উত্তরাধীকার আমরা বহন করি। এই পদগুলো বাংলা সাহিত্যের ক্রম বিকাশকে সমৃদ্ধ করে উন্নত সাহিত্য রচনার পথকে অগ্রসর করে দেয়। অগ্রসরমান লেখাগুলো আমাদের পরিণত বয়সে সমৃদ্ধ করলেও আমাদের বেড় উঠার স্মৃতিগুরো শিশু-কিশোর সাহিত্য চর্চা। কারণ প্রথম পাঠ থেকেই শিশু-কিশোর সাহিত্য আমাদের মননকে সজাগ করে তোলে। করে তোলে দেশ-প্রেমিক ও স্বাজাত্ববোধে সমৃদ্ধ।

আর পরিচয় করিয়ে দেয়Ñ যে দেশে বেড়ে ওঠি তার আকাশ-বাতাস, নদ-নদী, পাখ-পাখালী, বান-বাদার, পাহাড়-প্রকৃতি, মা-বাবা, আÍিয়-স্বজন, শত্র“-মিত্র, উৎসব-আয়োজন। খ. বেশ ক’বছর আগে এক আড্ডায় কবি আবদুল হাই শিকদার পল্লী কবি জসীম উদদীনের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘সন্ত্রাসী বুশ যদি গোটা বাংলাদেশকে হিরুসিমা ও নাগাসিকার মতো পরমানুবিক বোমা মেরে ধ্বংস করে দেয়, আর এই ধ্বংসস্তুপের মধ্যে যদি জসীম উদদীনের নকশী কাঁথার মাঠ ও সোজন বাধিয়ার ঘাট টিকে যায়। তা হলে পুরো বাংলাদেশকে ঠিক আগের মতোই নতুন করে তৈরি করা যাবে। ’ সত্যিই চমৎকার উদাহরণ দিয়েছেন কবি হাই শিকদার। জসীম উদদীন সমৃদ্ধ বাংলাদেশের ছবি আঁকার পরেও জীবনানন্দ দাস এলেন আর এক বাংলাদেশ নিয়ে।

এই বাংলাদেশ জসীম উদদীনের বাংলাদেশ নয়। কিন্তু বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশের পর আর কি থাকতে পারে ছোট্ট দেশটির রূপ বর্ণনা করার। কিন্তু তারপরেও সেই সিলসিলায় কবি আল মাহমুদ এলেন গ্রাম বাংলার শব্দভাণ্ডার নিয়ে। তিনি তার শব্দবীজ রোপন করার সময় বরাবরই সজাগ ছিলেন যেন কেউ তাকে জসীম উদদীন বলতে না পরে।

বাংলাদেশের রূপ-বৈচিত্র, জীবন-জটিলতা, কাম-ক্রধ, ধ্বংস-নির্মাণে আল মাহমুদের জসীম উদদীনের ভীতি থাকলেও কবি জাকির আবু জাফরের সেই ভীতি একেবারেই আক্রান্ত করতে পরেনি। তিনি সাহস প্রদর্শন করলেন আর জসীম উদদীন, জীবনানন্দ, আল মাহমুদকে আÍস্থ করে ঠিক অন্যপাশ থেকে আলো ফেললেন চৌষট্টি হাজার বর্গমাইলে বাংলাদেশর ওপর। গ. হৃদয়ের শিকড় কতটা প্রথিত হলে অন্য হৃদয়ের প্রবেশ করা যায়। প্রবেশ করা যায় হৃদয়ের পলি, দোঁয়াশ ও এটেল জমির ভেতর। এবং একটা দেশকে কতটা ভালোবাসলে দেশের প্রতিটি অনু-পরমানু আপন মনে হয়।

আপন মনে হয় একটি ক্ষুদ্র কীট-পতঙ্গও। এরকম হাজার অনুসঙ্গের ভালোবাসা ধারণ করে আছে কবি জাকির আবু জাফরের জোনাকি আগুন গ্রন্থের ছড়া কবিতায়। এই গ্রন্থটি যেনো গোটা বাংলাদেশের তৈলচিত্র। কবি জাকির আবু জাফরের বাংলাদেশ চিত্র শুধু এই ছড়া কবিতায় নয়, তাঁর সৃষ্ট গান, কবিতা, গল্প, উপন্যাস এবং সাহিত্য বিষয়ক গদ্যসমূহে। এই যে গোটা বাংলাদেশ জাকির আবু জাফরের হৃদয়ে ধারণ করে আছে তা কখন কিভাবে তাঁর হৃদয়ে প্রবেশ করেছে তার উত্তর কবি নিজেই দিতে পারেননি।

