আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ওরা প্রথমে এসেছিল...!

মুক্ত দেশের মুক্ত মানুষ! শিরোনামে যা দেয়া আছে তা কোন কবিতার লাইন নয়। এটা মার্টিন নেমলারের একটি বিখ্যাত উক্তির খণ্ডিত অংশ মাত্র। হিটলার যখন ক্ষমতার সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছানোর জন্য বিভিন্ন টার্গেট গ্রুপকে গণহারে হত্যা করছিল এখনকার মতই বুদ্ধিজীবীদের বড় অংশ ছিল একেবারেই নীরব ও নিস্তব্ধ। তাদের এই নীরব থাকাটা রাস্ট্রের জন্য যে অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হয়েছিল সেটা বুঝাতেই সম্ভবত উনি এই কথা গুলো বলেছিলেন। মজার ব্যাপার হল, জার্মান এই ধর্মযাজক জীবনের শুরুতে হিটলারের কমিউনিস্ট, ট্রেড-ইউনিয়নিস্ট, জিউস, এবং এমন কি ক্ষেত্র বিশেষে ক্যাথলিক হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে শুধু নিরবই ছিলেন না এটাকে উনি সাপোর্টও করেছিলেন।

হিটলার যখন রাস্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতা কুক্ষিগত করে ধর্মের উপর রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব চাপিয়ে দিল ঠিক তখন হিটলারের ব্যাপারে উনার মোহমুক্তি ঘটে এবং উনার নেতৃত্বে ধর্মযাজকদের একটি ছোট্ট গ্রুপ হিটলার এই কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করে। আসলে বিরোধিতা বলতে নাৎসি মুভমেন্টের ব্যাপারে উনি ঠিক আগের মত উৎসাহ বোধ করতেন না। এতটুকুই ছিল উনার অপরাধ। আর এই অপরাধে কারণেই নাৎসিরা উনাকে ধরে নিয়ে যায় এবং দীর্ঘ আট বছর বিভিন্ন কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে আটকে রাখে। যাই হোক, পরবর্তীতে উনার কথাগুলোকে কবিতার আকারে প্রকাশ করা হয় যদিও উনার কোটেড টেক্সটের ব্যাপারে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে।

তবে উনার সেই বিখ্যাত উক্তির কথাগুলো ছিল মোটামুটি এই রকম: ওরা প্রথমে যখন কমিউনিস্টদের ধরে নিয়ে যেতে এলো, আমি কোন কথা বলিনি, কারণ আমি কমিউনিস্ট নই। তারপর ওরা যখন ট্রেড ইউনিয়নের লোকগুলোকে ধরে নিয়ে গেল, আমি নীরব ছিলাম, কারণ আমি শ্রমিক নই। তারপর ওরা যখন ফিরে এলো ইহুদিদের ধরে নিয়ে যেতে, আমি তখনও চুপ করে ছিলাম, কারণ আমি ইহুদি নই। ওরা আবারও আসল ক্যাথলিকদের ধরে নিয়ে যেতে, আমি টু শব্দটিও উচ্চারণ করিনি, কারণ আমি ক্যাথলিক নই। শেষবার ওরা ফিরে এলো আমাকে ধরে নিয়ে যেতে, আমার পক্ষে কেউ কোন কথা বলল না, কারণ, কথা বলার মত তখন আর কেউ বেঁচে ছিল না।

অনেকদিন ধরেই একটি বিষয় লক্ষ্য করছি সরকারী বাহিনীর প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ সহায়তায় বিভিন্ন জায়গায় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে। অথচ দেশের অধিকাংশ মানুষ কেন যেন নির্বিকার। প্রতিবাদ বা প্রতিক্রিয়া বলতে যা কিছু দেখা যায় সেটা অনেকটা বিড়ালের মিউ মিউ আওয়াজ করার মতই। ভাবসাবে মনে হচ্ছে দেশের সিভিল সার্ভেন্ট এই পুলিশ বাহিনী সিভিলিয়ানদের জীবনের নিরাপত্তা না দিয়ে সরকার সমর্থিত একটি সন্ত্রাসী ছাত্র সংঘটনকে যে ওরা মদদ দিয়ে যাচ্ছে এতে আমাদের কারো মাথা ব্যথার যেন কোন কারণ নেই। কারণ, পুলিশ কিংবা পুলিশের সহায়তায় যাদেরকে হত্যা করা হচ্ছে সে তো আমি নই!!!! কিংবা সে তো আমার পরিবারের কেউ নয়!!! কিংবা নিদেনপক্ষে সে তো আর আমার মতবাদে বিশ্বাসী কোন ব্যক্তি নয়!!! কিন্তু সন্ত্রাসী হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে আমার কিংবা আমাদের এই যে নীরবতা তা কি সন্ত্রাসীদের এই সংঘবদ্ধ আক্রমণ থেকে শেষ রক্ষা করতে পারবে কি আমাকে!!?! স্বৈরশাসক হয়ে উঠা রাস্ট্রযন্ত্রের অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে আমার এই নীরব দর্শক হয়ে যাওয়াটা কি দেশ ও সমাজের জন্য অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে না? দেশের এই পরিস্থিতিতে আমার কেন জানি বার বার মার্টিন নেমলারের কথাগুলো মনে পড়ছে।

ওরা আসবে এবং বার বার ফিরে আসবে এক এক করে ধরে নিয়ে যেতে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.