আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাগল! (প্রেম, ত্যাগ, সংগ্রাম, স্বাধীনতার এক মিশেল চিত্রায়ন)

হেঁটে হেঁটে যতদূর চোখ যায় [ স্বাধীনতা আমাদের অহংকার। খুব সহজে আমরা কিন্তু স্বাধীনতা পাইনি। তাই শহীদের আত্মত্যাগ আমরা ভুলব না। স্বাধীনতার সকল শহীদের প্রতি সালাম, সালাম, হাজার সালাম!] [এক] -হরকান্ত দা, কেমন আছ? -আজ্ঞে, দাদা, ভাল। -তা, দাদা দ্যাশের অবস্থা কেমন বুঝতাছো? -ভাল না, দাদা।

গণ্ডগোল, দাদা। যুদ্ধ হইতে পারে। -আচ্ছা নীলা কে, দাদা? -একটা বেশ্যা। -ও না তোমার বউ ছিল? -বেশ্যারা তো সবার বউ। -দাদা, বলো তো দেখি এখন কত সাল? -১৯৭১।

সেই ছোটবেলা থেকেই হরকান্তদাকে এই একই রকম দেখে আসছি। পুরনো, ময়লা একটা কোট গায়ে। ছেঁড়া-খোঁড়া প্যান্ট পরনে। মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। চোখের নিচে গাঁঢ় কালি।

উদাসীনভাবে হেঁটে চলে। মাঝে মাঝে ঝিম মেরে বসে থাকে। কখনও বা রাস্তার পাশেই ঘুমিয়ে পড়ে। কেউ কিছু দিলে খায়। না দিলে নাই।

এভাবেই হরকান্তর প্রতিটি দিনের শেষে সূর্য ডোবে। সকালে আবার ওঠে। বিকেলে আবার ডোবে। হরকান্তর পুরো নাম হরকান্ত রায়। বয়স এখন প্রায় ষাট বছর।

নাটোরের লালবাজার এলাকায় গেলেই তার দেখা পাওয়া যায়। ওখানে নতুন প্রজন্মের কাছে সে ‘পাগল’ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু সে কি এমনটা ছিল? ছিল না। তারও ছিল সাজানো এক স্বপ্নিল পৃথিবী। সে পৃথিবীর বাসিন্দা ছিল হরকান্ত আর নীলা।

চায়ের দোকানির বউ নীলা। নীল স্বপ্ন ছিল তার চোখে। ভালবাসার মানুষটিকে নিয়ে সে বাঁচতে চেয়েছিল। গড়তে চেয়েছিল সুখের স্বর্গ। কিন্তু যুদ্ধ নামক নরক যন্ত্রণায় জ্বলে সে অঙ্গার হয়েছে সেই কবে! কে তার খবর রাখে! কেউ রাখে না! কেউ না! [দুই] ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর এবং ১৭ ডিসেম্বর যথাক্রমে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন হয়।

নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী আওয়ামী লীগেরই সরকার গঠনের কথা। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালি নেতৃত্বকে মেনে নিতে পারেনি। পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর পরামর্শে ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করেন। এরূপ পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পয়লা মার্চ ’৭১ এক ঘোষণায় ৩ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদের প্রথম অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেন। এ ঘোষণার প্রতিবাদে পূর্ব পাকিস্তানে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।

সর্বস্তরের জনগণ রাজপথে নেমে আসে। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করায় বঙ্গবন্ধু ২ ও ৩ মার্চ হরতাল পালনের আহবান জানান। তিনি ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে এক নীতি নির্ধারণী ভাষণ দেন। ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসভায় তিনি তাঁর ভাষণে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের আহবান জানান। উপস্থিত জনতার সম্মুখে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তিনি ঘোষণা করেন... ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো।

তোমাদের যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে... এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম... এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম... [তিন] হরকান্তর চা দোকান। সে ক্রেতাদের জন্য চা বানাচ্ছে। একজন বলল, ভাই, পরিস্থিতি কিছু বুঝতাছেন? -কোন পরিস্থিতি ভাই? পাল্টা প্রশ্ন করলেন আরেকজন। -শুনলাম শেখ সাহেবরে নাকি ক্ষমতা দিবে না। -ক্যান? দিবে না ক্যান? উনি কি বেশি ভোট পান নাই? -পাইছেন।

