আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সালাত ত্যাগকারীর বিধান

সকল মানুষকে আল্লাহ তা"য়ালা পরিপূর্ণভাবে দ্বীন বুঝার এবং পালন করার তৌফিক দিন। নামাজ অমান্যকারীর ভয়াবহ পরিণাম আল্লাহ্‌ তা"আলা প্রতেক মুসলমান নর নারীর উপর দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। শরয়ি ওজর ছাড়া কোন ভাবেই নামাজ ত্যাগ করা যাবেনা। নামাজ ত্যাগ কারীর পরকালে ভয়াবহ শাস্তি ভোগ করবে---- ১। আল্লাহ তা"আলা জাহান্নামীদের প্রসঙ্গে ইরশাদ করেনঃ তোমাদের কিসে জাহান্নামে নিক্ষেপ করেছে? তারা বলবে, আমরা সালাত আদায় করতাম না।

(সুরা মুদদাসসির, আঃ ৪২-৪৩) ২। আলী (রাঃ) -কে এক বেনামাযী মহিলা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তখন তিনি বললেন, যে সালাত আদায় করে না সে কাফির। (তিরমিযী) ৩। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি সালাত আদায় করেনা তার কোন দ্বীন নেই।

(মুহাম্মাদ ইবনু নসর মারফূ সনদে বর্ণনা করেন) ৪। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি সালাত বিনষ্টকারী হিসাবে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হবে আল্লাহ তার অন্যান্য পুণ্যের প্রতি গুরুত্ব দিবেন না। (কিতাবুল কাবায়ির ইমাম শামসুদ্দিন যাহাবী (রঃ), ২৩-২৪) ৫। একদা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সাহাবাদের উপলক্ষ করে বলেছেনঃ হে আল্লাহ! আমাদের মধ্যে কোন হতভাগা এবং বঞ্চিতকে রেখো না। অতঃপর তিনিই জিজ্ঞেসা করলেনঃ তোমরা কি জান কে হতভাগা এবং বঞ্চিত? তারা বললেনঃ কে সে ব্যক্তি হে আল্লাহর রাসূল, (আমরা তা জানি না) তিনি বললেনঃ সে হলো সালাত তরককারী।

বর্ণিত আছে যে, কিয়ামাদের দিন সর্বপ্রথম সালাত পরিত্যাগকারীর চেহারা কাল হবে। জাহান্নামে মুলহাম নামে একটি উপত্যকা আছে। সেখানে নানা প্রকার সাপ রয়েছে। প্রত্যেকটি সাপ উটের ঘাড়ের মত মোটা এবং দৈর্ঘ্য হলো এক মাসের পথ। ঐ সাপ সালাত তরককারীকে দংশন করবে এবং তার বিষক্রিয়া সত্তর বছর পর্যন্ত শরীরে স্থায়ী থাকবে।

অতঃপর তার গোশত পঁচে গলে পড়ে যাবে। ৬। একদা বনী ঈসরাইলের এক মহিলা মুসা (আঃ)-এর নিকট গিয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি একটি জঘন্য পাপ করেছি এবং এজন্য আমি আল্লাহ তা’আলার দরবারে তাওবাও করেছি। আপনি আল্লাহ তা’আলার কাছে আমার তাওবাহ ক্ববুল হওয়ার ও আমার গুনাহ মাফ করে দেয়ার জন্য দু’আ করুন! মুসা (আঃ) তাকে বললেন, তুমি কী অপরাধ করেছ? সে বলল হে আল্লাহর রাসূল! আমি ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে পড়েছিলাম, এতে আমার একটি সন্তান জন্ম নিয়েছিল। অতঃপর আমি তাকে হত্যা করে ফেলেছি।

