আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সীমান্তে হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে ॥ দিল্লীতে সাহারা

দুই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলন ॥ বঙ্গবন্ধুর দুই খুনীকে খুঁজে বের করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে : চিদম্বরম স্টাফ রিপোর্টার ॥ দিল্লীতে অনুষ্ঠিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে সীমান্তে হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে ভারতের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। ভারত অতীতের ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেছে, বিএসএফকে সীমান্তে হত্যাকা- বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে। শুক্রবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লীতে দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের ফিরতি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দিল্লীর হোটেল তাজমহলে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, বাংলাদেশী এক যুবককে নির্যাতনের জন্য ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর আট সদস্যের বিচার সামরিক আদালতে হচ্ছে।

এ বৈঠকে বাংলাদেশ পক্ষে নেতৃত্ব দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন আর ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দেন সেদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম। বৈঠকের পর দুই মন্ত্রী সাংবাদিকদের কাছে আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হত্যাকাণ্ড অনেক কমেছে বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে (বিএসএফ) সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে।

তবে তিনি উল্লেখ করেন গত আট মাসে গুলিবিনিময়ের ঘটনা অনেক কমে এসেছে। এ সময়ে মাত্র তিনটি ঘটনা ঘটেছে। পি চিদম্বরম অতীতের ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তবে যে পরিপ্রেক্ষিতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে তার বিবরণ তুলে ধরেন তিনি। এ সময় বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেন, সীমান্তে হত্যা ‘শূন্যে’ নামিয়ে আনতে আমরা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি।

জানা যায়, মন্ত্রী পর্যায়ের ওই বৈঠকে সীমান্তে হত্যাকা- ও গুলিবিনিময়সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়েও আলোচনা করা হয়। আলোচনা হয় দুই দেশের মধ্যে বন্দী বিনিময় চুক্তি নিয়ে। এ সময় ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ভারতে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর দুই হত্যাকারীকে খুঁজে বের করার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের অনুরোধের প্রেক্ষিতেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দুই খুনীকে খুঁজে পাওয়া গেলে ভারত সরকার সঙ্গে সঙ্গে তাদের বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তর করবে।

ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দী বিনিময় চুক্তিটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আসামি প্রত্যর্পণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার আগেই ওই দুই গ্রেফতার হলে তাদের বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরের জন্য একটি আইনী পথ ঠিকই বের করা হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। অপরাধীদের হস্তান্তরের ব্যাপারে এটি কোন সমস্যাই নয়। গত বছর জুলাইয়ে চিদম্বরমের ঢাকা সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা সই হওয়ার পর এটাই ছিল দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের প্রথম বৈঠক। গত বছরের বৈঠকেও বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়ে দুই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনা হয়েছিল।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত দুই আসামি বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান করছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে ভারতের বিরুদ্ধে কর্মকাণ্ড চালানোর প্রশ্নই আসে না। আর তা আমরা সহ্যই করব না। কারণ সন্ত্রাসীরা উভয় দেশেরই শত্রু। তবে ভারত থেকে বার বার প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও সীমান্তে হত্যাকা- বন্ধ হয়নি।

বরং সম্প্রতি সময়ে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এরই পেক্ষাপটে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরকালে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে নিরস্ত্র বাংলাদেশীদের হত্যাকা-ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সীমান্তে হত্যাকা- নিয়ে তারা ভারতের কাছে তাদের উদ্বেগের বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরার কথা বলেন। বাংলাদেশ সফররত ইইউ প্রতিনিধি দলের নেতা জ্যা ল্যামাবার্ট সাংবাদিকেদের বলেন, ভারতীয় সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যাকাণ্ড ও কাঁটাতারের বেড়া সম্পর্কে যে তথ্য পেয়েছি তাতে আমরা মর্মাহত। সীমান্ত নিয়ে আমাদের উদ্বেগের বিষয়টি ভারতের কাছে তুলে ধরব।

ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এমন সময় সীমান্তে হত্যাকাণ্ড কমিয়ে আনার কথা বললেন যখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন। জানা গেছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহার খাতুন ও ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্ব^রমের সঙ্গে যে বৈঠক হয়েছে সেখানে সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা বিষয়টি ছিল মূল আলোচনার বিষয়। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে বন্দী বিনিময় চুক্তি ও বাংলাদেশী ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভারতের বিরুদ্ধে কর্মকা- চালানোর বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসে। বৈঠকে দুই দেশের সীমান্তে অবৈধ কর্মকা- ও অপরাধ কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে এবং সীমান্তবর্তী এলাকায় শান্তি ও সৌহার্দ বজায় রাখার জন্য সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনায় দ্বিপক্ষীয় দায়িত্বের ওপর জোর দেয়া হয়। সীমান্তে এক বাংলাদেশীকে বিএসএফ সদস্যদের নির্যাতনের ভিডিওচিত্র গত মাসে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশের পর তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়।

এ ঘটনায় বিএসএফের আট জওয়ানকে বরখাস্ত করার পাশাপাশি এ ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দেয় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। যদিও ভারতীয় পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গত কয়েক মাসে বিএসএফ সদস্যদের ওপর বেশ কয়েকবার হামলা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সীমান্তে হত্যাকা- শূন্যে নামিয়ে আনার কথা বললেও কি অবস্থার প্রেক্ষিতে এ হত্যাকা- ঘটেছে তার একটি বিবরণ তুলে ধরেন। তাদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, চোরাকারবারীদের হামলায় বিএসএফের সদস্যরাও হামলার শিকার হচ্ছে। সম্প্রতি এক বিএসএফ কনস্টেবল নিহত হওয়ার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে।

তবে তাদের পক্ষ থেকে বলার চেষ্টা করা হয়, আধা সামরিক সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে সহনশীল আচরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর ফলে সম্প্রতি মাসগুলোতে বিএসএফ সদস্যদের গুলিবর্ষণের ঘটনা এবং নিষ্ঠুরতা অনেক কমে গেছে Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.