আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ওয়ান্স আপন এ টাইম ইন আজিমপুর-৩

কিচ কিচ কুচ কুচ কাচ কাচ কোচ কোচ!!! ১ম পর্ব ২য় পর্ব ৭ আজিমপুর 12:10 am বড় একটা দম নিয়ে জটলার দিকে এগিয়ে গেল রাশেদ। এই এই থামো। পুলিশ পুলিশ! যারা মারছিল তারা হঠাৎ থেমে গেল। হায় হায়, এই সম্ভাবনার কথা তো তাদের মাথায় আসে নি! কি ব্যাপার? কি হয়েছে এখানে? মুখ নিচু করে লাঠি ফেলে দিয়ে পেছানোর চেষ্টা করল কয়েকজন। রাশেদ ধমকে উঠল, নড়বে না, কেউ নড়বে না! কি হয়েছে এখানে? পাত্রপক্ষের ছেলেপেলে এ ওর দিকে চায়, ও এর দিকে চায়।

কেউ কোন কথা বলার সাহস পায় না। রাশেদ সবার সামনের বয়স্ক লোকটাকে দেখতে পায়। এই লোকটাই হয়তো নাফিজার বাবা। আপনি কে? স্যার আমি এই বাসায় থাকি। তিনতলা বাসাটার দিকে ইঙ্গিত করেন নাফিজার বাবা।

কি হয়েছে এখানে? নাফিজার বাবা কপালের ঘাম মুছে বললেন, স্যার এই গুণ্ডাটা আমার মেয়েকে অনেকদিন ধরে বিরক্ত করে। আজকে মেয়ে দেখতে পাত্রপক্ষ এসেছে, আর আজকেই ও কি না আবার আমার বাসার সামনে ঘুরঘুর করছে। আবার সে আমার মেয়ের মোবাইলে বাজে মেসেজও দিয়েছে স্যার। লিখেছে সে নাকি আমার মেয়েকে তুলে নিয়ে যাবে। এই ছেলেটা? জি স্যার।

আপনি শিওর? এবার হঠাৎ গলাটা কেমন হয়ে গেল খবির সাহেবের, হ্যাঁ, এই তো আমার বাসার সামনে ঘুরঘুর করছিল... ও তাই? রাশেদ বেশ ভারিক্কি চালে বলল, এই জন্য আপনি ওকে এভাবে মারবেন? আপনি ঠিক জানেন তো ও-ই আপনার মেয়েকে ডিস্টার্ব করেছে কি না? না মানে...আমার মেয়েকে মেসেজে বাইরে আসতে লিখেছিল, তার সাথে পালিয়ে যাবার প্রস্তাব দিয়েছিল... আপনি ঠিক জানেন ঐ ছেলেটাই এই মেসেজ পাঠিয়েছে? হ্যাঁ...মানে...না... আপনি জানেন আপনি কি করেছেন? স্যার ওর জন্য এটাই উচিৎ শাস্তি হয়েছে...ও খুব বেয়াদপ...ওকে মারলেও ওর লজ্জা হবে না...ও অনেক দিন ধরেই ঘুরঘুর করছে আমার মেয়ের পিছনে... রাশেদ নিজের মধ্যে ক্রোধের একটা শিহরণ টের। নিজের অজান্তেই হাতের মুঠ শক্ত হয়ে গেল তার। আর তাই আপনি আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন? মানে... জানেন এর জন্য আপনার ফাঁসি হতে পারে? কথাটা শুনেই কেমন মিইয়ে গেলেন নাফিজার বাবা। ফাঁ-সি?! হ্যাঁ ফাঁসি। অ্যাটেমপ্ট টু মার্ডার কেসে ফাঁসি।

চলেন এখন থানায়। মা...মানে? স্যার আমি...আমতা আমতা করতে লাগলেন নাফিজার বাবা। তার হাত থেকে লাঠিটা পড়ে গেল। আমি মানে? আমি কি? মানে আমি...ঘেমে নেয়ে উঠলেন নাফিজার বাবা। এমন সময় পাত্রপক্ষের লোকজন যে যেদিকে পারে দৌড় দিল।

সাথে সাথে রাশেদ রাস্তার পাশে যে মানুষগুলো দাঁড়িয়ে ছিল তাদেরকে বলল, কি তামশা দেখছেন এতক্ষণ? যান গিয়ে সবকয়টাকে ধরে আনেন! লোকজন তাদের ধরার জন্য দৌড় দিল। এই ধর ধর! ধর শালাদের! রাশেদ দৌড়ে গিয়ে মার খাওয়া ছেলেটার উপর ঝুঁকে পড়ল। ঐ ছেলেটার উপর আরেকটা ছেলে, দুজনেই সাংঘাতিকভাবে আহত। যে ছেলেটা পরে এসে আগেরজনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সে হঠাৎ বলে উঠল, পানি! পানি! হঠাৎ কেউ একজন খপ করে রাশেদের হাত ধরল। রাশেদ ওদিকে তাকাল।

আরে, এ তো নাফিজা! রাশেদ ফিসফিস করে বলল, যাও পানি নিয়ে এসো। যাও। নাফিজা ছুটে গেল। রাশেদ এবার প্রথম ছেলেটার দিকে ঝুঁকে পড়ল। ছেলেটা গোঙাচ্ছে, মুখের পাশ দিয়ে কষ গড়িয়ে পড়ছে তার।