তাতে কী? পাঞ্জাবি গো বিশ্বাস নাই। -এটা কোন কথা হইল? -না ভাই, হইতেও পারে। আলোচনায় যুক্ত হলেন আরেকজন। রেসকোর্সে শেখ মুজিব কী কইছে? জানেন কিছু? -কী কইছে? -যুদ্ধের জন্য তৈরি থাকতে বলছে। ঘরে ঘরে দুর্গ বানাইতে বলছে।

-কী! যুদ্ধ! -হ যুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধ। স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ। ও হরকান্ত, তোমার তো রেডিও আছে। রেডিওতে কী শুনছো এনাগো কও।

হরকান্ত গলা উঁচুতে নিয়ে বলল, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম! ঘরে নতুন বউ। শুধু ওকে দেখতে ইচ্ছে করে। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে, ইস ওরে যদি সারাক্ষণ চোখের সামনে রাখতে পারতাম! নীলা তুমি এখন কি করো? আমার জন্য রান্না করো? তোমার কি একা একা ভয় লাগছে? দাঁড়াও, আমি আসছি। হরকান্ত আর বেশিক্ষণ দোকানে থাকতে পারে না। ঘড়ির কাঁটা আঁটটা ছোঁয়ার আগেই সে তাঁর দোকানের ঝাঁপি নামিয়ে দেয়।

আজকের আকাশে অনেক তারা। যেন তারার মিছিল। ঝকঝকে আকাশে এক ফালি চাঁদ হাসছে। ঝিরঝিরে বাতাসে ফুলের গন্ধ ভেসে আসছে। কী ফুল? রাতে ফোটে মিষ্টি গন্ধবিলাসী ফুলের নামটা জন কী? কিছুতেই মনে সে না হরকান্তের।

থাক। দরকার নেই। এ ফুলের চেয়ে মিষ্টি গন্ধের ফুল হরকান্তের কাছে আছে। খুব কাছে। একদম বুকের ভেতর।

তাঁর বউ নীলা। বউফুল! হরকান্ত বউফুলের চুলের ঘ্রাণ নিতে থাকে। আহ! কী দারুণ! কী... হরকান্তকে অবাক করে দিয়ে হঠাৎ বউফুল কথা বলে ওঠে। আচ্ছা তুমি এসব কী শুরু করছ? -কী করছি? -এই যে রোজ রোজ তাড়াতাড়ি দোকান বন্ধ করে ঘরে ফির‍্যা আস! -হ। তাতে কী হইছে? -মাইনসে কী কয়? -কী কয়? -তুমি বোঝো না? -না।

বুঝি না। -তোমারে বউ-পাগলা কয়। -কউক। আর ঠিকই তো কয়। আমি তো বউ-পাগলাই! -ধ্যাত! কী যে কও না! নীলার চোখ মুখ লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে।

লজ্জিত হলেও স্বামীর মুখে এমন পাগলাটে কথা শুনতে তাঁর ভালই লাগছিল। লাগতেই হবে। ভালবাসার মানুষ বলে কথা। তবুও কৃত্রিম রাগ দেখিয়ে সে বলল, তুমি আসলেই একটা পাগল! [চার] ’৭১- এর ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ঘুমন্ত, নিরস্ত্র মানুষদের উপর। রাজধানী ঢাকায় তারা প্রথমে হামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মচারীদের আবাসে এবং পুলিশ ও সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী ইপিআর – এর সদর দফতরে।

এরপর তারা ধ্বংস করেছে ঢাকার বস্তি, বাজার এবং হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাসমূহ। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র – শিক্ষক – কর্মচারীদের ঘরে ঢুকে কিংবা ঘর থেকে বের করে এনে হত্যা করেছে তারা। বাজার ও বস্তিগুলোতে তারা আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। আগুনের ভয়ে হাজার হাজার মানুষ যখন ঘর থেকে দলে দলে বেরিয়ে এসেছে, তখন ওদের ওপর মেশিনগানের গুলি বর্ষিত হয়েছে একটানা, যতক্ষণ না প্রতিটি মানুষ নিহত হয়। এসব মানুষ জানতেও পারেনি কেন তাদের হত্যা করা হচ্ছে কিংবা কারা হত্যা করছে।

