আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লক্ষ্য তালেবানী শাসন - দি ডেইলি স্টার হতে অনূদিত ।

দি ডেইলি স্টার: জুলফিকার আলী মানিকের লেখা হতে অনূদিত। তারিখ এপ্রিল ০৭, ২০১৩ ---------------------------------------------------------------------------------- মাওলানা হাবিবুর রহমান, ঢাকা লং মার্চ এবং লং মার্চ পরবর্তী র‌্যালীর অন্যতম আয়োজক। তিনি সিলেটের একটি মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল। ”তালেবান স্টাইলে”- বাংলাদেশ শাসন বিষয়ে কাজ করার পূর্ব অভজ্ঞিতা রয়েছে তার। গতকালের লং মার্চ পরবর্তী সমাবেশে হাবিবুর রহমান ছিলেন একজন বক্তা।

গত বৃহস্পতিবারে রাজধানীর লালবাগে অনুস্টিত সংবাদ সন্মেলনে হেফাজতে ইসলামির অন্যান্য প্রধান নেতৃবৃন্দের সাথে তিনিও বসেছিলেন সামনের দিকে। হাবিবুর হলেন সিলেট শহরের কাজি বাড়ী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল। তিনি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসেরও আমির। এছাড়াও তিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত ইসলামিক জঙি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামির বাংলাদেশের একজন নেতা ছিলেন। এ সংগঠনটির আর্ন্তজাতিক জঙি সংগঠনগুলোর সাথে সংশ্লিস্টতা রয়েছে।

হাবিবুর নিজেই সেই সংশ্লিস্টতার কথা উল্লেখ করেছিলেন আগস্ট ২০, ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত একটি বুলেটিনে । বুলেটিনটির শিরোনাম ছিল "ইসলামিক বিপ্লব"”। সিলেটে প্রকাশিত এই বুলেটিনটি প্রকাশিত হয়েছিল -"তালেবানদের পরিপূর্ণ বিজয় এবং আফগানিস্তানে একটি ইসলামিক রাস্ট্র প্রতিস্টা”"-কে উদযাপন করার জন্য। ’হুজি বাংলাদেশ’ - এর উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে আরও যারা ছিলেন, তারা হলেন - শায়কুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক (যিনি আগস্ট ২০১২ সালে ইন্তেকাল করেছেন), যিনি ছিলেন বিএনপির সাবেক সাবেক জোট শরীক, ইসলামিক ঐক্য জোটের প্রধান; বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সেকেন্ড ইন কমান্ড (বর্তমান প্রধান) সিলেটের মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান; কিশোরগঞ্জের আতাউর রহমান খান; চট্রগ্রামের সুলতান জাওক; ফরিদপুরের আব্দুল মান্নান এবং নোয়াখালীর হাবিবুল্লাহ। এদের সবাই জড়িত ছিলেন বিভিন্ন ইসলামিক সংগঠন এবং মাদ্রাসার সাথে।

আতাউর রহমান খান ছিলেন ১৯৯১ সালে বিএনপির টিকেটে কিশোরগঞ্জ -৩ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য। বেশ কয়েক বছর আগে, এক সাক্ষাৎকারে তিনি তুলে ধরেন তাদের পরিচয় যারা ১৯৮৮ সালে তার সাথে পাকিস্তান হয়ে আফগানিস্তান সফর করেন। সেসময় তারা তালেবানদের কয়েকটি ক্যাম্প পরিদর্শন করেন এবং আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের সাথে দেখা করেন। এই সেই বুলেটিন যেখানে খেলাফত মজলিস আমির হাবিবুর হুজির সাথে তার সংশ্লিস্টতা এবং ওসামা বিন লাদেনের সাথে দেখা করার বিষয়টি তুলে ধরেন। গতকালের লং মার্চ ও শাপলা চত্তর র‌্যালির তিনি ছিলেন অন্যতম সংগঠক।

