আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দেখা হবে বন্ধু , কারনে আর অকারনে . . .

আমি আমাকে নিয়েই তো এখনও বেচে আছি । একদিনআমাকে নিয়েই চলে যাব । সেদিন খুঁজলেও আর পাবি না..........আমার ভার্চুয়াল ফ্যাক্টরিতে স্বাগতম । আমার মন খারাপের সময়টা এখানে আর ফেসবুকে কাটে । মাঝে মাঝে দু একটা লেখা তৈরি করতে ইচ্ছা হলে চলে আসি এখানে ।

https://www.facebo "ঐ শালা কিতারে বইসা আছস ক্যান ? ?" চিত্‍কার করে বললো হাসান । "উফ্ হাসাইন্না আস্তে বলতে পারিস না ?" রেগেমেগে বললাম । "না । তোর মতো গাধারে আস্তে কইলে শুনতে পাবি না । বয়রা কোনানকার ।

" হাসতে হাসতে বলল হাসান । "হ্যা হ্যা । আমি যদি গাধা হই তাইলে শালা তাইলে তুইও গাধা । গাধার সাথে গাধাই বন্ধুত্ব পাতায় । " মুচকি হেসে বললাম ।

হাসান অট্টোহাসি হাসলো । ছেলেটা অদ্ভুত । সবসময় এতো প্রানবন্ত থাকে কিভাবে ? বেশি হাসলে হাসানের চোখের কোণে পানি চিকচিক করে । আজকেও ব্যাতিক্রম হলো না । "হইছে ।

আর হাসিস না । নাকে মুখে উঠবে । " মুচকি হেসে বললাম । অবশেষে হাসি থামলো হাসানের । চোখ মুছলো সে শার্টের ডান হাতা দিয়ে ।

তারপর আমাকে বলল "চল্ যাই । আজকে স্পেশাল একটা কাজ আছে । " "কি কাজ ?" অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম । "আজকে নিশাতের সাথে ডেটিং এ যাবো । আজকে স্পেশাল , কেননা আজকে আমি বাসায় ওর ব্যাপারে জানিয়েছি ।

কেল্লা ফতে দোস্ত । বাসার সবাই রাজি । এমনকি তার বাসার সবাইও রাজি । শুধু লাস্ট সেমিস্টারটা যাইতে দে । বিয়া কইরা ফালামু ।

" বলল হাসান । হাসানের কথা বলার ভঙ্গিমাটা এতোটাই হাস্যকর ছিলো যে হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খেলাম আমি । বহু কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম । "না রে দোস্ত । তোদের ইস্পেশাল ডেটিং এ গিয়ে কাবাবের মধ্যে হাড্ডি হইতে চাই না ।

তাছাড়া একটু পর খেলতে হবে । না হয় ম্যাচ ফি টা মাইর যাবে । " হাসান আমাকে অনেক টানাটানি করলো । বেচারা রোগা পাতলা শরীর নিয়ে আমাকে টেনে নিয়ে যাওয়ার ব্যার্থ প্রচেষ্টা করলো কতক্ষন । তারপর হাল ছেড়ে দিয়ে হাটতে লাগলো ।

(২) ঈদের ছুটিঁ বাড়ি যাব । বাসের টিকেট এখন সোনার হরিণ । বহু কষ্ট করেও একটা টিকেট পেলাম না । মেজাজ খারাপ করে মেসে ফিরে এলাম । গত ৪ দিন ধরে বিছানাটা ঝাট দেইনি ।

চাদরে এক হাটু বালু । ধপ্ করে খাটের উপর বসাতেই বালুর ঝড় উঠলো । কাশঁতে লাগলাম । কাশিঁ শেষ হতেই দেখি চোখের সামনে একটা টিকেট । এবং টিকেটটা ধরে আছেন মহান ব্যাক্তি হাসান ।

মিটিমিটি হাসছে সে । "নে ধর্ বেকুব । কি দরকার ছিলো এতো যুদ্ধ করে লাইনে দাড়ানোর ? আমারে কইলেই তো হইতো !" বলল হাসান । সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালাম হাসানের দিকে । তার মতো কিপটা আমার জন্য টিকেট কিনে আনছে ! টিকেট টা উল্টে পাল্টে দেখলাম ।

না , ঠিকই আছে । অবাক হয়ে টিকেটটার দিকে তাকিয়ে আছি । হটাত্‍ একটা মিষ্টি মেয়ের কন্ঠ বলে উঠলো "হ্যাপি বার্থডে টু ইউ আহনাফ ভাই । " চরম বিস্ময় নিয়ে দেখলাম নিশাত হাতে একটা কেক নিয়ে হাসানের সাথে দাড়িয়ে আছে । হটাত্‍ মনে পড়লো আজ আমার জন্মদিন ।

কখনো কেউ আমাকে এভাবে উইশ করেনি । দরিদ্র পরিবারে জন্ম । তাই জন্মদিন নামক বিলাশিতা অধরাই রয়ে যায় । চোখে পানি এসে গেলো । টপ টপ করে পানি পরতে লাগলো আমার চোখ দিয়ে ।

হাসান এগিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল "ধূর ব্যাটা । বাচ্চাদের মতো কাদিঁস ক্যান ? ? চুপ থাক । নিশাত কি মনে করবে ?" চোখ মুছলাম । ঐ দিন চরম মজা করলাম । নিশাত মেয়েটাকে এর আগে কখনো দেখিনি ।

