আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাঝে মাঝে যদি তব দেখা পাই - ২য় পর্ব

[২] আগেই বলেছি আমি একেবারেই সাধারণ একটা ছেলে। তবে তার মাঝে একটা ছোট্ট ‘কিন্তু’ আছে। আমার শতকরা নিরানব্বই ভাগই ঠিক… খালি সুন্দরী মেয়ে দেখলে চোখ ফেরাতে পারি না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারি আমি, অবশ্যই যদি মেয়েটা সুন্দরী হয়। তবে মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকতে আমার কোন সমস্যা না হলেও, প্রেম বিষয়ক ব্যাপার-স্যাপারে আমার ঘোরতর আপত্তি আছে।

আমার অনেক বন্ধু ই গার্ল ফ্রেন্ড নামক প্রজাতির পেছনে যে হারে টাকা ঢালে, আমার সারা মাসের খরচাপাতিও এত হয় না । তবে আমার এসব প্রেমিক বন্ধুগণ অবশ্য প্রায়ই দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগে প্রেমিকাদের কি উপহার দিবে তা ভেবে । তখন তাদের ত্রাণকর্তা হয়ে আসি আমি । যেমন- ভালোবাসা দিবসে রাহাত আস্ত একটা ফুলের দোকানের সব ফুল কিনে রেখেছিল, মনীষা কে দেয়ার জন্য । আবার আবির, রাজিয়ার জন্মদিনে অনেকগুলো মোমবাতি জ্বালিয়ে বড় করে লিখেছিল ‘HAPPY B’DAY 2 U RAZIA’…(আসলে মোমবাতির সংখ্যা একটু কম পরে গিয়েছিল… তাই birthday to you না লিখে b’day 2 u লিখে সাজিয়েছিল)।

বলা বাহুল্য, এরকম ‘ভয়াবহ উপহার’ দেওয়ার পরিকল্পনাটা আমারই ছিল । আমার বন্ধুরা আমার এসব আইডিয়া শুনে খুশিতে বাকবাকুম করতে করতে বলে, “কোন খান থেকে পাস মামা, এইসব আইডিয়া ! অস্থির । পুরাই অছাম !” আমিও আমার ‘বত্রিশ দন্ত বিকশিত হাসি’ হেসে মনে মনে বলি, “বাপের থেকে টাকা পাস আর উড়াস ! যেদিন বুঝবি টাকা উপার্জন করা কি জিনিস… সেদিন বুঝবি ঠেলা । ” আর মুখে বলি, “এই তো মামা । এই আর কি।

” তো যা বলছিলাম । একদিন বিকাল বেলা । টিউশনিতে গিয়ে ছাত্রের বাসায় বাইরে থেকে তালা মারা দেখে ফিরে এসেছিলাম । টি এস সি থেকে চারুকলার দিকে চক্কর মারছিলাম । উদ্দেশ্য: যথারীতি…মেয়ে দেখা ।

রাস্তা পার হয়ে চারুকলার গেটের সামনে এসে দাঁড়ালাম । কাছেই একজন বাদাম-ওয়ালাকে দেখে ডাক দিলাম । “দু’টাকার বাদাম দে…” “দুই টেকায় তো বাদাম পাইবেন না । ঠোঙ্গাটা দিতাম পারি । ” কথাটা শুনে ছেলেটার দিকে তাকালাম ।

বিল্লাল । আমার পরিচিত বাদাম-বিক্রেতাদের মধ্যে মহা বিচ্ছুদের একজন । এমন সব কথা বলে যে, ভ্যাবাচেকা না খেয়ে উপায় নেই । “তোর ঠোঙ্গাও যে ইম্পোর্ট কোয়ালিটির, এইটা তো জানা ছিল না । দে পাঁচ টাকার বাদাম দে ।

” “ভাইজান দশ টেকার দেই? তাইলে আরও কয়ডা বেশী দিমু । ” বিল্লাল প্রতিদিনই এই কথাটা বলে । ও ভালোমতোই জানে বিকেলে আমার এই রমণী-প্রদর্শনীর সময়ে, আমার পকেটে পাঁচ টাকার বেশী থাকে না । তারপরও এরকম কথা বলে আমাকে বিব্রত করে দেয়াটা বিল্লাল এর কাছে একটা মজার ব্যাপার । “পাঁচ টাকায় যদি দশ টাকার বাদাম দিতে পারিস, দে তাহলে ।