‘অপারেশন সার্চ লাইট’-এর নামে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে শুধুমাত্র ঢাকায় পঞ্চাশ থেকে ষাট হাজার নিরীহ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। ঢাকা পৌরসভার কয়েকজন সুইপারের জবানবন্দি থেকে পাক সৈন্যদের নৃশংসতা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা লাভ করা যেতে পারে। এই সুইপারদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল লাশ সরাবার জন্য। ১৯৭১ –এর ২৯ মার্চের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে ছোটন ডোমের পুত্র সরকারি পশু হাসপাতালের সুইপার পরদেশী বলেছেন, ২৯ মার্চ সকালে আমি ঢাকা পৌরসভা অফিসে হাজির হলে আমাকে ট্রাক নিয়ে লাশ তোলার জন্য আরও কয়েকজন সুইপারের সাথে শাঁখারি বাজারে যেতে বলা হয়। জর্জ কোর্টের সম্মুখে আগুনের লেলিহান শিখা তখনও জ্বলছিল।

আর পাক সেনারা টহলে মোতায়েন ছিল বলে আমরা ট্রাক নিয়ে সে পথ দিয়ে শাঁখারি বাজারে প্রবেশ করতে পারি নাই। পাটুয়াটুলি ঘুরে আমরা শাঁখারি বাজারের পশ্চিম দিকে প্রবেশ করি। পাটুয়াটুলি ফাঁড়ি পার হয়ে আমাদের ট্রাক শাঁখারি বাজারের মধ্যে প্রবেশ করল। ট্রাক থেকে নেমে আমরা শাঁখারি বাজারের প্রতিটি ঘরে ঘরে প্রবেশ করলাম- দেখলাম মানুষের লাশ, নারী-পুরুষ, যুবক –যুবতী, বৃদ্ধ – বৃদ্ধা, বালক – বালিকা, কিশোর, শিশুর বীভৎস পচা লাশ। চারদিকে ইমারতগুলো ভেঙে পড়ে আছে।

মেয়েদের অধিকাংশ লাশ আমি সম্পূর্ণ উলঙ্গ দেখলাম। দেখলাম তাদের বুক থেকে স্তন তুলে নেয়া হয়েছে। কারো কারো যোনি পথে লাঠি ঢুকানো আছে। বহু পোড়া ভস্ম লাশ দেখেছি। পাঞ্জাবি সেনারা পাষণ্ডের মত লাফাতে লাফাতে গুলি বর্ষণ করছিল...।

এরই মধ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়া হয়। পাকিস্তানি সৈন্যরা ২৫ মার্চ গভীর রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহকর্মীদের করনীয় নির্দেশ দিয়ে যান। ২৬ মার্চ ওয়্যারলেস যোগে প্রাপ্ত বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটি চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান চট্টগ্রাম বেতার থেকে দুপুর বেলায় প্রচার করেন। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বেতারের কিছু কর্মী, শিল্পী, শিক্ষক চট্টগ্রাম কালুরঘাট একটি অস্থায়ি বেতার কেন্দ্র চালু করেন এবং মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে মর্মে খবর প্রচার করতে থাকেন।

২৭ মার্চ সন্ধাবেলায় উক্ত কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার আর একটি ঘোষণা প্রচার করেন। স্বাধীনতার ঘোষক কে এ নিয়ে দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা আজও বিতর্কে জড়িয়ে আছি। ছোটবেলায় জেনেছি একজন। এখন শুনি আরেকজন। আমি আমার স্কুলজীবনে যা পড়েছি এখানে তা-ই লিখেছি।

[পাঁচ] -ও হরকান্ত শুনছ কিছু? -কী হইছে দাদা! -ঢাকায় মিলিতারি নামছে। হাজার হাজার মানুষ মারছে। -কী কন? -হ। -শহর দিয়া দলে দলে মানুষ গ্রামে আইতাছে। সবাই ঢাকা ছাড়তাছে।

গনি শেখের কথা শুনে হরকান্ত চিন্তিত হয়ে পড়ে। তবে এটা ঠিক যে, সে বুঝতে পারছে না তার কি করা উচিৎ। সহজ, সরল, সাদাসিধে তার মত একজন মানুষ যে কিনা গভীরভাবে ভাবতে পারে না। খুব বেশি পড়াশুনাও তার জানা নেই। তাই তখনকার উত্তাল পরিবেশে তার যতটা আন্দোলিত হওয়া উচিৎ ছিল সে তার পুরোটা হতে পারে না।

তবে তার চিন্তা হয় নীলার জন্য। তার ও নীলার স্বপ্নগুলোর জন্য। সামনে কি খুব বিপদ? হরকান্ত চিন্তিত স্বরে গনি শেখকে জিজ্ঞাসা করে, মিলিতারই কি এ জায়গায় আইবো? -তা ক্যামনে কই? ওগো বিশ্বাস নাই। আইতেও পারে। -যদি আয় তাইলে কী হইবো? চোখে শঙ্কা হরকান্তের।

