আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নেপাল ভ্রমন বিংশ পর্ব : নেপাল থেকে দার্জিলিং

সবার আগে দেশপ্রেম পূর্ব প্রকাশের পর ... ... আমাদের গাড়ী ছুটে চলছে পাহাড় থেকে নিচের দিকে। অনেকটা খাড়া ভাবে যখন নেমে যাচ্ছিল তখন রাজুকে বললাম, কি ব্যাপার আমরা কি শিলিগুড়ির দিকে যচ্ছি নাকি। ও বলল, না আমরা যাচ্ছি পাহাড়ের ঢাল বেয়ে একেবারে নিচে যেখানে ১৪ হাজার ফিট উপরের ঝর্না ধারা শেষ হয়েছে। এসময় গাড়ী এতো খাড়া ভাবে নামছিল যে খুব ভয় ভয় লাগছে। মাঝপথে গিয়ে আমাদের গাড়ী থেকে নামিয়ে দেয়া হলো।

এখানে পাহাড়ের ঢালুতে চায়ের বাগান করা হয়েছে। আমরা গাড়ী থেকে নেমে চাবাগানের চা পাতা ছুয়ে ছুয়ে দেখছিলাম। কিন্তু সমস্য হচ্ছে আমরা কেউই ঠিক ভাবে দাড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছে এই বুঝি পড়ে যাচ্ছি। এর পর আবার গাড়ীতে উঠে বসলাম।

গাড়ী আরো খাড়াভাবে নিচের দিকে নেমে গেল। আমরা পৌছে গেলাম অপরূপ সৌন্দর্যপূর্ন একটি এলাকায়। এলাকাটির নাম ভুলে গেছি সম্ভবত গঙ্গামায়া পার্ক। আমি নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছিনা। আমি কি বাস্তবে আছি না স্বপ্নে।

আমি বার বার নিজের গায়ে চিমটি কেটে দেখছি। হ্যাঁ সত্যিইতো আমি বাস্তবে আছি। তার পরও আমি আমাদের সাথের সবাইকে জিজ্ঞেস করছি যে আমি স্বপ্ন দেখতেছি কিনা। ওরা হাসলো। আমি বললাম, গত রাতে আমি ঠিক এই জায়গাটিকে স্বপ্ন দেখেছি।

গত রাত বলল কেন গত রাত নয় আজ সকালেই তোমরা আমাকে যখন জোড় করে ঘুম থেকে উঠতে বলছিলে তখনই। আমার সাথে একটি মেয়ে ছিল। অপরূপ সুন্দরী সে মেয়েটি। ওরা আমাকে বলল, দেখ এখানেই সেই আছে কিনা। আমার মনও আনমনে সেই মেয়েটিকে খুজতে লাগলো।

আমি ছুটে গেলাম ঝর্না ধারার নিচে হ্যাঁ এইতো সেই ঝর্না ধারাই কিন্তু কোন সুন্দরী মেয়ে। স্বপ্নে দেখা সেই মেয়ের মতো সুন্দরী বলতে কেউই নেই এখানে। কিছু কিছু জুটির দেখা মেললেও আমার স্বপ্নে দেখা তার দেখা মেলেনা। তবুও আমি খুজে যাই। আমি একটার পর একটা পাথরের দিকে দৌড়াতে থাকি।

জীবন যে এতো আনন্দের এতো ভালো লাগার তাই অনুভব করলাম। আমি ঝর্নার কাছাকাছি ছুটে গেলাম। ঝর্ণার পানিতে গোছল করতে চাইলে সকলেই আমাকে বাধা দিল। এখানকার ঠান্ডা পানিতে গোছল করলে অসুস্থ্য হয়ে পড়ার সম্ভাবনা তাই ঝর্নার পানিতে গোছল করা নিষিদ্ধ। সেখান থেকে বের হয়ে আমরা আসপাশের সব কিছু খুটে খুটে দেখার জন্য এদিক সেদিক ঘুরতে লাগলাম।

এখানে রয়েছে অসংখ কফি হাউজ। যার সব গুলোই চালাচ্ছে কোন না কোন মেয়েরা চালাচ্ছে। দোকানের মেয়েগুলো সাধারণত সুন্দরীই। রিয়াজ একটি মেয়েকে দেখিয়ে বলল, ঐ দেখ তোমার সেই স্বপ্নে দেখা সুন্দরী মেয়েটা না? আমি বললাম, সে ছিল আরো অনেক সুন্দরী। এর মধ্যেই মেয়েটা আমাদের ডেকে জিজ্ঞেস করছে, আমরা চা বা কফি খাবো কিনা।

