আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রথম আলোর মতিউর-শাসার প্রতারণায় মৃত্যুর প্রহর গুনছেন মুক্তিযুদ্ধের প্রথম মানচিত্র অংকনকারী মোশাররফ

মেন্টাল উন্ডস নট হিলিং লাইফ'স আ বিটার শেইম আই এম গোইং অফ দ্যা রেইলস অন আ ক্রেজি ট্রেইন !! একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রথম মানচিত্র এঁকেছিলেন মোশাররফ হোসেন। একাত্তরে দেশের যেসব্ এলাকায় মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল বাহাত্তর সালে মোশাররফ হোসেন তার আঁকা মানচিত্রে সেসব অঞ্চল নিখুঁতভাবে তুলে ধরেন। শুধু তাই নয়; মোশাররফের মানচিত্রে মুক্তিযুদ্ধের সময় কোন সেক্টর কমান্ডার কোন এলাকায় দায়িত্বপালন করেছিলেন তাও উঠে আসে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সৃষ্টিকর্ম দেখে প্রশংসা করেন। স্বাধীনতার পর তিনি এ কাজের জন্য পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কারও।

এসব কিছু এখন আর মোশাররফের মনে নেই। মোশাররফ হোসেন এখন কাউকে এখন চেনেন না। হাঁটতে পারেন না। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন না। কথা বলতে পারেন না।

মোশাররফকে বাকরুদ্ধ করে দিয়েছেন প্রথম আলো সম্পাদকের ছেলে অ্যানেক্স কমিউনিকেশনস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মাহমুদুর রহমান ওরফে শাসা। চিকিৎসক বলেছেন, মোশাররফ আর কোনোদিন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবেন না। জীবনের যে কয়টা দিন বাঁচবেন এভাবেই বাঁচতে হবে। গ্রাফোসম্যান রিপ্রোডকশান অ্যান্ড প্রিন্টিঙের কর্ণধার ছিলেন মোশাররফ হোসেন। ৩৪ বছর ধরে প্রিন্টিঙের ব্যবসা করে আসছেন।

কেউ কখনো তার সঙ্গে প্রতারণা করেননি। কিন্তু প্রথম আলোর সম্পাদকের ছেলে শাসা যে তার সঙ্গে এমন প্রতারণা করবেন তা দূর কল্পনাতেও ছিল না মোশাররফ হোসেনের। জানা গেছে, ২০০৭ সালের ৭ আগস্ট প্রথম আলোর সম্পাদকের ছেলে মাহমুদুর রহমানের প্রতিষ্ঠান অ্যানেক্স কমিউনিকেশন ও গ্রাফোসম্যান রিপ্রোডকশনের মধ্যে ছয় লাখ ক্যালেন্ডার ও এক লাখ ডায়েরি ছাপানোর বিষয়ে চুক্তি হয়। এর আগে ২০০৭ সালের ২২ জুলাই অ্যানেক্স কমিউনিকেশন একটি কার্যাদেশ (ওয়ার্ক অর্ডার) দেয় গ্রাফোসম্যান রিপ্রোডাকশনকে। এরপর আরও একটি চুক্তি হয় একই বছরের ২৮ আগস্ট।

চুক্তি অনুসারে অ্যানেক্স কমিউনিকেশনকে ডায়েরি ও ক্যালেন্ডার সরবরাহ করেন গ্রাফোসম্যানের মালিক মোশাররফ হোসেন। চুক্তি অনুযায়ী মোট চার কোটি ৭২ লাখ ৭৬ হাজার টাকার ক্যালেন্ডার ও ডায়েরি অ্যানেক্স কমিউনিকেশনকে সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে ২০০৭ সালের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের বিভিন্ন তারিখে অ্যানেক্স কমিউনিকেশন লিমিটেড মাত্র ৩৩ লাখ টাকা গ্রাফোসম্যানকে পরিশোধ করে। বাকি চার কোটি ৩৯ লাখ টাকা গ্রাফোসম্যানকে পরিশোধ করেনি। মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোর সম্পাদকের ছেলের কাছে বারবার গেলেও তিনি প্রতিবারই তাকে অপমান করে তাড়িয়ে দেন।

শাসা সাফ জানিয়ে দেন, ‘একটাকাও আর পাবেন না’। বাংলানিউজকে এসব কথা বলেন মোশাররফের স্ত্রী নিলুফার হোসেন। ‘আমার স্বামী আজ বেঁচে থেকেও নেই। আমাকেও চেনে না। ’ এ কথা বলেই কেঁদে ওঠেন নিলুফার।

চোখ মুছতে মুছতে বলেন, ‘আমাদের পরিবারকে আর্থিক ও মানসিকভাবে পঙ্গু করে দিয়েছেন প্রথম আলোর সম্পাদক ও তার ছেলে। আমরা কার কাছে বিচার চাইবো?’। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে কর্মরত জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, শাসার অর্ডারের কারণে ক্যালেন্ডার ও ডায়েরি ছাপানোর কাগজ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়েছে। অ্যানেক্সের কার্যাদেশের বিপরীতে মোশাররফকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হয়েছে। কিন্তু পাওনা টাকা পরিশোধ না করায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অনেক যন্ত্রপাতি বিক্রি করতে হয়েছে।

