আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তারুণ্যের জয়্গান এবং আস্তিকদের কাছে কিছু কথা…

মেঘলা আকাশ, ঝড়ো বাতাস বইছে। লৌহযবনিকার ভেতর কিসের যেন ভয়ভয় রহস্য, চাপা উত্তেজনা। সবাই নেমে আসছে, সবার পিছে আসছে অস্থির প্রকৃতির দুর্দান্ত সাহসী এক যুবক। চেহারা বা পোশাকে-আশাকে তেমন কোন পরিচয় নেই, যেন অতি সাধারণ এক যুবক। আজিব.… আমি বুঝতে পারতেসিনা রাজাকার বিরোধী আন্দোলনের সাথে ইসলামের কি সম্পর্ক? আমরা রাজাকারের বিচারের দাবীতে আন্দোলন করছি।

সেখানে তো আমরা আল্লাহকে ছোট করছিনা। হাতে গোণা কিছু নাস্তিক ব্লগাররা ছাড়া আমরা কেউই তো ইসলাম, আল্লাহ কাউকেই গালি দিইনি। তাইলে কেন নাস্তিকতার কলঙ্ক আমাদের বইতে হবে? কি অপরাধে? রাজাকারের বিচার চেয়েছি তাই? আমাদের নাস্তিক বলবেন না। ইসলাম ধর্মের অবমাননা আমরা করছি না। যারা করছে তাদের আমরাও ঘৃণা করি।

ব্যাক্তিগতভাবে আমি নিজেই। ৭১ এ রাজাকারেরা যখন লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছিলো, তখন কোথায় ছিল তাদের দাঁড়ি টুপি দিয়ে ঢাকা আস্তিকতা? যখন ২ লক্ষ মা বোনের ইজ্জত নিজের হাতে কেড়ে নিয়েছিলো, তখন কোথায় ছিল তাদের আস্তিকতা? জবাব চাই। আমরা আজ সেই সব রাজাকারের বিচার চাইছি। আমরা ইসলামকে ছোট করছিনা। ছোট করছিনা কোন ধর্মকেই।

কারণ এই আন্দোলন ধর্ম নিরপেক্ষ। ঢাকা ভার্সিটির সামনের ভাস্করটি বানানো হয়েছিলো প্রায় ৩০-৩২ বছর আগে। তখন কোথায় ছিল আপনাদের আন্দোলন, আপনাদের আস্তিকতা?? আজ ৩০-৩২ বছর পর কেন এই নিয়ে আন্দোলন করা হচ্ছে?? আস্তিকদের কাছে প্রশ্ন। কাল মতিঝিল চত্বরে একুশে টিভির একজন নারী সাংবাদিককে মেরে গুরুতর আহত করা হয়। তার অপরাধ ছিল, এতগুলা ইসলামধর্মালম্বী পুরুষ মানুষের মাঝে একজন নারী কেন? তার পর্দা কোথায়? তাইলে বলুন, কাল রাতে যে ১৫-১৬ জন পুরুষমানুষের মাঝে ঠোট রাঙা করে খালেদা জিয়া বৈঠক করেছেন।

তখন কোথায় ছিল তার/তাদের আস্তিকতা? ও আচ্ছা, তিনি নেত্রী। তিনি নেত্রী বলে তার যা খুশি তিনি তা করতে পারবেন আর একজন সাংবাদিক হিসেবে সেই নারীটি কিছুই করতে পারবে না। বাহ, আপনাদের প্রশংসা না করে পারলাম না। কোন স্কুল কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে ছেলে মেয়ে একসাথে পড়তে পারবে না। আল্লামা শফির কথা জানিনা।

কিন্তু এর অন্যতম পৃষ্ঠপোষক মাহমুদুর রহমান, উনি তো বুয়েটেরই ছাত্র। উনি কি মেয়েদের সাথে একসাথে পড়েননি? তিনি কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন, উনি সেখানে একজন মেয়ের দিকেও তাকান নি? খালেদা, উনি কি ছেলেদের সাথে গোলটেবিল বৈঠক করেন না? এই নিয়ে বলতে পারি, আমাদের পাশের পাড়ার এক আঙ্কেল হেফাজতীদের এই আন্দোলন খুব আন্তরিকভাবেই সমর্থন করেন। কিন্তু তার নিজের মেয়ে একটা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ে। আর বাকিগুলা বলে তাকে না হয় নাইবা ছোট করলাম। তো বলতে পারেন, তাদের আস্তিকতা এখন কোথায়? জানিনা কিন্তু তবুও বলছি, আপনাদের ইসলাম ধর্মে কি অন্য ধর্মের উপর নির্যাতন করার আদেশ দেয়া আছে? জানি এটা বলার পর আমি নাস্তিক হয়ে যাবো, অথবা এর জন্য আমাকে জেলে যেতে হবে।

আপনাদের নবী, রাসুল, আল্লাহ এঁনাদের নামে যদি একটা কটুক্তি করা হয়, আপনাদের ইসলামনুভুতিতে লাগে, আর আমাদের একটার পর একটা মন্দির, মুর্তি ভাঙা হচ্ছে, আমাদের কি একটুও লাগে না? কিন্তু আমরা চুপ। কারণ ছোটবেলা থেকে ধর্মবইয়ে পড়তাম, আল্লাহ, ভগবান সব এক। তাই আজো আমি ইসলাম ধর্মকে মনে প্রাণে সম্মান করি। এবং আমাদের ধর্মের উপর নির্যাতনের বিচার আশা করি হয়্তোবা আল্লাহ/ভগবানই করবেন। আজ Tanvir Ahamad Arjel নামে একজনের স্ট্যাটাসে দেখলাম, সে বলেছে মতিঝিল চত্বরের সবার নাকি সবচেয়ে বড় অস্ত্র 'ইসলাম' রয়েছে।

মানলাম। কিন্তু প্রজ্ন্ম চত্বরে যারা আছে তারা কি ধর্মহীন? তাদের শক্তি ইসলাম, তাদের ও বড় শক্তি সনাতনতা, তাদের ও বড় শক্তি বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান। তবে সবার একটা অস্ত্রই মিল আছে। এবং তা হল 'দেশপ্রেম'। তারুণ্য শক্তিও আজ যার কাছে হার মেনেছে।

আজ এরশাদ চাচ্চুকে কিছু বলতে ইচ্ছে করছে, "চাচ্চু, খালি কলসি বাজে বেশি। আর পুরানো ময়্লা ঘাটতে যেও না। গন্ধে তখন বাঁচতে পারবে না। " আমি আমার ধর্মকে ভালো তো বাসি এমনকি আমি ইসলাম ধর্মকেও অনেক সম্মান করি। আস্তিকদের কাছে অনুরোধ, আমাদের নাস্তিক বলবেন না।

কষ্ট লাগে। আর যদি মনে করেন এর মাধ্যমে আমাদের আন্দোলন বন্ধ করবেন, তাহলে সেটা ভুলে যান। আমরা নিজ ধর্মকেও যেমন ভালবাসি, তেমনি ভালবাসি নিজের দেশকেও। এই পথ থেকে আমরা বিচ্যুত হব না কোনদিনও। জয় বাংলা, জয় তারুণ্য… ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।