এসময় রাজু এসে আমাদের পাশে দাড়ালো। আমরা আমাদের সবাইকে ডেকে সেখানে কেউ চা কেউ কফি খেতে অর্ডার করলাম। মেয়েটার মা চা বানাচ্ছিল। রাজু মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলো, আপনার কি বিয়ে হয়েছে? মেয়েটি অপ্রস্তুত হয়ে গেল। তারপরও উত্তর দিল, না বিয়ে হয়নি।

রাজু আরো কয়েকটি অনাকাংখিত এলাল্ড কথা বলে ফেললো এবং মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলো, উনি আপনার কে হন? বড় বোন? মেয়েটি বলল, না আমার মা হন। মেয়েটির মা ওর কথা শুনে অনেক লজ্জা পেয়ে অন্যদিকে চলে গেলেন। রাজু বলল, লক্ষি মা এমনই হয়। কি সুন্দর আমাদের প্রাণ খোলা কথা বলার সুযোগ দিয়ে গেলেন। রাজু আরো কিছু খারাপ কথা বলতে যাচ্ছিলেন।

এসময় মেয়েটি আমার দিকে এটেনশন নিয়ে ওকে এরকম কথা না বলার জন্য অনুরোদ করতে বললেন। আমি বুঝে পেলাম না এতো গুলো লোক আমরা তার মধ্য থেকে মেয়ে এ দায়িত্ব আমাকেই কেন দিল। সবাই আমার দিকে তাকালেন। তখন আমাদের সামনে চা কফি পরিবেশন করা হয়েছে। রাজু আমাকে বলল, কি ব্যাপার কিছু ঘটিয়ে ফেলেছো নাকি? আমি বললাম, আজ ভোরের স্বপ্নেই যা ঘটার ঘটানো হয়েছে।

সবাই এক যোগে হেসে ফেলল। ইতি মধ্যে আমার স্বপ্নে দেখার গল্পটি আমাদের গ্রুপের সকলের জানা হয়ে গেছে। আমি আবার বললাম, আমার মুখে দাড়ি আছে। আমাদের গ্রুপের কারো কি এমনটি আছে? সবাই সবার মুখ চাওয়া চাওই করলো। আমি বললাম, আমার এই বেশভুষা আর ইন্নোসেন্ট চেহারা ওর বিশ্বস্ততা এনে দিয়েছে।

আর তোমরা ওর সাথে যে আচরন করেছো আমি কি তার সাথে এই আচরনের সহায়ক ছিলাম? অবশ্যই না। তাই ও আমাকে বিশ্বস্ত মনে করে এ দায়িত্ব দিয়েছে। তখন মেয়েটিই বলল, ঠিক তাই। দাদা তুমি আর কিছু খাবে? একটি চকোলেট বের করে মেয়েটি আমাকে দিল। বলল, এই নাও এইটা আমার পক্ষ থেকে তোমাকে দিচ্ছি।

আমরা চয়ের বিল শোধ করে সেখান থেকে আসার সময় মেয়েটির কাছে রাজু অসালিন কথা বলার জন্য ক্ষমা চাইলো। মেয়েটি অবাক হয়ে বলল, এতে ক্ষমা চাওয়ার কি আছে? আমরা তার কাছ থেকে হাসি মুখে বিদায় নিলাম। আরো কিছু ক্ষন ঘোরার পর আমাদের ড্রাইভার আমাদের ডেকে বলল আর সময় নেই এখন এই এলাকার সবাই উপরে চলে যাবে আমাদের চলে যেতে হবে। আমরাও দেখলাম অনেক দোকান পাটই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমরা গাড়িতে এসে উঠলাম।

গাড়ী ফের উপরের দিকে উঠতে লাগলো। বিষণ ভয়ংকর ব্যাপার। গাড়ী এতো খাড়া ভাবে উঠছে যে, মনে হচ্ছে উল্টে পড়ে গেলাম বুঝি। কিন্তু এখন আর আগের মতো ভিরমি খাওয়ার মতো হচ্ছে না কারণ এতক্ষনে আমরা সবাই ব্যাপারটিতে অভ্যস্থ হয়ে গেছি। কিছু দূরে উঠে দেখি সেই কফি সপের মেয়েটি তার মা ও অন্য কয়েকজনের সাথে হেটে হেটে উপরে উঠছে।