-গতরাতে আমার শ্যালক মন্টু ঢাকা দিয়া আইছে। ওর কাছে শুনলাম ২৫শে মার্চ রাইতে ওরা যারে সামনে পাইছে তারেই মারছে। মাইয়াগো রেপ করছে। ঘরবাড়ি দোকানপাট সব জ্বালাইয়া দিছে। মন্টু অনেক কষ্ট কইরা কোনমতে জানটা নিয়া পালাইয়া আইছে।

-দাদা গো, তাইলে আমার এই দোকানের কী হইব? দোকান জ্বালাইয়া দিলে আমি কী খামু? বউরে কী খাওয়ামু? -দুররো! থামো তো। ওরা তো এখনও এখানে আসে নাই। হরকান্তকে শান্ত করার চেষ্টা করে গনি শেখ। দ্যাও তো, এক কাপ চা দ্যাও। হরকান্ত চা দেয়।

এবার কিন্তু সে সত্যিই চিন্তিত হয়ে পড়ে। [ছয়] রাতে হরকান্ত আর তার বউ নীলা খেতে বসেছে। কৈ মাছের ঝোল, ডাল আর ভাপ ওঠা সাদা ভাত। ভাত খেতে খেতে হরকান্ত বলে, বাহ বউ! তোমার রান্না দারুণ হইছে। এত ভাল রান্না তোমারে কে শিখাইছে? -কেউ না।

আমি একা একা শিখছি। -একা একা? -হ। একদম একা। -আইচ্ছা, আমারে রান্না শিখাবা? -কী কও! ব্যাটা হইয়া তুমি রান্না শিখবা? বউর চোখে রাজ্যের বিস্ময়। -হ।

শিখমু। এতে এত অবাক হওয়ার কী আছে? -না মানে...মানে... -আরে এত মানে মানে করার কিছু নাই। আমি তোমার কাছে রান্না শিখতাছি এটাই ফাইনাল। হরকান্তর মনে হঠাৎ দুষ্টুমি খেলে যায়। সে বলেই ফেলে, আরে বউ, যখন তুমি পোয়াতি হবা তখন তো তুমি রান্নাবান্না করতে পারবা না।

আমারেই তো করতে হইব। তাই না? -দুর! তুমি যে কী কও! পাগল! লজ্জিত কণ্ঠে বলে নীলা। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নেয়। আচ্ছা ঠিক আছে। এখন ভাত খাও।

ভাতে পোকা পড়ব তো! ও, তাই তো। হরকান্ত ভাত খেতে খেতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। [সাত] এলাকায় নতুন একটা কমিটি গঠন করা হয়েছে। নাম ‘শান্তি কমিটি’। এ কমিটি এখানে শান্তি রক্ষা করবে।

পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষায় ভূমিকা রাখবে। কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে স্থানীয় মুসলিম লীগ নেতা কফিলউদ্দিন। সে-ই হবে শান্তি রক্ষায় প্রধান কাণ্ডারি। তার নেতৃত্বেই এখনকার মানুষ পাকিস্তানের খেদমত করবে। সদ্যগঠিত কর্মীবাহিনী নিয়ে কফিলউদ্দিন গেছে হরকান্তর দোকানে চা খেতে।

কী হরকান্ত! ভাল আছো তো? জিজ্ঞেস করে কফিলউদ্দিন। -আজ্ঞে, দাদা। আছি এক রকম। -আচ্ছা বেশ বেশ। তা আমাগো সবাইরে চা দ্যাও তো দেখি।

-দিতাছি। -শোন হরকান্ত। জানো তো, শান্তি কমিটি করলাম। পাকিস্তানরে বাঁচাইতে হইব। তাই এ কমিটি।

এরপর কফিলউদ্দিন গলা নামিয়ে বলল, মুক্তি বা জয়বাংলাওয়ালা গো খবর জানলেই আমাগো জানাবা, ঠিক আছে? ওরা গাদ্দার। পাকিস্তানের শত্রু। নিরুত্তর থাকে হরকান্ত। এতে সন্দেহের চোখে তাকায় কফিলউদ্দিন। মনে মনে বলে, শালা মালাউন! ইন্ডিয়ার দালাল! এরপর জোর গলায় বলে, কী, বুঝছ আমি কী কইছি? -জে, জে, বুঝছি।