একথা শুনে মুসা (আঃ) বললেন, ওহে চরিত্রহীনা! তুমি এখান থেকে বেরিয়ে যাও, অন্যথায় তোমার অপকর্মের শাস্তিস্বরূপ আকাশ হতে আগুন এসে আমাদের সকলকে জ্বালিয়ে দিবে। তখন মহিলাটি তার নিকট থেকে মর্মাহত ও ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বেরিয়ে গেল। তারপর জিবরাঈল (আঃ) নাযিল হয়ে বললেন, হে মুসা আল্লাহ তাআলা আমাকে এই মর্মে আপনার নিকট কৈফিয়ত তলব করতে বলেছেন যে, কেন আপনি তাওবাকারী মহিলাকে বের করে দিলেন এবং তার মধ্যে আপনি কী দোষ পেয়েছেন? মুসা (আঃ) বললেন, হে জিবরাঈল! তার চেয়ে বেশী পাপী আর কে হতে পারে? জিবরাঈল (আঃ) বললেন, যে ইচ্ছা করে সালাত ত্যাগ করে সে ঐ মহিলার চেয়েও মারাত্মক পাপী। ৭। যে ব্যক্তি সালাতের প্রতি গাফলতি ও অবজ্ঞা প্রদর্শন করবে আল্লাহ তা"আলা তাকে পনেরটি শাস্তির সম্মুখীন করবেন।

এর পাঁচটি শাস্তি হবে দুনিয়াতে, তিনটি হবে মৃত্যুকালে, তিনটি ক্ববরে এবং তিনটি ক্ববর থেকে বের হবার সময়। দুনিয়ার শাস্তিগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ (০১) তার জীবনকাল থেকে বরকাত উঠে যাবে, (০২) তার চেহারা থেকে নেককার বান্দাদের নূরানী দীপ্তি চলে যাবে, (০৩) আল্লাহ তা’আলা তার কোন ‘আমালেরই প্রতিদান দিবেন না, (০৪) তার দু'আ আসমানে পৌঁছাবে না এবং (০৫) নেককার লোকদের দু’আয় তার অংশ থাকবে না। মৃত্যুর সময়ের শাস্তিগুলো হলোঃ (০১) সে অপমানিত এবং অপদস্থ হয়ে মারা যাবে (০২) ক্ষুধার্ত অবস্থায় তার মৃত্যু হবে এবং (০৩) এমন তৃষ্ণার্ত অবস্থায় মারা যাবে যে, দুনিয়ার সকল সমুদ্রের পানি পান করানো হলেও তার পিপাসা মিটবে না। ক্ববরে যে শাস্তি হবেঃ (০১) তার ক্ববর সংকুচিত হবে এবং এমন ভাবে চাপ দিবে যে, এক দিকের পাঁজরের হাড় অন্যদিকে চলে যাবে (০২) তার ক্ববরে আগুল জ্বলতে থাকবে এবং সে রাতদিন সেই অগ্নি স্ফুলিঙ্গের উপর ছটফট করতে থাকবে এবং (০৩) তার ক্ববরে আশ-শুজাউল আকরা বা বিষধর অজগর নামে এক বিরাট সাপ নিয়োগ করা হবে। যার চোখ হবে আগুনের, নখগুলো হবে লোহার এবং প্রত্যেকটি নখের দৈর্ঘ্য হবে এক দিনের দুরত্বের সমান।

তার আওয়াজ মেঘের গর্জনের মত। সে বজ্র নিনাদে মৃতব্যক্তিকে ডেকে বলবেঃ আশি শজা (বিষধর অজগর) আমাকে আমার রব আদেশ করেছেন, তোমাকে ফাজরের সালাত বিনষ্ট করার কারণে সূর্যোদয় পর্যন্ত দংশন করার জন্য। অনুরূপভাবে যুহরের সালাত নষ্ট করার জন্য আসর পর্যন্ত, আসরের সালাত নষ্ট করার জন্য মাগরিব পর্যন্ত, মাগরিবের সালাতের জন্য ইশা পর্যন্ত এবং ইশার সালাতের জন্য ফাজর পর্যন্ত তোমাকে দংশন করতে আদেশ করা হয়েছে। অতঃপর তার উপর আক্রমণ শুরু হবে। প্রতিবার আঘাতে সে সত্তর গজ মাটির নিচে চলে যাবে।

এভাবে ক্বিয়ামত পর্যন্ত তার উপর শাস্তি চলতে থাকবে। আর ক্ববর থেকে বের হবার পর যে সব শাস্তি হবেঃ (০১) ক্বিয়ামতের মাঠে তার হিসাব-নিকাশ অত্যন্ত কঠিন হবে, (০২) আল্লাহ তা"আলা তার প্রতি অত্যন্ত অসন্তুষ্ট ও রাগাম্বিত থাকবেন এবং (০৩) সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আল্লাহ্‌ তা'আলা আমাদের দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সুন্দরভাবে আদায় করার তৌফিক দিন এবং কিয়ামতের দিনে কঠিন আযাব থেকে রক্ষা করুন। আমিন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।