কিচ কিচ কুচ কুচ কাচ কাচ কোচ কোচ!!! আমার জীবনটা অন্যরকম হয়ে গেল। সারাদিন বাসায় বসে থাকি, কারও সাথে কথাবার্তা বলি না। আপন মনে কি যেন ভাবি। আব্বা কখনও আমার সাথে কথা বলেন না। উনার সাথে আমার দেখাই হয় না।
আম্মা সারাদিন খাওয়া গোসল ইত্যাদির জন্য সাধাসাধি করেন। আমি জবাব দেই না। জানালা দিয়ে মনোযোগ দিয়ে আকাশ দেখি।
বাসায় অনেকদিন না থেকে বাসার আর্থিক অবস্থার কথা প্রায় ভুলতে বসেছিলাম। কিন্তু এখন বাসায় থেকে অভাব জিনিসটা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম।
আব্বার ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না, লোকজনের মুখে মুখে রটেছে যে নানাই বাবার ব্যবসার বারোটা বাজিয়ে জামাইকে নিজের দলে টানতে চাচ্ছেন। কিন্তু একথার কোন প্রমাণ নেই বিধায় আব্বা মুখ গম্ভীর করে পায়চারী করা ছাড়া আপাতত আর কিছুই করতে পারছেন না।
এরই ফাঁকে এক বন্ধু খবর দিল যে ঢাকা ভার্সিটির ঘ ইউনিটের ফর্ম ছেড়েছে। আমি মনস্থির করে ফেললাম। এই পরীক্ষাটা আমায় দিতেই হবে।
নাহলে আব্বার সামনে মুখ দেখানো যাবে না।
পরীক্ষার ফর্ম কিনতে বাসায় বিশেষ কাজের কথা বলে আমি ঢাকায় চলে এলাম। পরদিনই গেলাম ফর্ম কিনতে। দেখলাম বিশাল লাইন। আমার সামনে অন্তত আটশ মানুষ।
আমি সবার পিছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। দেখতে দেখতে আমার পিছনে অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে পড়ল। সবার মনেই একই লক্ষ্য, চান্স পেতেই হবে।
প্রায় দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর আব্বা ফোন দিলেন। রিসিভ করলাম।
এই তুই কোথায় বল তো।
আমি বললাম, এই তো মেসে।
আব্বা কিছুক্ষণ চুপ থেকে চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন, হারামজাদা, মিথ্যা বলার জন্য তোকে মানুষ করেছি? আমিও তো মেসে। তুই কই?
ভয় পেয়ে গেলাম। আব্বা কি জানে আমি এখানে? কি করে জানল? মেসের কেউ বলেছে? আর আব্বাকে হুটহাট করে ঢাকায়ই বা আসতে বলেছে কে?
এখন কি করব আমি? মেসে চলে যাব? তাহলে তো আজকের পরিশ্রমটা পুরো মাঠে মারা যাবে।
সামনে আর মাত্র দুইশ মত স্টুডেন্ট।
নাকি থেকে যাব? যা হয় কপালে। কিন্তু তাহলে আব্বা কি করবেন? মেসে কে আছে? উনি খাবেন কি?
চলে যাব কি যাব না এই নিয়ে বিশাল ধন্দের মধ্যে পড়ে গেলাম। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম, নাহ, যাবো না। আমি চান্স পেলে তো আব্বারই লাভ।
সমস্যা তো নাই।
ফোনটা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলাম লাইনে। কপালে বোধহয় খারাপি আছে আজকে।
আরও ঘণ্টা তিনেক পরে যখন আর মাত্র পঞ্চাশজন আছে সামনে, তখনই হঠাৎ কে যেন পাশ থেকে আমার হাত শক্ত করে ধরল। আমি ভয়ে চমকে উঠলাম।
কে? কে?
দেখি, আব্বা। আরে! উনি জানলেন কি করে আমি এখানেই আছি?
আব্বা আমার হাত ধরে টানতে টানতে আমাকে বাইরে নিয়ে গেলেন। একটা রিকশা ডেকে দরদাম করলেন। তারপর বললেন, ওঠ।
আমি উঠলাম।
আব্বা উঠে পাশে বসলেন। রিকশা চলতে শুরু করল। আব্বা বললেন, তুই কি আমার ছেলে?
