আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনিন্দ্যর দিন (একসাথে পুরো গল্প)

নতুনদিনের মিছিলে,একজন বেয়নেটধারী সৈনিক শচীচরন লেনের ফুটপাথ ধরে হাটছিলো অনিন্দ্য। হঠাৎ হোঁচট খেলো সে। জুতার তলা খুলে এলো। আশপাশে তাকিয়ে মুচি খুঁজলো। না।

কোনো শালার দেখা নেই। মুচিরা কি সব শহর ছেড়ে পালিয়েছে নাকি? জুতার তলা হাতে করে বয়ে নেবার মানে হয়না। খোলা ড্রেনে ছুঁড়ে দিলো তলাটা। মুচিদের আরেকদফা শাপ-শাপান্ত করতে করতে সামনে এগোলো সে। আজ আর তাহলে প্রিয়াঙ্কার সাথে দেখা হচ্ছেনা।

গতকাল বিকেলে প্রিয়াঙ্কা বারবার বলে দিয়েছিলো, আজ যেনো ১১.০০ টার দিকে টিএসসিতে থাকে। তাকে নিয়ে কোথায় যেনো যাবে, প্রিয়াঙ্কা। শুকতলাবিহীন এ যাত্রা এখানেই থামিয়ে দিতে হবে। মেসে ফেরার কোনো উপায় নেই। আনিস সকালে বেরোবার কালে তাকে চাবি দিয়ে বেরোতে চেয়েছিলো।

সে নেয়নি। তার আনিসের পরে বাসায় ফেরার কথা। একটাই চাবি রুমের। আনিস তাকে আরেকটা বানিয়ে নিতে বলেছিলো। সে এটাকে বাড়তি খরচের তালিকায় ফেলে দিয়ে, চাবি বানায়নি।

কে জানতো, এমন বিচ্ছিরি ঘটনা ঘটবে। তাও আজকের দিনে! এক কাজ করা যেতে পারে। আনিসের অফিসে গিয়ে উপস্থিত হলে কেমন হয়? এক সুযোগে দুপুরের খাবারটাও আনিসের ঘাড়ে চাপানো যাবে। আনিস কিছু মনে করবে বলে মনে হয়না। গত মাসকয়েক সে, আক্ষরিক অর্থেই আনিসের ঘাড়ে চেপে আছে।

স্কুল জীবনের বন্ধুত্বের দাবীতে। অথচ স্কুলে থাকতে আনিসের সাথে তার দহরম-মহরম সম্পর্ক ছিলোনা। একই ক্লাসে পড়ার কারনে তারা বন্ধু। অনিন্দ্যর ঢাকায় আসার কারন এমবিএ পড়া। এখন আবার এই বস্তু ছাড়া কোনো জায়গায় চাকরির আবেদন করার জো নেই।

মফস্বলের কলেজ থেকে এমএ পাস করেও মুক্তি মেলেনি। এমএ তে রেজাল্ট খারাপ ছিলোনা তার। এতো পরিশ্রমের ফল হাতে-নাতে পাওয়া যাচ্ছে। চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিতে গেলে, বড় বাবুরা মনে খুব কষ্ট পান। বায়োডাটাতে এমবিএর চাপ নেই বলে।

পা ফেলতে হচ্ছে খুব সাবধানে। মনে হচ্ছে আশপাশের লোকজনের দৃষ্টি সব তার দিকে ওঁত পেতে আছে। এই বুঝি তার করুন দশা দেখে সব একযোগে হেসে উঠবে। উত্তরায় যাবার বাসে উঠে পড়লো সে। কপালের জোড়ে সিট পেয়ে গেলো।

বাসের নোংরা, শতশরীরের গন্ধমাখা, ঘামে ভেজা সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করলো অনিন্দ্য। চোখ বন্ধ করতেই মনে পড়লো, আজ প্রিয়াঙ্কার জন্মদিন! ঘুম চটে গেলো অনিন্দ্যর। বাস থেকে নামার জন্য অস্থির হয়ে গেলো সে। ১১.১৯ বাজে! বাস থেকে তাড়াহুড়ো করে নেমে গেলো সে। পেছনে বাসের হেলপারের চিৎকার ভাসছে।

ভাড়া দেবার সময় নেই। মৎস্য ভবনের সামনে গিয়ে রিকশা নিলো সে। ভাড়া নিয়ে দর কষাকষি করার পুরানো অভ্যাসটাও আজ আর নেই। রিকশাওয়ালাকে জোরে চালাবার তাড়া দিয়ে, আশেপাশে ফুলের দোকান খুজলো। মনে পড়লো, শাহবাগে ফুলের দোকানের অভাব নেই।

