আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সীমান্তে বিচারবহির্ভূত হত্যা ব্যাপার না!

গতমাসে কমপক্ষে ৪জন বাংলাদেশী সীমান্তে খুন হলেন বিএসএফ-এর গুলিতে, তারপর ২দিন আগে একটি ভিডিওতে দেখা গেল ঘুষ না দেবার অপরাধে কিভাবে একজনকে অত্যাচার করল বিএসএফ। অথচ আজ ভোরেই আবার মারা পড়লো আরেকজন। প্রথম ঘটনাটি আমাদের বিজয় দিবস ও তার পরদিনের, বাংলাদেশ ২ দিন পর তথাকথিত আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ করলেও ভারত শুধু দুঃখ প্রকাশ করে এবং বলে তারা তদন্ত করবে। কি করলো আমরা জানিনা, আমাদের সরকার বোধকরি জানতে চায়নি। “এরকম তো আগেও ঘটেছে, এখনো ঘটছে এবং ভবিষ্যতেও ঘটবে।

আমাদের তো আরো কাজ-কর্ম আছে,” শনিবার বলেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী। “সরকার এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন নয়। ” এ লজ্জার। ভীষন লজ্জার যে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা বিনাবিচারে এদেশের মানুষদের খুন করার পরেও (মরনাস্ত্র ব্যবহার না করার প্রতিশ্রুতি ভারতই দিয়েছিল আগে) আমাদের সরকার এরকম ভাবলেশহীন থাকতে পারছে। ডিসেম্বরের ঘটনায় ভারত ক্রসফায়ার থিওরি দিয়ে বাংলাদেশের মুখ বন্ধ করেছিল, বাংলাদেশী নির্যাতনের ঘটনায় তারা জড়িত ৮ বিএসএফ সদস্যকে বরখাস্ত করেছে আর সাথে তদন্ত চলছে।

আর আজকে সকালের ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কিছু জানা যায়নি। ভারতের অভিভাবকসুলভ আচরনের মূল কারন বাংলাদেশ সরকারের “নমনীয়তা” বা “ভয়”। আর ভারতের এই আচরনের পেছনের কারন অনেক পুরনো। বোধকরি বাংলাদেশের জন্মের সময় থেকেই তারা নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতার কথা বলে কর্তিত্ব করার চেষ্টা করেছে এবং আমাদের দূর্ভাগ্য তারা সফল হয়েছে। এদিকে ভারতীয় মাদক চোরাচালানকারীদের সাথে বাংলাদেশী বিজিবি সদস্যদের বন্দুকযুদ্ধে ১ ভারতীয় মারা যায় ২ দিন আগে।

এরপর চোরাচালানকারীরা ১ জন বিজিবি সদস্যকে তুলে নিয়ে যায়। গতরাতে তাকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। এত এত ঘটনা ঘটে, তারপর মিটিং হয়, আর কিভাবে যেন সব মিটমাট হয়ে যায় বুঝিনা। গরু ও অন্যান্য চোরাচালান, জঙ্গী অনুপ্রবেশ আর ফেন্সিডিলের ব্যবসা বন্ধ করতে কি তাহলে কেউ চায় না? নাকি আসলে দুই দেশ চায় মিলেমিশে এসব ব্যবসা চালিয়ে যেতে!! বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘গনতান্ত্রিক’ দেশ বাংলাদেশের ‘অকৃত্রিম বন্ধু’ বলে দাবী করে আসা ভারত সীমান্তে হত্যা আজ থেকে চালাচ্ছেনা । কোনো সরকারই শক্তভাবে এর প্রতিবাদ করেনি,আর ভারত চালিয়ে গেছে বাংলাদেশিদের নির্বিচারে হত্যা করা ।

কিশোরী ফেলানীকে গুলি করে কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রেখেছে তারা,কুপিয়েছে সীমান্তের বাংলাদেশীদের। নিরীহ বাংলাদেশীরা কখনো বিএসএফ নামক জন্তুদের ফুলের টোকাও দেয়নি,অথচ বিএসএফ বারবার আক্রান্ত হবার মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাঙালীদের হত্যা করেছে,চিরায়তভাবেই আশ্বাস দিয়েছিলো সীমান্তে হত্যা বন্ধের । অথচ কিছুদিন পার না হতেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে পাথর ছুঁড়ে হত্যা করেছে আমাদের নাগরিককে। ‘বন্ধুত্বে’র সাম্প্রতিক নিদর্শন গত ৯ ডিসেম্বর’2011 সীমান্তবর্তী জেলা মুর্শিদাবাদের কাহারপাড়াবর্তী সীমান্তের ফাঁড়িতে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার দুর্লভপুর ইউনিয়নের সতের রশিয়া গ্রামের সাইদুর রহমানের ছেলে হাবিবুর রহমান (২২) ওপর পৈশাচিক নির্যাতন চালিয়েছে। সুত্রে প্রকাশ , ‘গরু চোরাচালানকারী’ সন্দেহে মুর্শিদাবাদের কাহারপাড়াবর্তী সীমান্তের ফাঁড়িতে হাবিবুর রহমান কে ভারতীয় ‘বন্ধু’ বিএসএফ-এর সদস্যরা আটক করে।

