আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খানজাহান আলী - যশোর নগরীর পতন

প্রযুক্তিকে ভালবেসে চলেছি অগ্রে..

খানজাহানের জীবনালেখ্য বড়ই বৈচিত্রময়। তিনি তুর্কীস্খানের অধিবাসী ছিলেন। দিল্লীর সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলকের রাজত্বকালে তার ভারতবর্ষে আগমন এবং এথলথরথয়থ গসঢ়ক্ষৎপএথলথরথয়থ গসঢ়ক্ষৎপরাজঘর পেয়ে চাকুরী গ্রহণ করেন। প্রধান মন্ত্রী থাকা কালে তিনি কতিপয় বিদ্রোহ দমন করেন। পরে জৈনপুরে ফিরে আসলে তাহার মনের অবস্খার পরিবর্তন ঘটে এবং তিনি আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জন করেন।

অসংখ্য লোক তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করে। তখন থেকে তিনি রাজকার্য পরিত্যাগ করে ইসলামের সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। তাই উদ্দেশ্যে তিনি জৈনপুর ত্যাগ করে বঙ্গদেশে আগমণ করে। খান জাহান আলীর উপাধি হচ্ছে খানে আজম খান জাহান। তাহার আবির্ভাব কালে বঙ্গদেশ স্বাধীন ছিল।

তিনি নাসিরউদ্দীন মাহমুদ শাহের সমসাময়িক ছিলেন। তার কবর গাত্রের শিলালিপিতে দেখা যায় যে, মহাত্মা খান জাহান আলীর মৃত্যুর তাং ৮৬৩ হিজরী বা ১৪৫৯ সাল। কবরের মৃত্যু তারিখ বিশ্বাস্য ও গ্রহণযোগ্য। তার জীবনকাল ১০০ বছর হলেও মুহাম্মদ বিনএথলথরথয়থ গসঢ়ক্ষৎপ এথলথরথয়থ গসঢ়ক্ষৎপতুঘলকের সাথে তার সম্পর্ক স্খাপন করা যায় না। সুতরাং মন্ত্রী খান জাহান ও আমাদের আলোচ্য খানজাহান দুজনই ভিন্ন ব্যাক্তি।

খানজাহান মুহাম্মদ বিন তুঘলকের বহু পরে বঙ্গদেশে আগমন করেন। খান জাহানের পুর্ব পরিচয় সম্পর্কে খুলনা গেজেটিয়ার প্রনেতা মিষ্টার ওমালী আই সি এস বলেন, তিনি দিল্লীর সুলতান বা বঙ্গের রাজার নিকট হতে জায়গীর প্রাপ্ত হয়ে যশোর অঞ্চলে আগমন করেন। কথিত আছে যে, তার সাথে ষাট হাজার সৈন্য ও বিপুল ধনভান্ডার নিয়ে তিনি বঙ্গদেশে আগমন করেন। তিনি বারোবাজার হতে বাগেরহাট পর্যন্ত পথিমধ্যে প্রকাশ্য জলাশয় ও রাজপথ খনন করতে করতে অগ্রসর হয়েছিলেন। তিনি তার বিপুল অর্থ ও স্বর্ণরোপ্য এথলথরথয়থ গসঢ়ক্ষৎপজনকল্যাণে মুক্তহস্তে দান করে যেতেন।

তৈমুরের আক্রমণের পূর্বে বা প্রাক্কালে রাজধানী দিল্লী ষড়যন্ত্র ও বিদ্রোহের লীলা ভূমি ছিল। ফিরোজ শাহের দীর্ঘ শাসনের পর সিংহাসন নিয়ে গোলযোগ দেখা যায়। পাঁচ বৎসরে পাঁচজন বাদশাহ সিংহাসনে আরোহন করেন। মুাহম্মদ তোঘলকের সময় সর্বত্র এথলথরথয়থ গসঢ়ক্ষৎপঅরাজকতা বিদ্যমান ছিল। এই সময় কেউ যদি বিপুল ধনরাশিসহ মহানগরী ত্যাগ করে তবে কে তার খোঁজ রাখবে? খান জাহান এমনি এক মুহুর্তে বিশ্বস্ত আত্মীয় ও সঙ্গীসহ দিল্লী ত্যাগ করেন।

দিল্লী হতে আসতে আসতে তিনি অসংখ্য শিষ্য সংগ্রহ করেন। দিল্লী হতে সুদুর পথ অতিক্রম করে তিনি বারবাজার উপস্খিত হন। বাংলা স্বাধীন ছিল। সে সময় বাংলার কোন সংবাদ দিল্লীতে পৌঁছাতে বহুদিন সময় লাগত। তিনি স্বাধীন গৌড় সুলতানের আদেশ নিয়ে বাগেরহাট অঞ্চলে আগমন করেন।