ছবি: স্টার আরকাইভ। বুলেটিনটি তার প্রথম পৃস্টায় যে সাক্ষাতকারটি দিয়েছিল সেখানে হাবিবুর ১৯৮৮ সালে তার আফপানিস্তান সফরের বিস্তারিত বর্ননা দেন। তিনি বলেন, ”"হরকাতুল জিহাদের একটি আমন্ত্রনই আমাকে আফগানিস্তান সফরের মত এরকম একটি সৌভাগ্যমন্ডিত সফরের সুযোগ করে দিয়েছিল . . . . . আমাদের সাথে সফরে আরও যারা ছিলেন তারা হলেন – শায়খুল হাদিস, আতাউর রহমান খান, সুলতান সাওক, আব্দুল মান্নান, হাবিবুল্লাহ, আমি নিজে এবং আরও তিনজন"”। পাকিস্তানে হুজির স্থানীয় নেতারা নয় সদস্যবিশিস্ট বাংলাদেশ দলকে স্বাগত জানায় এবং তাদেরকে হুজির করাচি অফিসে নিয়ে যায়। হাবিবুর বলেন হুজি পাকিস্তানের প্রধান সাইফুল্লাহ আকতার এবং একজন বাংলাদেশী মুজাহিদিন, আব্দুর রহমান, গাড়ি চালিয়ে তাদেরকে পাক-আফগান সীমান্তের একটি আফগান মোহাজির ক্যাম্পে নিয়ে যায়।

তারা সেখানে অবস্থান করেন এবং কয়েকজন আহত মুজাহিদদের দেখতে যান। এছাড়াও একটি ক্যাডেট কলেজ পরিদর্শন করেন যেখানে ক্যাডেটরা তাদেরকে গার্ড অব অর্নার প্রদান করে। তারপর আব্দুর রহমান তাদেরকে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যায় শীর্ষ মুজাহিদ নেতা আব্দে রাব্বির রাসুল সায়াফের বাস ভবনে, ...বর্ননা চলতে থাকে। বাড়ীটি সুরক্ষিত ছিল এন্টি এ্যায়ারক্রাফট গান ও সসস্ত্র প্রহরী দ্বারা। পরদিন আফগানিস্তানে যাওয়ার পথে, বাংলাদেশী দলটি পাকিস্তানে একটি বিশেষ মুজাহিদিন ক্যাম্প পরিদর্শন করে।

সেখানে তারা বার জনের একটি বাংলাদেশী দলের সাথে মিলিত হয়, যাদের নেতৃত্তে ছিল আব্দুল কুদ্দুস নামে একজন। তারা দেখতে পান বিভিন্ন দেশের যুবকরা পর্বতময় ভু’মিতে সামরিক প্রশিক্ষন নিচ্ছে। যেসব অস্ত্রের প্রশিক্ষন তারা নিচ্ছে রকেট চালিত গ্রেনেডও রয়েছে তার মধ্যে । সেই রাতে হাবিবুর খাবার হিসাবে ঠান্ডা শুকনো রুটি গ্রহণ করেন। তার সাথে খাবারে অংশ নেয় ”একজন চৌকস আরব যুবক”. তিনি বলেন, "যখন আমি তার পরিচয় সম্পর্কে খোজখবর নিই, আমাকে বলা হয় তিনি ছিলেন ওসামা বিন লাদেন, একটি সৌদি বিত্তশালী পরিবারের সন্তান"।

পরদিন তারা আফগানিস্তানে প্রবেশ করেন এবং পাহাড়ের উপরে একটি মুজাহিদিন সেনানিবাসে পৌছান। তারা সুড়ংয়ের ভিতর একটি অস্ত্রাগার পরিদর্শন করেন। তাদেরকে জানানো হয় যে অনতিদুরেই একটি রাশিয়ান বাহিনী অবস্থান নিয়েছে এবং সবাইকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। ”"আমাদের সবাইকে কালাশনিকভ (একে-৪৭) দেয়া হল”", তিনি বলেন । সেই সাথে যোগ করেন যে, রাতে তারা ক্যাম্পেই ছিলেন যখন মুজাহিদিন দল শত্রু অবস্থানের দিকেএগিয়ে যায় এবং যুদ্ধে লিপ্ত হয়।

