আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাল্টি লেভেল মার্কেটিং, ডেসটিনি এবং প্রাসঙ্গিক ভাবনা

মাল্টিলেভেল মার্কেটিং নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। ১৯৪৫ সালে ক্যালিফর্নিয়া ভিটামিন কোম্পানি নামে এমএলএম জাতীয় কোম্পানির যাত্রা শুরু হয়েছে এবং সারা পৃথিবীতে তা ছড়িয়ে পড়েছে। ইউরোপ আমেরিকা এবং এশিয়ায় এই কোম্পানিগুলো সক্রিয়। এই সব কোম্পানির মূল টার্গেট মধ্যবিত্ত শ্রেনী যাদের মধ্যে প্রায়ই উচ্চবিত্তে পরিণত হওয়ার আকাঙ্খা থাকে। আর দ্রত সম্পদ তৈরি করার আকাঙ্খাই এই সব কোম্পানির মূল ভিত্তি।

বাংলাদেশে প্রায় একযুগ আগে এইসব কোম্পানির যাত্রা শুরু এবং বর্তমানে প্রায় ৮০টির মতো কোম্পানি নিবন্ধিত। ডেসটিনি এই ধরনের একটি কোম্পানি এবং গত কয়েক বছরে ডেসটিনি গড়ে তুলেছে সম্পদের পাহাড়। আমার এক নিকটাত্মীয় ডেসটিনির এজেন্ট হিসেবে বৃক্ষ রোপনের স্কিম নিয়ে আসে। আমার আপত্তি থাকার পরও কেবলই আত্মীয়তার কারণে তাকে এডানো যায়নি। কত বছর হলো, এর কোনো লাভ পাবো কি পাবো না এনিয়ে আমার কোনো মাথাব্যাথা নেই।

তবে আমার সেই আত্মীয় এরকম কিছু সদস্য সংগ্রহ করার কারণে ভাল কমিশন পেয়েছেন সেটা জানি। আসলে এমএলম কোম্পানীগুলোর মূল ভিত্তিই হচ্ছে পিরামিড স্কিম এবং রিলেশন এক্সপ্লয়টেশন। ইউরোপ আমেরিকার বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে এই কোম্পানিগুলোর ৯৯ শতাংশ ব্যক্তি বা বিনিয়োগকারী ক্ষতির শিকার আর ১ শতাংশ মানে উদ্যোক্তা বা উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারাই লাভ করে। বাংলাদেশে ডেসটিনি এখন টিভি চ্যানেল এবং সংবাদপত্রের মালিক। তারা ক্রিকেট এর মতো জনপ্রিয় খেলা স্পন্সর করে।

তারা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সাথে সম্পর্ক রাখে এমনকি দেশের খ্যাতনামা অনেকে এর সাথে যুক্ত। যে কারণে তাদের কেশাগ্র স্পর্শ করার কেউ নেই। আমলা, রাজনীতিকদের ভাগ না দিয়ে এ কর্ম করা সম্ভব নয়। এই ডেসিটিনির কারণে ইউনিপেটুইউ আমলা রাজনীতিকদের টাকা দিতে পারে নি। এজন্য তাদের অবস্থা এখন খারাপ।

টাকা দিতে পারলে এটিও ডেসটিনির প্রতিযোগি হয়ে উঠতো। কিন্তু সমস্যা হলো সাধারণ মানুষের। লোভে পাপ পাপে মৃত্যু। কিন্তু যারা এই লোভ সৃষ্টি করে প্রতারণার জাল ফেললো তাদের কিছু হয় না কিন্তু প্রতারিতরা লোভের কারণে মৃত্যুযন্ত্রণা ভোগ করে। যেমন ইউনিপেটুইউ এর গ্রাহকরা এখনো টাকা ফেরত পাচ্ছে না কিন্তু উদ্যোক্তারা নতুন নামে ব্যবসা শুরু করছে।

আমার কথা হলো: যে এমএলএম কোম্পানি নিয়ে সারা পৃথিবীতে নানা রকমের গবেষণা রয়েছে তা বিবেচনায় না এনে এ ধরনের প্রতিষ্টান গড়ে তোলার অনুমতি দেওয়া হলো কিভাবে? প্রতারকদের টাকা আছে বলে তারা ধরা ছোয়ার বাইরে থাকবে আর প্রতারিতরা বোকা বলে তারা নিজের টাকা অন্যের পকেটে গুজে দিয়ে বসে থাকবে? সরকার ব্যাংক হিসাব জব্দ করলেও এই টাকা প্রদানের বা ফেরত প্রদানের জন্য কোনো উদ্যোগ নেবেন না? আসলে জনগণকে বোকা বানানোর মাঝেই সবাই কৃতিত্ব অর্জন করতে চান। সরকার কোম্পানিগুলোর উপর চাপ দিবেন, ব্যাংক হিসাব স্থগিত করবেন এবং দেখাবেন তারা আসলে জনগণের পক্ষে। কিন্তু আসলে এসব ব্যবসা বন্ধ করে লুণ্ঠিত টাকা উদ্যোক্তাদের সাথে ভাগ বাটোয়ারা করছেন কিনা সেটাও দেখার ব্যাপার। এখন পর্যন্ত ইউনিপেটুইউ এর গ্রাহকরা টাকা ফেরত পায় নি। সরকার নিরব।

ইউনিপেটুইউ নিরব। আর জনগণ আশায় বুক বেধে আছে --। ডেসটিনি নিয়ে একই ধরনের পরিকল্পনা চলছে কিনা সেটাও দেখা প্রয়োজন। বাংলাদেশের মানুষ এখন ঘরপোড়া গরু, সিদুরে মেঘ দেখে তো ভয় পাবেই। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.