খানাজাহান বাগেরহাট যাবার পথে কিছুকাল বারবাজার অবস্খান করেছিলেন। বারবাজার অত্যন্ত প্রাচীন একটি স্খান। হিন্দু বৌদ্ধ এথলথরথয়থ গসঢ়ক্ষৎপও মুসলমান আমলে প্রায় দশ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে বারবাজার শহর বিস্তৃত ছিল। খানজাহান বারবাজারে এসে অনেকগুলে দীঘি ও মসজিদের প্রতিষ্ঠা করেন। বারবাজারের জরাজীর্ণ সিংহদা আউলিয়া জামে মসজিদ এখনও খানজাহানের কীর্তি ঘোষণা করিতেছে।

খানজাহান নামীয় কোন দীঘি না থাকলেও তিনি বেশ কয়েকটি দীঘি খনন করেছিলেন তা সহজ অনুমেয়। তিনি এগারো জন আউলিয়া নিয়ে বারবাজার আগমন করেছিলেন এথলথরথয়থ গসঢ়ক্ষৎপবলে তার নাম হয়েছিল বারবাজার। খানজাহান আলী বারবাজারে কিছুকাল অবস্খানের পর যশোর শহরের উপকন্ঠ মুড়লী কসবায় উপস্খিত হন। কসবা ফারসী শব্দ, যার অর্থ শহর। মধ্যযুগে এখানে সৈন্যবাহিনীর জন্য মৃত্তিকা গর্ভে কেল্লা ছিল।

এখানে খানজাহান বেশী দিন অবস্খান করেননি। তাহার দুই জন প্রধান শিষ্য হযরত বোরহান শাহ (র ও হযরত গরীব শাহ এথলথরথয়থ গসঢ়ক্ষৎপ(র ইসলাম প্রচারের জন্য যশোরে থেকে যান। এই দুই মহাত্মার মাযার যশোর শহরে বিদ্যমান। মুড়লী কসবা হতে খান জাহানের অনুচরবর্গ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একদল কপোতাক্ষ নদী বরাবর সুদুর সুন্দরবন পর্যন্ত পৌঁছিয়ে ছিল, অন্যদল ভৈরবকূল দিয়ে পয়োগ্রাম কসবা পর্যন্ত পৌঁছিয়েছিল।

খান জাহানের যে বাহিনী যশোর হতে সুন্দরবনের দিকে প্রেরিত হয়েছিলেন তার নেতা ছিলেন বোরহান খাঁ। তিনি মসজিদ নির্মাণ, জলাশয় খনন ও ইসলাম প্রচার করতে করতে সুদুর সুন্দরবনে উপস্খিত হয়েছিলেন। এথলথরথয়থ গসঢ়ক্ষৎপ খানজাহান নিজে একদল সঙ্গী নিয়ে পুর্বদিকে অগ্রসর হতে থাকেন। অর্থাৎ ভৈরব নদের তীর বাহিয়া যে দল সুন্দরবনের দিকে গিয়েছিল তিনি সেই দলের নেতা ছিলেন। তার চলার পথে তদীয় কীর্তি রাজিব পরিচয় পাওয়া যায়।

এথলথরথয়থ গসঢ়ক্ষৎপতিনি জনকল্যাণে মুক্ত হস্তে ব্যয় করতেন। তিনি অন্য বস্তুর আবাসভূমির মধ্যে শহর ও নগর গড়ে তুলেছিলেন তাঁর জনসেবামুলক কাজের জন্য লোকে তাঁকে পরম শ্রদ্ধা ও ভক্তি করত। তিনি সুন্দরবন অঞ্চলে শান্তি ও সাম্যের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। খান জাহান আলী ভৈরব নদের তীরে চারটি নগরীর পত্তন করেছিলেন। ১।

বারবাজার ২। মুড়লী ৩। পয়োগ্রাম কসবা ৪। বাগেরহাট। যশোর শহর হতে চারমাইল পূর্ব দক্ষিণ কোনে রামনগর গ্রামে খানজাহান একটি প্রকাশ্য দীঘি খনন করেছিলেন বর্তমানে যা শাহবাটীর দীঘি (চরপহরপ ঈড়ৎহবৎ) নামে পরিচিত।

এই দীঘির খনন কার্য শেষ করে তিনি পয়োগ্রাম কসবায় উপস্খিত হন। পয়োগ্রাম কসবায় তিনি শহরের পত্তন করে বাসস্খান, এথলথরথয়থ গসঢ়ক্ষৎপদরবারগৃহ ও মসজিদ নির্মাণ করেন। পয়োগ্রাম কসবা গ্রামের ভিতর তিনি একটি রাস্তা নির্মাণ করেছিলেন। এই রাস্তার উত্তর দিকের নাম এথলথরথয়থ গসঢ়ক্ষৎপহয় উত্তর ডিহি এবং দক্ষিণ দিকের নাম হয় দক্ষিণ ডিহি। হযরত খান জাহান আলী (র যখন পয়োগ্রাম কসবায় অবস্খান করছিলেন তখন গোবিন্দ ঠাকুর (শ্রীগোবিন্দ লাল রায়) নামক এক হিন্দু ব্রাহ্মণ তার হস্তে বায়াত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।