হরকান্ত থতমত খেয়ে যায়। [আট] কয়েকদিন পর। তখন রাত। ঘড়ির কাঁটা আঁটটা ছুঁই ছুঁই। আকাশে অসংখ্য তারা জ্বলছে।

তারা সাথে যেন পাল্লা দিয়েছে ঝোপঝাড়ের জোনাকিরা। আজ চাঁদ ওঠেনি। তাই অন্ধকারের গাঢ়ত্ব যথেষ্ট গভীর। হরকান্ত এখনো দোকানে বসে আছে। হ্যারিকেনের আলোয় খুব বেশি দূর দেখা যাচ্ছে না।

ভ্যাপসা গরমে ঘেমে প্রায় নেয়ে উঠেছে হরকান্ত। গাছের পাতাগুলো একদম স্থির। যেন আঁকা ছবি। ইস! একটু বাতাস বইত! খদ্দেরবিহীন এভাবে আর কতক্ষণ বসে থাকা যায়! হরকান্তর ভাল লাগছে না। বাড়ি তাকে টানছে।

ওদিকে বউটা একা একা কী না কী করছে? বেচারি! সারাদিন একা একা কষ্ট করে, অথচ মুখে ওর সারাক্ষন হাসি লেগেই আছে। কোনও ক্লান্তি নেই। হরকান্ত চোখ বুজে নীলার হাসিমুখ দেখার চেষ্টা করে। হঠাৎ ঠাশ ঠাশ ঠাশ! এ কী! গুলির শব্দ! বাঁচাও বাঁচাও! মিলিটারি! মিলিটারি! আগুন! আগুন! বাঁচাও! বাঁচাও! ঠাশ ঠাশ ঠাশ......! কোনমতে দোকানের ঝাঁপিটা নামিয়েই বাড়ির পথে দৌড়ে যায় হরকান্ত। কিন্তু সে যেতে পারে না।

পথে পাকিস্তানি মিলিটারির সামনে পড়ে যায়। ওকে দেখা মাত্রই দুইজন সেনা ওর দিকে তেড়ে আসে। হরকান্ত দৌড়ে একটা বাগানে ঢুকে পড়ে। ঠাশ! পিছন থেকে গুলির আওয়াজ শুনতে পায়। সে থামে না।

দৌড়াতে থাকে। দৌড়ে দৌড়ে একসময় হানাদারদের নাগালের বাইরে চলে যায়। এতক্ষণ দৌড়ে হরকান্ত প্রচণ্ড হাঁপিয়ে গেছে। তাই সে একটু দম নেয়। বুকের মধ্যে খুব ধুক ধুক করছে।

যেন হৃৎপিণ্ডটা পাঁজরের হাড়ের সাথে বাড়ি খাচ্ছে। কী হবে এখন? নীলা! নীলার কী হবে? না জানি ও কেমন আছে! হায় ভগবান, তুমি এ কোন বিপদে ফেললা! তোমার কাছে হাতজোড় করছি, তুমি নীলারে রক্ষা করো। রক্ষা করো। [নয়] কয়েক ঘণ্টা পর হরকান্ত ফিরে এল। কিন্তু এ সে কোথায় এসেছে? এটা কি তার বাড়ি, নাকি শ্মশান? সবকিছু ছড়ানো ছিটানো।

ভাঙাচোরা। সব এলোমেলো হয়ে গেছে। ওই তো মেঝেতে নীলার হাতের শাঁখার ভাঙা টুকরো পড়ে আছে। নীলা! নীলারে............! হরকান্ত চুপচাপ বসে থাকে। উদাসীনভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।

তারার পেছনে তারা ছোটে। মেঘের পেছনে মেঘ। একটা কুকুর করুণ সুরে কেঁদে চলেছে, ঘেউ-উ-উ-উ! খাণ্ডব দহনে দগ্ধ হতে থাকে হরকান্তর মন। কিন্তু নিরস্ত্র, একা সে কী করবে? কিছুই করতে পারে না। শুধুই দগ্ধ হতে থাকে।

এরমধ্যে প্রতিবেশী বিধবা বৃদ্ধা মরিয়ম বিবি ঘরে এল। বাবা, মাইয়াডা কফিলউদ্দির কত হাত পায়ে ধরল! ব্যাডায় ছাড়ল না। তুইলা নিয়া গেল। আমি ঠেকাইতে গেছিলাম। আমারে ওরা ধাক্কা দিয়া ফালাইয়া দিছে।

নীলাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় হানাদারদের ক্যাম্পে। শুধু নীলা নয়, সখিনা, জরিনা, মহুয়া, মালতি, লতা এমন নাম না জানা হাজারো মা-বোনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় পাকিদের ডেরায়। তারপর......... [দশ] তারপর কী হয়েছিল তা আমি জানি না। কেননা বীরাঙ্গনাদের ত্যাগের করুণ কাহিনী কোনও এক বিচিত্র কারণে তরুণ প্রজন্মের সামনে প্রকাশ পায়নি। হয়ত প্রকাশ করা হয়নি।

যা হোক। প্রত্যক্ষদর্শী রাবেয়া খাতুনের কথা শুনে আমরা আঁচ করতে পারি কী ভয়াবহ ছিল সেইসব দিনগুলো, যার অন্ধকার অমাবস্যার কালোত্বকেও হার মানিয়েছিল। ’৭১- এর ২৫ মার্চের পর রাজারবাগ পুলিশ লাইনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা, নারী নির্যাতন ও ধ্বংসযজ্ঞের নারকীয় দৃশ্যাবলী প্রত্যক্ষ করেছেন সেখানকার সুইপার রাবেয়া খাতুন। তার ভাষায়... ওরা (পাকি আর্মিরা) ব্যারাকে ব্যারাকে প্রবেশ করে প্রতিটি যুবতী, মহিলা ও বালিকার পরনের কাপড় খুলে একেবারে উলঙ্গ করে মাটিতে লাথি মেরে ফেলে দিয়ে বীভৎস ধর্ষণে লেগে গেল... আমি দেখলাম পাক সেনারা সেই মেয়েদের উপর পাগলের মত উঠে ধর্ষণ করছে আর ধারাল দাঁত বের করে বক্ষের স্তন ও গালের মাংস কামড়াতে কামড়াতে রক্তাক্ত করে দিচ্ছে......অনেক পশু ছোট ছোট বালিকাদের উপর পাশবিক অত্যাচার করে ওদের অসাড় রক্তাক্ত দেহ বাইরে এনে দুজনে দু’পা দু’দিকে টেনে ধরে চড়চড়িয়ে ছিড়ে ফেলে দিল... [এগারো] হরকান্ত পাগলের মত নীলার খোঁজ করে। কিন্তু পায় না।

মাঝে মাঝে তার ইচ্ছে করে কফিলউদ্দিনের গলা চেপে ধরে নীলার খবর জিজ্ঞেস করে। সাহসে কুলোয় না। সশস্ত্র রাজাকারটার সামনে গেলেই নিরস্ত্র হরকান্তের জানটা যাবে। তাই হরকান্তর অস্ত্র চাই! অস্ত্র! মুক্তি চাই! স্বাধীনতা চাই! হরকান্ত যুদ্ধে চলে যায়। সময় গড়িয়ে যায়।

থেমে থাকে না ঘড়ির কাঁটা। দিন আসে, রাত হয়। রাত যায়। দিন আসে। আবার...।

বাতাসে ভাসে বারুদের গন্ধ। ভেসে আসে লাশের গন্ধ। পোড়া গন্ধ। চিৎকার! বাঁচাও! বাঁচার আকুতি। রক্ত! রক্ত! রক্ত! খালে লাশ।

বিলে লাশ। মাঠে লাশ। ঘাটে লাশ। শুধু লাশ আর লাশ। পচা লাশের মাংস খায় শিয়াল, শকুন, কাক, কুকুর।

রক্তের স্রোত বাড়তে থাকে। বাড়তে বাড়তে রক্তের সাগর হয়ে যায়। অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। [বার] যুদ্ধ থেকে ফিরে আসে হরকান্ত। পরনে কোট -প্যান্ট।

যদিও সেগুলো একটু পুরনো। তবুও ওসবে তাকে ভালই লাগছিল। যুদ্ধের সময় জলিল নামের এক সহযোদ্ধা তাকে এগুলো উপহার দিয়েছিল। ছেলেটি ছিল ধনী পরিবারের। কোটপ্যান্ট পরেই যুদ্ধে চলে এসেছিল।

পরে কী মনে করে যেন সে ওগুলো হরকান্তকে দিয়ে দেয়। এর কারণ হরকান্তও জানে না। হানাদার ক্যাম্প থেকে নীলাকে উদ্ধার করা হয়। হরকান্ত প্রথমে যেন ওকে চিনতেই পারছিল না। কোথায় তার বউফুল? এ যেন এক বিধ্বস্ত প্রতিমা।

