আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খানজাহান (রঃ) এর শ্রেষ্ঠ কীর্তি ষাটগম্বুজ সহ অসংখ্য স্থাপত্য নিদর্শণকে ঘিরে বাগেরহাটকে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নগরীতে পরিণত করা সম্ভব

আমি পড়তে চাই ॥ এস এম সামছুর রহমান ॥ World heritage এর অংশ খানজাহান (রঃ) এর শ্রেষ্ঠ কীর্তি ষাটগম্বুজ সহ অসংখ্য স্থাপত্য নিদর্শণকে ঘিরে বাগেরহাট কে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নগরীতে পরিণত করা সম্ভব। প্রয়োজন শুধু উদ্যোগ গ্রহনের । ষাট গম্বুজ মসজিদ এক অপূর্ব স্থাপত্য কলার নিদর্শণ। পিরোজপুর-রূপসা মহাসড়কের পার্শে¦ খানজাহান (রঃ) মাজার শরীফ থেকে প্রায় দেড় মাইল উত্তর পশ্চিম দিকে সুন্দরঘোনা গ্রামে মসজিদটি অবস্থিত। মসজিদের উত্তর দ¶িণ ও পূর্ব পার্শ্বে পাকা সড়ক, পশ্চিম পার্শ্বে ঐতিহাসিক ঘোড়াদীঘি।

স্থাপত্য কৌশল অর লাল পোড়া মাটির উপর সুনিপুন লতাপাতার অলংকরনে নানারূপ কার“কার্য খচিত মসজিদের ভিতর বাহিরে অভাবনীয় সৌন্দর্যের সামাবেশ ঘটেছে। বাংলাদেশে এত বড় ঐতিহাসিক মসজিদ আর নেই। মসজিদটির দৈর্ঘ্য ১৬০ ফুট এবং প্রস্থ ১০৮ ফুট। আর এর উচ্চতা ২২ফুট। মসজিদের বাইরের মাপ ১৫৯′ -৮′′ ঢ ১০৪′ -৬′′ ভিতরের মাপ ১৪৩-৩′ ঢ ৮৮-৬′′ এর ভিতরে ৮ ফুট।

গম্বুজের উচ্চতা ২১ ফুট। এর সামনের দিকে একটি খিলান এবং দু-পাশে ৫ টা করে খিলান রয়েছে। দেয়াল প্রায় ৯ ফুট পুর“। পূর্ব পশ্চিমে ৭ টি করে ১১টি সারিতে মোট ৭৭ টি গম্বুজ রয়েছে। এর মধ্যে মাঝের এক সারিতে ৭টি গম্বুজের উপরিভাগ চৌকোণা, বাকী ৭০ টির উপরিভাগ গোলাকার।

মসজিদের ভিতরে পূর্ব পশ্চিমে ১০ টি সারিতে ৬ টি করে মোট ৬০ টি গুম্বুজ রয়েছে। স্থানীয় লবনাক্ত জলবাযুর প্রভাবে যাতে ভবনটি ¶তিগ্রস্থ না হয়, সে কারনে মসজিদের ¯—ম্ভের নিচে ৪ ফুট পর্যš— চারপাশে পাথরের আ¯—রন দেয়া হয়েছে। এসব পাথর বাইরে থেকে আমদানী করা হয়েছিল। মসজিদের ভিতরে এমন জ্যামিতিক পদ্ধতিতে ¯—ম্ভ গুলো বিন্যাস করা হয়েছে যে ইমাম সাহেবের দৃষ্টি মসজিদের যে কোন প্রাš— পর্যš— কোন বাধা ছাড়াই পৌঁছাতে পারে। দুই পার্শ্বে ৭ টি করে সম্মুখে ১০ টি ও মেহেরাবের পার্শ্বে ১ টি সহ মোট ২৫ টি দরজা রয়েছে।

পশ্চিম পার্শ্বে আরো ১০ টি মেহরাবের মত রয়েছে। মসজিদের ৪ কোনে রয়েছে ৪টি মিনার । যা ছাদ থেকে ১৩ ফুট উচু । মিনারের উপর যাওয়ার জন্য ভিতর থেকে সিড়িপথ রয়েছে। যার একটি এখন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

অপরটি তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এ মিনার থেকে আযান দেওয়া হত । আবার কারো কারো মতে এখান থেকে সৈন্যরা পাহারা দিত, বহি: শত্র“র চলাচল সম্পর্কে দৃষ্টি রাখত। মিনারের নিচের এ ছোট ক¶ দুটিকে আন্ধার মানিক ও শলক মানিক বলা হয়। ঐতিহাসিকদের ধারণা খানজাহান (রঃ) জৌন পুরের দ¶নির্মাান শিল্পী এনে এই সুরম্য মসজিদটি নির্মান করেছিলেন।

তবে কত সময় এবং কত লোক এর নির্মান কাজ করেছেন তা জানা যায়নি। এ মসজিদে প্রায় আড়াই হাজার লোক একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারে। অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে অযতেœ আবহেলায় মসজিদটি জঙ্গলাকীর্ণ হয়ে পড়ে। ১৯০৪ সালে পূরাতত্ত¡ বিভাগ কর্তৃক এটি সংর¶ন প্রকল্পের আওতায় আনা হয়। এর পর মসজিদটিকে কয়েকবার সংস্কার করা হয়েছে।

