আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বদলে যাওঃ নিজ জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হও

সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............ বদলে যাওঃ নিজ জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হও মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বারাক ওবামার Campaign Spees ছিল YES WE CAN Change তখন থেকেই বাংলাদেশেও একই শ্লোগান নিয়ে আসে দৈনিক প্রথম আলো। সেখান থেকেই আওয়ামী লীগের নির্বাচনী শ্লোগানও হয়-বদলে দাও! বারাক ওবামার বিশ্ব রাজনীতিতে তথা বৈদেশীক নীতিতে ও আমাদের দেশে আওয়ামী শাসনে “বদলে দেওয়া”র ধরন যেমনই হোক-শ্লোগানটি আমার বেশ ভাল লাগে। বাংলাদেশে তিন তরুনের উদ্যোগে এক বছর আগে জন্ম হয়েছে একটি প্রতিষ্ঠান, নাম-“ "চেঞ্জিং বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন”"- বদলে দাও বাংলাদেশ। একই ভাবে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের "আলোকিত মানুষ হও" কিম্বা প্রথম আলোর "বদলে দাও" শ্লোগান আমার মন কাড়ে। দুটো শ্লোগানেরই মূল দর্শন আত্মউন্নয়নের মাধ্যমে ব্যাক্তি, পরিবার,সমাজ,দেশের প্রাগৈতিহাসিকতাকে ভেংগে নতুন এক দেশ/জাতিগড়ে মানব কল্যাণ করা।

কিন্তু "আলোকিত মানুষ হওয়া" কিম্বা "বদলে যাওয়া"/বদলে দেওয়া কি এতই সহজ? সম্প্রতি আমি ড. স্টিফেন আর কোভ এর The 7 Habits of Highly Effective People বইটি পড়েছি। ড. স্টিফেন আর কোভে তাঁর বিখ্যাত The 7 Habits of Highly Effective People নামের বইতে আন্তর্ব্যক্তিক সম্পর্কের বিষয়ে বিস্তর আলোচনা করেছেন। যা নিজ জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। তাঁর মতে-আমি বাংলায় অনূবাদ করে লিখছি- “"আত্মোন্নতি জীবনের একটি পবিত্র ক্ষেত্র। মানব জীবনে এর চেয়ে বড় বিনিয়োগ সম্ভব নয়।

একথা সুস্পষ্টভাবে বলা যায়, আত্মোন্নতি অকস্মাত্ প্রাপ্তির বিষয় নয়। আমি নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি, এই দীর্ঘ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এগিয়ে গেলে আপনি লাভবান হবেন”"। বইটা পড়ে আমার নিজস্ব কিছু চিন্তা ভাবনার উদয় হয়েছে এবং এই বিষয়ে অনেক জ্ঞানীগুণী জনের বক্তব্য পড়েছিলাম- যা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই। খ্যাতিমান শিক্ষক ও সাহিত্যিক অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের কিছু কথা স্মরণযোগ্য। তিনি বলেছেন- “আলোকিত মানুষ আসলে অন্ধকার মানুষের বিপরীত।

অন্ধকার মানুষ সর্বোচ্চ মানুষের একটা অধঃপতিত রূপ যা হীনতায়, লোভে, আত্মস্বার্থে, জড়ত্বে নিমজ্জিত। বিপরীতে আলোকিত মানুষ জাগ্রত মানুষ, উদ্যত মানুষ, সত্, মানবিক ও মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ, শ্রেয় ও স্বপ্ন ভরা মানুষ যার ওপর আস্থা রাখা যায়। যে অন্যদের পথ দেখাতে পারে। শেষ কথায়, আলোকিত মানুষ মানে আধুনিক মানুষ, মানবিক মানুষ”। একজন চৈনিক দার্শনিক বলেছিলেন-“যিনি নিজেকে জেনেছে সে প্রকৃত জ্ঞানী।

আর যে অন্যকে জেনেছে সেজন চতুর”। মরমি বাউল সাধক লালন গেয়েছিলেন -“ও যার আপন খবর আপনার হয় না, একবার আপনারে চিনতে পারলে রে যাবে অচেনারে চেনা। ” এ বিষয়ে সহজ করে আরো কিছু কথা বলা যেতে পারে। একেবারে ছোটবেলার কথা। আমরা তখন স্কুলে পড়ি।

মনে পড়ে আমাদের পাঠ্যক্রমে মহামনীষীদের জীবনীর ওপর ভিত্তি করে কিছু গল্প পড়ানো হতো। শিশুমনে যেন অনুকরণ বা অনুসরণের সাধ জাগে সেজন্যই এ ধরনের গল্পের অবতারণা। আপন আলোয় উদ্ভাসিত সেসব মনীষীর গল্পগাথা আমাদের কতটুকু প্রভাবিত করে তা অনেক সময় বোধ করি খুঁজে দেখা হয় না। কীভাবে আপন আলোয় একজন উদ্ভাসিত হন অথবা আপন আলো বলতেইবা কী বোঝায় ? আমি কী ? আমি কী করতে চাই? কীসে আমার স্বাচ্ছন্দ্য? এরকম কিছু প্রশ্নের উত্তর খোঁজার মাঝে নিজ স্বত্বার সন্ধান খানিকটা মিলতে পারে। জ্ঞান উপস্থাপনের আকাঙ্ক্ষা মানুষের সহজাত।