শ্রান্ত। মলিন। অবসন্ন। নীলা ঠিক মত হাঁটতে পারছিল না। হরকান্ত কোলে করে ওকে বাড়ি নিয়ে আসে।

নীলা অনেক বদলে গেছে। সে আর আগের মত হাসে না। কথাও বলে না। সারাক্ষণ চুপচাপ ফ্যাল ফ্যাল করে শূন্যের দিকে তাকিয়ে থাকে। ওকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে হরকান্ত, শোনো, যা হবার হইছে।

ওসব ভুইলা যাও। তুমি আবার আগের মত হইয়া যাও। একটু হাসো। একটু হাসো। নীলা হাসে না।

সে যেন হাসতে ভুলে গেছে। সে থাকে নিরুত্তর। তবুও হাল ছাড়ে না হরকান্ত। সে চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে। একসময় সে দেখতে পায় নীলা ক্রমশ স্বাভাবিক হয়ে উঠছে।

কিন্তু একদিন হরকান্ত জানতে পারে নীলা গর্ভবতী। পেটে তার হানাদারদের সন্তান। [তেরো] হরকান্ত চেয়েছিল নীলাকে নিয়ে কোন ডাক্তার – কবিরাজের সাথে কথা বলবে। কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে তখন ডাক্তাররা আজকের মত এতটা সহজলভ্য ছিল না। তাছাড়া সে তার সুযোগও পায়নি।

এর আগেই ব্যাপারটা রাষ্ট্র হয়ে যায়। অনেকে ছিঃ ছিঃ করতে থাকে। কিন্তু তারা একবারও ভাবল না, এতে মেয়েটার দোষ কোথায়। কী তার অপরাধ? আসলেই মানুষ বড় বিচিত্র। সবচে বিচিত্র হচ্ছে তাদের মন।

কখন যে কার পক্ষ নেয় তা হয়ত অনেক সময় মানুষ নিজেই জানে না। দুদিন পর। স্থান হরকান্ত রায়ের বাড়ির উঠোন। সালিশ বসেছে। বিচার হবে নীলার।

তার অপরাধ, কেন সে খানসেনাদের বাচ্চা পেটে নিয়ে আছে! বিচার করতে এসেছে স্থানীয় মাতব্বররা। প্রধান বিচারক হল কফিলউদ্দিন। সেই রাজাকার। অনেক রাজাকারের মতই তার কিছুই হয়নি। কিছুদিন পালিয়ে ছিল।

এখন আবার ফিরে এসেছে বহাল তবিয়তে। আমাদের দেশটা যে কত বড় দুর্ভাগা তা ভাবতে খুব কষ্ট হয়! কিন্তু কি করার আছে! কিছুই কি নেই? কফিলউদ্দিন উপস্থিত সবাইকে উদ্দেশ করে বলতে শুরু করে, ভাইসব, বলেন তো দেখি এই মাইয়াটারে নিয়া কী করন যায়? তার পেটে খানসেনা গো বাচ্চা। বলেন আপনারা এরে কী শাস্তি দেয়া যায়? প্রতিবাদ করে হরকান্ত। শাস্তি মানে! কইলেই হইল? ওর কি দোষ? ও কি ইচ্ছা কইরা খানসেনা গো কাছে গেছে? -যাইতেও তো পারে। বিশ্বাস কী? ফোড়ন কাটে কফিলউদ্দিন।

-হারামজাদা, রাজাকার। তুই-ই তো ওরে... হরকান্ত আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না। দৌড়ে মারতে যায় কফিলউদ্দিনকে। কিন্তু তাকে ধরে ফেলে কফিলউদ্দিনের কয়েকটা চামচা। হরকান্তর মনে হতে থাকে, ইস স্টেনগানটা কেন যে জমা দিলাম! ওটা যদি এখন হাতে থাকত।

এক পর্যায়ে তাকে একটা গাছের সাথে বেঁধে ফেলা হয়। কফিলউদ্দিনের প্রহসন নাটকের কয়েকটা অঙ্ক তখনও বাকি ছিল। তবে সেসব মঞ্চস্থ হতে খুব বেশি দেরি হল না। কুশলী অভিনেতা কফিলউদ্দিন। ক্ষণে ক্ষণে সে ভোল পাল্টাতে জানে।

