আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কে অপরাধী ??

শহরের কোলাহলে প্রতিদিনই হাঁপিয়ে উঠে পলিত। পুরুষগুলো এত বিশ্রী! একটু সুযোগ পেলেই ফস করে হাত ছুঁয়ে দেয় স্তনের বোঁটায়। কিংবা কনুই ঠেকিয়ে দেয় অতি যত্ন করে ব্রার ভেতরে গুছিয়ে রাখা বস্তু দুটিতে। পায়ের তালু থেকে মাথা পর্যন্ত শির শির করে বেয়ে উঠে যায় একটা স্রোত। শীতযামের রাত্রির বাতাসের মতোই।

ফার্মগেট ওভারব্রীজের পাশ দিয়ে ফুটপাত ধরে হেঁটে যেতে আজও একই অবস্থা হলো ওর। কোচিং সেন্টার থেকে বের হয়ে ব্রীজ পার হয়ে রিক্সা ধরবে সে। সাথে বান্ধবী সাবা। হারামজাদার কাণ্ড দেখেছিস সাবু? কী? হালকা স্বরে জানতে চায় সাবা। যদিও সে ভালো করেই জানে কী ঘটেছে।

তারপর মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলে, চল। এদের সাথে না লাগাই ভালো। দাঁতে দাঁত ঘষে পলিত। চুপচাপ বান্ধবীর কথামতো ব্রীজ পার হয়ে রিক্সা ধরে ওরা। দুপুরে ঢাকা শহরে রিক্সা পাওয়া যায় না বললেই হয়।

কিন্তু পলিত ও সাবার মতো মেয়েদের জন্য রিক্সাওয়ালাদের দরাজ দিল। রিক্সায় চড়ে পলিতের মন খারাপ ভাবটা আর থাকে না। দুপুরের কড়া রোদের মাঝেও এক ধরনের আনন্দ খোঁজে পায় সে। বাতাসে জলীয় বাস্পের পরিমান অত্যধিক বলে ঘাম শুকিয়ে না গিয়ে চটচটে হয়ে গায়ে লেগে থাকে। ব্যাগ থেকে টিস্যু বের করে কসমেটিকস দিয়ে অতি যত্ন করে ঘষে মেজে পরিষ্কার করা শরীরটায় জমে থাকা ঘামগুলো সাবধানী হাতে মুছে ফেলে ধাঁই করে বাতাসে ছুঁড়ে মারে দোমড়ানো মুচড়ানো টিস্যুটা।

সাবা সেদিকে খানিক তাকিয়ে থেকে সেও বের করে আনে একটা টিস্যু। আই অ্যাম নট আ গার্ল, নট ইয়েট আ ওমেন। গুন গুন করে ব্রিটনির গান ধরে পলিত। তারপর হাসতে হাসতে বলে, একটা ব্যাপার ল্য করেছিস সাবু? প্রশ্নবোধক দৃষ্টি মেলে মায়া হরিণীর মতো তাকায় সাবু- কোনটা? হারামজাদার ব্যাটা যদি স্মার্ট হয় তাহলে শরীরটায় কেমন যেন এক ধরনের আনন্দের ঢেউ খেলে। আর যদি বাজে টাইপ হারামজাদা হয় তাহলে শরীর কেমন ঘুলিয়ে উঠে।

কথা কটি বলতে মিটমিট করে হাসে পলিত। অবাক হয়ে পলিতের দিকে তাকিয়ে থাকে সাবা। কী! আশ্চর্য! তুই কি তাহলে অনেকের সাথে ইচ্ছে করেই ধাক্কা খাস নাকি? দূর! শ্রাগ করে পলিত। এই তোর ভাবনা আমার সম্পর্কে? তাহলে যে বললি? অপরাধীর মতো প্রশ্ন করে সাবা। পলিত হাসে।

হাসতে হাসতে আকাশের দিকে তাকায়। ভর দুপুরের সূর্যটাকে মনে হয় পূর্ণিমার চাঁদ। পলিত চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকে অপলক চোখে। দেখে এবং মুগ্ধ হয়। যেন মুগ্ধ না হলে কোনো সমস্যা হবে।

চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙেছে উছলে পড়ে আলো। রিনঝিন কণ্ঠে গান গায় পলিত আর হাসে । হাসির দমকে চ্যাংড়া রিক্সাওয়ালা মাথা ঘুরিয়ে তাকায়। তোকে নিয়ে এই জ্বালা! কখন কি বলিস নিজেই জানিস না। সাবু গাল ফুলায়।

