আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কুয়েতে মহিদুল হত্যা- ক্ষমাপত্রে স্বাক্ষর ওদের সন্তানদের দিকে চেয়েই ক্ষমা করেছি ।

‘সন্তান হিসেবে আমিও চেয়েছিলাম আমার বাবার হত্যাকারীদের ফাঁসি হবে। বাবা হারানোর কষ্ট আমি বুঝি। কিন্তু বাবাকে তো আর ফেরত পাবো না। হত্যাকারীদের দিকে তাকিয়ে নই, ওদের সন্তানদের দিকে তাকিয়েই ক্ষমা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি চাই না, আমার মতো আর কেউ পিতৃহারা হোক।

সে জন্যই শত কষ্ট বুকে ধারণ করে আজ খুনিদের ক্ষমা করে দিলাম। ’ আবেক আপ্লুত কণ্ঠে কথাগুলো বললেন কুয়েতে নিহত মহিদুলের একমাত্র মেয়ে রাজমিন। গতকাল বিকালে মহিদুল হত্যার দায়ে কুয়েতের আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন বাংলাদেশী- কুমিল্লার রমজান ও মুন্সীগঞ্জের ইকবাল ঢালি ও তার সহোদর হৃদয় ঢালীকে ২১ লাখ টাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা করে দিয়েছে নিহতের পরিবার। এ নিয়ে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও দুই পরিবারের উপস্থিতিতে একটি ক্ষমাপত্র স্বাক্ষর হয়। ক্ষমাপত্রে স্বাক্ষর করেছেন- নিহত মহিদুলের মেয়ে রাজমিন, নিহতের ভাই হাবিবুর রহমান, ভাই চান মিয়া ও রাজা মিয়া।

তবে আসামিদের দেয়া পুরো টাকা আপাতত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের যৌথ একাউন্টে জমা রাখা হয়। কুয়েতের আদালত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের ক্ষমা মঞ্জুর করার পরই টাকাগুলো মহিদুলের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এদিকে জটিলতা এখানেই শেষ নয়। নিহতের পরিবার খুনিদের ক্ষমার চুক্তিপত্রে সই করলেও আরেকটি জটিলতা রয়েই গেলো। কারণ মামলার মূল বাদী মহিদুলের ২য় স্ত্রী জাহানারা বেগম।

কুয়েতে থাকাকালীন মহিদুর ওখানেই জাহানারাকে বিয়ে করেন। মহিদুল নিহত হওয়ার পর জাহানারা বেগম মামলার বাদী বলে জানা গেছে। সেক্ষেত্রে আইনি জটিলতা কোন বাধা হয়ে দাঁড়াবে কিনা এমন প্রশ্ন দেখা দিতে পারে। তবে মামলার বাদী হিসেবে নিজেকে উল্লেখ করে নিহত মহিদুলের ছোট ভাই বলেন, ভাইয়ের মৃত্যুর পর কুয়েত থেকে যত কাগজ বাংলাদেশে এসেছে সবই আমার নামে আসা। লাশও আমার নামে ঠিকানায় এসেছিল, আমি রিসিভ করেছি।

কই তখন তো কেউ এগিয়ে আসেনি। এদেশের মামলার বাদী আমি। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে খুনিদের ক্ষমা করা হয়েছে ঠিকই কিন্তু টাকা এদিক সেদিক হাতে গেলে আমার দেখার আছে। তিনি আরও বলেন, ১৪ বছর ধরে আমার ভাই কুয়েতে চাকরি করেছিল। এর আগে সে সৌদি আরবে ১০ বছর ছিল।

আমি কুয়েতে থাকায় ভাইকে সেখান থেকে কুয়েতে নিয়ে আসি। সে কুয়েতে একটি স্কুলের গাড়ি চালাতো। এরপর আমি ভাইকে রেখে বাংলাদেশে চলে আসি। ২০১০ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর ঐ তিন ঘাতক আমার ভাইকে হত্যা করে গাড়ি সহ আগুন ধরিয়ে দেয়। শুনেছি ঘাতকদের কাছে আমার ভাই ৪ লাখ টাকা পেতো।

পাওনা টাকার জন্য হয়তো তাকে খুন করা হয়েছে। এরপর ২০১১ সালের ২৬শে জানুয়ারি আমার ভাইয়ের লাশ বাংলাদেশে আসে। আমি লাশ রিসিভ করি। এরপর থেকে মামলা করা সহ সমস্ত কাজকর্ম আমিই পরিচালনা করে আসছি। শ্রম ও জনশক্তি মন্ত্রণালয় থেকে আসা সমস্ত কাগজপত্রে আমার সই রয়েছে।

সব ডকুমেন্ট আমার কাছে রয়েছে। তাই মামলার বাদী আমি নিজেই। তবে শুনেছি কুয়েতে মহিদুল আরেকটি বিয়ে করেছিল। সে ১৪ বছরে একটি টাকাও দেশে পাঠায়নি। ঐ কথিত স্ত্রীই হয়তো সমস্ত টাকা আত্মসাত করেছে।

এব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানা জানান, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে দুই পরিবারের মধ্যে একটি ক্ষমাপত্রে স্বাক্ষর হয়েছে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারকে ২১ লাখ টাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত এর আগে হয়। সে টাকা তারা জমা দেয়। টাকাগুলো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের যৌথ একাউন্টে রাখা হয়েছে। কুয়েতের আদালত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের ক্ষমা মঞ্জুর করার পরই নিহতের পরিবারের কাছে টাকা হস্তান্তর করা হবে।

ক্ষমাপত্র দ্রুত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। দ্বিতীয় স্ত্রী সম্পর্কে কথা হলে তিনি বলেন, সে সম্পর্কে কিছুই জানা যায়নি। এখন প্রশ্ন উঠেছে মহিদুলের সন্তান ও ভাইদের পক্ষ থেকে দণ্ডিতদের ক্ষমা সংক্রান্ত চুক্তি হলেও তা পুরোপুরি ফলদায়ক হবে কিনা। কারণ মামলার বাদী মহিদুলের দ্বিতীয় স্ত্রী আনোয়ারা বেগম একই ক্ষমা সংক্রান্ত পুরো বিষয়টির বাইরে রয়ে গেছেন। শেষ পর্যন্ত মামলার মূল বাদী বেঁকে গেলে বিষয়টা কোনদিকে গড়াবে সে প্রশ্নই দোলা খাচ্ছে সব মহলে।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে ক্ষমাচুক্তি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুশফিকুর রহমান হান্নান, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুন্সীগঞ্জের হৃদয় ঢালী ও ইকবাল ঢালীর পক্ষে পিতা নুরু ঢালী, চাচা সিরাজুল, জালাল, মামা আকতার হোসেন, ভগ্নিপতি আবুল শিকদার এবং কুমিল্লার আসামি রমজানের পক্ষে ছিলেন বাবা রবিউল, মা মনোয়ারা, মামা আশরাফ প্রমুখ। মানবজমিন থেকে শেয়ার করা। লিনক Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.