পরের দিনটা শুরু হয় ফিরতি পথের যাত্রা দিয়ে। সাক্ষাৎকারে হাবিবুর জোর দিয়ে বলেন যে, ”"শুধুমাত্র তালেবান আর্দশনুসারে খেলাফতি রাস্ট্র প্রতিষ্টাই জাতীর ভাগ্যে পরিবর্তন করতে পারে”। " হাবিবুর সাহাবা সৈনিক পরিষদের আহবায়ক এবং সিলেট কাজির বাজার জামেয়া মদিনিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার প্রতিস্টাতা অধ্যক্ষও। সরকার অক্টোবর ১৭, ২০০৫ সালে "স্বঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন" হুজিকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করে। ২০০৬ সালের ২৩ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ যখন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সাথে সমঝোতায় আসে তখন আওয়ামী লীগ ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে।

সমমোঝাতায়, যে সমঝোতা কখনও দিনের আলোর মুখ দেখেনি, দুদলই যেসব ব্যাপারে সম্মত হয়েছিল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দফাগুলো ছিল যে - যদি আওয়ামী লীগ নেতৃত্তাধীন জোট ক্ষমতায় আসে তাহলে হাক্কানী আলেম কতৃক প্রত্যয়িত ফতোয়া গ্রহণযোগ্য হবে এবং প্রচলিত কওমি মাদ্রাসার ডিগ্রি গ্রহণযোগ্য হবে। যখন আওয়ামী মহা জোট হাবিবুরকে জানুয়ারী ২২, ২০০৭ সালের নির্বাচনে সিলেটের সাম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে দেখছিল তখন সিলেট আওয়ামী লীগ এব্যাপারে ক্ষুদ্ধ হয়েছিল। পরে অবশ্য তা বাতিল করা হয়। সেসময় সিলেট -৬ আসনের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা দল ত্যাগের হুমকিও দিয়েছিল। আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী ২০০৬ সালে এই প্রতিবেদকে বলেন যে হাবিবুর স্বাধীনতা যুদ্ধ বিরোধী এবং আওয়ামী লীগ বিরোধী।

সে নারী নেতৃত্তবিরোধী এবং সিলেটে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের ব্যাপারে তার ভুমিকা ছিল । হাবিবুর কবি শামসুর রাহমান ও শহীদ জননী জাহানারা ইমাম কে সিলেটে প্রবেশে বাধা দিয়েছিল” । "১৯৯২-১৯৯৩ সালে আমি শামসুর রাহমান কে বিয়ানী বাজারে আনতে সক্ষম হই, কিন্তু সিলেটে নিতে পারিনি তার জন্য"”, আতাইর রহমান খান, তৎকালীন বিয়ানী বাজার উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক, ডেইল স্টারকে বলেন ২০০৬ সালে। নব্বই এর দশকে, হাবিবুর রহমান লেখিকা তসলিমা নাসরীনের মাথার জন্য ৫০,০০০ টাকা পুরুস্কার ঘোষনা করেন। গতকাল শাপলা চত্তরের র‌্যালীতে একটি পুস্তিকার কপি বিতরন করা হয়।

পুস্তিকার একটি লাইন এরকম ”"যদি আলেম ও ওলামারা আফগানিস্তান চালাতে পারে তাহলে আল্লার সাহয্যে” আলেমরা বাংলাদেশও চালাতে পারবে" । সুত্র : Target Taliban rule [কপিরাইট সর্ম্পকিত কোন অভিযোগ ও আপত্তি উত্তাপিত হলে আনুবাদটি মুছে ফেলতে বাধ্য থাকিব ] ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.