বর্তমানে গ্রাফোসম্যান প্রতিষ্ঠানটি দেউলিয়া হওয়ার পথে। বারবার শাসার কাছে গিয়ে অপমানিত হয়ে ফিরে আসতে হয়েছে মোশাররফকে। নিলুফার হোসেন বলেন, শাসার শুধু পায়ে ধরা বাকি ছিল। তিনি জানান, বছর দেড়েক আগে শাসার এমন প্রতারণার কারণে প্রথম আলোর অফিসে গিয়েছিলেন মোশাররফ হোসেন। ‘ব্যস্ত আছি’ বলে মতিউর রহমান তাড়িয়ে দিয়েছেন তাকে।

অবশেষে একদিন দু’মিনিট সময় দিয়েছেন তিনি। দু’মিনিটেই ছেলের পক্ষ নিয়ে ধমক দিয়ে বলেছেন, ‘‌আপনার বুকের পাটা থাকলে কেস করুন। কী করতে পারেন দেখবো। আপনার ক্ষমতার বাহাদুরীও দেখা যাবে। ’ সেদিন কাঁদতে কাঁদতে বাসায় আসেন মোশাররফ।

স্ত্রীর সামনে হাউমাউ করে কেঁদে বলেন, ‘নিলুফার আমি শেষ হয়ে গেলাম। আমার আর কিছু রইলো না। ওরা অনেক ক্ষমতাধর। ’ এই বলেই কাঁদতে কাঁদতে অচেতন হয়ে পড়েন তিনি। তারপরই ব্রেইন স্ট্রোক।

দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো। চিকিৎসক বললেন, উনি শারিরীক ও মানসিকভাবে আর স্বাভাবিক হতে পারবেন না। দেশের ডাক্তারদের এমন কথায় একপর্যায়ে মোশাররফ হোসেনকে ভারতেও নিয়ে যাওয়া হয়; কিন্তু সেখানকার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও জানিয়ে দেন স্বাভাবিক জীবনে আর ফিরে আসতে পারবেন না তিনি। মানসিকভাবে আঘাত থেকেই ‌‘পারকিনাল অ্যান্ড ডিমেনসিয়া’ নামক রোগে আক্রান্ত হয়েছেন মোশাররফ। রোববার মোশাররফের সেগুনবাগিচার বাসায় গিয়ে দেখা যায়, তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে অস্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন।

কথা বলতে পারেন না। কোনো প্রশ্নেরও উত্তর দেন না। কেবলই ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে পাওনা টাকা পরিশোধ না করায় ২০০৯ সালের ৩১ মে এ টাকা আদায়ের জন্য মোশাররফ হোসেনের পক্ষে মোহাম্মদ আজিজুল হক অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েট থেকে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, তার ছেলে অ্যানেক্স কমিউনিকেশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান মাহমুদুর রহমান ওরফে শাসাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উকিল নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশে মোশাররফ হোসেনের আইনজীবী বর্ণনা দেন কীভাবে লাখ লাখ ডায়েরি, ক্যালেন্ডার ছাপানোর কার্যাদেশ দিয়ে এবং মালপত্র নিয়ে মতিউর রহমান ও অ্যানেক্স কমিউনিকেশন বাদীর টাকা ফাঁকি দিয়েছেন।

প্রথম আলো সম্পাদক ও তার ছেলে উকিল নোটিশকে পাত্তা না দেওয়ায় অবশেষে ২০১০ সালের ২ জুন গ্রাফোসম্যান রিপ্রোডাকশন অ্যান্ড প্রিন্টিঙের কর্ণধার মো. মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে প্রথম আলোর সম্পাদক ও প্রকাশক মতিউর রহমান ও তার ছেলে মাহমুদুর রহমান শাসাসহ চারজনের বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা পাওনা আদায়ের জন্য মামলা দায়ের করেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন প্রথম আলোর চিফ আর্টিস্ট অশোক কর্মকার এবং মাহমুদুর রহমান শাসার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অ্যানেক্স কমিউনিকেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গাজী খালেদ ইবনে মোহাম্মদ। মোশাররফ হোসেনের পক্ষে মোহাম্মদ আজিজুল হক অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েট ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে এ মামলা করেন। বিচারক মো. ইমরুল কায়েস মামলটি গ্রহণ করে মতিউর রহমানসহ অন্যদের বিরুদ্ধে সমন জারি করা হয়েছে। মামলার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে বাদীর আইনজীবী মোহাম্মদ আজিজুল হক বলেন, বাদী এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।