গলির ভেতরে ঢুকে যায় রিক্সা। দুপুরের কড়া রোদে রাস্তা প্রায় খালি। সাবার কথায় মজা পায় পলিত। বাম হাতের তর্জনি ও বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে নিচের ঠোঁট ভাঁজ করে ধরে অতি দ্রুত বাতাস টেনে নিয়ে ফুসফুস ভরাট করে। বাতাসের স্রোত সৃষ্টি হয়।

স্রোতের ঘুর্নিতে অদ্ভুতভাবে বেজে উঠে শিস। থামবি? ধমকে উঠে সাবা। না হলে আমি কিন্তু নেমে পড়লাম। থামছি বাপ! হাসির স্রোত বেরিয়ে আসে পলিতের মুখ থেকে। তুই অতো ভীতু কেন রে? একটা গল্প শুনবি? গল্পের কথা শুনে মজা পায় সাবা।

হাসি হাসি মুখে বলে , শুনবো তো। বিকেলে, হ্যাঁ, বিকেলে চলে আয় আমাদের বাসায়। বাসায় কেউ নেই। পলিত ভেবেছিল বিকেলে সাবা আসবে না। সাধারণত সে যা করে।

ভুলে যায় বেমালুম। কিন্তু আজ ব্যতিক্রম তার চিন্তা। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সাবা চলে আসে। খুব ভালো লাগছে তোকে দেখে । খুশিতে নেচে উঠে পলিত।

সত্যি কথা বলি, তোকে গল্প শোনানোর জন্য আনিনি। অন্য একটা কাজ আছে। সাবার কিছুটা মন খারাপ হয়। সিগারেট খাবি? পলিত জিজ্ঞেসা করে সাবাকে। কী খাবো? আশ্চর্য হয় সাবা।

সিগারেট। চারদিকে আর একবার তাকায় পলিত। জানে বাসায় কেউ নেই। তবুও কিশোরী মনের বিহ্বলতা। বারান্দায় চলে আসে দুজন।

চেয়ারে বসে দূরে তাকায়। আব্বুর কাছ থেকে চুরি করেছি। খেয়ে দেখ। সাবার দিকে একটা বেনসন এন্ড হেজেজ বাড়িয়ে দিয়ে নিজের ঠোঁটে গুজে নেয় আর একটা। কায়দা করে লাইটার জ্বেলে সিগারেট ধরিয়ে ফেলে।

একগাদা নিকোটিন ভর্তি ধূয়া গাল ভরে নেয় দ ধুমপায়ীর মতোই। রিং বানিয়ে ছুঁড়ে দেয় আকাশের দিকে। মুগ্ধ বিস্ময়ে বান্ধবীর কাজ দেখে সাবা। সাবার বোকা বোকা চেহারা দেখে হাসে পলিত। লি, তুই কি নিয়মিত সিগারেট খাস? জানতে চায় সাবা আই মিন তুই কি ধুমপায়ী? না, আমি ধুমপায়ী না।

আমি ধুমপায়ীনী। খিল খিল হাসে পলিত। হুইস্কি খাবি? তাও আছে। দাঁড়া নিয়ে আসি। উঠতে গিয়ে আবার বসে পড়ে পলিত।

কলিং বেল বেজে উঠে এই সময়। সাবা ভয়ার্ত চোখে পলিতের দিকে তাকায়। মনে হয় বুয়া। সাবার দিকে তাকিয়ে অভয় দেয় পলিত। ঘন ঘন সিগারেটে টান দিয়ে বারান্দার গ্রিল দিয়ে বাইরে ছুঁড়ে মারে ফিল্টারসহ আধখাওয়া সিগারেট।

দরজা খুলে দিয়ে অবাক হয় পলিত! তুই? আজকে? ডবল প্রশ্ন করে দরজা ধরে দাঁড়িয়ে থাকে পলিত। পলিতের হাত সরিয়ে দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে কারান। কী গাধারে তুই! এসছি তো কী হয়েছে? আসা যাবে না? ভেতরে প্রবেশ করতে করতে বলে উঠে কারান। তা কে বলেছে? কিন্তু ফোন করে আসবি তো? যদি বাসায় কেউ থাকতো ? নাযেহাল করতে চায় কারানকে। জেনেই এসছি, বুঝেছিস? আন্টি আমাকে ফোন করেছিল।

তখনই জানলাম তুই বাসায় একা। তাই চলে এলাম। কারান জবাব দেয়। এদিকে আয় আমার এক বান্ধবীর সাথে তোর পরিচয় করিয়ে দিই। কারানকে টেনে নিয়ে যায় বারান্দার দিকে।

