আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমরা তিনজন ভীষন ব্যস্ত

সামুর কাছে চির কৃতজ্ঞ ...আমি অবাক নির্বাক হতবাক শতভাগ ... উফ আমরা আর কত দিকে ট্যাকল দিবো । মোটে তিন তিনটা মানুষ আর এতো গুলো রুম । সব গুলো রুম কভার করা কম ঝাক্কির ব্যাপার না । কোন দিকে যে যায় মাথা আওলা হওয়ার উপক্রম। আর প্রতিদিন সব ঘরে যাওয়াও সম্ভব না ।

একটা ঘরেই অনেক সময় চলে যায় । যেমন ধরা যাক উত্তরা, দাদার ঘর । আহ দাদার ঘর । দাদার ঘর ট্যাকেল দিতেই তো কত সময় কেটে যায় । আর দাদার ঘর ট্যাকেল দিতে কতই না মজা!! এই ঘরে কাজের কি শেষ আছে ।

বিস্কুটের কৌটা থেকে শুরু করে দাদার টাকা রাখার বাক্স, যন্ত্রপাতি রাখার বাক্স আরও কত কি । দাদার ঘরে কত উৎসাহ আর উদ্দীপনা নিয়েই না আমরা কাজ শুরু করি । আমাদের প্রথম টার্গেট দাদার চায়ের ফ্লাক্স ,বিস্কুটের টিন,আর স্যাকারিন ট্যাবলেট । গরম চা খাওয়া কি সোজা কথা ? কেন যে দাদা রিস্ক নিয়ে এতো গরম চা খান,বুঝিনা । আমরা অবশ্য প্রথমে ফ্লাক্সের ঢাকনা,কাপ বা আশে পাশে কাপের মতো যা থাকে তাতে গরম চা ঢেলে ঠাণ্ডা করতে দেই ।

সাথে স্যাকারিন ট্যাবলেট দিতে ভুলিনা । আহ! ঠাণ্ডা চায়ে বিস্কুট ভিজিয়ে খেতে কি যে মজা দাদা হয়তো জানেই না । না খেলে দাদা তা কোন দিনই বুঝবেন না । বুঝিয়ে বলতে হবে। চা খাওয়া শেষ হলে আমরা অন্য কাজে নেমে পড়ি ।

আমাদের সবচেয়ে মজার কাজ হল দাদার কার্টুন ভরা বিড়ি সিগারেট আর দিয়াশলাইয়ের কাঠি দিয়ে বৃষ্টি বৃষ্টি খেলা । সেগুলো হাতের মুঠোই নিয়ে উপরের দিকে ছুঁড়ে মারলে বৃষ্টির মতো ঝর ঝর করে নিচে পড়ে । আর আমরা লাফিয়ে লাফিয়ে সেই বৃষ্টি ধরি,খাই ঘুষি মারি । কত মজাই না লাগে আমাদের । দাদার পাঁচ ব্যাটারির টর্চ লাইট আর টেবিল ঘড়ি আমরা বেশী যত্ন করি ।

লাইটের পাঁচটা ব্যাটারি খুললেই যেন ফাঁকা হয়ে যায় । হাতে নিলে হালকা লাগে। দেখলে কষ্ট হয় দুঃখ পাই । সেই হালকা পাতলা ফাঁকা লাইটে আমরা কত কষ্ট করে বিভিন্ন কাগজ ঢুকিয়ে রাখি। মাঝে মাঝে দাদার টুপি রুমালও ঢুকিয়ে রাখি ।

ব্যাটারি গুলো নিয়ে ডিম ডিম খেলি । সেই ডিম এমন জায়গায় লুকিয়ে রাখি যে বিড়াল ( বিড়াল নাকি ডিম খেয়ে ফেলে ) কেন কোন মানুষও খুঁজে পায়না । আর টেবিল ঘড়ির সুইচ পেচিয়ে পেঁচিয়ে ছেড়ে দিলে দারুন গান বাজে । অবশ্য এই জিনিসটা বেশি করা হয়না কারন শব্দে বাড়ির অন্যরা ছুটে চলে আসে । তাতে আমাদের কাজের ব্যাঘাত ঘটে ।

আমরা নিরিবিলিতে কাজ করতে পছন্দ করি । আমাদের আরও একটি প্রিয় ঘর ক্যালিক্স, ফুপিদের ঘর । কেউ যখন রুমে থাকে না তখন আমরা কাজে নেমে পড়ি । ফুপিদের পড়ার টেবিল আর বুক সেলফে উঠলে কত যে বিচিত্র কাজ চোখে পড়ে । কত ধরনের বই ,বইয়ের মাঝে মজার মজার ছবি ।