” বিল্লাল আর কিছু না বলে বাদাম মাপতে শুরু করে দিলো । ঠোঁটের কোণে একটু হাসির ছোঁয়া; কিন্তু কোন হতাশা বা ক্লান্তির ছায়া নেই তার চোখেমুখে । কোথায় যেন জাফর ইকবাল স্যারের এই লেখাটা পড়েছিলাম-- একটা কিশোর কিংবা কিশোরীকে কলা, ঝালমুড়ি, চিনা বাদাম, কিংবা খবরের কাগজ বিক্রি করতে দেখি, তাদের মাঝে বিন্দুমাত্র হতাশা দেখতে পাই না, জীবন ধারণের জন্য তারা প্রায় যুদ্ধ করে যাচ্ছে। ‘হতাশা’ নামের এই ‘বিলাসী’ শব্দটি শুধু সেই সব তরুণদের, যারা পরিবার, সমাজ আর শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে। বিল্লালের মত ছেলে-মেয়েদের দেখে কথাটার সত্যতা টের পাই আমি ।

বিল্লালের দিকে ভালোমতো তাকিয়ে দেখি আজও একটা ছেঁড়া শার্ট, আর রঙ-ওঠা লুঙ্গি পরে আছে । গত ঈদের সময় আমার জমানো টাকা দিয়ে ভালো দেখে একটা সাদা শার্ট আর একটা নীল প্যান্ট কিনে দিয়েছিলাম ওকে । নতুন জামা-কাপড় পেয়ে সাথে সাথে আমার পা ছুঁয়ে সালাম করতে গিয়েছিলো । কিন্তু পরদিনই আবারও সেই আগের পুরনো জামা-কাপড় পরে বাদাম বেচতে হাজির বিল্লাল ! নতুন জামা-কাপড় পরে নি কেন… তা জিজ্ঞেস করায় ওর উত্তরটাও ছিল চমৎকার । “বড়লোক গো লাহান জামা-কাপড় পিন্দা যদি বাদাম বেচতাম আহি, তাইলে তো মাইনষে কনফিউজড হইয়া যাইব যে, আমি বাদাম বেচতাম আইছি নাকি কিনতাম, এইডা ভাইবা ।

” বিল্লালের কথায় যুক্তি ছিল । তাই আমিও আর কিছু বলিনি । ওর হাত থেকে বাদাম নিয়ে চারপাশে চোখ বুলাতে লাগলাম । আমার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিয়ে বিল্লাল বলে উঠলো, “ভাইজান কি হুন্দরী আফা খুঁজেন ?” আমি মহা বিরক্ত ভাব নিয়ে বিল্লালের দিকে তাকিয়ে একটা রাম-ধমক দিবো নাকি ভাবতে ভাবতে বাদাম চিবুতে লাগলাম । হঠাৎ করেই একটা মেয়েকে দেখে বাদাম চিবুতে ভুলে যাই আমি ।

কবিগুরুর মত করে মনে মনে বলে ফেলেছিলাম, “মুখের পানে চাহিনু অনিমেষে, বাজিল বুকে সুখের মত ব্যথা। ” হা করে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই আমার সামনে দিয়ে চলে গেল স্বর্গের অপ্সরীর বাংলাদেশী ভার্সন । বাদামের কথা ভুলে গিয়ে মেয়েটার পিছু নিলাম আমি । মনে মনে ভেবে ফেললাম, যে করেই হোক এই মেয়েকেই বিয়ে করে ফেলবো । প্রেম-টেম করে বেহুদা সময় নষ্ট করার কোন মানে হয় না।