আব্বার মুখে এ কি সুর! এরকম কথা আমি জীবনেও শুনি নি। বললাম, জি।
তাহলে তুই এখানে আসলি কেন? তোর কি খুব ভার্সিটিতে পড়ার শখ?
আমি কিছু বললাম না।
এতই শখ যে তার জন্য নিজের আব্বার বুকেও জুতা মারতে হবে? ঠিক আছে, মার। হয়তো তোকে এই শিক্ষা দিয়েই বড় করেছিলাম।
আমি অবাক হয়ে আব্বার দিকে তাকালাম। জীবনে প্রথমবারের মত উনার দুচোখে অভিমান দেখতে পেলাম আমি। সারাজীবন আব্বা আমার উপর রাগ করেছেন, মেরেছেন, কিন্তু অভিমান করেন নি কখনও।
আজ করলেন। আমি এ অভিমানের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। আমি ভেঙ্গে পড়লাম। ধরা গলায় বললাম, আব্বা আমি আসলে...আসলে আব্বা আমি সরি।
আব্বা অনেকটা ভেঙ্গে পড়া গলায় বললেন, তোর আর কি দোষ।
সব দোষ আমার। আমার কপালের।
এই কথার কোন উত্তর দেয়া যায় না। কি উত্তর দেব? চুপ থাকলাম। শুধু এইটুকু বুঝতে পারলাম যে ঢাকা ভার্সিটিতে আমার আর পরীক্ষা দেয়া হবে না।
ঐদিনের বাসেই আব্বার সাথে আবার বাসায় ফিরলাম। ভার্সিটির পরীক্ষা নিয়ে একটা কথাও হল না। আব্বা কি করে জানলেন আমি এখানে আছি এ নিয়েও কোন কথাবার্তা হল না।
বাসায় যাবার পর আব্বা বললেন, এখন থেকেই তুই পড়াশুনা শুরু কর।
আমি বোকার মত বলে ফেললাম, কি পড়াশুনা?
আব্বা বললেন, মেডিকেল পড়াশুনা।
পরের বার আবার দিতে হবে না? সেটার জন্য। আমি আর কিছু শুনতে চাই না। এখনও এক বছর সময় আছে, ভালমত পড়াশুনা করলে তুই অবশ্যই চান্স পাবি।
একান্ত বাধ্য ছেলের মত পরের দিন থেকেই আমি একা একা পড়া শুরু করে দিলাম।
প্রথম প্রথম ভালো লাগত না একটুও।
ধেত, এক পড়া কয়বার পড়া যায়? মেজাজ খারাপ হয়ে যেত একটুতেই। বইগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিতে ইচ্ছা করত আমার।
তবু আব্বার মুখের দিকে তাকিয়ে আমি আবার পড়তে বসতাম। সেই একই ইসহাক, হাজারি, আজমল। একই লাইন বারবার পড়া।
একই লাইন বারবার দাগানো। একই লাইন বারবার মুখস্থ করা। বলা যায় না, যদি এখান থেকেই প্রশ্ন হয়? তখন মনে হত, উফ, লাইফ সাকস।
মাঝে মাঝে তিন চারদিন রেস্ট নিয়ে নিতাম। রেস্ট নিয়ে যে খুব সুবিধা হত তা নয়।
আরও রেস্ট নিতে ইচ্ছা করত। কিছুতেই আবার ঐ বিরক্তিকর লাল নীলে দাগানো বইগুলো খুলতে ইচ্ছা করত না। তবু একসময় খুলতেই হত। চান্স না পেলে আব্বার মুখের কি অবস্থা হবে ভাবতেই গা কেমন গুলিয়ে উঠত আমার।
আমার সমসাময়িক অনেক বন্ধুই তখন নানা জায়গায় পড়াশুনা করছে।
ওদের সাথে মাঝে মাঝে কথা হত। ওরা আমাকে সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করত। কিন্তু আমি কেন যেন ওদের গলায় স্পষ্ট ব্যঙ্গ টের পেতাম। ওদের সাথে কথা বলতে আমার মোটেও ভালো লাগত না।
