আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যখন "ধন্যবাদ" শব্দটা উচ্চারন করা হয়না, করা যায়না।

অপ্রয়োজনে অনেক কথা বলে যাই, কিন্তু বলা হয়না আরো অনেক বেশী কথা- অনেক আপন মানুষদেরকে। তাইতো, এই খোলা চিঠি। হয়তো কারোর চোখে পরবে কোনদিন, যখন আমি থাকবোনা..... "ভালোবাসি" কথাটা বলতে পারেনি এমন অনেক স্বীকারোক্তি, অনেক উদাহারন দেবার মতো মানুষ আমাদের যেমন চোখের সামনে অহরহ। কেন যেন মনে হয় আরো অনেক শব্দই আছে- যেগুলো অব্যক্ত থেকে যায়, তারচেয়েও অজানা থেকে যায় স্বীকার করার কথাও। আর মজার ব্যপারটা হলো, নিজের পরিবারের, আপন মানুষদেরকে না বলা কথার পরিমানটাই বোধ করি সবচেয়ে বেশি।

অনেক সরল অভিযোগ-অনুযোগের মতো হাজারো সন্তুষ্টি, প্রাপ্তির আনন্দ ভাগাভাগীও যেন করা হয়ে ওঠে না, কেবল অদৃশ্য দেয়ালে ঘেরা এই সংকোচের ঘরে বসবাস করার জন্য। নতুবা নিজের অনুভুতির অপমান হবার ভয়ে। কখোনোবা আমরা আপন মানুষগুলোকে এতোটাই অবহেলা নতুবা গুরুত্ব দেই - যে তার মনের কথাটার অর্থ হয়ে দাড়ায় ভিন্ন। যেমন আজ আমি বলতে পারছিনা- "ধন্যবাদ", আমারই পরিবারের একজন সদস্যকে। তাই সাহায্য নিলাম যান্ত্রিক চিঠির।

ভাবী, তোমাকে ধন্যবাদ। দেড় বছর আগে, ঠিক এমনই একদিনে তোমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে গিয়েও পারিনি। হয়তো অন্য অর্থ দাড়াবে, নতুবা তোমার চোখে হাসির খোড়াক হবো, অথবা আবার কোন নতুন সমস্যা। এসব কারন আসলে আমাকে থামায়নি, আমি সত্যিই গুরুত্ব দেইনা এসবের। তবে "আমার অনুভূতির ভূল ব্যাখ্যা" অথবা "আমার আপন ভাবনার অপমান" কেন জানি সহ্য করাটা কষ্টকর হয়ে ওঠে- তাই তোমাকে সরাসরি বলতে পারলামনা।

ভেবনা এটা তোমার দোষ- এটা কেবল আমার হীনমন্যতার ফল। তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমার বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটাবার জন্য, তাদের মনের আশা পূরণ করার জন্য। পৃথিবীতে আমাদের পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মকে আনবার জন্য। দেড় বছর আগে এমন পুতুলের মতো ভাতিজী দেবার জন্য, আর আজ আমার মায়ের কোলে আরেকটি দেবশিশু তুলে দেবার জন্য।

আমি জানি না, কিভাবে তোমাদের শুকরিয়া আদায় করবো। ভাইয়া আর তুমি যে আনন্দ আব্বু-আম্মুকে দিয়েছো তার কোন তুলনা হয়না। তোমাদের কাছে আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নাই। আমি জানি, কোন এক অজানা কারনে তুমি আমাকে অপচ্ছন্দ করো। কারনটা জানলে শোধরাবার চেষ্টা করতাম।

তবে নিজের কোন চেষ্টা কোনদিন ছিলনা তোমার বিরাগভাজন হবার- এমন কি তুমিও আমার খুব যে অপচ্ছন্দের তাও না। তোমার ব্যাপারে আমি সব সময় সচেতনভাবে নিরপেক্ষ থাকবার চেষ্টা করেছি- ভালোবাসতে না পারলেও অপচ্ছন্দ করিনি একটি মুহূর্তের জন্যও। সেসব কথা থাক। আজ কেবল তোমার দিন। এক সন্তানের মায়ের, এবার আরেকবারের মতো মা হবার দিন।

প্রত্যাশা করবো, তুমি তোমার দুই সন্তানকেই সমান সম্মান দেবে, দেবে তাদের প্রাপ্য মর্যাদা। আমার ভাতিজা-ভাতিজী যেন পায়- আত্নতৃপ্তি, সেই আনন্দ যা আমরা আমাদের বাবা-মায়েদের কাছ থেকে পেয়েছি, সেই সব কিছুও যা আমরা পাইনি। হ্যা, আমার আম্মু-আব্বু তোমার কাছে কতটা সম্মানের তা আমার জানা নাই। আমার বাবা-মা আমার কাছে আদর্শ , তারা শ্বশুর-শ্বাশুরি হিসেবে তোমার দৃষ্টিতে কেমন ভাবে এসেছে তা আমার জানা নাই। তবে এতোটুকু বলতে পারি- মানুষ হিসেবেও তারা অনেক উচু দরের।

তুমিও সেটা জান এবং বোঝ বলেই আমার বিশ্বাস। তারপরও আমি মানি, আমরা অনেক মানুষকেই আপন করে নিতে পারিনা, কোন এক অজানা কারনে। এটা মানুষ হিসেবে আমাদের সীমাবদ্ধতা। কিন্তু এতটুকু জেনে রেখ- তুমি খুব সৌভাগ্যবতী। তেমনি আমাদেরও ভাগ্য সুপ্রসন্ন- পরিবারের একজন হিসেবে তোমার মতো একজনকে পেয়ে।

প্রত্যাশা থাকবে, আমার বাবা-মাকে সন্তুষ্ট করবার চেষ্টা তোমার সারা জীবন থাবে, যেমনভাবে আমার মা তার শ্বশুর-শ্বাশুরিকে সন্তুষ্ট করেছেন আমৃত্যু। ভালো থেকো, বিধাতা তোমাদেরকে তার সন্তুষ্টির ছায়ায় আশ্রয় দিক। আমার ধন্যবাদ হয়তো বলা হলোনা, তুমি হয়তো বুঝলেওনা - জানলেও না। কিন্তু যার জানার, সেই উপরওয়ালা জানে- তাই তিনি তোমাকে প্রতিদান দিক সেই প্রত্যাশা আর প্রার্থনা রইলো। আনন্দ ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।