আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নেপাল ভ্রমণ - (তেরোতম পর্ব)

সবার আগে দেশপ্রেম সন্ধ্যার পর স্থানীয় সময় রাত ৮টা যা বাংলাদেশ সময় থেকে মাত্র ১৫ মিনিটের কম। আমি হোটেলে ফিরে হেডফোনে নেপালী গান শুনছি তখন স্বরস্বতি এলো। ভাবলাম গান গুলো একবার শুনে স্বরস্বতীকে সিডি ক্যাসেট গুলো উপহার হিসেবে দিয়ে যাব। ও বলল, কি শুনছেন? আমি বললাম, নেপালী সং। ও আগ্রহ নিয়ে শুনতে চাইলো।

আমি আমার এয়ারফোনটা ওকে দিলাম। গান শুনে ওকে খুব খুশী দেখা গেল। বললাম, নিতে চাইলে নিয়ে যাও শুনে আবার ফেরৎ দিও। ঘন্টা খানেক পর খাবারের ডাক এলো। আমি খেতে নিচে নেমে এলাম।

হোটেল ওয়ালীর বড় মেয়ে আমাকে খাবার দিচ্ছে। খাবার শেষে খাবারের বিল সহ বিকালে খাওয়া এককাপ কফির দাম দিতে চাইলাম। কিছুতেই তাকে বুঝাতে পারছিলাম না যে বিকালে খাওয়া কফিটার দাম দিতে চাচ্ছি। উপরন্তু বিল না নিয়ে আরও এককাপ কফি নিয়ে এলো। এবার আমি তাকে এই দুইকাপ কফির দামের কথা বলছি।

বললাম, বিকালের কফি সহ এই দুইকাপ কফি হলো, দুই কাপ কফির দাম রাখেন। কিছুতেই বুঝাতে পারছিনা। কারণ সে ইংরেজী তেমন বুঝে না। বরং সে হাসাহাসি করতে লাগলো যে দুই কাপ কফিদিয়ে আমি একা কি করবো। অর্থাৎ সে ভাবছে আমি দুইকাপ কফি চাচ্ছি।

অবশেষে দুইকাপ কফির দাম তার হাতে দিয়ে আমি আমার রুমে চলে এলাম। ও“মে আসার কিছুক্ষন পড়েই স্বরস্বতি আমার রুমে এলো। কমন রুম হলেও আমি এখনও একাই এই রুমে থাকছি। কারণ এখন পর্যন্ত অন্য কোন বোর্ডার আসেনি। স্বরস্বতি এসেই গান গুলো খুব ভালো এই টাইপের কিছু কথা বলছে।

এরপর পোখারা থেকে আমি কি কি কিনেছি জিজ্ঞেস করলো। আমি তাকে কেনাকাটার সব কিছুই তাকে দেখালাম। সবশেষে তাকে আমার হাতের রূপার আংটিটাও দেখালাম। সে আমার হাত ধরে নেড়েচেড়ে দেখলো। বলল, আচ্চা লাগতাহে।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, তোমার পছন্দ হয়েছে? ও মাথা নেড়ে বুঝালো ও বলল, খুবই পছন্দ হয়েছে। আমি বললাম, তুমি নিতে চাও এটা? ও নিতে চাইলো। আমি অনেকটা বেকায়দায় পড়ে গেলাম। আমি ও কে জিজ্ঞেস করলাম, আই লাভ ইউ কি বুঝো? ও বলল, না বুঝি না। আই লাভ ইউ কি? আমি বললাম, পেয়ার করা বুঝো? পেয়ার? আমি তোমাকে পেয়ার করি।

আই লাভ ইউ। আমি তোমাকে ভাল বাসি। নানান ভাষায় নানান অংগভঙ্গি করে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম। ও তবুও আমকে বোঝালো ও এসব বোঝেনা। আই লাভ ইউ কি জানে না।

পেয়ার কি বোঝেনা। এই রকম কোনো ভাষা বা শব্দ সম্পর্কেও তার কোন ধারণা নাই। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আমার সাথে বাংলাদেশে যাবে। ও মাথা নেড়ে বলল, যাবো। আবার বলল, না যাবোনা।

ও আমাকে আংটি দেখিয়ে বলল, কি ওটা আমকে দেবা না? আমি বললাম, না থাক এটা রূপার আংটি আমি তোমাকে রূপার আংটি দেব কেন? দিলে সোনার আংটিই দেব। সে একটু অসন্তুষ্ট হলেও উত্তরটায় খুশি হলো। আমি নেপালী ভাষার সিডি গুলো বের করে ওকে দিয়ে দিলাম। বললাম, খুশি হইছোতো? ও মাথা নেড়ে বলল, হ্যা খুশি আছি। ও ক্যাসেটগুলো নিয়ে রাতের মতো বিদায় নিয়ে চলে গেল।

আমি লাগেজ থেকে একটা বই বের করে শুয়ে শুয়ে পড়তে শুরু করলাম। বই পড়তে পড়তে কখন ঘুমিয়ে পরেছি টির পাইনি। সকালে স্বরস্বতির ডাকেই আমার ঘুম ভাঙ্গলো। ও কফি নিয়ে এসেছে সাথে বিস্কিট। আমি বাথ রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে এসে কফি খেলাম।

ও আমার বিছানা পত্র গুছিয়ে দিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আই লাভ ইউ’র মানে পেয়েছো। পেয়েছো পেয়ার কাকে বলে। ও কিছু বললো না। আমার কফি খাওয়া শেষ হতেই ও কাপ নিয়ে চলে গেল।

(চলবে) ভ্রমণ কাল : ২০০৫ সাল দ্বাদশ পর্ব :: প্রথম পর্ব ::দ্বিতীয় পর্ব :: তৃতীয় পর্ব :: চতুর্থ পর্ব :: পঞ্চম পর্ব :: ষষ্ট পর্ব :: সপ্তম পর্ব :: অষ্টম পর্ব :: নবম পর্ব :: দশম পর্ব :: একাদশ পর্ব ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।