এই ঠাকুরের মুসলমানী নাম মুহাম্মদ তাহির। তিনি ‘পীরালী’ সম্প্রদায়ের আদি পুরুষ ছিলেন। তাহির থেকেই পীরালী ব্রাহ্মনের উদ্ভব। তিনি খান জাহানের প্রধান শিষ্য ও সিপাহশালার হবার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন। তিনি পয়োগ্রাম কসবায় খান জাহানের প্রতিনিধি হিসেবে রাজস্ব আদায় ও অন্যান্য রাজকর্ম পরিচালনা করতেন।

তিনি পয়োগ্রাম কসবায় বেশ কয়েক বৎসর ছিলেন। খানজাহানের পয়োগ্রাম কসবায় থাকাকালীন মোহাম্মদ তাহার মন্ত্রী ও অন্তরঙ্গ বন্ধুর মত সাহায্য করতেন। খানজাহানের আগমন ও পীরালীদিগের উৎপত্তি সম্পর্কে ঘটকদিগের পুথিতে আছে : খানজাহান মহামান পাদশা নফর যশোর মনন্দ লয়ে করিল সফর তার মুখ্য মহাপাত্র মামুদ তাহির মারিতে বাসুন বেটা হইল হাজির পূর্বেতে আছিল যেও কুলিনের নাতি মুসলমানী রূপে মজে হারাইল জাতি। পীর আলী নাম ধরে পিরাল্যা গ্রামে বাস যে গাঁয়েতে নবদ্বীপের হইল সর্বনাশ সুবিধা পাইয়া তাহির হইল উজীর চেঙ্গুটিয়া পরগনায় ছাড়িল জিগীর গুড় বংশ অবতংস রায় রায়ে ভাতি। অর্থলোভে কর্মদোষে মিলিন সংহতি ধন বলে কৈল ভ্রম হৈল উচ্চ মাথা নানা জনে বটাইল নানা কুৎসা কথা।

আঙ্গিনায় বসে আছে উজীর তাহির কত প্রজা লয়ে ভেট করিছে হাজির রোজার সে দিন পীর উপবাসী ছিল। হেনকালে একজন লেবু এনে দিল। গন্ধামোদে চারিদিকে ভরপুর হইল। বাহবা বাহবা বলি নাকেতে ধরিল কামদেব জয়দেব পাত্র দুইজন। বসেছিল সেই খানে বুক্ষে বিচক্ষণ কি করেন কি করেন বলিলা তাহিরে।

ঘ্রানেতে অর্দ্ধেক ভোজন শাস্ত্রের বিচারে কাহার বিদ্রুপ ভাবি তাহির অস্খির গোঁড়ামি ভাঙ্গিতে দোঁহের মনে কৈল স্খির। দিন পরে মজলিশ করিল তাহির জয়দেব কামদেব হইল হাজির দরবারের চারিদিকে ভোজের আয়োজন শত শত বক্রি আর গোমাংস রক্ষন পলাণ্ডু লশুন গঙ্কে সভা ভরপুর সেই সভায় ছিল আরো ব্রাহ্মণ প্রচুর নাকে বস্ত্র দিয়া সবে প্রমাদ গণিল ফাঁকি দিয়া ছলে কলে কত পলাইল কামদেবে জয়দেবে করি সম্মোধন হাসিয়া কহিল ধুর্ত্ত তাহির তখন জারি জুরি চৌধুরি আর নাহি ঘাটে। ঘ্রানে অর্দ্ধেক ভোজন শাস্ত্রে আছে বটে। নাকে হাত দিলে আর ফাঁকিত চলে না এখন ছেড়ে ঢং আমার সাথে কর খানাপিনা উপায় না ভাবিয়া দেহে প্রমাদ গপিল। হিতে বিপরীত দেখি মরমে মরিল।

পাকড়াও পাকড়াও হাক দিল পীর হাতমত হয়ে দোহে হইল অস্খির দুইজনে ধরি পীর খাওয়াইল গোস্ত পীরানি হইল তারা হইল জাতিভ্রষ্ট কামাল জামাল নাম হইল দোহার ব্রাহ্মণ সমাজে পড়ে গেল হাহাকার। তখন ডাকিয়া দোঁহে আলি খাঁনজাহান সিঙ্গিয়া জায়গীর দিল করিতে বাখান সেই গোলে গুড়বামে বিধি বিড়ম্বনা শত্রুগণে জাতিনাশে করিল কল্পনা। পীরালী অখ্যাতি দিল ঘ্রাণ মাত্র দোষ সর্ব্বদেশে রাষ্ট্র হল কুগ্রহের রোক্ষা। সংসর্গে পড়িল যারা তাহারাও মজিল। গুড় পীরালী দোষ বলি ঘটকে বুঝিল।

কিছুকাল পরে তারা মার্জ্জিত হইল। ঘটকের করুণায় সুঘর মিলিল। ধনে মানে হয়ে হীন কুটুম্ব স্বঘর। সমাজে রহিল ঠেলা সেই বরাবর পীরালী রহিল পড়ি কুলাচর্য্য ঘোষে। রচিল পীড়ানি কথা নীলকান্ত শেষে।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।