আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেয়ের লাশ ছাড়া ফিরবেন না রহিমা

২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসের পর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন শারমিন আক্তার (১৮)। কাজ করতেন চতুর্থ তলায় ফ্যান্টম অ্যাপারেলস লিমিটেডে অপারেটর পদে।
খবর পেয়ে গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ থেকে ছুটে আসেন বাবা-মা আর ছোট বোন নাছিমা বেগম। কিন্তু বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে না পেয়ে জীবিত পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়ে এখন শুধু লাশ খুঁজে ফিরছেন তারা।
রানা প্লাজা ধসে পরার পর ধংসস্তূপ থেকে অধর চন্দ্র স্কুল, সেখান থেকে হাসপাতাল, আবার ধংসস্তূপে ফিরে আসা।

সবখানেই পাগলের মতো শারমিনকে খুঁজে ফিরছেন ছোট বোন নাছিমা বেগম। পাওয়া যায়নি।
তারপরও মা রহিমা খাতুন মেয়ের লাশ ছাড়া বাড়ি ফিরতে নারাজ।
রানা প্লাজা ধসে পড়ার পঞ্চদশ দিনেও ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হচ্ছে একের পর এক লাশ। সাম্প্রতিক বিশ্বের ‘ভয়াবহতম’ এই ভবন ধসের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০৩ জনে।

মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে বুধবার বেলা সোয়া ১২টা পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছে ৫১টি লাশ।
কান্নাজড়িত কন্ঠে নাছিমা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শারমিন আমার বড় বোন। সে আমাকে অনেক আদর করতো। রানা প্লাজা ধসে পড়ার পর থেকেই বোনকে খুঁজছি। ”
তার ধারণা ধংসস্তূপের নিচে সে চাপা পড়ে আছে।


“১৫ দিন ধরে আমরা স্কুল মাঠে রয়েছি। লাশ আসার খবর পেলেই দৌড়ে যাই, পচে গলে যাওয়া লাশের মধ্যে বোনকে খুঁজেছি। ”
নাছিমা জানান, যেদিন বোন কাজে গিয়েছিল সেদিন তার সঙ্গে মোবাইল ফোন, গলায় স্বর্ণের চেইন, কানে স্বর্ণের দুল, পায়ে রুপার নুপুর ছিল। তা দেখেই লাশ সনাক্তের চেষ্টা করছেন তারা।
বাবা ইছামুদ্দিন বাড়ি থেকে ২০ হাজার টাকায় একটি গরু বিক্রি করে টাকা নিয়ে এসেছেন।

সেই টাকায় চলছে ঢাকায় থাকার প্রতিদিনের খরচ। সেই টাকাও শেষ।  
নাছিমা বলেন, “এখন টাকা ফুরিয়ে গেছে। তাই সোমবার বাবা আবারো দেশে গেছে কিছু বিক্রি করে টাকা আনতে। আমরা শারমিনের লাশ না নিয়ে যাব না।


শারমিনের চার বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। তার নাম মিজুম। থাকে টাঙ্গাইলে দাদির কাছে। তার স্বামী সুজন মিয়া একটি হোটেলে কাজ করতেন। সেও এখন অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়া।


১০মাস আগে শারমিন ওই কারখানায় ৫ হাজার টাকা মাসিক বেতনে কাজ নেয়। অভারটাইম করে মাসে সর্বোচ্চ আট হাজার টাকা বেতন পেত। সে টাকা থেকে নিজে চলতো, স্বামীর চিকিৎসা খরচ ও বাবা-মাকে কিছু পাঠাতো।
শিশু মিজুম এখনও জানে না তার মা কোথায়।
শারমিনের মা রহিমা খাতুন কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার মেয়েকে জীবিত পাব না জানি, কিন্তু তার লাশ না নিয়ে এখান থেকে আমি নড়ব না।

এতে যদি আমার এখানেও মৃতু হয় তাতে কোন দুঃখ নেই। ”
শারমিন আক্তারের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ থানার বৈরাঠী গ্রামে। সে সাভারের চাপাইনের তালতলা এলাকার একটি বাড়িতে ভাড়া থেকে ওই কারখানায় কাজ করতো।

সোর্স: http://bangla.bdnews24.com     দেখা হয়েছে ১৪ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.