আজ দেখে বুঝলাম আল্লাহতালা তাকে হাসানের জন্যই বানিয়ে পাঠিয়েছেন । বিকালে সায়দাবাদ বাস স্টেশনে গেলাম আমি আর হাসান । বাস ছেড়ে দিচ্ছে । দৌড় দিলাম বাস ধরার জন্য । কোন মতে বাসের হ্যান্ডেল ধরে ঝুলে রইলাম ।

হাসানকে উদ্দেশ্য করে বললাম "আসি দোস্ত । " হাসান সহাস্য চিত্‍কার করে বলল "দেখা হবে বন্ধু কারনে আর অকারনে । " (৩) ডাক্তার আর নার্স গটগট করে হেটে যাচ্ছে আমার পাশ দিয়ে । আশেপাশে ডেটল এর কড়া গন্ধ । আমি ২১৯ নাম্বার রুমটা খুজঁছি উদ্ভ্রান্তের মতো ।

করিডোরের শেষ প্রান্তে একটা দরজার উপর নম্বরটা দেখতে পেলাম । দৌড় দিলাম সেখানে । ঈদের ৫ম দিন আজ । বাড়ি থেকে পাগলের মতো ছুটে এসেছি । হাসান নাকি অসুস্থ ।

এ কথা শোনার পর আর একমূর্হূত দেড়ি করি নি । দরজাটার কাছাকাছি পৌছানোর আগেই দরজাটা ঠেলে একজন ডাক্তার বেড়িয়ে এলো । ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করলাম হাসানের অবস্থা । ডাক্তার আমার পরিচয় জানতে চাইলেন । আমি বললাম যে আমি হাসানের বন্ধু ।

ডাক্তার আমাকে তার চেম্বারে নিয়ে গেলেন । তারপর একটা একটা এক্সরে রিপোর্ট পরিক্ষা করতে লাগলেন । আমি অস্থির হয়ে জিজ্ঞেসা করলাম "স্যার হাসানের কি হয়েছে ?" ডাক্তার থমথমে মুখে জবাব দিলেন "দেখো । তোমার বন্ধুর সম্ভবত ব্রেন টিওমার । সিরিয়াস অবস্থা ।

অপারেশন প্রয়োজন । বলতে কষ্ট হচ্ছে । তবে আমার মনে হয় অনেক দেরি হয়ে গেছে । " বলেই তিনি চুপ হয়ে গেলেন । এক নার্স এসে তাকে ডেকে নিয়ে গেল ।

আমি বজ্রহতের মতো বসে রইলাম । নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলাম না । স্বাভাবিক হতে সময় লাগলো । উঠে দাড়িয়ে হাসানের রুমে গেলাম । গিয়ে দেখি নিশাত আর হাসানের মা বসে আছে ।

হাসান আধশোয়া । আমাকে দেখে হাসান আন্টিকে আর নিশাতকে ইশারা করলো । তারা উঠে দাড়ালো । তারপর আস্তে আস্তে রুম থেকে চলে গেলো । হাসান আমার দিকে তাকিয়ে শুকনো হাসি হাসলো ।

এই তিন চারদিনে হাসানের মুখটা অসম্ভব ফ্যাকাশে হয়ে গেছে । চোখ গুলো কোটরে ঢুকে গেছে । হাসানের কাছে গিয়ে বসলাম । হাসান আমাকে স্বাভাবিক প্রশ্ন করতে লাগলো । আমিও যথাসম্ভব স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে লাগলাম ।

হটাত্‍ হাসান আমার হাত ধরে করুন কন্ঠে বলল "দোস্ত । ডাক্তার কি বলছে ? আমি আর কয় দিন বাচবো ?" আমি একটা ধাক্কা খেলাম । প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে আমার । তবুও জবাব দিলাম "কি বলতেছিস ছাগল । তোর কিছুই হয় নাই ।

এই তো দু একদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে যাবি । " হাসান মলিন মুখে হাসলো । বলল "জানিস দোস্ত আমার না ভিষন বাচতেঁ ইচ্ছা করে । মা-বাবা , নিশাত আর তোর জন্য । " কেউ যেনো একটা ধারালো ছুড়িঁ খচ্ করে বিধিয়ে দিলো আমার বুকের বাম পাশে ।

ভিষন কষ্ট হচ্ছে আমার । ধরা গলায় বললাম "বোকা ছেলে , তোর কিছু হবে না । " দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো হাসানের আত্মীয়স্বজন । আমি উঠে দাড়ালাম । উদ্ভ্রান্তের মতো হাটতে লাগলাম ।

হাসপাতালে থাকতে আর ভাল লাগছে না । বেড়িয়ে যাওয়ার আগে শুনলাম , ডাক্তার নিচু গলায় বলছে , হাসানের অপারেশনটা আজকে রাতেই হবে । (৪) হাসানের লাসটা কবরে নামিয়ে মাত্রই কবর দেওয়া হয়েছে । আমি বসে আছি কবরের পাশে । আশে পাশে আর কেউ নেই ।

। হাসানের প্রানবন্ত মুখটা বার বার চোখের সামনে ফুটে উঠছে । ভিষন কষ্ট হচ্ছে আমার । মনে হচ্ছে কেউ চোঁখা কিছু দিয়ে বুকে খোচা মারছে । উঠে দাড়ালাম ।

কবরের দিকে ফিরে বললাম "আসি দোস্ত । " ঝুপ ঝুপ করে বৃষ্টি নামলো । আমি ঘুরলাম । আমার চোখেও বৃষ্টি নেমেছে । প্রকৃতি আর আমার হাহাকার আজ এক হয়ে গেছে ।

আমার মনে হচ্ছে পিছন থেকে হাসান চিত্কার করে বলছে "দেখা হবে বন্ধু , কারনে আর অকারনে" . . . ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.