আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

DISC – কিভাবে জানবেন আশেপাশের মানুষগুলোকে?

বেশ কিছু দিন হল ক্রিকেট খেলা দেখা হচ্ছিল না। কাজের চাপ কিছুটা কম থাকায় এশিয়া কাপের প্রথম থেকেই বাংলাদেশের প্রায় সব খেলাই দেখা হয়েছে। ফাইনালের এত কাছে গিয়ে হারানোর বেদনা বেশ আবেগ তাড়িত করেছে। অবশ্য পুরো দেশই ছিল আবেগতাড়িত। এই হারানোর বেদনা সবার জন্য একরকম নয়, একেকজন একেকভাবে এর প্রতিক্রিয়া দেখায়।

চাপ সইতে না পেরে একজনতো হার্টফেলই করে ফেলল আর একজন করল আত্নহত্যা। আবেগ মানুষের খুব সহজাত, যদিও পরিবেশ পরিস্থিতি এতে কিছুটা প্রভাব বিস্তার করে! দেখা যাবে, একই পরিস্থিতিতে একই পরিবারের চার ভাই-বোনের চারজনের আচরণ হয়তো চার রকম। একজন খুব অস্থির টাইপের, একজন খুব আবেগী, একজন সবকিছুকে মানিয়ে চলতে উদ্যোগী, আরেকজন খুব হিসেবী ও তুলনামূলকভাবে নিশ্চুপ। মনোবিজ্ঞানে মানুষের এই আচরণকে মোট চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। প্রতিটি মানুষের মধ্যেই এই চারটি প্রতিটিরই কিছু না কিছু প্রভাব থাকবে, কিন্তু কোন একটির প্রভাব হয়তো তার মধ্যে তুলনামূলকভাবে বেশী থাকবে।

আর এটা তার আচরণের মধ্যেও স্পষ্টভাবে দেখা যাবে। আচরণের এই চারটি শ্রেণিবিভাগকে ইংরেজীতে বলা হয়ঃ ডিস্ক, (DISC). D দিয়ে বুঝায় Dominance বা আধিপত্যবাদী; I দিয়ে বুঝায় Influence বা প্রভাবকারী, S দিয়ে বুঝায় Steadiness বা ধারাবাহিকতা বজায়কারী বা সহযোগী মনোভাবসম্পন্ন; C দিয়ে বুঝায় Conscientiousness বা সতর্কতা বজায়কারী। সাইকোলজিস্ট ডঃ উইলিয়াম মার্সটন (১৮৯৩-১৯৪৭) এর বিশেষ অবদান আছে আচরণের এই শ্রেণীবিভাগে। তার দেয়া মার্টন’স তত্ত্ব খুব প্রসিদ্ধ। মার্সটন এর তত্ত্বে DISC কে সহজেই বুঝা যায় (নীচে)।

চিত্রঃ মার্সটন এর তত্ত্ব উপরের মার্সটনস এর তত্ত্বটিকে পড়তে হবে ঘড়ির কাটার বিপরীত দিকে ঘূর্ণনকারী হিসেবে প্রতিটি ক্যাটাগরির কার কি বৈশিষ্ঠ্য তা জানা দরকার। তার আগে, আপনি কিভাবে বুঝবেন কে কোন ক্যাটাগরীর গুনাবলী বেশী ধারণ করে। এটা দু’ভাবে জানা সম্ভব। একটা হল DISC টেস্ট এর সাহায্য নিয়ে কোন গ্রুপের প্রাধান্য সেটা বের করা। ইন্টার্নেটে অনেক ওয়েবসাইটে বিনামূল্যে এই টেস্ট সুবিধা দেয়।

‘DISC Test’ লিখে গুগল করলেই পেয়ে যাবেন। এরকম একটা এখানে পাবেন। বিনামূল্যে পাওয়া এসব টেস্ট হয়ত পুরো ধারণা দিবে না, তবে অন্তঃতপক্ষে একটা ধারণা পাওয়া যাবে। আর একটি উপায় হল, প্রতিটি গ্রুপের যেসব গুনাবলী থাকে সে সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা। D বা আধিপত্যবাদীদের সাধারণ কিছু গুনাবলী হল, এরা কথা শোনার চেয়ে বলে বেশী ও বহিঃর্মূখী স্বভাবের হয়।

অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছতে চারদিকে ভ্রুক্ষেপ থাকে না, কে কি বলল সে নিয়ে মাথা ঘামায় না, কথা বলে খুব দ্রুত, কথার টোনে একধরণের আধিপত্যের সুর থাকে। তাদের মধ্যে একটা অস্থির ভাব থাকে, যা করতে চায় তা করে ফেলে, এর জন্য খুব একটা চিন্তা করে না। এ ধরণের আচরণের জন্যই এদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ কম থাকে। চিন্তা ভাবনা কম করে কাজ করে বলে নিজেদের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ হারানোর একটা ভয় থাকে। I বা প্রভাবকারীরা তুলনামুলকভাবে বেশী কথা বলে।