জানে কীভাবে মানুষের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে হয়। আর মানুষগুলোও যেন কেমন! মেরুদণ্ডহীন! আসলে বেশিরভাগ সাধারণ মানুষই এমন। তারা নিজেরা কথা বলতে চায় না। ভয় পায়। সমাজের কথিত শক্তিশালী অংশ তাদের যেদিকে যেতে বলে তারা সেদিকেই যায়।

জোয়ার যেদিকে, তারাও সেদিকে। নিজেদের যেন কোনও আত্মঅনুভূতি নেই। থাকলেও তারা তা প্রকাশ করে না। করতে চায় না। করতে পারে না।

অথচ তারা বুঝতেও পারে না গুটিকয়েক কফিলউদ্দিনের হম্বিতম্বি তাদের সম্মিলিত শক্তির সামনে কিছুই না। বিন্দুর চেয়েও ক্ষুদ্র। শোনেন ভাইসব! নীলাকে দেখিয়ে বলল কফিলউদ্দিন। এই মাইয়াটার পেটে অবৈধ বাচ্চা। অবৈধ বাচ্চা ভাল মাইয়া মাইনসের হয় না।

অবৈধ বাচ্চা হয় বেশ্যা গো। বেশ্যারাই অবৈধ বাচ্চার জন্ম দেয়। হারামজাদা। কুত্তার বাচ্চা। চুপ কর কফিলউদ্দির বাচ্চা! রাগে, ক্ষোভে, ঘৃণায় চিৎকার করে ওঠে হরকান্ত।

নীলার আইজ এ অবস্থার জন্য কে দায়ী? তুই দায়ী! তুই! তুই-ই তো ওরে পাঞ্জাবী গো হাতে দিছিলি। তোরে আমি ছাড়মু না। তোরে আমি গুলি করুম......তোরে...আহ! হরকান্তকে আর কিছু বলতে দেয়া হল না। হঠাৎ করে কফিলউদ্দিনের এক চামচা হরকান্তর মাথায় লাঠি দিয়ে জোরে আঘাত করে। মাথা ফেটে মুষড়ে পড়ে হরকান্ত।

তবুও সে ক্ষীণস্বরে বলতে চেষ্টা করে, ভাইসব, আপনারা এ অন্যায় মানবেন না। আপনারা ওই শয়তানের কথা শুইনেন না। আশ্চর্য! উপস্থিত মানুষগুলোর একজনও হরকান্তর পাশে দাঁড়ানো তো দূরের কথা, টু-শব্দটিও করল না। তারা যেন নির্বাক। নীরব ছবির অপ্রয়োজনীয় অংশ মাত্র।

ধীরে ধীরে হরকান্তর চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। তার সামনের পৃথিবী ক্রমশ অন্ধকারে ডুবে যেতে থাকে। অস্পষ্টভাবে কিছু দৃশ্য, কিছু শব্দ অস্ফুটভাবে তার কাছে আসতে থাকে। কফিলউদ্দিন বলছে... বিচার... শাস্তি... দোররা... হ্যাঁ... হ্যাঁ... একঘরে... নীলার চিৎকার... মাগোরে... বাঁচাও... আহ... আহ... আহারে... একসময় হরকান্ত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। [চোদ্দ] জ্ঞান ফেরার পর হরকান্ত জানতে পারে নীলা আত্মহত্যা করেছে।

তাকে লাশের সামনে নেয়া হয়। যাক! ভাল হইছে! মরছে! বাঁচছি! বেশ্যা! সবাইকে অবাক করে দিয়ে অদ্ভুতভাবে কথাগুলো বলে হরকান্ত। তারপর ঝরঝর করে কাঁদতে শুরু করে। [পনের] ২০০৬ সাল। মার্চ মাস।

দুটো কিশোর হরকান্ত দাকে নিয়ে কথা বলছে। জানিস ওই পাগলটাকে এখন কত সাল জিজ্ঞেস করলে কী বলে? -কী বলে? -জিজ্ঞেস করেই দ্যাখ না। -আচ্ছা। হরকান্তদা রাস্তার পাশে চুপ করে বসে ছিল। কী যেন ভাবছিল।

হয়তো নীলার কথা- ই চিন্তা করছিল। কিশোর ছেলেটি তার কাছে গিয়ে বলল, দাদা, এখন কত সাল? প্রশ্ন শুনে হরকান্ত নিরুত্তাপ জবাব দেয়, ১৯৭১.... [ এটা প্রকাশিত হয়েছিল রহস্য পত্রিকা ডিসেম্বর ২০০৬ সংখ্যাতে। ] ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.