সেকেন্ড টাইম পরীক্ষার দুমাস আগে আবার ঢাকায় চলে এলাম।
আগে যে কোচিঙে পড়তাম সেই কোচিং থেকে নিয়মিত প্রশ্ন এনে নিজে নিজে সল্ভ করা শুরু করলাম। প্রথম প্রথম একটু বিরক্ত লাগলেও পরে সামলে নিলাম। এই দুমাস তো আমাকে কষ্ট করতেই হবে। এ কষ্টই আমার সারা জীবন নির্ধারিত করে দেবে যে।
মোটামুটি ভালো একটা প্রিপারেশন নিয়ে আমি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হতে থাকলাম।
সবই ঠিকঠাকমত চলছিল, কিন্তু মাঝখানে বাজারে গুজব ছড়িয়ে পড়ল যে এবার প্রশ্নপত্র ফাঁস হবে। দশ এগার লাখেই প্রশ্ন কিনতে পাওয়া যাবে। কষ্ট করে পড়ালেখা করার আর প্রয়োজন নেই।
শুনে আমার মাথা খারাপের মত হয়ে গেল। এগুলো কি? খোদার এ কেমন বিচার? তাহলে এত কষ্ট করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পড়াশুনা করার কি দরকার ছিল? গরীবের ঘরের মেধাবী ছেলে কোথাও চান্স না পেয়ে দুঃখকষ্টে আত্মহত্যা করবে, আর ধনীর গর্ভজাত গরু ছাগল ভেড়ায় মেডিকেল কলেজ ভরে উঠবে? তারা আবার ডাক্তারও হবে? কেমন ডাক্তার হবে তারা? নিজের বাপ মায়ের চিকিৎসা করতে পারবে তো?
আমি আব্বাকে ফোন করলাম।
সব বললাম। আব্বা শুনে চুপ করে রইলেন। তারপর বললেন, সেটা নিয়ে তোর চিন্তা করা লাগবে না। তুই তোর মত পড়, আল্লাহ তোর পরিশ্রমের ফলাফল দান করবেন। সবাই তো আর প্রশ্ন কিনবে না।
কয়জন কিনবে? একশ? দুইশ? বাকিরা তো তোরই মত। ওদের সাথে কম্পিটিশন করে তুই টিকতে পারবি না? দুই বছর ধরে তো পড়ালেখা করলি। পারবি বাপ পারবি। নিজের উপর ধৈর্য রাখ, পারবি।
কিন্তু নিজের উপর ধৈর্য রাখা আমার পক্ষে সম্ভব হল না।
আমি দেখলাম আমার কোচিঙের অগা মগা গাধাগুলো আজকাল কেমন হাসি হাসি মুখ করে কোচিঙে আসে। অন্যদের সাথে কিসব ফিসফাস করে। এমনকি কোচিঙের ভাইয়ারাও তাদের অনেক খাতিরযত্ন করে। আমার কানে খবর আসে, ওরা নাকি প্রশ্নপত্র কিনবে। সবাই মিলে কিনলে পার হেড ছয় লাখ পড়বে।
কোচিঙের ভাইয়াদেরও নাকি পারসেন্টেজ আছে তাতে।
শুনে আমার মেজাজ গরম হয়ে যায়। এগিয়ে গিয়ে গাধাগুলোকে গলা টিপে মেরে ফেলতে ইচ্ছা করে। কিন্তু আমি পারি না। কিছুই পারি না।
আমি ধৈর্য ধরি। ধৈর্য ধরতে ধরতে আমি বিরক্ত হয়ে যাই।
পরীক্ষা এগিয়ে আসতে থাকে। আমি রিভিশন দিতে থাকি। পাগলের মত রিভিশন দিতে থাকি।
আব্বার সাথে আবার ফোনে কথা হয় আমার। আমি আব্বার এতদিনের শিখানো সব আদর্শগুলো ভুলে বলে উঠি, আব্বা, প্রশ্নপত্র কিনলে হত না?
আব্বা প্রচণ্ড ক্ষেপে ওঠেন। হারামজাদা! তোর এত বড় সাহস! আমার ছেলে হয়ে তুই চুরি করতে চাস? দুর্নীতি করতে চাস? তোরে আমি এতদিন কি শিখাইসি হারামজাদা?
আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে পড়ে। আদর্শ ছেলের মুখোশটিও সময় নামক শয়তানটি টান মেরে সরিয়ে দেয়। আমি চিৎকার করে বলে উঠি, এইসব ভুয়া কথা রাখেন! আসল কথা বলেন।
প্রশ্ন কিনতে কি লাগে জানেন? টাকা! অনেক টাকা! এত টাকা আপনি জীবনে চোখেও দেখেন নাই। এত টাকা কই পাইবেন আপনি? ঘরবাড়ি বেইচা দিলেও তো এত টাকা হইবো না। সেইজন্যেই তো আপনি এইসব নীতি আর চুরির কথা বলতেসেন। নিজের ফুটা পয়সাও নাই সেইটা আর বলতেসেন না! প্রশ্ন কেনার টাকা যে আপনার নাই সেইটা আর বলতেসেন না!
আমি হিস্টিরিয়াগ্রস্থের মত হাসতে লাগলাম। আব্বা ফোন রেখে দিলেন।
উনি কি করবেন আমি জানি না। আমি কি করব আমি জানি না। কিছুই জানি না। কিছুই জানি না।
প্রচণ্ড রকম মন খারাপ নিয়ে পরদিন পড়তে বসলাম।
মনের মধ্যে এক সাগর অনুতাপ। এ আমি কি করেছি? আব্বার টাকা পয়সা নিয়ে তো আমি জীবনেও খোঁচা দেই নি। কাল কেন দিলাম? কেন দিলাম? এত বাজে কথা কেন বললাম।
যাকগে, যা হয়েছে হয়েছে। হয়তো কালকে সাময়িকভাবে পাগল হয়ে গিয়েছিলাম।
হয়তো ব্রেইন ঠিকভাবে কাজ করছিল না। কে জানে?
পড়া শুরু করলাম। একটু পড়ি আর একটু মোবাইলের দিকে তাকাই। নাহ, মোবাইলের স্ক্রিনে কোন মিসকল ওঠে নি।
কষ্ট লাগে।
কল দিতে ইচ্ছা করে। বলতে ইচ্ছা করে, সরি আব্বা। আমাকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু বলতে পারি না। কলই দিতে পারি না।
হাত কাঁপে। প্রচন্ডভাবে কাঁপে।
এভাবেই চলে আসে পরীক্ষার আগের রাত।
আমি ফিজিক্স দুই পার্ট আর কেমিস্ট্রি ফার্স্ট পার্ট রিভিশন দেবার পর বাকিটা রাতের জন্য রেখে দিলাম। কেমিস্ট্রি সেকেন্ড আর বায়োলজিতেই সবচেয়ে বেশী নাম্বার, আর ওগুলোই সবচেয়ে কঠিন।
এইজন্য ওগুলোকেই লাস্টে পড়ব ঠিক করলাম।
ঠিক রাত এগারটার সময় দরজায় ধাক্কা। কে?
রুমমেট দরজা খুলে দিল। দেখি আব্বা দাঁড়িয়ে আছে।
শক খেলাম।
চমকে উঠলাম ভীষণ। আব্বা আপনি...
আব্বা বললেন, খেয়েছিস?
হ্যাঁ।
পরীক্ষার জন্য কলম পেন্সিল কি কি লাগবে গুছিয়েছিস?
না তো। সকালে গুছাব।
এখনই গুছা।
তারপর রেডি হ। মোবাইলটা আমার কাছে দে।
আমার মনের মধ্যে একগাদা প্রশ্ন গিজগিজ করলেও সেগুলো করার মত মনের অবস্থা তখন ছিল না। আমি বিনা বাক্যব্যয়ে আব্বার কথা মেনে নিলাম। একটা শার্ট পরে নিলাম।
নিচে একটা গ্যাবাডিনের প্যান্ট। হাতে কলম পেন্সিল নিয়ে আব্বার সাথে বাইরে বেরিয়ে আসলাম।
দেখি, একটা মাইক্রোবাস দাঁড় করানো। আব্বা বললেন, ওঠ।
কোথায় যাব?
আগে ওঠ তুই।
আমি উঠলাম। মাইক্রো চলতে শুরু করল।
প্রায় একঘণ্টা পর আমাদের যাত্রা শেষ হল। মাইক্রো এসে একটা নির্জন এলাকায় থামল। আমরা নামলাম।
সামনে একটা পাঁচতলা বিল্ডিং ছিল। ড্রাইভার আমাদের ঐ বিল্ডিঙের দিকে গাইড করে নিয়ে গেল।
আমি আব্বার সাথে ভিতরে ঢুকলাম। দেখলাম একটা ঘরে কিছু বয়স্ক মানুষ বসে আছে। আরেকটু ভিতরের দিকে আরেকটা ঘরে আমার মত কিছু কমবয়সী ছেলেপুলে বসে আছে।
আমাকে ভিতরে ঢুকিয়ে আব্বা বললেন, আমি বাইরে আছি। তুই এখানে থাক।
আমি এখানে কি করব?
