আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আপনার মেধা ও সৎ প্রতিবাদ রাজাকারদের জন্য সুফল বয়ে আনছে কি?

অভিলাসী মন চন্দ্রে না পাক, জোছনায় পাক সামান্য ঠাই পরিস্থিতি ভাল না! বাংলাদেশে'র প্রতিটা সামাজিক শক্তি নিজ নিজ জায়গা থেকে ক্ষ্যেপে উঠছে। উত্তেজিত বক্তব্য প্রচারিত হচ্ছে চুড়ান্ত ফলাফলের কামনায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারীরা, বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদীরা, পশ্চিমা ও ইসলামিক সাম্রাজ্যবাদিরা এবং সুশীল শিবিরের শহর কেন্দ্রিক মধ্যবিত্তরা প্রত্যেকে নিজ আদর্শ এবং চাহিদা সংরক্ষনের জন্য উগ্র হয়ে উঠেছে। গণমাধ্যমে এর প্রকাশ হচ্ছে প্রতিদিন ছাপা এবং ডিজিটাল অক্ষরে। বাস্তব জগতের রাজনৈতিক মাঠে স্নায়ু যুদ্ধে'র আবহাওয়া বিরাজ করছে।

১২ মার্চের বিএনপি'র কর্মসূচি'কে প্রতিহত করতে সরকারী দল আওয়ামী লীগ মাঠ পর্যায়ে উপস্থিত থাকার হুমকী দিয়েছে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ মাঠে মুখোমুখি হবার জন্য "ডেট" দিয়ে অপেক্ষা করছে। আইনশৃঙ্খলা, দ্রব্যমূল্য, অর্থনীতি, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সরকারের পরিষ্কার ব্যর্থতা জনমনে সরকার বিরোধী একটা অনুভুতি'র জন্ম আগেই দিয়েছে। তার সাথে যোগ হয়েছে তিস্তা-গঙ্গা চুক্তি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের সাথে সম্পর্ক অবনতি সহ সীমান্তে হত্যা সংক্রান্ত ঘটনার মত আন্তর্জাতিক সমস্যা। যা সরকারকে শুধু অদক্ষই নয় বরং গণবিরোধী কার্যক্রমের দায়ে অভিযুক্ত করছে।

বাস্তবতা যখন এমন, তখন বাংলাদেশের ভার্চুয়াল জগতের অবস্থা আরো ভয়াবহ। তোলপাড় চলছে এখানে! সরকারের পক্ষে কথা বলার মত নেটিজেন খুজে পাওয়া যাচ্ছে না! উল্লেখযোগ্য ব্লগার বলে যাদের পরিচিতি রয়েছে তাদের প্রত্যেকেই সরকারের কঠোর সমালোচনায় ব্যাস্ত। আর উল্লেখযোগ্যদের মাঝে ২-১ জনের সরকারের বক্তব্য সমর্থিত কিছু পোস্ট ব্যাপক জনরোষের কবলে পড়েছে। আভ্যন্তরিন সরকার ও রাজনীতি'র মাঠে'র ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র দোষেও সরকার সমালোচনার জোয়ার বইছে! আর ভারতের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরো খারাপ! সম্প্রতি নেটিজেনরা সরকারের উপর আস্থা হারিয়ে নিজেরাই ব্যাপক সংখ্যায়, হ্যাক্টিভিস্ট রূপে ভারতীয় ভার্চুয়াল জগতে প্রতিবাদ জানিয়ে এসেছে। যা দুই দেশের প্রধান মিডিয়ায় আলোচিত হয়েছে।

ইন্টারনেট জগতের এই সরকার অমান্য করার ঢেউ বাস্তব জগতে পড়বে না মনে করা অবান্তর! সরকারী নজরদারীর বাইরে ফেসবুক,কমিউনিটি ব্লগের মত গণমাধ্যমে ক্ষ্যাপা মানুষের সংখ্যা বেশ উল্লেখযোগ্য! এবং প্রধান দৈনিকগুলোর অনলাইন ভার্সনেও উত্তাপ টের পাওয়া যায়। এবার বিষয়টাকে একটু বিশ্লেষন করে দেখতে চাই। কি হচ্ছে? এবং কেন হচ্ছে? এই দুটো বিষয় বিশ্লেষন করবো গেম থিউরী'র প্রয়োগসহ "পলিটিক্যাল রিয়েলিস্ট" ভিউ থেকে। সরকারের ব্যার্থতা নিয়ে যেই অভিযোগগুলো উঠছে, তার মাঝে বাণিজ্য হ্রাস, শেয়ার বাজার ও নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়গুলোর মত মৌলিক সমস্যা বাদে অন্যগুলো সাধারন সমস্যা। যেমন দূর্নীতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সড়ক দুর্ঘটনা এবং সীমান্তে হত্যা এসব বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা, যা বহুদিন থেকেই প্রতিটি সরকার মোকাবেলা করে আসছে এবং আগামী আরো অন্তত ১২ বছর এসব থাকবে।