৪ কোনে ৪টি গম্বুজ সহ ৮১ টি গম্বুজ থাকা ¯^ত্তে¡ও নাম ষাট গম্বুজ হলো কেন? প্রশ্ন জাগা ¯^াভাবিক। ছাদ গম্বুজ দিয়ে তৈরী সে কারনেই ছাদ থেকে “ষাটগম্বুজ”। আবার কারো কারো মতে ৬০টি ¯—ম্বের উপর মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত এ থেকে “ষাটগম্বুজ” হতে পারে। পূর্বে মসিজদের চার পার্শ্বে বেষ্টক প্রাচীর ছিল। পূর্ব দিকে প্রবেশ তোরণ।

তোরনের দুপাশে দুটি ক¶ ছিল কিন্তু এখন তাঁর কোন অ¯ি—ত্ব নেই। চার পার্শ্বে নতুন করে দেয়াল নির্মান করা হয়েছে। এটি শুধু মসজিদ ছিল না খানাজাহান (রঃ) এর দরবার হিসাবেও ব্যবহৃত হত। এখান থেকেই তৎকালীন দ¶িনাঞ্চলীয় ¯^াধীন সার্বভৌম ইসলামী কল্যান রাষ্ট্র হাবেলী পরগনা বা খলীফাতাবাদ রাষ্ট্র পরিচালনা করা হত। ইউনেসকোর অধীন World heritage এর অংশ হিসাবে ¯^ীকৃতির পর শত বছরের পূরাতন এ মসজিদের গুর“ত্ব এখন ছড়িয়ে পরেছে বিশ্বময়।

প্রতিদিন এ মসজিদ দেখার জন্য দেশ বিদেশের হাজার হাজার পর্যটক ভীড় জমায়। বর্তমানে ষাট গম্বুজ মসজিদ প্রাঙ্গনের এক উলে­খযোগ্য সংযোজন হল যাদুঘর। ১৯৯৩ সালে ইউনেস্কোর অর্থানুকূল্যে এখানে যাদুঘর স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ষাট গম্বুজ মসজিদের দ¶িন পার্শ্বে খুলনা- বাগেরহাট মহা সড়কের লাগোয়া ৪৪ ল¶ টাকা ব্যয়ে যাদুঘর সহ স্টাফ কোয়াটার নির্মান করা হয়। ২০০১ সালের ২রা সেপ্টেম্বর বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক সৈয়দ রবিউল ইসলাম এ যাদুঘর আনুষ্ঠানিক ভাবে দর্শকদের জন্য উম্মুক্ত করেন।

যাদুঘরে ২৮ টি গ্যালারী রয়েছে। এখানে খানজাহান (রঃ) এর আমলের শতাধিক নিদর্শন সংর¶িত আছে। ঐ সময়কার রূপার মুদ্রার একটি বাক্স এখানে সংর¶িত রয়েছে। মাত্র ১০ টাকা দর্শনী ফি দিয়ে প্রাপ্ত বয়স্করা এবং টাকা দিয়ে অপ্রাপ্ত বয়স্করা এ যাদুঘরে র¶িত নিদর্শন সমূহ দেখতে পারে। সপ্তাহে শানিবার ছুটির দিনে ছাড়া বাকী ৬ দিনই এটি উম্মুক্ত রাখা হয় সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যš— ।

প্রতি মাসে গড়ে ২/৩ হাজার লোক যাদুঘরে প্রবেশ করে। মাসে ২/৩ লাখ টাকা আদায় হয় বলে কাষ্টডিয়ান লাভলী ইয়াসমিন জানান। ষাটগম্বুজ মসজিদ এবং যাদুঘরসহ খলিফাবাদ এলাকা মোট ৩২ জন কমকর্তা কর্মচারী দিয়ে চালানো হচ্ছে। তবে এখানে পর্যটকদের জন্য কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই । বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় টাউট বাটপারদের হাতে দেশী বিদেশী পর্যটক হয়রানীর অভিযোগ রয়েছে।

পর্যটন শিল্পের মহামূল্যবান উপাদান সমৃদ্ধ ষাটগম্বুজ সহ অসংখ্য মসজিদ দীঘি সবুজ শ্যামলিম বন-বনানী পৃথিবীর অন্যতম দীর্ঘতম ম্যানগ্রোভ সমৃদ্ধ সুন্দরবন ফরেষ্ট। সমুদ্রের মোহনায় দিবা-রাত্র লুকোচুরি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মোহনীয় দৃশ্য সমৃদ্ধ বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সামুদ্রিক বন্দর মোংলা, এশিয়ার ¶ুদ্রতম রূপসা-বাগেরহাট রেল পথ সহ অসংখ্য স্থাপত্য নিদর্শন পর্যটক প্রেমিকদের হৃদয়কে আলোড়িত করে। অভিজ্ঞ মহলের মতে ষাটগম্বুজ মসজিদকে কেন্দ্র করে বাগেরহাট শহর ও শহরতলির স্থাপত্য নিদর্শন সমূহের সঙ্গে, দীঘির এপার ওপার, এক দীঘি থেকে অপর দিঘি পর্যš—। শাটগেজ রেল, পর্যটন বাস অথবা রেলওয়ে নির্মান করে এর ব্যবস্থাপনার জন্য কোন দ¶ প্রতিষ্ঠান, যেমন বাংলাদেশ সেনা কল্যাণ সমিতির হাতে ও ছেড়েদিয়ে একটি আধুনিক পর্যটন নগরী নির্মান করে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার বিদেশী মুদ্রা অর্জন করা যায়। তেমনি পর্যটন প্রেমিক বিশ্বের হাজার হাজার দর্শনার্থীর সামনে বাগেরহাটের এই সমৃদ্ধ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য নিদর্শন সমূহ উম্মুক্ত করে দেওয়া যেতে পারে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।