আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে উদ্বেগ

বাংলাদেশের পোশাকশ্রমিকদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা বিষয়ে ‘নিউইয়র্ক টাইমস’-এর এক প্রতিবেদনে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। দৈনিকটির গতকাল মঙ্গলবারের সংস্করণে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে কারখানা পরিদর্শনে সরকারি সক্ষমতার অভাব, মালিকপক্ষের অবহেলা ও পরিদর্শনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশল সংস্থাগুলোর ভূমিকা আলোচিত হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, রানা প্লাজা ধসে এক হাজারের বেশি শ্রমিক প্রাণ হারানোর দুই মাস পর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েটের) একটি দল ঢাকার আল-হামরা গার্মেন্টস লিমিটেডের একটি কারখানা পরিদর্শনে যায়। গত জুন মাসের মাঝামাঝি সম্পাদিত পরিদর্শনে বুয়েট দলের প্রতিনিধিরা দেখেন, আটতলা কারখানাটির ভিত্তি খুবই দুর্বল ও অপ্রতুল। আবার সেটির ওপরের তলাগুলো যেসব বিম ও থামের ওপরে দাঁড়িয়ে আছে, সেগুলোতেও ফাটল ধরেছে।

তবুও এক হাজারের বেশি শ্রমিকের ওই কারখানা চালু রাখা হয়েছিল।
‘নিউইয়র্ক টাইমস’ বলছে, পলমল গ্রুপের এ কারখানাটিসহ আরও ২২টি কারখানা থেকে ওয়ালমার্ট ও গ্যাপের মতো বহুজাতিক খুচরা কোম্পানিগুলো পোশাক তৈরি করিয়ে নেয়।
বুয়েটের প্রতিনিধিদলটির দুজন সদস্যই বিশ্ববিদ্যালয়টির অধ্যাপক। তাঁরা তাঁদের প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলেছিলেন, ‘কারখানাটির ভবনের দুরবস্থা বিবেচনা করে আমরা ভবনটি বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছিলাম। ’ কিন্তু গত শনিবারও ওই কারখানা চালু ছিল বলে দাবি করেছে ‘নিউইয়র্ক টাইমস’।


কারখানার ব্যবস্থাপক শফিউল আজম চৌধুরী শনিবার বিকেলে জানান, ‘কারখানার কোনো সমস্যা নেই। ’ তিনি বলেন, আরও দুটি প্রকৌশল সংস্থা কারখানার সংস্কারকাজ করছে।
গত শনিবারও ওই কারখানাটি খেলা ছিল। সেদিন সকালে শফিউল আজম চৌধুরী বলেছিলেন, কারখানায় কোনো সমস্যা নেই বলেই সেটি খোলা রাখা হয়েছে। তবে পরের দিন কর্তৃপক্ষ কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করে এবং ‘নিউইয়র্ক টাইমস’-এর প্রতিবেদকদের ফোন করে বিষয়টি অভিহিত করেন।

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, তাঁরা আগে পরিদর্শনকারী সংস্থার প্রতিবেদন হাতে পাননি। তবে প্রতিবেদন বুঝে পাওয়ার পর পরামর্শ অনুযায়ী কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছেন।
শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ কর্মসংস্থান নিশ্চিতের জন্য বিভিন্ন সংগঠন ও গোষ্ঠী দেশের পাঁচ হাজারেরও বেশি পোশাক কারখানা পরিদর্শনের দাবি জানিয়ে আসছে। দেশটির শ্রম মন্ত্রণালয় ছাড়াও বণিকদের একটি সংগঠন ও বুয়েটের কয়েকটি দল পরিদর্শনের কাজ করছে। এ ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন ব্র্যান্ড নিজেদের ব্যবস্থাপনায় পরিদর্শনের কাজ শুরু করেছে।

তবে এসবের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।
সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, বাংলাদেশের কোনো কর্তৃপক্ষই জানে না, দেশটিতে মোট কারখানার সংখ্যা কত এবং এসব কারখানা কোথায় অবস্থিত। কারখানার শ্রমিক সংখ্যা, লাভ-লোকসান, আয়-ব্যয়, বাণিজ্যের প্রকৃতি, এর সঙ্গে জড়িত শিল্পের সংখ্যা ও পরিধি, মালিকদের সম্পদের হিসাব ইত্যাদির কোনোটিই সরকারের কোনো কর্তৃপক্ষের হাতে নেই। সবকিছুর একটা আবছা আবছা ও ভাসা ভাসা হিসাব আছে।
‘নিউইয়র্ক টাইমস’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে এ ধরনের কতগুলো কারখানা চালু আছে, তা কোনো সরকারি কর্তৃপক্ষই ঠিক করে জানে না।

এগুলোর অবস্থানও অজানা। ...১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকে যেসব কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেগুলোর বেশির ভাগেরই কোনো স্থাপত্যচিত্র নেই। ’
ঢাকা শহরের বিভিন্ন ভবনের অবস্থা পরিদর্শনের দায়িত্ব রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক)। গত সপ্তাহে রাজউকের পরিচালক সংসদকে জানিয়েছিলেন, ঢাকায় প্রায় আট হাজার অবৈধ ভবন আছে এবং এগুলো অবিলম্বে অপসারণ বা সংস্কার করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, তাঁদের মূল দুর্বলতা হলো জনবলের অভাব।

শহরটির কয়েক লাখ ভবন পরিদর্শনের জন্য মাত্র ৪০ জন পরিদর্শক আছেন।
বুয়েটের দলটির প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ এমদাদুল ইসলাম জানান, পরিদর্শকদের সংখ্যা ২৪০-এ উন্নীত করার প্রস্তাব আছে। কিন্তু তাতেও এত বেশি ভবন পরিদর্শন করা অসম্ভব।
বুয়েটের ভবন পরিদর্শন বিশেষজ্ঞ আছেন ৩০ জন। তাঁরা ভবনের কাঠামো ও ভূমির অবস্থার ওপর বিশেষভাবে দক্ষ।

কিন্তু এসব অধ্যাপকের এ-জাতীয় কাজ করতে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদানের পাশাপাশি। অর্থাত্ দ্রুত কোনো কাজ করা তাঁদের পক্ষে অসম্ভব। পুরকৌশল বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিদর্শক দল এখন পর্যন্ত ১০০টির মতো ভবন পরিদর্শন করেছে। এসবের ৬৬টিতে পোশাক কারখানা আছে। তিনি বলেন, ‘ভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব মূলত সরকারের।

একটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আমাদের পক্ষে এত বেশি কাজ করা অসম্ভব। ’।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.