কিন্তু জনমনে এর প্রতিক্রিয়া হচ্ছে নজিরবিহীন! একটি কারন হলো, সদ্য গঠিত হওয়া ভার্চুয়াল বাংলাদেশে এসবের প্রতিক্রিয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ! যা জনসাধারনে প্রভাব ফেলছে। আওয়ামী লীগই প্রথম সরকার যার আমলে দেশের নেটিজেনরা উল্লেখযোগ্য পরিমান লাভ করেছে। তাই সচেতনা বৃদ্ধি'র সাথে সাথে প্রতিক্রিয়া তীব্র হচ্ছে। কিন্তু দেশের জনমতের উপর নেটিজেনদের এই প্রভাব কি আমাদের দেশের জন্য ভাল কিছু বয়ে আনবে? অবশ্যই ভাল ফল হবে। কারন সমস্যা সমাধানে প্রথম ধাপ হলো সমস্যা সম্পর্কে সচেতন হওয়া।

আজ জনগণ যেহেতু জেনে গেছে যে সমস্যা কোথায়, আগামীতে এর সমাধানে করনীয় সম্পর্কে জনগণের দাবী প্রতিষ্ঠা হবে এবং একসময় সেটা সমাধান হবে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পরিস্থিতিটা স্বাভাবিক নয়। একটু অন্যরকম। এখানে লাভের গুড় খেয়ে যায় অন্যকেউ! মনে রাখতে হবে, বর্তমানে জামাতে ইসলামীর মাথা সব রাজাকারি করার অপরাধের বিচারের অপেক্ষায়। এই মুহুর্তে তাদের কার্যক্রম এবং আচরনের পেছনে কারন সমুহ খুঁজে না দেখলে আমাদের দেশের ক্ষতি হবার সম্ভাবনা ব্যাপক।

আমি ব্যক্তিগতভাবে যা দেখি, জামাত যখন থেকে রাজনীতি করছে তখনও বর্তমানের সমস্যাগুলো বিদ্যমান ছিল। কিন্তু এসব নিয়ে কোনদিনই তাদের রা করতে দেখা যায় নাই। কিন্তু আজ একই সমস্যাগুলো নিয়ে দেখবেন তাদের চুড়ান্ত লম্ফঝম্ফ! ঠিকাছে, যেসব নিয়ে লাফাচ্ছে সেসবের অস্তিত্ব রয়েছে, কিন্তু যেকোন কিছুই অতিরিক্ত স্বাভাবিক না! আজকে আমরা যদি সরকার বিরোধীতায় আমরা সবাই একসাথে মত্ত হই তবে সরকার ব্যার্থ হবে, এমনকি পতনও হতে পারে। এবং যেহেতু বিএনপি ছাড়া অন্যকোন বিকল্প দল নেই এবং রাজাকার সম্পর্কে বিএনপি'র অবস্থান সন্দেহজনক তাই এই সরকারের পতনের সাথে সাথে রাজাকার বিচারের জন্য গঠিত আদালতেরও পতন হবে এটুকু বলা যায়! হয়তো জনগণের বিরোধীতার মুখে বিচার চলতেও পারে কিন্তু সেই বিচারের ফলাফল সম্পর্কে বিএনপি যতদিন না নিজেদের কমিটমেন্ট প্রকাশ করছে ততদিন কিছু বলা যায় না! সার্বিকভাবে দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের অবস্থান যতই দূর্বল হবে, রাজাকারদের অবস্থান ততই শক্ত হচ্ছে অথবা শক্ত হবার মত সম্ভাবনা তৈরী হচ্ছে! একজন দেশপ্রেমিক হিসেবে এই ফলাফলটাই আমার দুশ্চিন্তার কারন। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি এবং চাই যে, বর্তমানে এবং ভবিষ্যতের বাংলাদেশের সমৃদ্ধি এবং উন্নয়ন নিশ্চিতের জন্য রাজাকার বিচারের মাধ্যমে এই মুক্তিযুদ্ধ ও ধর্ম সংশ্লিষ্ট জাতীয় বিভক্তির রাজনীতি'র ইতি ঘটুক।

এবং এর জন্য প্রয়োজন বিচার নিশ্চিত করা। এবং বিচার নিশ্চিতের জন্য প্রয়োজন সরকারকে সুযোগ দেয়া। আমি জানি দ্রব্যমূল্য, শেয়ার বাজার, ট্রাফিক জ্যাম সহ সরকারের সার্বিক ব্যার্থতার কারনে নানাবিধ সমস্যায় দেশের মানুষ আক্রান্ত কিন্তু তবুও আমাদের উচিৎ রাজাকার বিচারে বিএনপি'র কাছ থেকে কোন পরিষ্কার বক্তব্য এবং ওয়াদা পাওয়ার আগ পর্যন্ত সরকারকে সমর্থন করা ও দ্রুত বিচার শেষ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করা। তাই সবার কাছে অনুরোধ, সরকার বিরোধীতায় যখনই আপনার মেধা ব্যাবহার করছেন একটু খেয়াল রাখবেন, আপনার মেধা রাজাকারদের জন্য সুফল বয়ে আনছে কি? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.