আমরাও ছবির পাশে আঁকিবুঁকি করি, ছবি আঁকি । কলম দানিতে কত রঙ্গের কলম থাকে । তিনজন ইচ্ছা মতো সাদা খাতায় নানা রঙ্গের কলম দিয়ে লিখি । সেলফে রাখা বই আমরা টেবিলে নামিয়ে রাখি , খাতা গুলতে কত রকম আঁকিবুঁকি করি । টেবিলের উপর রাখা ছোট জগের পানিতে কলম ধুয়ে দেই ।

ফুপিদের ড্রেসিং টেবিলে গেলে তো আরও কাজ বেড়ে যায় । সাদা সাদা ক্রিম আর পাউডার এক সাথে মাখালে যে রুটি বানানো যায় সেটা আমাদের কাছেই সবাই প্রথমে শেখে । জগে যেমন পানি রাখা যায় তেমন জুতার মধ্যেও যে পানি রাখা যায় সেটাও আমরাই প্রথম আবিস্কার করি । মেঝে ঝাড়ু দিয়ে যে বিছানা ঝাড়া যায় এটাও কেউ জানতো না । আমরা কত কিছুই না জানি ।

স্নিগ্ধা, এটা বাড়ির ড্রয়িং রুমের নাম । এই রুমে তেমন কোন কাজ নেই । কিন্তু মাঝে মাঝে যখন বাড়িতে অতিথি আসে তখন কাজ বেড়ে যায় । সোফার কুশন নিয়ে খেলা করা । কুশনের পিঠে উঠে চাবুক পেটানো ।

মাঝে মাঝে সেই চাবুক গেস্টের পিঠেও পড়ে । অবশ্য গেস্ট চলে গেলে আমাদের পীঠেও তাল পড়ে । আর গেস্ট কে নাস্তা দিলে খেতেই চায়না । শুধু হেসে হেসে গল্প করে । খাওয়ার সময় এতো কথা বললে খাবে কখন ? তাই আমাদেরি খেতে হয় ।

মাঝে মাঝে গেস্টের জুতা খোঁজার দায়িত্বও আমাদের উপর পড়ে । আমরা ছাড়া কেউ আবার জুতা খুঁজেও পায়না । পাবে কেমন করে জুতাকে তো আমরাই সেফে রাখি । মধ্যমা,এই বাড়ির মাঝের ঘর । এই ঘরে কাজ করে সবচেয়ে বেশি শান্তি লাগে ।

কারন আমাদের প্রিয় মোটর সাইকেলটা এই ঘরে থাকে । তিন জন ঘিরে ধরে মোটরসাইকেলটার যত্ন করি । মোটা মোটা চাকার বল্টু খুলে চিকন করি , প্লাসের তার খুলে পরিষ্কার করি , ট্যাংক খালি থাকলে পানি দিয়ে পুরে দেই, নিচের চঙ্গা গরম থাকলে পানি দিয়ে ঠাণ্ডা রাখি। মোটরসাইকেলটা নিয়ে আরও কত কাজ যে করতে হয় , তা শুধু আব্বুই জানে । নিরিবিলি আম্মুদের রুম , যদিও আমাদের কারনে নাম টা তার ঐতিহ্য হারিয়েছে ।

এই রুমে তেমন কোন কাজ নেই । মাঝে মাঝে আম্মুর আলমারিটা খোলা পেলে আমাদের কাপড় চোপড় খুলেমেলে দেখি । যেটা ড্রেসটা ভাল লাগে সেটা পড়ে ফেলি । নয়তো আর তেমন কিছুই করিনা । ক্যামেলিয়া , খাবার ঘর ।

আম্মু দাদি না থাকলে এই ঘরে অনেক কাজ । মিটসেলফ , থালা বাটি রাখার সেলফ,টেবিল চেয়ার সব কিছু মিলিয়ে অনেক কাজ পড়ে যায় । একবার তিনজন মিলে খাবার ঘরের সব জিনিস পত্র টিউবওয়েল পাড়ে এনে জমা করেছিলাম পানি দিয়ে ধুবো বলে সেটা দেখে দাদি লাঠি নিয়ে তেড়ে আসলো । আমরা ভয়ে মনটা খারাপ করে দৌড়ে পালিয়ে গেলাম । দাদি একটা কি যে আমাদের কোন কাজ পছন্দ করেনা , শুধু লাঠি নিয়ে তেড়ে আসে ।

আমরা সারাদিন এতো এতো কাজ করি তবু আমাদের কাজের সঠিক মুল্যায়ন হয়না । কাজ শেষে কারো উৎসাহ মিলেনা । সুযোগ পেলেই তেড়ে আসে । মাঝে মাঝে পিঠে লাঠিও পড়ে । কখনো কখনো বন্দিও থাকতে হয়।

তাতে কি । যত বাধাই আসুক সুযোগ পেলেই আমরা আমাদের কাজে নেমে পড়ি ।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।