আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তিনজন হোমলেস এবং কাঠবিড়ালী

এক সুমিনের ঘর থেকে রেল ষ্টেশন বেশি দূরে না । হাঁটলে সাত আট মিনিটে স্টেশনে পৌছা যায় । সপ্তাহে পাঁচদিন কাজ করার কারণে তাকে পাঁচদিন ট্রেন স্টেশনে যেতে হয় । এক লাস্ট ষ্টপজে সে উঠে আরেক লাস্ট ষ্টপজে গিয়ে সে নামে । স্টেশনে যাওয়ার পথে তার ঘর থেকে দুই ব্লক পরেই একটা চাইনিজ রেস্টুরেন্ট পাওয়া যায় ।

সে রেস্টুরেন্টের সামনে প্রায়ই ময়লা কাপড় চোপড় পড়া একটা কালো লোক চেয়ারের মত কি একটা পেতে বসে থাকে। এবং হাত বাড়িয়ে মানুষের কাছে চাইতে থাকে ” ইউ হেভ এ চেঞ্জ “। মাঝেমাঝে তার পাশে একটা কালো মেয়েকে বসে থাকতে দেখা যায় । দুই চাইনিজ রেস্টুরেন্ট পেরিয়ে আরেকটু সামনে ট্রেন স্টেশনের কিছুটা আগে একটা ব্যাংক আছে। সে ব্যাংকের সামনে প্রতিদিন মোটা করে একটা লোককে দেখা যায় – এক হাতে একটা ভাঙা রেডিও কানের কাছে ধরে দাঁড়িয়ে থাকে।

আর আরেক হাত সামনে বাড়িয়ে অনবরত বলতে থাকে – "হেল্প প্লিজ "। তিন ট্রেন স্টেশনে ঢুকার দুইটা গেইট আছে। ডানদিকের গেইটের পাশে খাটো করে কংকালসার একটা লোক হাতে একটা কার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে । কার্ডে লেখা - গড ব্লেস ইউ। লোকটাকে দেখলেই মনে হয় সে খুব অসুস্থ ।

প্রচণ্ড ময়লা কাপড় পড়া থাকে, শরীরের চামড়া খুচখুচে সাদাটে অনেকটা সাপের চরের মত । দেখলে কিছুটা ভয় ভয় লাগে । চার মানুষ তাদেরকে একটাকা আটআনা দিয়ে যায়, কেউকেউ তাদের খাবারের উচ্ছিষ্ট অংশ দিয়ে যায়, কেউ কেউ আবার সিগারেট। তারা সে খাবার খুব আয়োজন করে খায়, খাবার শেষে সিগারেট জ্বালিয়ে রাজকীয় ভঙ্গিমায় সিগারেট টানতে থাকে। পাঁচ সুমিন প্রত্যহ এই তিনজনকে দেখতে দেখতে, তাদের নিয়ে তার মাঝে একটা কৌতূহল কাজ করতে থাকে।

সে কৌতূহল থেকে সে জানে যে – এই তিনজনের থাকার জন্য কোন ঘর নেই। তারা স্টেশনে,পার্কে তাদের রাত যাপন করে, দিনে রুটিন মাফিক তারা তাদের জায়গায় চলে আসে। ছয় সপ্তাহে দুইদিন সুমিনের ছুটি থাকে, সে ছুটির কিছু অংশ মাঝেমাঝে সে তার ঘরের পাশে বাচ্চাদের পার্কে বসে কাটায় । বিশেষকরে সামারের সাপ্তাহিক ছুটি গুলায়। সে পার্কে দেখে – বাচ্চাদের হাসিমাখা পবিত্র মুখ, সে মুখে ঝলমল করা রোদের সুখ, বাচ্চাদের দোলনায় দোল খাওয়া, আর কাঠবিড়ালিদের দৌড়াদৌড়ি।

বাচ্চাদের বল মাঝেমাঝে তার পায়ের কাছে চলে আসে, সে তাদের বল এগিয়ে দেয়। এরকম পার্কে বসে থাকতে তার ভালই লাগে । এক ধরনের সু খ তার মাঝে কাজ করে। সে তার এই সুখের কথা কাউকে বলে না, সে সুখ তার একান্ত নিজের। সাত সামার চলে যাওয়ার সাথে সাথে পার্কের চেহারাও বদলে যেতে থাকে।

বাচ্চাদের খেলতে খুব বেশি একটা দেখা যায় না, কাঠবিড়ালিদের দৌড়াদৌড়ি চোখে পড়ে না। নিয়মিত পার্কে যাওয়ার কারণে সুমিনের সাথে পরিচয় হয় পার্কের ক্লিনিংয়ে দায়িত্বে থাকা এনথনির সাথে। একদিন সুমিন এনথনিকে জিজ্ঞেস করে – আচ্ছা কাঠবিড়ালিদের এখন দেখা যায় না কেন ? এনথনি হেসে হেসে উত্তর দেয় – দে হেভ গান টু দেয়ার হোম নাও। দে কেইম টু ভিসি্ট হেয়ার ডায়ারিং দ্যা সামার। সুমিন একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ভাবে কাঠবিড়ালীদেরও ফিরে যাবার জন্য ঘর থাকে।

আট সুমিন সপ্তাহে পাঁচদিন তিনজন হোমলেস মানুষ দেখে, আর তখনি তার এনথনির হাসি মুখে বলা সে কথাটা মনে পড়ে যায় "দে হেভ গান টু দেয়ার হোম নাও। দে কেইম টু ভিসিট হেয়ার ডায়ারিং দ্যা সামার"। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।