তারা মানুষকেন্দ্রিক। চারপাশের মানুষদের ব্যাপারে বিশেষ কৌতুহল থাকে। তারা নিজেদের অনুভূতি ও আবেগ প্রকাশ করে ফেলে। এদের কথা বলার সময় অঙ্গভঙ্গী প্রকাশ পায় এছাড়া চেহারাতেও তার ছাপ দেখা যায়। এরা মিশুক হয় ও সামাজিকতা রক্ষা করতে এরা খুব উৎসাহী।

ফ্যাশন করা, টিপটপ চলা এদের খুব পছন্দের। তারা যেমন আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটায় তেমনি অতি আবেগের কারণে অন্যের দ্বারা খুব সহজেই আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে। কোন একটা কাজে D যেমন মূল লক্ষ্যের প্রতি স্থির ও তা খুব দ্রুত পেতে চায়, সেখানে I চারপাশের অনেক কিছুতে জড়িয়ে পড়ার কারণে মূল কাজের লক্ষ্য থেকে ছিটকে পড়ার একধরণের প্রবণতা তাদের মধ্যে দেখা যায়। S বা সহযোগী মনোভাবসম্পন্নরা খুব কম কথা বলে। তবে দরকারের সময় এরা সহজেই কথা চালিয়ে নিতে পারে।

এরা তুলনামূলকভাবে ধীরস্থীর ও শান্ত প্রকৃতির হয়। কেউ এদের সামনে সরাসরি প্রশংসা করলে এরা সংকোচ অনুভব করে। তাদের মধ্যে সবকিছুকে মানিয়ে চলার একটা প্রবণতা থাকে, ফলে একসময় এরা কাজের ভারে নিজেদের নিমজ্জিত হয়ে যেতে পারে। আর অন্যরা এদের পছন্দ করে, এদের মাধ্যমে কাজ করিয়ে নিতে পারে বলে। C বা সতর্কতা বজায়কারীরা সবচেয়ে কম কথা বলা মানুষরা।

আর কথা যাই বলে তা খুব ধীরগতিতে ও মৃদুভাবে বলে। তারা সবকিছুকে পূঙ্খানুপুঙ্খভাবে পেতে চায়, আর সেই লক্ষ্যে এদের সবসময় চিন্তাশীল থাকতে দেখা যায়। প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে তারা D এর ঠিক উলটো। কোন একটা ব্যাপারে খুব নির্দিষ্টভাবে জেনে তবে পা ফেলে। তা হলেও এদের সময়জ্ঞান খুব ভাল ও কথা বলে কূটনৈতিক উপায়ে।

DISC আপনার কি কাজে লাগতে পারে? আগেই বলা হয়েছে এটা আপনাকে আপনার চারপাশের মানুষদের ব্যাপারে একটা ধারণা দেবে। আপনি যেহেতু তাদের বৈশিষ্ঠ্যের ব্যাপারে জানেন, তাই তাদের সাথে কিভাবে কথা বলবেন বা তাদের কিভাবে ম্যানেজ করবেন তা কিছুটা হলেও আয়ত্ত্ব করতে পারবেন। আপনার পরিবারের সদস্যদের ব্যাপারে ধারণা পেতেও DISC সাহায্য করতে পারে। যেমণঃ ধরুণ আপনার জীবণসঙ্গীর ক্যাটাগরি I, তাহলে দেখবেন তিনি বন্ধুবৎসল আবার একটু বেশী আবেগপ্রবণও। কোন একভাবে তিনি আপনার কাছ থেকে তার কাজের সমর্থন চাইবেন।

খোশগল্পে মাতিয়ে রাখতে হয়ত জুড়ি নেই, কিন্তু একটু বেশী উদাসীনও! আবার ধরুণ আপনি I কিন্তু আপনার জীবণসঙ্গী D, তাহলেতো বিপদ। কারণ D এর সবকিছুকে তোয়াক্কা না করার স্বভাব, অপরদিকে I এর এই তোয়াক্কা না পাবার কারণে সহজেই ব্যথিত হয়। যাই হোক, মানিয়ে চলাটাই বড় কথা। DISC এই মানিয়ে চলাতে কিছুটা হলেও সাহায্য করতে পারে। ভালো থাকুন।

নোট: লেখাটি ইতিপূর্বে সদালাপে প্রকাশিত হয়েছিল। সদালাপে আমি শামস নামে লিখে থাকি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।