ঘুষ প্রদানে রাজি না হওয়ায় তারা হাবিবুর রহমান কে প্রথমে পৈশাচিকভাবে হাত-পা বেঁধে, বিবস্ত্র করে, মারধর করে,তারপর যৌনাঙ্গে পেট্রল ঢেলে দিয়ে নির্যাতন করে, অতি আদিম কায়দায় পেঠানো হয়েছে তাকে । ভারতীয় ‘বন্ধুত্বে’র চরমপন্থী প্রেম নিবেদনের যথার্থ প্রকাশই বটে! আর সেই নির্যাতনের ভিডিও চিত্রটি এনডিটিভির কল্যাণে আমরা দেখলাম। হতবাক হয়ে যাই, ভেবে অবাক হই, বিএসএফের মতো একটি সুশৃংখল আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা কি করে এতো জঘন্য, জংলী-জানোয়ারের মতো আচরণ করতে পারলো। সভ্যতা-ভব্যতাকে বৃদ্ধ্বাঙ্গুলী দেখিয়ে কি করে বন্ধুসুলভ প্রতিবেশী দেশের নাগরিকের সঙ্গে এমন আচরণ করতে পারলো? ভারতের আধাসামরিক বাহিনীর মধ্যে মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন শৃংখলা কি একেবারেই লোপ পেয়েছে? বড় অবাক হই, এই কি আমাদের সভ্যতা, এই কি আমাদের মানবিকতা! বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘গনতান্ত্রিক’ দেশের এরুপ প্রেম নিবেদন নিজের দেশেই নতুন কিছু নয়। আমেরিকার সাথে বন্ধুত্ব হলে মানবতা লংঘনের সকল ভব্যতা ও সীমারেখা অতিক্রম করা শিখবে,এটা মেনে নিলেই আমাদের মত ছাপোষাদের চলে যায়।

এতদিন শুধু বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম আর ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমের বদৌলতে বাংলাদেশের নীরিহ লোকজনের ওপর বিএসএফের অত্যাচার, নির্যাতনের কথাই শুনে এবং পত্রিকার পাতায় পড়ে আসছিলাম। কখনো শুনিনি ভারতের উর্ধতন কোনো কর্তৃপক্ষ সে জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন বা বিএসএফের এই নির্যাতন বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। বরং এর বিপরীতে লোক দেখানো পতাকা বৈঠক ছাড়া তেমন কোনো ব্যবস্থার কথা কেউ কখনো শুনেছেন কিংবা দেখছেন বলে মনে হয় না। বিএসএফ ঘটনাটি ঘটায় গত ৯ ডিসেম্বর। কিন্তু আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী কিংবা কোনো গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে এর কোনো ইঙ্গিত বা খবর নেই।

আমাদের সাধারণ নীরিহ নাগরিকরা কি শুধু মার খেয়েই যাবে? এরা কি বার বার ফেলানী হয়েই সংবাদপত্রের শিরোনাম হবে? মানবিক মর্যাদা পাওয়ার অধিকার থেকেও কি বঞ্চিত হবে? এই সব নীরিহ জনগণকে দেখভাল করার জন্য কি কেউ নেই? সরকারের কি কোনো দায়-দায়িত্ব নেই? যতদূর জানা গেছে, এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের কূটনৈতিক তৎপরতা গ্রহণ করা হয়নি। কিন্তু কেন? আমাদের মাননীয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারনে আমাদের দেশে বসেই ভারতীয় সাবেক হাইকমিশনার পিনাকবাবু আমাদের টাউট ও বাটপার বলে দিতে পারেন,সামান্য এক সহকারী হাইকমিশনার এ.কে.গোস্বামী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কে নিয়ে কটুক্তিও করে চলতে পারেন,পাকিস্তানের হাইকমিশনার ধৃষ্টতা ও অবমাননা করতে পারেন মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ! মেরুদন্ডহীন আমরা ! আমাদের দেশের অভ্যন্তরীন রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার শিষ্টাচার বহির্ভুত মন্তব্য করে বসলেন মনমোহন সিং!ঘৃন্য জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক বানিয়ে দিলেন দেশের এক চতুর্থাংশ জনগোষ্ঠীকে!আমাদের মৌলবাদী বানিয়ে প্রচার করে চলেছেন বহির্বিশ্বে,চাকুরীক্ষেত্রে নিজেরা প্রবেশ করছেন আমাদের তাড়িয়ে ! এসো বন্ধু আমার ! বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে আসা প্রায় সকল সরকারই কিছু মাত্রায় ভারততোষন নীতি অবলম্বন করে এসেছেন। কিন্তু ‘উপদেষ্টা ভিত্তিক’ বর্তমান সরকার যেন পন করেছেন,ভারতের স্বার্থ রক্ষায় তারা অন্য যেকোনো সরকারের তুলনায় চরমভাবে উদার হবেন। আমাদের সমস্যাটি তখনই হয়,যখন ‘স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতীয়রা সাহায্য না করলে আমাদের জয়লাভ করা সম্ভব হতোনা’-বলে বলে মুখে ফেনা উঠিয়ে ফেলা ভদ্রলোকেরা নিজ দেশ বাংলাদেশের প্রতি ভারতের শিষ্টাচার বহির্ভুত আচরন দিন দিন সহ্য করে চলেছেন,মনে মনে ভারতের উদ্ধত আচরনকে জায়েজ করেও ফেলেছেন। আর এই সমস্যাটি চূড়ান্ত আকার ধারনা করে তখনই,যখন এইসব ব্যক্তিরা আমাদের ক্ষমতার কেন্দ্রে বিচরন করেন।