এক্কেবারে ডাইরেক্ট একশন ! (ভেবে বসবেন না যেন, যে, এই মেয়েটিকে দেখেই আমার প্রথম ‘বিয়ে করে ফেলবো’ টাইপ অনুভূতি হয়েছিলো । আরও অনেক মেয়েকে দেখেই আমার এরকম অনুভূতি হয়েছে । এই মেয়েটা খুব সম্ভবত ২৬/২৭ নাম্বার হবে। ) মেয়েটার পিছু পিছু শাহবাগ মোড় পর্যন্ত গেলাম । মেয়েটা তার বান্ধবীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসে উঠে চলে গেল ।

আর আমি তাকিয়েই থাকলাম । বাসের জানালার মধ্য দিয়ে মেয়েটার মুখটা খুঁজে সেদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হুঁশ হল যে, মেয়েটার সম্পর্কে কিছুই জানি না আমি । তারপর খুঁজতে লাগলাম মেয়েটার বান্ধবীকে । একে দিয়ে ওকে পটানোর চেষ্টা আর কি । পেলাম মেয়েটাকে ।

বুদ্ধিজীবী টাইপ চেহারা । দেখেই বোঝা যায়, দিনের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে পারলে ছাব্বিশ ঘণ্টাই লেখাপড়া করে -এই টাইপ ‘মহিলা’। একে কিছু জিজ্ঞেস করা ঠিক হবে কি না, তা নিয়ে দ্বিধায় ভুগছিলাম । হয়তোবা আমি মর্ত্যের অপ্সরীর কথা জিজ্ঞেস করব, আর বুদ্ধিজীবী উল্টো আমাকে জিজ্ঞেস করবেন,“পৃথিবীর ওজন শূন্য... প্রমাণ কর” । কিন্তু কি আর করা ।

মর্ত্যের অপ্সরীর সম্পর্কে খোঁজ না নিয়েও পারছি না । বুকে বিসমিল্লাহ বলে ফুঁ দিয়ে বুদ্ধিজীবীর দিকে এগিয়ে গেলাম । সাহস করে ডাক দিলাম । “হ্যালো, চশমা আপু । শুনছেন ?” বুদ্ধিজীবী সঙ্গে সঙ্গে আমার দিকে ফিরে তাকালেন ।

আমি আমার বত্রিশ দন্ত বিকশিত হাসি হেসে এগিয়ে গেলাম । “আমাকে বলছেন ?” (কণ্ঠে ঝাঁঝ) “জী আপু, আপনি ছাড়া আর কে আছে এখানে আপুর মত...” আমি আমার দাঁত প্রদর্শনী অব্যাহত রাখলাম। “বুইড়া ধামরা ছেলে আমাকে আপু ডাকে!!! ঐ কে রে তুই? কি চাস ? বড় বড় চুল রেখে আর পাঞ্জাবী পরে ঘুরছিস কেন ? ফকির নাকি ? ভিক্ষা লাগবে? হবে না, যা ভাগ । ” খাইছে আমারে! আপনি থেকে সরাসরি তুই! অবশ্য আমার খোঁচাখোঁচা দাঁড়ি-চুল-পাঞ্জাবীর প্রতি বিদ্বেষ স্বরূপ কাজের লোক থেকে শুরু করে ফকির-মিসকিন পর্যন্ত ডাকা হয়েছে । তবে এইসব ব্যাপার না ।

সিস্টেম আছে । স্রষ্টার এত সুন্দর সৃষ্টি তারা, এইসব বলতেই পারে । “আপু যে কি বলেন... লালন ফকিরও তো লম্বা লম্বা চুল-দাঁড়ি-আলখাল্লা পরে ঘুরে বেড়াতেন । উনি কি ভিক্ষুক ছিলেন নাকি !” “ওরে আমার ঢাকাইয়া লালন ফকির রেহ ! লালন ফকির তো রাস্তা-ঘাটে দাঁড়িয়ে মেয়েদের ডেকে ডেকে কথা বলে, তাই... না ?” কত চ্যাটাং চ্যাটাং করে রে ! ইচ্ছে করছে বলে ফেলি, “খালাম্মা, আপনার প্রতি আমার কোন ইন্টারেস্ট নাই । একটু সাহায্য করেন, তারপর ফোটেন ।