দেশের জন্য ভালোবাসা ঘোর কেমন করে বাঁধলো বাসা জানি না উত্তর সত্যি যে শিশুকালে একটি ভালোলাগা, ভালোবাসা আমাদের ভেতর জমা হয়, তার সন-তারিখ মনে করা যায় না। মুছে যায় সঠিক সময়ের স্মৃতিটুকু। কিন্তু সে যে ভালোলাগা ভালোবাসা তার রেশগুলো আমরা হৃদয়ে গভীর যতেœ লালন করি আমৃত্যু। কবি জাকির আবু জাফরও তেমনি হৃদয়ের ভেতর লালন করেছেন বাংলাদেশ। নিজের হৃদয়ের ভেতর যখন একটা বাংলাদেশ দেখেন তখন তাঁর কল্পনাশক্তি সবার হৃদয়ে আর একটা বাংলাদেশ খোঁজার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে।

তখন তার হৃদয়ের কল্পনা পৃথিবীর সব মানুষের হৃদয়ে যেনো একটি করে বাংলাদেশ আঁকা থাকে। আর যখন মানুষের হৃদয় ছেনে সে বাংলাদেশের ছবি খুঁজে পায় না তখন তার মন মেঘলা আকাশ হয়ে হয়ে যায়। আর তখনি কবি প্রশ্ন করে রবীন্দ্রনাথ আপনি তো এই বাংলাদেশের ছেলে কোন খেয়ালে উড়াল দিলেন সবুজ ছায়া ফেলে বা দেশের জন্য ভালোবাসা একটুও নেই তারাও এখন দেশ দরদী বিরাট নেতা তিনি বরীন্দ্রনাথ বা নেতাদের প্রশ্ন করেও থেমে থাকেননি। তিনি অনুভব করেছেনÑ দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া, দেশ সেবার নামে নিজের সেবা করা মানুষ যেমন দেশপ্রেমিক নয়, তেমনি বাংলাদেশের উৎসব, খেলা-ধুলার সাথেও যারা সম্পৃক্ত নয় তারা দেশপ্রেমিক নয়। তাই তিনি আবারও প্রশ্ন করেনÑ তুমি কি না করছো দাবি বাংলাদেশের ছেলে দিন কাটে না ডাঙগুলি আর কানামাছি খেলে আর যারা পর্যটক হয়ে বাংলাদেশের রূপ-বৈচিত্র অবলোকন করলো না, দেখলো না চেয়ে মুগ্ধ নয়নে ভোরের বাংলাদেশ তাদের প্রতিও প্রশ্ন করেন কবি কাঁঠাল পাতায় হয়নি দেখা প্রভাত আলোর চিক বলো তুমি বাংলাদেশের কেমন নাগরিক এসব প্রশ্ন করে কবি কিন্তু থেমে থাকেননি।

আবার এইসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজতে গিয়ে না পেয়ে হতাশায় আক্রান্ত হতে দেখি না। সে ভোরের আড়মোড়া ভেঙ্গে আকাশের মতো বিশাল আশা নিয়ে জেগে ওঠে আর বলে উঠেন। শুনুন শুনুন রবীন্দ্রনাথ আপনি এসে দেখুন বাংলাদেশের হৃদয় নিয়ে নতুন করে লেখুন। ঘ. জাকির আবু জাফরের এই চমৎকার ছড়া-কবিতার গ্রন্থটি প্রচ্ছদ করেছেন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী মুবাশ্বির মজুমদার এবং ছড়ার সাথে দেখার সংযোগ ঘটিয়েছে তরুণ চিত্রশিল্পী খলিল রহমান। বইটি প্রকাশ করে পাঠকদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি লিমিটেড।

যার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র সত্তর টাকা। বইটি পাঠ করে আশা করি পাঠকের পাঠতৃষ্ণা নিবারণ হবে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৯ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.