কথা বলিস না। যা করতে বললাম কর।
আব্বা চলে গেলেন।
ঐ রুমে একটা বড় টেবিলকে ঘিরে সবাই বসে ছিল। আমি গিয়ে একটা ফাঁক বের করে বসে পড়লাম।
দুইটা ছেলেকে চিনতে পারলাম। আরে, এরা তো আমার কোচিঙের সেই গাধাগরুগুলো। এরা এখানে কি করে?
আমি বললাম, কি হয়েছে?
ওরা ভ্রূ কুঁচকে তাকিয়ে বলল, কি হবে?
এখানে কি হচ্ছে?
এই কথা শুনে উপস্থিত সবাই আমার দিকে তাকাল।
আমি আবার বললাম, কি হচ্ছে এখানে?
ওরা পরস্পর মুখ চাওয়াচাওয়ি করল। একজন আমাকে ফিসফিস করে বলল, তুমি জানো না?
কি জানব?
তুমি এখানে এসেছ কেন?
উত্তর দেবার বদলে আমিই প্রশ্ন করলাম, কেন?
এখানে তো...
অতঃপর আমি ওদের একজনের কাছ থেকে পুরো ব্যাপারটা শুনলাম। এখানে আসলে কালকের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন বিক্রি হবে। টেবিলের উপর যে মোবাইল ফোনটা রাখা আছে সেটায় যে কোন সময় কল আসবে। ওপাশ থেকে কোন রহস্যময় কণ্ঠ আধিভৌতিক স্বরে একের পর এক প্রশ্ন এবং তার উত্তর বলতে থাকবে।
এপাশ থেকে সবাই তা লিখে নিতে থাকবে। এভাবে লিখে নেয়া শেষ হলে তারা সারারাত ধরে এগুলো মুখস্থ করবে। এবং কালকে এখান থেকে তাদের সরাসরি পরীক্ষার হলে নিয়ে যাওয়া হবে। এর মাঝে কারও সাথে মোবাইলে কন্টাক্ট করা যাবে না।
শুনে প্রথমে নিজের মধ্যে একটা উত্তেজনা টের পেলাম আমি।
সত্যিই কি এটা ঘটতে যাচ্ছে? সত্যিই কি প্রশ্ন পেতে যাচ্ছি আমি? নাকি এগুলো সব ভুয়া, বানোয়াট? আসলেই কি প্রশ্ন পাওয়া যাবে? গভীর রাতে কোন রহস্যময় কল কি এই মোবাইলে সত্যিই আসবে?
পরক্ষণেই একটা বাজে রকম অনুভূতি সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ল আমার। ছি ছি! এ আমি কি করছি? আমি দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে কৃতকার্য হবার চেষ্টা করছি? আমি টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন কিনছি? অসংখ্য মেধাবী ছাত্র ছাত্রীর অধিকার নষ্ট করছি? ছি ছি, এ আমি কি করছি?
আর তখনই অনুভূতিটা রূপান্তরিত হল বিস্ময়ে। আব্বা কি আমাকে জেনেশুনেই এখানে নিয়ে এসেছেন? তিনি কি টাকার বিনিময়ে ছেলেকে মেডিকেলে ভর্তি করাতে চান? আমার আব্বা? যিনি জীবনে কখনও দুর্নীতির আশ্রয় নেন নি? যিনি সচেতনভাবে কখনও মিথ্যা বলেন নি? যিনি মিথ্যা বলার অপরাধে পশুর মত পিটিয়েছেন নিজের একমাত্র ছেলেকে, সেই আব্বা?
কোথায় পেলেন তিনি এত টাকা? চুরি করেছেন? নাকি নানার কাছ থেকে নিয়েছেন? কে জানে? কিছুই তখন মাথায় ঢুকছিল না আমার। কত দেয়া লেগেছে তার? ছয় লাখ? আট লাখ? দশ লাখ? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।