আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একবার খাইলে তিনবার মেট্রিক পাস

খুব ছোটবেলা কেটেছে আমার শহরের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কোনো কেজি স্কুলে পড়া হয় নাই, সরাসরি প্রথমশ্রেনীতে ভর্তি হয়েছিলাম। স্কুল ছুটির পর নানা ফেরীওয়ালার ডাকে সরগরম থাকলে স্কুলের গেট। স্কুলে যাওয়ার সময় কখনো কোনো ক্যাশ টাকা হাতে পেতাম না। মানে স্কুলে যাওয়ার জন্য পকেট খরচ, হাত খরচ বাবদ বাসা থেকে কোনো টাকা পেতাম না।

তারপরও টুকটাক ৫০ পয়সা, ১টাকা ম্যানেজ হয়ে যেত। যেমন, আম্মা যদি আধাকেজি চিনি আনতে দিতো, তবে চিনির দাম কেজি ১৭ টাকা না হয়ে ১৮ টাকা হয়ে যেত আমার কাছে। প্রাইমারী স্কুলের সামনে ছিলো এক আচারওয়ালা। জলপাই, বরই, চালতা এই সব বিক্রি করতো। তার একটা ডায়লগ ছিলো, এক বার খাইলে তিন বার মেট্রিক পাস।

একদম ছোট বেলায় মনে করতাম, নিশ্চয় তার আচারে কোনো না কোনো গুনাগুন আছে। এটা খেলে পড়ালেখা ভালো পারা যাবে। আর এক আচারওয়ালা ছিলো, তার ডায়লগ ছিলো, ললি-ই-ই-তা। সে এতো জোরে ললিতা চিৎকার করতো, সবার মনোযোগ তার দিকে যেত। মাঝে মাঝে ললিতাও কিনে খেতাম।

একদিন দেখলাম কিছু পুলিশ এসে ললিতার সব আচার নালায় ফেলে দিয়েছিলো। ললিতাও মুখ বেজার করে বসে ছিলো। তবে সেদিন ললিতার থেকে স্কুলের ছেলেদের মুখ বেশি বেজার ছিলো। আর একজন ছিলো, ছোলা বিক্রি করতো। তার ডায়লগ ছিলো, বাদশাহ মিয়ার খানা, খাইতে নাই মানা।

এই খাওয়াটা মোটামোটি পরিষ্কার মনে হতো। একটা ভেন গাড়িতে বড় বড় ২টা পাত্রে ছোলা বিক্রি করতো। ছোট কাগজকে প্লেটের মতো বানিয়ে দিতো। আর চামচ হিসাবে থাকতো সিগারেটের প্যাকেটের টুকরো করা মোটা কাগজ। ১ টাকার বাদশাহ মিয়ার খানা কিনতাম।

বাদশাহ মিয়া তার ছোলার সাথে কিছু ডিম সিদ্ধ,(তেলে ভেজে লাল করা) সাজিয়ে রাখতো। সেই ডিমের দাম ছিলো ৫ টাকা। কিন্তু সেই যুগে ৫ টাকাও অনেক টাকা। কতো বার যে সেদ্ধ ডিমের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ছোলা খেয়েছি!!! কয়েক বছর পর যখন কলেজে উঠেছিলাম, তখন একবার ডিম দিয়ে বাদশাহ মিয়ার খানা খেয়েছিলাম। একটা আইসক্রিমওয়ালা ছিলো, যে বরফকে মেশিন দিয়ে কুচি কুচি করতো।

তারপর একটা পিতলের কাপে বরফ কুচি চেপে কাঠি লাগিয়ে দিয়ে। তারপর জমাট বাঁধা বরফের চারপাশে ২-৩ রকমের রং লাগিয়ে দিতো। রংয়ে ছিলো স্যাকারিন মিশ্রিত, খেলে মিষ্টি মিষ্টি লাগতো। শুধু রং ওয়ালা আইসক্রিম হলে ৫০ পয়সা। আবার চাইলে সেই বরফ কুচির সাথে কনডেন্সড মিল্কও পাওয়া যেত।

কনডেন্সড মিল্ক দিয়ে আইসক্রিম খেয়ে ১ টাকা। পরে অবশ্য এই আইসক্রিম ১ টাকা ও ২ টাকা হয়েছিলো। আরো একটা আইসক্রিমওয়ালা ছিলো,যার আইসক্রিম থাকতো একটা নিচু ট্রলিতে বসানো বড় কলসিতে। আইসক্রিম গুলো গোলাকার, ডিমের সাইজের হতো। রাবারে মুড়ানো।

রাবার খুলে কাঠি ঢুকিয়ে দিতো। দাম ছিলো ৫০ পয়সা, পরে হলো ১টা। আমরা এটাকে বলতাম মাটির আইসক্রিম। আর একটা নরমাল আইসক্রিমওয়ালা ছিলো, যার কাছে ১০ ইঞ্চি লম্বা আইসক্রিম পাওয়া যেতো। ছোট প্ল্যাস্টিকের প্যাকে লাল, সবুজ রংয়ের আইসক্রিম।

মুখে একটু ফুটো করে চুষে চুষে আইসক্রিম খেতাম। একজন ছিলো হাওয়াই মিঠাইওয়ালা। ছোট ছোট গোল্লা বিক্রি করতো, ১ টাকা দিয়ে ৪টা। লাল রং এর। দেখে খুব খেতে ইচ্ছে করে।

কিন্তু মুখে দেওয়ার পর মনে হতো, কেন খামাকা খেতে নিলাম। খাওয়াতো শেষ। আমার বন্ধু যে আইসক্রিম কিনেছে, সে তো আর কিছুক্ষণ আইসক্রিম চুষবে। একজন ছিলো চটপটিওয়ালা। ১টাকা,২টাকা প্লেটেও চটপটি খাওয়া যেত।

কাঁচা পেপে কুচির সাথে সামান্য চটপটির ডাল, সাথে মরিচের গুড়ো মেশানো তেতুলের পানি। সেটাই কতো মজা করে খেতাম। আরো ছিলো ঝালমুড়িওয়ালা, বাদামওয়ালা। তবে এখন এই বয়সে এসে মনে হয় খাওয়ার রুচিবোধ মানুষের বয়স আর সামর্থের সাথে সাথে দিন দিন পরিবর্তন হয়। ছোটবেলাতে যে খাওয়াগুলোর জন্য সবসময় জিবে জল আসতো, এখন হয়ত খেতেই ইচ্ছে করবে না।

ঝালমুড়ি খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি অনেকদিন। খালি মনে হয়, পরিবেশনকারীর হাত কি পরিষ্কার? হাত দিয়ে লেবুর রস চিপে দিচ্ছে। লেবুর রস তো হাতের ময়লা সহ ঝালমুড়িতে গিয়ে মিশছে। অনেক গুলো খাবারের নাম লিখেছি, কিন্তু ঠিক ঐ রকমের ছবি পেলাম না। কারো কাছে ছবি হবে কি, থাকলে জুড়ে দিতাম!! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.