হাত পা বুক সব রক্তাক্ত, নাক সম্ভবত ভেঙ্গেছে। কয়েকজন মানুষ রাশেদকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে। এদেরকে হাসপাতালে নিতে হবে!! চিৎকার করে বলল রাশেদ, একটা রিকশা ডাকো কেউ। একটা রিকশা লেগুনা যা পারো ডাকো কেউ! এমন সময় পাশ থেকে পাঙ্কু টাইপ দুইটা ছেলে বলল, স্যার আমাগো মোটরসাইকেল আছে। আমরা টান মাইরা নিয়া যাইতে পারব ওগো।

নাফিজা ততক্ষণে পানি নিয়ে এসেছে। রাশেদ সেই পানি দ্বিতীয় ছেলেটার মুখে দিতেই সে বমি করে দিল। পানি দিয়ে দুজনেরই মুখ ধুইয়ে দিল সে। তারপর দু জনকে দুইটা মোটরসাইকেলে তোলা হল। নাফিজার বাবা তখনও কাঁত হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।

লোকজন সেই পাত্রপক্ষের ছেলেগুলোকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে আসছে। রাশেদ নাফিজাকে একটা মোটরসাইকেলে উঠতে বলল। নাফিজা উঠল। নাফিজার বাবা হাউহাউ করে উঠলেন। এ কি মা, তুই কই যাচ্ছিস? তুই নাম, নাম! নাফিজা একবুক ঘৃণার দৃষ্টিতে তার বাবার দিকে তাকিয়ে রইল।

লোকজন কাছে এসে পড়েছে। তাদের একজন রাশেদকে জিজ্ঞেস করল, এদের কি করব স্যার? রাশেদ নাফিজার বাবার দিকে তাকাল। তাকে দুইজন মিলে ধরেছে, কিন্তু তিনি মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন। ওদিকে নাফিজার আম্মা এবং ছোট বোন নিচে নেমে এসে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছে। রাশেদ বলল, এটা বিচার করার ভার আমি তোমাদের উপরই ছেড়ে দিলাম।

পাঁচ মিনিটের মধ্যে পুলিশের গাড়ি আসবে, এর মধ্যে তোমরা যা করার কর। উল্লসিত জনতা কোথা থেকে দড়ি জোগাড় করে তা দিয়ে সবাইকে বাঁধতে লাগল। রাশেদ আরেকটা মোটরসাইকেলে উঠল। পিছনে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হয়ে গেছে। পাঙ্কু ছেলেরা মোটরসাইকেল স্টার্ট দিল।

রাশেদ বলল, ঢাকা মেডিকেলের ইমারজেন্সি। প্রচণ্ড গতিতে আজিমপুর থেকে পলাশি চলে এল তারা। রাশেদের সামনে বসা পাঙ্কু বলল, স্যার আমি আপনারে চিনসি। কিভাবে? আপনি তো পুলিশ না। রাশেদের বুকটা ছলাত করে উঠল।

কে বলসে তোমারে? স্যার আমার আম্মারে নিয়া গেসিলাম ঢাকা মেডিকেলে। আপনে স্যার অনেকক্ষণ ধইরা আমাগো সাথে কথা বলসিলেন...আম্মা অনেকবার আপনের কথা বলসে... রাশেদ একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। আহ, ডাক্তারি পড়ার একটা সুফল তাহলে পাওয়া গেল। রোগী তো সহজে উপকার ভোলে না! ৮ এর পরের ঘটনা অতি সংক্ষিপ্ত। কমর এবং সালেহকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল।

ইমারজেন্সিতে একজন ইন্টার্নি ভাই সালেহকে দেখেই চিনতে পারলেন, এ সেই ছেলেটা না, যে ফেসবুকে খালি অশ্লীল গল্প লেখে আর ট্যাগ করে? খবর দেয়ার সাথে সাথে তাদেরকে দেখতে ও ব্লাড দিতে ডিএমসির অনেক ছাত্র ছাত্রী চলে এল। তিনজন ডাক্তার সারারাত ধরে মৃত্যুর সাথে লড়াই করলেন। রাতে অবস্থার কোন উন্নতি হল না। সকালে সালেহ চোখ খুলল। খুলে প্রথম কথাটা সে যা বলল, আম্মু জানে না তো? আর তার দ্বিতীয় কথাটা ছিল, কমর? কমর কই? ডাক্তাররা অবশেষে সুখের হাসি হাসলেন।

কমরের অবস্থা অনেক ভালো ছিল, তাকে নিয়ে কোন রিস্ক ছিল না। কিন্তু সালেহকে নিয়েই ছিল টেনশন। তার অবস্থা ছিল ভয়াবহ রকমের খারাপ। সে সারারাত অজ্ঞান ছিল। তাকে চার ব্যাগ রক্ত দেয়া লেগেছে।

রাশেদ ভাই সালেহের পাশে সারারাত দাঁড়িয়ে ছিলেন। নাফিজা আপুও। তারা কেউই ঘুমান নাই। রাশেদ ভাইর চোখ টকটকে লাল। সালেহ চোখ খোলার পর রাশেদ ভাই তার হাত ধরে বললেন, ক্ষমা করে দিস ভাই! সালেহ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল।

সে অবশ্য এখনও কাহিনীর কিছুই বুঝতে পারেনি। তার শুধু মনে হচ্ছিল, শুধু একটা কথাই মনে হচ্ছিল, ফিফথ ইয়ারের রাশেদ ভাইর হাত ধরে যে অসম্ভব সুন্দর আপুটা দাঁড়িয়ে আছে, তার মত তারও যদি কেউ থাকত! ধুর শালা, কেউ নাই। কি করলাম জীবনে! খালি গল্পই লিখলাম, ফ্যানের বাতাস পাইলাম না। কি করলাম জীবনে! ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।