আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইউনিলিভার এর বিরুদ্ধে ৭৩ কোটি টাকারও বেশী সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ

এখনো গেলনা আঁধার............... সাইফুল ইসলাম শিল্পী,চট্টগ্রাম,(সিএইচটিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম):-বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড বিরুদ্ধে পণ্য আমদানীর ক্ষেত্রে ৭৩ কোটি টাকারও বেশী রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। কম শুল্কের অপরিশোধিত পাম অলিনের নামে ইউনিলিভার বেশি শুল্কের অপরিশোধিত পাম স্টিয়ারিন আমদানি করেছে কোম্পানীটি। আর এর মাধ্যমে উল্লেখিত পরিমাণ সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে কোম্পানিটি। চট্টগ্রামের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ইউনিলিভার বাংলাদেশ ২০১০ সাল থেকে ২০১১ সালের শেষ পর্যন্ত ৩২টি চালানের মাধ্যমে অপরিশোধিত পাম অলিনের (পণ্য তালিকা পরিচিতি নম্বর বা এইচএস কোড ১৫১১.১০.০০) নামে সাবান তৈরির কাঁচামাল অপরিশোধিত পাম স্টিয়ারিন আমদানি করেছে। যদিও অপরিশোধিত পাম স্টিয়ারিনের এইচএস কোড ১৫১১.৯০.১৯।

বিষয়টি নিশ্চিত হবার পর গত মাসের ১০ তারিখ চট্টগ্রাম শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত বিভাগের একজন কর্মকর্তা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে চট্টগ্রাম কাস্টমসকে একটি চিঠি লেখেন। ওই চিঠিতে রাজস্ব ফাঁকির কথা উল্লেখে করে তা আদায়ে অনুরোধ জানানো হয়। চিঠিতে জানানো হয়, প্রথম ৩০টি চালানে রাজস্ব ফাঁকির পরিমাণ ৬৯ কোটি ৯৭ লাখ ৮ হাজার ৭৭ টাকা ৭০ পয়সা। ৩১ নং চালান চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস করা হয় গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর এবং ৩২ নম্বর চালানটি ২৯ ডিসেম্বর। এই দুটি চালানের মাধ্যমে যথাক্রমে ১ কোটি ৫৯ লাখ ৭৪ হাজার ২৬১ টাকা এবং ১ কোটি ৫৮ লাখ ১৪ হাজার ৩২৬ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেয় ইউনিলিভার।

সব মিলিয়ে টাকার অংক দাড়ায় ৭৩ কোটি ১৪ লাখ ৯৬ হাজার ৬৬৫ টাকা। এনবিআর সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ কাস্টমস ট্যারিফ ফার্স্ট সিডিউল ২০১১-১২ অনুযায়ী অপরিশোধিত পাম অলিন আমদানিতে সিডি, আরডি এবং এসডির ওপর কোনো শুল্ক নেই। তবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে অগ্রিম আয়কর শূণ্য শতাংশ হলেও এটিভি (একসেস ট্যাক্স ভ্যালু)-৩ শতাংশ। অপরদিকে অপরিশোধিত পাম স্টিয়ারিন আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক হার হ”েছ সিডি -২৫ শতাংশ, আরডি- ৫ শতাংশ, এসডি-শূণ্য শতাংশ, ভ্যাট-১৫ শতাংশ, অগ্রিম আয়কর-৫ শতাংশ, এটিভি-৩ শতাংশ।

সবমিলিয়ে এই পণ্যটি আমদানি করতে হলে ৫৩ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। অর্থাৎ অপরিশোধিত পাম অলিনের তুলনায় অপরিশোধিত পাম স্টিয়ারিনের (লন্ড্রি বা টয়লেট সোপ গ্রেড) শুল্ক ৩৫ শতাংশ বেশি। শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের ওই চিঠিতে উল্লখে করা হয়, আরবিডি পাম স্টিয়ারিন এবং ট্যালো আমদানি নীতি আদেশ ২০০৯-১২ এর অনু”েছদে ২৩ এর উপ অনুচ্ছেদে ৭(ক) (খ) ও (গ) এ বর্ণিত আমদানি শর্তাদি পরিপালন সাপেক্ষে আমদানিযোগ্য। শোধিত পাম অলিন ও অপরিশোধিত পাম অলিন এই আদেশের অনুচ্ছেদ ২৩ এর উপ- অনুচ্ছেদ ৪১(ক) মোতাবেক রফতানিকারক দেশের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এবং শিল্প ও বণিক সমিতির নিকট হতে মানুষের খাওয়ার উপযোগী মর্মে সনদপত্র দাখিল সাপেক্ষে আমদানিযোগ্য। অনুচ্ছেদ ২৩-এর উপ-অনুচ্ছেদ ৪১ (খ) মোতাবেক আরবিডি স্টিয়ারিন ট্যালো, অপরিশোধিত পাম স্টিয়ারিন ভোজ্য তেল হিসেবে আমদানিযোগ্য নয়।

উল্লেখ্যে, এই ঘটনা চট্টগ্রাম শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ চট্টগ্রাম কাস্টমসকে জানানোর পর তারা বিষয়টি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে অবহিত করে। এরপর ঢাকা শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের মহাপরিচালকের পক্ষে একজন যুগ্ম পরিচালক গত ২৫ ডিসেম্বর এ বিষয়ে কোনো কার্যক্রম করা নেয়া হয়েছে কি না তা জানতে চেয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ কমিশনারকে চিঠি দেন। ওই চিঠিতে বলা হয়- ইউনিলিভারের শুল্ক ফাঁকির বিষয়ে এর আগে চট্টগ্রাম শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত বিভাগ একটি প্রতিবেদন জমা দেয়। যার নং-০৫/০৭(১৯)/গোপ/গোওত/চট্ট/২০১২/৫১, তারিখ-১৬/০১/২০১২। এ ছাড়া গত মাসের ১৫ তারিখে এ বিষয়ে অজ্ঞাত অভিযোগকারী রাজস্ব বোর্ডে অভিযোগ করে।

একই মাসের ১৮ তারিখ আমদানিকারক কর্তৃক অপঘোষণার মাধ্যমে পণ্য চালানের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পায় এনবিআর। যা ০৫/০৭/(৭২) তদন্ত/২০১০/২০ নম্বরের চিঠির মাধ্যমে চট্টগ্রাম কাস্টমসকে জানানো হয়। এ ছাড়া ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসের ১ এবং ২১ তারিখ আরও দুটি পত্রের মাধ্যমে আলাদা প্রতিবেদন পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। এই চিঠির অনুলিপি এনবিআরের দুই বিভাগে সদস্য এবং চট্টগ্রাম শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের মহাপরিচালককেও পাঠানো হয়। এ ব্যাপারে ইউনিলিভারের র্ব্যান্ড ম্যানেজার তানভির ফারুকের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টির ফয়সালা হয়ে গেছে।

কিন্তু কীভাবে এবং কার সংগে ফয়সালা হলো সে ব্যাপারে তিনি কোনো জবাব দেননি। চট্টগ্রাম শুল্ক ও গোয়েন্দা অধিদপ্তররে যুগ্ম পরিচালক এম ফখরুল আলম জানান, ইউনিলিভারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। View this link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।