” কিন্তু উনাদের ব্যাপারে আমার অসীম ধৈর্য । তাই, অসহায়ের মত মুখ কাঁচুমাচু করে বললাম, “কি যে বলেন আপু। আপনারা হলেন আমাদের সিনিয়র । আপনারা যদি একটু সাহায্য না করেন, তাহলে আমরা কোথায় যাব বলেন ? বুঝেনই তো ব্যাপারটা। ” বুদ্ধিজীবী এবার কিছু না বলে চুপচাপ আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন।

“মৌনতং সম্মতির লক্ষনং। ” আমি আমার এবার আসল কাজের কথায় আসলাম। “আপু, একটু আগে যে আপনার সাথে একটা মেয়ে গেল, ওর নাম কি ?” “তা দিয়ে তোমার কি ?” তুই থেকে তুমি ! প্লাস পয়েন্ট । “না মানে আপনি যদি দয়া করে মেয়েটার নামটা বলতেন... ওর রিলেশনশিপ স্ট্যাটাসটা ... ওর বাসার ঠিকানাটা... ওর ফেসবুক আই.ডি. টা যদি দিতেন আর কি...” “বাহ্‌ ! দারুণ তো । শুধু এইটুকুতেই চলবে ? তারপর জিজ্ঞেস কর, ও কি খায়, কখন ঘুমায়, কোন রঙ পছন্দ করে...” আমি খুশিতে আট এর বর্গ চৌষট্টি খানা হয়ে বললাম, “এইতো আপু, বুঝতে পারলেন ব্যাপারটা ।

এখন যদি একটু বলেন আর... কি...” “জানের মায়া থাকলে, ভাগ ফালতু...” ব্যাপারটা কি হল কিছুই বুঝলাম না ! বোকার মত বুদ্ধিজীবীর দিকে তাকিয়ে থাকলাম । তখন উনি নিজেই বললেন, “ওর জামাই RAB-2 তে আছে। ” ‘মর্ত্যের অপ্সরীর বাংলাদেশী ভার্সন’ এর প্রতি আমার ভালবাসা সাথে সাথে ন্যাপথালিনের মত উবে গেল! বরং একটু একটু দুঃখ হতে লাগল আমার, মেয়েটার জন্য। এইটুকু একটা মেয়ে, তারও নাকি আবার জামাই আছে! (যদিও বাংলাদেশে আজকাল ‘সিঙ্গেল’ মেয়ে, রয়েল বেঙ্গল টাইগারের থেকেও বেশী দুষ্প্রাপ্য !) আবার সেই জামাইও নাকি র্যা বে আছে, না জানি, কবে, কিভাবে মেরে ফেলে ! চোখমুখে একটা দুঃখী দুঃখী ভাব তোলার চেষ্টা করে জিজ্ঞেস করলাম, “আহারে। কি করেছিলেন উনি? ক্রসফায়ার হবে কবে?” “ওহে বেকুব... ওর জামাই র্যাষবের ইন্সপেক্টর ।

জানের মায়া থাকলে পালা !” পুরাই টাস্কি খাইলাম বুদ্ধিজীবীর কথা শুনে! যা ই হোক...য পলিয়তি স জীবতি । তাড়াতাড়ি ভাগার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলাম । “আচ্ছা আপু, যাই । আসসালামু আলাইকুম...” বলেই হন হন করে টি.এস.সি’র দিকে হাঁটা দিলাম । পেছনে বুদ্ধিজীবী ডেকেই যাচ্ছেন, “ঐ পাঞ্জাবী... ঐ বেটা পাঞ্জাবী...” কি নামে ডাকে রে ! নেক্সট টাইম, এই মেয়ে থেকে দশ হাজার হাত দূরে থাকতে হবে ।

প্রায় দৌড়াতে শুরু করে দিলাম আমি । ‘অপরাজেয় বাংলা’র কাছাকাছি এসে ক্লাসের কিছু বন্ধুর সাথে মিশে গেলাম আমি । পিছনে তাকিয়ে ‘দজ্জাল মহিলা’র হাতে ধরা খাওয়ার মত বোকামি করলাম না । তবে, জীবনে বোধহয় বড় ধরণের কোন পাপ করে ফেলেছিলাম । যার কারণে, বুদ্ধিজীবী ঠিকই আমাকে খুঁজে বের করে ।