বন্ধুত্ব রক্ষার দায় কোনো একটি পক্ষের নয়। ভারতের প্রতি বন্ধুত্ব রক্ষা করার দায় শুধু আমাদেরই নয়। আন্তর্জাতিক,অর্থনৈতিক,রাজনৈতিক-সকল ক্ষেত্রেই ভারত আমাদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরন করে আসছে,আমাদের নাগরিকদের বিনা অপরাধে হত্যা করে চলেছে। আপনারা জনগনের ভোটে নির্বাচিত সরকার,’বন্ধুত্ব’ রক্ষা করতে গিয়ে ভারতের ‘প্রভুমূলক’ আচরন আমরা কেন সহ্য করবো ? তরুন প্রজন্মের একটি সদস্য হয়ে আমরা আমাদের দেশের সম্মানকে অন্য কোনো দেশের কাছে ভুলুন্ঠিত হতে দেখতে পারি না। ১৯৫২,১৯৬৯,১৯৭১,১৯৯০ এর বীরের জাতি বাঙালী কেন অন্যায়ভাবে নিপীড়নের কাছে নতজানু হয়ে থাকবে ? আমাদের অধিকার আছে,আপনাদের প্রশ্ন করার।

আমাদের অধিকার আছে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে মাথা উচুঁ করে থাকার। কেন আপনারা শক্তভাবে প্রতিবাদ করছেন না ? কেন প্রতিকার করছেন না ?কেন আপনাদের বিভিন্নভাবে ভারতের অন্যায় সব কাজ আর আবদার মেনে নিতে হয় ? আমরা কেন আমাদের দাবী তাদের কাছ থেকে আদায় করে নিতে পারিনা? কেন পারিনি ? বিএসএফএর সকল নির্বিচার হত্যাকন্ডের প্রতিকার করুন,না পারলে পদত্যাগ করুন,শুধু শুধু মন্ত্রীর পদ বাগিয়ে দেশের টাকা নষ্ট করে বিদেশে ঘুরলে চলবেনা। তরুন সমাজ কিন্তু এখন আর বিরোধীদলীয় নেত্রীর ‘ধর্মভিত্তিক দল’ ‘ভারতীয় জুজু’র ভয় অথবা ক্ষমতাসীন দলের নেত্রীদের ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের’ বাধাগ্রস্থের কথায় ভুলবেনা। তরুন সমাজ অনেক ,অনেক বেশি সচেতন। সময়ও খুব বেশি নেই,জনগনের অধিকার ও সম্মানরক্ষার দ্বায়িত্ব না নিলে ভোটেই তার ফল প্রতিফলিত হতে সময় নেবেনা।

(এই লেখাটা যখন লিখতে ছিলাম দুপুরে তখন চ্যানেল আই ও সময় টি.ভি দেখলাম বি.জি.বি এর গুলিতে ইন্ডিয়ান এক চোরাকারবারি মারা গেলো ; বি.এস.এফ তাই একজন বি.জি.বি সদস্যকে ধরে নিয়ে গেসে । তারপর শুনলাম পতাকা বৈঠক করে তাকে মুক্ত করা হচ্ছে । হায়রে শত শত নিরীহ বাংলাদেশি মারা যায় ; বি.এস.এফ এর কিছু হয় না আর আজ একটা চোরাকারবারিরে বি.জি.বি মারল ; তাকে পতাকা বৈঠক করে আনতে হয় । (সংগ্রহিত) ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.