আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি যখন ছোট হব

সাপের শরীর হয়ে আঁধারের গাছ/ কুয়াশার বন্যায় ডুবো দেবী মাছ! আমি খুব করে চাই ছোট হই ছোট হই। আমার ছোট হওয়ার ইচ্ছেটা দিন দিন বাড়ছে তো বাড়ছেই। যখন ই বদু চাচ্চু কে বলি চাচ্চু আমি কবে ছোট হব। উনি চোখ টিপে বলেন এই তো আর কদিনের মধ্যেই তুই ছোট হয়ে যাবি ব্যাটা। আমার আর বিশ্বাস হতে চায়না! আমি আঙ্গুল দিয়ে গুনতে পারি।

চাচু কে দেখিয়ে বলি আমার আঙ্গুলে দাগ দিয়ে দাও। চাচ্চু একটা চকখড়ি দিয়ে আঁক কষে দেয়ে মেঝের উপর। তারপর কি সব গোল লম্বা দাগ দেয় আর ফুস ফুস করে কি সব পড়তে থাকে। আমার তো তখন দারুন খুশি। লাফাতে লাফাতে বললাম তোমাকে বুঝি আমপাতা জোড়াজোড়া ধরবে স্কুলে? খি খি! আমার মুখস্ত।

শুনবা? তারপর মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে যেমন শুরু করেছি চাচ্চু বলল শুধু মাথা দুলিয়ে বললে হবেনা। যখন চড়ব ঘোড়া বলবি তখন লাফ দিয়ে ঘোড়ায় চড়ার ভান করবি। বলেই চাচ্চু লাফ দিয়ে আঁক কষা জায়গাটা পার হয়ে গেল। আরেকটু হলেই লুঙ্গি খুলে যাচ্ছিল আর কি! আমি তো বারান্দায় মেলে দেয়া আব্বুর গামছাটা ভয়ে ভয়ে নিলাম। তার আগে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে নিলাম কেউ দেখে ফেলল কিনা।

আমি তো অত বোকা নই। কেউ দেখবে আর আম্মুকে বলে দিলেই হল! কিছু না বুঝেই আমার বোক্কুস মাম আমার পিঠে লাঠি ভাংতে আসবে। গামছাটা ভাল মত গলায় পেঁচিয়ে প্লাস্টিকের তলোয়ার টা হাতে নিয়ে নিলাম। এই তলোয়ার টা সুসান ভাইয়া কদিন আগে আমাকে গিফট করেছে। এত সুন্দর সবুজ রং।

তলোয়ারটা নড়ালে চড়ালে আবার ভেতরে বাতি জ্বলে। ভাইয়া বলেছে এর ভেতরে নাকি আকাশ থেকে একটা তারা খসে পড়ছিল আর অমনি সেটা ধরেই ঢুকিয়ে দিয়েছে ভাইয়া। এহহ! কি বীরপুরুষ রে। আমার অবশ্য ওসব ঠিক বিশ্বাস হয়নি। যখন আমি ছোট হব তখন আমাকে যে যা বলবে আমি তাই এক কথাতেই বিশ্বাস করে ফেলব।

ছোট হওয়া অনেক মজা। এ জন্যই তো আমি ছোট হতে চাই। ও চাচ্চু বলনা তুমি আঁক কষে কি বলছিলা? চাচ্চু হেসে বলল সে তুই বুঝবিনা ওটাকে বলে ফুসমন্তর। তোর জন্যই তো রোজ মন্ত্র পড়ি দেখিস না। তা না হলে কি করে ছোট হবি তুই? ওহ তাই বল! কিন্তু তুমি আমার গলায় একটু সুপারম্যানের পাখাটা লাগিয়ে দাওনা।

তোকে সত্যিকারের সুপারম্যান পাখা কিনে দেব যা। রোজ এই গামছা আর গলায় পেঁচাতে হবেনা। তোর মম টের পেলে কিন্তু আস্ত রাখবেনা। ওসব বলে চাচ্চু ভয় দেখায় ঠিক আবার প্রতিবার গলায় বেঁধেও দেয়। চাচ্চু আমাকে একটা কাগজের চশমা বানিয়ে দিয়েছে।

তারপর কালো রং করে দিয়েছে। চোখে দিলেই যা একটা ভাব হয়না! আমি তো আয়নার সামনে থেকে সরতেই পারিনা। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কত রকম করে দেখি। আমাকে স্কুলে দিয়ে দেবে। আমি নাকি বড় হয়ে যাচ্ছি।

ওরা গোপনে গোপনে এসব আলাপ করে। কে বড় হতে চায় বাবা! আমি তো চাই ই যে ছোট হই। আরো ছোট হই। এত করে রোজ চাচ্চু কে বলছি আমাকে যাদু করে ছোট করে দাও। তা না।

রোজ খালি ফুসমন্তরই পড়ে। ভুয়া মন্ত্র মনে হয়। কাজ হয়না। তা না হলে কাল রাতেও তো আম্মু আমি ঘুমিয়ে গেছি মনে করে আব্বু আসতেই বলতে শুরু করলো। বুবন টা বড় হয়ে যাচ্ছে।

এবার ওকে স্কুলে দিয়ে দিতে হবে। কেন বাবা! বড় হলেই স্কুলে যেতে হবে? আব্বু কি স্কুলে যায়? আম্মুও তো স্কুলে যায়না। তবে আমাকে যেতে হবে কেন? যদি আম্মু বলতো বুবন বড় হয়ে যাচ্ছে ওকে অফিসে দিয়ে দিতে হবে। তা হলেও না হত। একটা কালো রং এর ক্যাম্বিস না কি বলে ওরকম ব্যাগ আব্বুর মত আমিও হাতে নিয়ে নিতাম।

তারপর অফিস চলে যেতাম। আজ চাচ্চুকে ছাড়া যাবেনা। একটা দফা রফা করতেই হবে। যত দিন যাচ্ছে স্কুলে যাবার সম্ভাবনা বেড়ে যাচ্ছে। এসব আর সহ্য করা হবেনা।

বুবন কে নিয়ে মজা করা! টের পাইয়ে ছেড়ে দেব হু! রোজ ফুসমন্তর পড় আর কাজ হয়না। তো বাবা সে রকম ভুয়া ফুসমন্তর পড়ার দরকার টাই কি? চলবে.... ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।