কিন্তু দেরী হয়ে গেছে। প্রিয়াঙ্কা সময় মেনে চলে। তার দেরী দেখলে চলে যাবে। আর টিএসসি ক্রস করে, ফুলের দোকানে যেতে হবে! রাস্তার পাশে বসে, একদল কিশোরী মালা গাঁথছিল। রিকশা থামিয়ে তাদের কাছে গেলো অনিন্দ্য।

দশ টাকায় দুটো মালা কিনে, পকেটে পুরে নিলো। টিএসসিতে পৌঁছে, রিকশা বিদায় করে দিলো। চোখ খুঁজছে প্রিয়াঙ্কাকে। পেয়ে যেতে বেশী দেরী হলোনা। চেনা একটা মিষ্টি হাসি তাকে স্বাগত জানালো।

এগিয়ে গেলো, প্রিয় মানুষটার দিকে। - কেমন আছো? - ভালো। শুভ জন্মদিন। প্রিয়াঙ্কা হাসলো। সেই ভুবনভোলানো হাসি।

দুজনে হাঁটতে লাগলো। জুতোটা নিয়ে হাঁটা সমস্যা। তবে বেশিদূর যেতে হবেনা। গন্তব্য চেনা। দেখা হলে তারা ছবির হাটের চায়ের দোকানে গিয়ে বসে।

এ যাত্রায় তাদের কোনো কথা হয়না। ছবির হাটে পৌঁছে শুরু হয়, কথা। এটা গত সাতমাসের অলিখিত নিয়ম। প্রিয়াঙ্কার সাথে পরিচয় হবার পর থেকে। পরিচয়টা সাদামাটা ছিলো।

প্রিয়াঙ্কা তার খালাতো ভাইয়ের সাথে পড়ে। খালাতো ভাইয়ের সাথে দেখা করতে এলে, পরিচয় হয়। প্রথমে খালাতো ভাইয়ের প্রেমিকা ভেবেছিলো, প্রিয়াঙ্কাকে। পরে জানলো, হারামিটা এক ম্যাডামের সাথে প্রেম করছে। যার স্বামীবর বিদ্যমান! টানা কয়েকদিন আসার পর খালাতো ভাই সটকে গেলোও, কিভাবে যেনো তারা দুজনে রয়ে গেছে।

অনিন্দ্যর সাথে প্রিয়াঙ্কার মিলে গেলোও দারুন। কিভাবে যেনো ভালোবাসার অলিখিত চুক্তিও হয়ে গেলো। ছবির হাটে পৌঁছে মুখ খুললো, প্রিয়াঙ্কা - দেরী হলো যে? - জ্যামে পড়েছিলাম। - পায়ে কি হয়েছে? - কিছুনা। জুতোর তলা নাই হয়ে গেছে।

- ও! সকালে নাস্তা করেছো? - করেছি। তুমি? - আমিও। তাহলে শুধু চা চলুক। চায়ের অর্ডার দিয়ে এলো অনিন্দ্য। চা খেতে খেতে টুকটাক কথা চললো।

চা শেষ হলে, প্রিয়াঙ্কা বললো- - আমি বাসায় যাবো। অনিন্দ্য পকেট থেকে মালাদুটি বের করে দিলো। ফুলগুলো চ্যাপ্টা হয়ে গেছে। প্রিয়াঙ্কা মালা নিয়ে নাকের কাছে নিয়ে ঘ্রাণ নিলো। হেসে বললো- - থ্যাংকস।

প্রিয়াঙ্কাকে রিকশায় উঠিয়ে দিতে গেলো, অনিন্দ্য। তারপর সোজা আনিসের অফিসে চলে যাবে। প্রিয়াঙ্কার বাসা মতিঝিলে। রিকশায় উঠে, প্রিয়াঙ্কা হঠাৎ বললো- - আনিন্দ্য। আমাকে পৌঁছে দেবে? অবাক হলো, অনিন্দ্য।

এতদিনের সম্পর্কে প্রিয়াঙ্কা কোনদিন তাকে একথা বলেনি। কতদিন ইচ্ছে হয়েছে, একসাথে রিকশায় ঘোরার! সাহস হয়নি বলার। আজ! স্বপ্ন নাতো? ভেঙ্গে যাবার সুযোগ না দিয়ে, রাজি হয়ে গেলো সে। রিকশায় পাশাপাশি একটু অস্বস্তি লাগছিলো। প্রিয়াঙ্কা প্রথমবারের মতো অনিন্দ্যের হাত মুঠোয় পুরে নিলো।

আলতো করে বললো- - ভালোবাসি। কেঁপে উঠলো অনিন্দ্য। চোখে জল এলো। লজ্জায় চারপাশে তাকালো সে। দেখুক, সবাই।

আজ অনিন্দ্যর দিন।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।