তার স্ত্রীকে জানিয়েছ, কিন্তু মানসিকভাবে পরিবারটি ভেঙে পড়ায় বর্তমানে মামলার কার্যক্রম অনেকটা স্থবির। মোশাররফের স্ত্রী নিলুফার জানান, এমনিতেই আর্থিকভাবে পঙ্গু হযে গেছি। মামলা পরিচালনা করতেও এ পর্যন্ত কম টাকা যায়নি। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে নেই, একমেয়ে স্বামীসহ দেশের বাইরে, আরেকজন গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে দেশে চাকরি করছে। এখন আমি মামলা নিয়ে দৌড়াবো নাকি স্বামীর সেবা করবো?’ টাকার অভাবে বর্তমানে মোশাররফ হোসেনের চিকিৎসা চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

পারকিনসনের এই রোগী এখন অন্যের করুণার পাত্র! প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান ওরফে বাচ্চু ও তার ছেলে মাহমুদুর রহমান শাসার প্রভাবের কারণে সুবিচার পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ মোশাররফ হোসেনের পরিবারের। মামলায় বলা হয়েছে, অ্যানেক্স কমিউনিকেশন লিমিটেডের সঙ্গে বাদীর প্রতিষ্ঠানের চুক্তি হয় প্রথম আলোর কার্যালয়ে। সেখানে মতিউর রহমান ও তার ছেলের প্রতিনিধিত্ব করেন অশোক কর্মকার। মতিউর রহমানকে অত্যন্ত বিশ্বাস করে বাদী লিখিতভাবে তাকে টাকা পরিশোধের অনুরোধ করেছিলেন। মতিউর রহমানকে লেখা চিঠিতে বাদী বলেছিলেন, ‌‘‌আপনি এ ঘটনার নীরব সাক্ষি।

আপনাকে চুক্তির প্রথম থেকে অবহিত করা হচ্ছে। কাজেই এ ব্যাপারে সুন্দর ও সম্মানজনক সমাধান আপনি দিতে পারতেন। তা না করে আপনি নিজেকে দূরে রেখে ঘটনা আরও জটিল করে তুলেছেন। ’ জানা গেছে, এ চিঠিকে পাত্তাই দেননি মতিউর রহমান। মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, অ্যানেক্স কমিউনিকেশন লিমিটেড একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থা।

প্রথম দিকে এ প্রতিষ্ঠানের সভা প্রথম আলোর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হতো। মাঝেমধ্যে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান অ্যানেক্স কমিউনিকেশন লিমিটেডের সভায় সভাপতিত্ব করতেন। ব্যবসায় ছেলেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তিনি এ উদ্যোগ নিতেন। মামলায় উল্লেখ রয়েছে, এ ডায়েরি ও ক্যালেন্ডার ছিল বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান আর্থ ফাউন্ডেশনের। আর প্রথম আলোর সম্পাদকের ছেলে মাহমুদুর রহমানের নির্দেশনায় গ্রাফোসম্যান গাজীপুরের শ্রীপুরে আর্থ ফাউন্ডেশনের গোডাউনে মালপত্র পৌঁছে দিয়েছিল।

সব টাকা আর্থ ফাউন্ডেশন থেকে বিবাদীরা তুলে নিলেও তারা গ্রাফোসম্যানকে টাকা পরিশোধ করছেন না। জানা গেছে, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান ওরফে বাচ্চুর সঙ্গে ছাপাখানা সংক্রান্ত নানা কাজ করেছেন মোশাররফ হোসেন। এরই সূত্র ধরে প্রথম আলোর চিফ আর্টিস্ট অশোক কর্মকারের সঙ্গে পরিচয়। এ ব্যাপারে প্রথম আলো কার্যালয়ে মতিউর রহমান ওরফে বাচ্চুর উপস্থিতিতে বহুবার দু’পক্ষের বৈঠক হয়েছে। বিপুল পরিমাণ টাকার কাজ হওয়ায় প্রথম দিকে গ্রাফোসম্যানের কর্ণধার মোশাররফ হোসেন কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

কিন্তু মতিউর রহমান ওরফে বাচ্চু ও অশোক কর্মকারের সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে এবং তাদের বিশেষ অনুরোধে গ্রাফোসম্যান কাজটি করে। এ বিষয়ে অ্যানেক্স কমিউনিকেশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান মাহমুদুর রহমান শাসার সঙ্গে কথা বলতে তার প্রতিষ্ঠানে ফোন করলে প্রতিষ্ঠানটি থেকে জানানো হয়, তিনি বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলবেন না। অবশেষে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মাহমুদুর রহমান শাসার মুঠোফোন সংগ্রহ করে তাকে কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। অবচেতন মোশাররফ। মাঝে মাঝে হা করে ওঠেন।

বড় করে নিঃশ্বাস ছাড়েন। স্ত্রী আশংকা করেন, এই বুঝি তার স্বামীর শেষ নিঃশ্বাস বেরিয়ে যাচ্ছে! ভয়ে দোয়া দরুদ পড়া শুরু করেন। স্বামীর সুস্থ্য থাকা অবস্থায় যুগল ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে অঝোরে কাঁদেন নিলুফার। মতি ও শাসাদের বিচার এ রাষ্ট্রে না হলেও সৃষ্টিকর্তার কাছে এর বিচার হবে- এমন ধারণা নিয়েই আছেন নিলুফার হোসেন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.