পরিচয়পর্ব শেষ করে চুপচাপ বসে থাকে কারান। সাবাকে ভাগানোর ফন্দি মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। কিভাবে বিদায় করা যায় আপদ সেই নিয়ে ব্যস্ত সে। কিন্তু তাকে কিছুই করতে হয় না। উঠে দাঁড়ায় সাবা।

আমি যাবো এখন। তার কথায় কেউ প্রতিবাদ করে না। অস্বস্তি লাগে সাবার। ছি! নিজেকে ধিক্কর দেয়। কেন আমি আজ আসলাম এখানে? দরজা খুলে বন্ধ করার সময় সাবার কাছে স্যরিটুকু বলার সৌজন্যটুকুও ভুলে যায় পলিত।

সাবার চোখে জল এসে যায়। বেড রুমের দরজা জানালা বন্ধ করে পর্দা টেনে দেয় পলিত। ঝাপসা অন্ধকার চোখ সহা না পর্যন্ত অপো করে সে। হালকা নীল শেডের লাইট জ্বেলে দেয়। ¯েপ্র করে এয়ার ফ্রেশনার।

রোমান্টিকতা সৃষ্টি হয় চার দেয়ালের হালকা আলোয়। ত্রস্ত পায়ে কিশোরী এগিয়ে যায় বেডের দিকে। চুম্বকতা সৃষ্টি করে চার দেয়ালের মধ্যখানে কিশোর কিশোরী। আমাকে পারতেই হবে। পারবো না? পারবো না আমি? কিশোরী পারে না।

নীল আলো হঠাত্ করেই পরিণত হয় সাগরে। থোকা থোকা নীল আলো হয়ে যায় রাশি রাশি নীল জল। কিশোরী সাতরে বেড়ায় নীল জলরাশিতে। ঢেউয়ের দমকে দমকে তার মুখ থেকে বেরিয়ে আসে কান্ততা। আর কতো দিন? আর কতো দিন? রাত তিনটায় ঘুম ভেঙে যায় পলিতের।

দুঃস্বপ্ন দেখেই ঘুম ভেঙে যায় তার। হাত বাড়িয়ে দেখে ভিজে গেছে। পাশ থেকে টাওয়েলটা নিয়ে মুছে আবার শুয়ে পড়ে সে। কিন্তু ঘুম আসে না সহজে। স্বপ্নের দৃশ্যগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠে আবার।

পলিত না না করে চেঁচিয়ে উঠে। কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে তখন পলিত। পেছন ফিরে তাকায় সে। এই তো মাস আট আগের কথাই। অয়নের প্রপোজে রাজি হয় ও।

ওদেরই ফ্যাটের ঠিক নিচতলার মেসেই থাকতো সে। একই কাসে পড়তো বলে আম্মু কিছু বলতো না। অয়নও অবাধ যাতায়াত করতো ওদের বাসায়। কিশোরী সুলভ উদ্ভ্রান্ততায় ভেজিয়ে রাখে নিজের শরীর সারাণ, এই পলিত। অজানার প্রতি অদমিত আগ্রহ।

এই আগ্রহই ওকে শেষ করলো। ধ্বংস করলো। পঙ্গু করে দিল হয়তো সারা জীবনের জন্যই। সে আর গাইতে পারবে না- আমি কখনো যাইনি জলে/ কখনো ভাসিনি নীলে/কখনো রাখিনি চোখ ডানামেলা গাঙচিলে। নির্জন দুপুরে যখন অয়ন একা ছিল, তারই এক সময়ে সীত্কার করে উঠে পলিত।

ধূরন্ধর অয়ন কিছু ফটোগ্রাফও রেখে দেয় সেই আদিমতার। তারপর থেকেই বাধ্য হয় পলিত নানা সময়ে অয়নের অভাব পূরণে। ব্যাপারটা এক সময় কিভাবে কিভাবে খালাতো ভাই কারান জেনে ফেলে। অয়নের কাছ থেকে কী করে যেন ছবিগুলো আদায় করে নেগেটিভসহ। তারপর থেকে কারানের কাছে বন্দি সে।

প্রতি সীত্কারে তাই খোঁজে ফেরে মুক্তি। ঢেউয়ের তালে তালে জপে বেড়ায়- আর কতো দিন? আর কতো দিন? সেই থেকে তার দুঃস্বপ্ন। সংগৃহীত এখান হতে ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.