রাজু মেয়েটিকে ডেকে বলল, কি দিদি যবে নাকি আমাদের সাথে? মেয়েটি আমাদের গাড়ীতে উঠতে রাজি হলে গেল। কিন্তু আমাদের গাড়ীতে সিট খালি না থাকায় এবং মেয়েটির সাথে আরো দু’তিন জন থাকায় আর মেয়েটিকে আমাদের গাড়ীতে নেয়া সম্ভব হয়নি। ড্রাইভার বলল, এরা প্রতিদিন এভাবেই হেটে হেটে নিচে আসে। দুপুর পর্যন্ত দোকান চালানোর পর আবার এভাবে হেটে হেটে উপরে ওঠে। ওঠার পথে কোন পর্যটকের গাড়ীতে ওঠার সুযোগ পেলে উঠে পড়ে।

কারণ এই পথে হেটে উপরে ওঠা যে কত দূঃসাধ্য তা যে একবার উঠেছে সেই বুঝে। আমরা হোটেলে ফিরে এলাম। গোছল করে লাঞ্চ করতে করতে বিকাল ঘনিয়ে এসেছে এসময় আমাদের সাথের চারজনই বলল তারা আজ শিলিগুড়ি চলে যাবে। সেখানে তাদের কি কাজ রয়েছে। আগামীকাল গেলে সেটা করা সম্ভব নয়।

কারণ আগামীকাল আমাদের ভারতে থাকার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। ট্রানজিট ভিসা হিসেবে সকলেরই মাত্র তিন দিনের ভারতীয় ভিসা রয়েছে। তাই আগামী কালই আমাদেরকে ভারত থেকে বের হয়ে বাংলাদেশে ডুকতে হবে। ওরা আমাদের থেকে বিদায় নিয়ে শিলিগুড়ি চলে গেল। আমরা একটা রুম ছেড়ে দিলাম।

বিকালে আমরা চলে গেলাম দার্জিলিং চিড়িয়াখানায়। যাওয়ার পথে আমরা মেঘের সাথে খেলা করলাম। মেঘের সাথে কয়েকটি ছবি তুললাম রিয়াজের ক্যামেরায়। এরপর গেলাম কি একটা বিনোদন কেন্দ্র না পার্ক যেখানো ঐতিহ্যবাহী নেপালী নৃত্য হবে। সন্ধ্যার পরপরই জমে উঠলো স্থানটি।

পাহাড়ের চুড়ায় সমতল ভূমি। কিছুক্ষন পর পরই হালকা হালকা বৃষ্টি হচ্ছিল। চমৎকার সে বৃষ্টি। মেঘ ছুটে আসে আমাদের গায়ের সাথে ছুয়ে যায় আমরা হালকা ভিজে যাই, হঠাৎ মেঘ গুলো ফোটা ফোটা বৃষ্টিতে পরিণত হয়ে ঝরে পড়ে। আবার মাথার উপরের মেঘ গুলো থেকেও সাধারণ ধরনের বৃষ্টি আসে।

এসময় ওখানকার একজন বাঙ্গালী পুলিশযার বাড়ী পশ্চিমবঙ্গের ২৪পরগোনা জেলায় সে এসে আমাদের সাথে গল্প জুড়ে দিল। তার নাকি দাদা না পরদাদা বাংলাদেশে থাকতেন। গল্প শেষ করে আমরা মার্কেটিং এ বের হলাম। রাজু কোরবানীতে ব্যবহারের জন্য একটি বড় সাইজের চাকু কিনে নিল। বর্ডারে পার করতে সমস্যা হবে জেনেও সেটা সে কিলে নিল।

আমরা সবাই যে যার প্রয়োজন মতো অনেক কিছুই কিনে হোটেলে ফিরে এলাম। রাতের খাবারের পর কিছুক্ষণ গল্প করে সবাই ঘুমিয়ে পরলাম। চলবে....... নেপাল থেকে দার্জিলিং - ২ :: নেপাল থেকে দার্জিলিং :: নেপাল ভ্রমন : চতুর্দশ পর্ব :: নেপাল ভ্রমন : ত্রয়োদশ পর্ব :: দ্বাদশ পর্ব :: প্রথম পর্ব ::দ্বিতীয় পর্ব :: তৃতীয় পর্ব :: চতুর্থ পর্ব :: পঞ্চম পর্ব :: ষষ্ট পর্ব :: সপ্তম পর্ব :: অষ্টম পর্ব :: নবম পর্ব :: দশম পর্ব :: একাদশ পর্ব  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২৬ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।