তার উপর, রাস্তা-ঘাটে, ক্যাম্পাসে, ক্যান্টিনে যেখানেই পেত, “ঐ পাঞ্জাবী, ঐ বেটা পাঞ্জাবী” করে হাঁক দিয়ে উঠে। (এইটুকু মেয়ের গলায় এতো জোর আসে কিভাবে, সেটা নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করা দরকার বলে, আমার ধারণা) । আর শুধু এটুকুই না । আশেপাশের যত মানুষজন বা আমার যত বন্ধু-বান্ধব আছে, তাদের শুনিয়ে শুনিয়ে বলতে থাকে যে আমি অর্পা’র(যার সম্পর্কে জানতে গিয়ে আজ আমার এ হাল) প্রেমিক । কি এক যন্ত্রণা ! আমার চোখ যখন রয়েছেই, আমি মেয়েদের দিকে তাকাতেই পারি ।

এটা বলে বেড়াবার কি হল ! আমার সব মান-ইজ্জত (যাও একটু ছিল), সব ধুলোয় মিশিয়ে দিল এই হতচ্ছারী, দজ্জাল মহিলা । একদিন ফজল মামুর চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম । চা শেষ করে যখন সিগারেটটা ধরাতে যাবো, সেই সময়ই টের পেলাম, পেছন থেকে কে যেন, আমার চুল ধরে টানছে । চমকে উঠে পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখি, সেই হতচ্ছারী, দজ্জাল, বুদ্ধিজীবী আমার চুল ধরে টানছে । ততদিনে অবশ্য এই এলিয়েনের নাম জানা হয়ে গেছে আমার।

লাবণী । লাবণী আমার দিকে এমনভাবে তাকাল, যেন কিছুই হয় নি । রাস্তাঘাটে একটা ছেলের চুল ধরে টানা যেন খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার । “কি করিস?” বুদ্ধিজীবীর চশমার পাওয়ার কমে গেছে নাকি, বুঝতে পারলাম না। কিছু না বলে, চোখ পাকানি দিতে লাগলাম আমি।

“তোর বাম চোখ, ডান চোখের থেকে বড় । এইভাবে তাকিয়ে লাভ নেই। বিশ্রী লাগছে । ” আমি মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকালাম । আমার চোখ কি সত্যি এরকম ? কেউ তো বলে নাই আগে ! নাকি ফাজলামি করলো ? কটমট করে আবার তাকাতে গিয়েও চোখ ফিরিয়ে নিলাম ।

“ঐ তুই ফ্রি ? আমার সাথে যেতে পারবি ?” “কোথায়?” অনেক কষ্টে কথাটা বলে নিজেই অবাক হয়ে গেলাম । এইটা আমার কণ্ঠস্বর নাকি কোলাব্যাঙ এর ! “আয় । কাজ আছে। ” মনে মনে একবার ভাবলাম, বলি, “পারবো না। আমারও কাজ আছে।

” কিন্তু কি কাজ, সেইটাও মনে করতে পারলাম না । তাই লাবণীর পেছন পেছন যেতে লাগলাম । আর বড় ধরণের একটা ভুল করলাম ! সেদিনের পর থেকে লাবণীর সাথে একরকম বডি গার্ডের মত ঘুরতে হয় আমাকে। লাইব্রেরীতে, মুদির দোকানে, শপিং এ, এমনকি চা এর দোকানেও সাথে সাথে থাকতে হয় । কিছু বললে আবার বলে, আমি নাকি ‘ভাদাইম্যা’ ।

এই শব্দের অর্থ আমার জানা নেই। অর্থ জিজ্ঞেস করলে আবার কি না কি বলে, তাই কিছু বলিও না । এই হতচ্ছারী, দজ্জাল, বুদ্ধিজীবী এভাবেই আমার ঘাড়ে সিন্দাবাদের ভূতের মত... থুক্কু ভূতুনীর মত চেপে বসল । (চলবে)  ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.