আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডায়াবেটিসে অন্ধত্ব প্রতিরোধযোগ্য

গাইবান্ধার পলাশবাড়ি উপজেলার আব্দুল জলিল [৫৫] ঢাকার শান্তিনগর এলাকায় থাকেন। ছয় জনের সংসার টানতে হয় রিক্সা চালিয়ে। সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। মড়ার ওপর খরার ঘায়ের মত দেখা দিয়েছে ডায়াবেটিস। প্রায় দশ বছর ধরে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।

চিকি?সক ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ দিলেও টাকা অভাবে নিয়মিত সেবন করতে পারেন না। কোনদিন আয় বেশি হলে সেদিন ওষুধ কিনে সেবন করেন। রক্তের সুগার পরীক্ষাও করা হয় না নিয়মিত। বছর দুয়েক ধরে তার চোখে সমস্যা দেখা দেয়। চোখের সামনে কালো কালো দাগ ঘোরাফিরা করে, চোখে আবছা দেখেন, কয়েক হাত দুরের জিনিসও দেখেন না।

এজন্য বেশ কয়েকবার এক্সিডেন্টও করেন। ভাগ্যের জোরে যাত্রীসহ বেঁচে যান। এখন আগের মত রিক্সা টানতে পারেন না। প্রতিদিন দোয়া দরুদ পড়ে বাসা থেকে বের হন। চিকি?সকরা পরীক্ষা করে তাকে জানায় ডায়াবেটিসের কারণে তার চোখে ছানি পড়েছে ও রেটিনা নামে চোখের অংশে হাল্কা সমস্যা দেখা দিয়েছে।

চিকি?সকরা আরোও জানিয়েছেন এ রোগ নির্নয়ে দেরি হলে রেটিনার সমস্যা আরোও জটিল আকার ধারণ করত এমনকি তিনি অন্ধ হতেন। ওই হাসপাতালে চোখে ছানি অপারেশনের পর এখন আব্দুল জলিল ভালো দেখতে পাচ্ছেন। চিকি?সকের শিখিয়ে দেয়া মত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন করছেন। এখন তিনি ভালো আছেন। ডায়াবেটিস চোখের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।

ডায়াবেটিস আক্রন্তরা ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি, ছানি পড়া, গ্লোকোমায় আক্রান্ত হয়ে অন্ধ হতে পারেন। গবেষণায় দেখা গেছে শুধু ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির কারণে প্রায় ৪ কোটি লোক চিরকালীন অন্ধ হয়ে যায়। মোট ডায়াবেটিস আক্রান্তের প্রায় ৬০ শতাংশ রেটিনার সমস্যায় আক্রান্ত। এছাড়া গ্লোকোমা ও ছানি পড়ার জন্য আরোও কয়েক লাখ লোক অন্ধত্ব বরণ করেন। বাংলাদেশে এ ধরণের সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও বিশেষজ্ঞদের মতে অন্ধত্বের প্রধান কারণগুলোর একটি কিন্তু ডায়াবেটিস।

অথচ শুধু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অন্ধত্ব সহজেই প্রতিরোধ করা যায়। কিন্তু অজ্ঞতা ও অবহেলার কারণে অন্ধত্বের নির্মম পরিনতির শিকার হতে হয়। ছানি জনিত কারণে অন্ধত্ব ছোটখাটো অপারেশনের মাধ্যমে ভালো করা গেলেও ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির কারণে চিরতরে অন্ধ হতে হয়। চিকি?সা করালেও খুব এটা লাভ হয় না। তবে এ রোগের শুরুতে নির্ণয় করে চিকি?সা শুরু করলে অন্ধত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি মেলে।

চোখের গুরুত্বপূর্ণ অংশ রেটিনা। এটা একটা সংবেদনশীল পর্র্দা যা চক্ষু গোলকের ভেতরের দিকে থাকে, যার উপর আমরা যা দেখি তার ছবি প্রতিফলিত হয়। অতঃপর তা বিভিন্ন নিউরো কেমিকেল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মুহূতের্ মস্তিষ্কে পৌঁছে এবং আমরা ছবি দেখি। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে রেটিনায় সুক্ষ রক্তনালীগুলো বন্ধ হয়ে আসে। এতে একরকম রক্তশূন্যতা অথবা অক্সিজেন স¡ল্পতা দেখা দেয়।

এর ফলে কেন্দ্রীয় রেটিনাতে পানি ও তৈল জাতীয় পদার্র্থ জমে ফুলে যায় অথবা রেটিনার বিভিন্ন স্থানে নতুন রক্তনালীর সৃষ্টি হয়, রেটিনায় অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ানোর জন্য। এসব রক্তনালী স¡াভাবিক রক্তনালীর মত পরিপক্ক হয় না। এসব নতুন অপরিপক্ক রক্তনালী খুব সহজেই ভঙ্গুর হয়। এতে করে চোখের ভেতর রক্তক্ষরণ হয় ফলে দৃষ্টিশক্তি একেবারেই চলে যায়। তখন কিছুই করার থাকে না।

তবে রোগের শুরুতে চিকি?সা শুরু করতে পারলে দৃষ্টিশক্তি ধরে রাখা সম্ভব। আবার অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে চোখের লেন্স অস্বচ্ছ হয়ে যায়। এটাকে বলে ছানি পড়া। এর কারণেও দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। দীর্ঘদিনের ছানির কারণে পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যান অনেকেই।

অথচ মাত্র ২০-৩০ মিনিটের ছোট একটি অপারেশন পারে এ অন্ধত্ব দুর করতে। ডায়াবেটিসের কারণে চোখের চাপ বেড়ে যাওয়ায় দেখা দেয় গ্লোকোমা। এটিও রেটিনায় সমস্যা করে চিরতরে অন্ধ করে দিতে পারে। ডায়াবেটিসের কারণে অন্ধত্ব বরণ করতে হয় এ সত্যটি এখনও দেশের বেশিরভাগ মানুষই জানেন না। অথচ এ অন্ধত্ব প্রতিরোধযোগ্য।

শুধু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের দ্বারা অন্ধত্ব প্রতিরোধ করা যায়। চিকি?সকের পরামর্শমত ওষুধ সেবন, নিয়মিত ব্যায়াম ও নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বছরে দু’বার চোখ পরীক্ষা করান। একটু সচেতন হলে দেশ মুক্তি পাবে অন্ধত্বের অভিশাপ থেকে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।