কারণ মানুষ সবসময় নিজেকে উপস্থাপন করতে চায়। তবে কি তার মাঝে প্রকৃত পক্ষেই এমন শক্তি রয়েছে ? সম্ভবত প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যেই ভালো ও মন্দের আশ্চর্যজনক ক্ষমতা রয়েছে। এ ক্ষমতা হলো তার জীবনের একান্ত, নীরব, অবচেতন অদৃশ্য প্রভাব। যা একজন মানুষ যথাযথ অর্থে ঠিক যেমন তারই প্রতিনিয়ত উপস্থাপন। কিন্তু সে যা হওয়ার অভিনয় করে ঠিক তার প্রকৃত বিচ্ছুরণ নয়।

সেজন্য কোনো মানুষের পক্ষে অন্যকে বদলানো বেশ কঠিন। কারণ প্রত্যেকেই তার নিজের পরিবর্তনের দ্বার রুদ্ধ করে রাখে। এ দরজা কেবল ভেতর থেকে খোলা সম্ভব। বাইরে থেকে অন্য কেউ তা খুলতে পারে না। এমনকি আবেগের আবেদন দিয়েও না।

এক্ষেত্রে চন্দ্র বিজয়ী নভোচারী এবং চিলির খনি থেকে মুক্ত শ্রমিকদের কথা আমরা খানিকটা আলাদাভাবে চিন্তা করতে পারি। যেখানে আপন আলো তথা বিশেষ জ্ঞান এবং তার শৈল্পিক সত্তাকে প্রকাশের জন্য বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকা প্রয়োজন। কারণ মানুষ সহজে যা অর্জন করে তা খুব হালকাভাবে গ্রহণ করে। অন্যদিকে তার কাছে সে অর্জনই মূল্যবান যা তার গভীর আন্তরিক প্রচেষ্টা দ্বারা অর্জিত। এ পর্যায়ে কোনো বিষয় শৈল্পিক হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে যোগাযোগ গুণ, বিজ্ঞানের আধুনিক ব্যবহার এবং সৃজনশীলতা এই তিনটি বিষয় প্রয়োগের নির্ভর করে।

যা নিজেকে প্রকাশের আধুনিক উপায়গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। তবে মনে রাখা প্রয়োজন দ্যা ভিঞ্চি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আইনস্টাইন, নজরুল অথবা লেলিন পড়ে তাঁদের মতো হওয়া সম্ভব নয়, তবে তাঁরা যে দৃষ্টিকোণ থেকে বাস্তবতাকে পর্যবেক্ষণ করেছেন সে দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করা যেতে পারে। তাঁদের মতো করে যদি চিন্তা করা যায়, ভাবা যায় অথবা প্রশ্ন করা যায় সৃষ্টি তথা পৃথিবীর নিয়ম ও নিজেকে, তবে এর একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান আসতে পারে। অনেকের কাছে পরিশ্রমের অপর নাম প্রতিভা। 'আমার মধ্যে' যে নতুন এক আমি’র আবিষ্কার করি তাকে আমরা "প্রতিভা" বলি।

নিজ প্রতিভা বিকাশের ক্ষেত্রে প্রথমত নিজেকে পরনির্ভরশীলতা থেকে আত্মনির্ভরশীল হতে হয়, যা পরবর্তী সময়ে পারস্পরিক নির্ভরশীলতার মাধ্যমে বিকশিত হয়। প্রাপ্ত জ্ঞান ও তথ্যের নির্দেশন দেখে এমনটি মনে হয়- সৃষ্টিকর্তা তার শক্তি এবং জ্ঞানকে প্রকাশ করার জন্য বোধহয় মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং মানুষের জীবনে এ সুযোগ মাত্র একটিবারই আসে। তবে কি নিজ জ্ঞানে বিকশিত হওয়ার বিষয়টি সৃষ্টিকর্তার যে জ্ঞান ও শক্তি তাঁর কোনো প্রতীকী রূপ? বোধকরি এ বিশেষ গুণ তথা জ্ঞান অর্জন মানুষ হিসেবে আমাদের অনেক বড় দায়িত্ব, পরীক্ষাও বটে। তাই এ বিষয়ে পন্ডিত ব্যাক্তিদের ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে গবেষণার প্রয়োজন আছে। কারণ গবেষণাবিহীন গ্রহণযোগ্য কিছু সঠিকভাবে দাঁড়ায় না।

মানবজীবনে একটিবার স্থানীয়ভাবে আপন আলোয় জ্বলে ওঠা এবং সম্ভবত তা চিরদিনের জন্য। কেননা সবার মাঝে জ্ঞানের আলো আছে। তা নিজের মতো করে নিজের মাঝে অনুধাবনকরে জীবনকে সে ভাবে চালাতে হবে। হতে পারে মানুষ হিসাবে এটি আমাদের মৌলিক কোনো প্রত্যাশা যা অমূলক নয়। শান্তির জন্য, নিরাপত্তার জন্য, উন্নত সভ্যতার জন্য সর্বোপরি সৃষ্টির কল্যাণের জন্য প্রতিটি মানুষ নিজ নিজ জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত হোক।

কাজেই আমি বলবো-বদলে যাওঃ নিজ জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হও। ধন্যবাদ সবাইকে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.