আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের স্বাধীনতাঃ এপিঠ ও পিঠ

পরাধীনতা শিকল ভেঙ্গে স্বাধীনতার স্বাদ আমাদের গায়ে লেগেছে। এই স্বাধীনতায় আমরা গা ভাসিয়ে দিয়ে যা খুশি তাই করছি। স্বাধীনতা আসলে কেমন তা আমরা অনুধাবন করতেই পারিনা। দীর্ঘ দিন পরাধীন থাকার পরে স্বাধীনতা পেয়ে আমরা আত্মহারা আর উল্লাসিত হয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ করতে করতে নিজকে হারিয়ে ফেলেছি। আমি যে মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব এর সঙ্গা কি তাও ভুলে গেছি।

যখন যা খেয়াল হয় তাই করে থাকি। কারো কিছু বলার নেই। সরকারী ভাবে হোক, প্রশাসনিক ভাবে হোক, পিতা-মাতার মাধ্যমে হোক, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় স্বজন কারো কিছু বলার নেই। আবস্থা ভেদে স্বাধীনতার মানে স্বেচ্ছাচারিতা হয়ে গেছে। এই স্বেচ্ছাচারিতার প্রয়োগ শুধু অপরের ক্ষেত্রেই ব্যবহার করি না।

স্বাধীনতার অপপ্রয়োগ করতে করতে অভ্যাসগত ভাবে নিজের উপরও প্রয়োগ হচ্ছে দেদারসে যা আমাদের বুঝার ক্ষমতাও হারিয়ে গেছে। অভ্যাসগত বিষয়টা কেমন- ধরুন আমারা মাতৃভাষায় কথা বলি। বই পুস্তক পড়ার সময়তো মোটামুটি শুদ্ধভাবেই পড়ি। কিন্তু ছোটকাল থেকে যে এলাকায় থেকে কথা বলতে বলতে বড় হয়েছি সেই এলাকার আঞ্চলিক ভাষা এমন ভাবে রপ্ত হয়ে গেছে যা ইচ্ছা করলেও বা প্রয়োজন হলেও সেই আঞ্চলিক ভাষা ছেড়ে শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে পারি না বা আমি কথা বলার সময় কথা শুনতে কেমন লাগছে, আমি শুদ্ধ ভাষা না আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করছি তা খেয়ালও করতে পারি না। এটা হলো অভ্যাসের ফসল।

স্বাধীনতার অবস্থাও তাই হয়েছে। কোনটা স্বাধীন আর কোনটা স্বেচ্ছাচারিতা তা বুঝার ক্ষামতাও হারিয়ে গেছে। উদাহারণ হিসেবে বলা যায় আমার এখন বার্ধক্যজনিত রোগে ধরেনি বা বিছানাগত হয়নি কিন্তু ছোট খাট কিছু অসুখ হয়েছে। চলাফেরা কাজকর্ম সবই করতে পারি। এমতাবস্থায় ডাক্তার দেখানোও জরুরী নইলে রোগ বৃদ্ধি পেতে পারে।

সব কিছু জেনে শুনেও ডাক্তারের কাছে যায় না। আবার যদি ডাক্তারের কাছে যায় এবং ডাক্তার যে ওযুধ লিখে দেয় তা সময় মত কিনি না। যদিও বা কিনি নির্দেশনা মতে সেবন করি না। ঔষুধ না খেলে ক্ষতি হবে জানি তারপরও খাই না। কেন? কারণ আমি নিজকে স্বাধীন মনে করি।

কিন্তু যদি অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হই তখন নার্স এবং ডাক্তারে বাধ্য করে ঔষুধ সেবন করতে। ফলে ঠিক মতই ঔষুধ খাই। কারণ তখন আমি হাসপাতালের অধিন। সেখানে আমি আমার অবস্থানে ঠিক থাকলেও আমার স্বত্তাকে আমি হাসপাতালারে অধিন করে দিয়েছি। অর্থাৎ নিজকে কোন নিয়মতান্ত্রিক রীতিনিতীর অধিন করে দিয়েছি।

ফলাফল নিজের মঙ্গল ছাড়া আর কিছুই না। আবার ধর্মীয় বিষয়ে দেখেন আমি মুসলিম হিসেবে ইসলাম ধর্মের কথাই বলছি। ইসলাম ধর্মের বিধান হচ্ছে কোরআন সুন্নাহ। আমরা যারা মুসলমান তারা অবশ্যই কোরান-সুন্নাহকে মানি। আর তা মানার জন্য জানার দরকার।

প্রত্যেক মুসলমান জানে আল্লাহ এক, একদিন আমাদের মৃত্যু হবে। মৃত্যুর পর কেয়ামত হবে, সেখানে আল্লাহর সামনে হাজির হতে হবে এবং পুংখানুপুংখ বিচার হবে। বিচারের ফলাফলের উপর জান্নাত জাহান্নাম নির্দ্ধারণ হবে। জান্নাত এবং জাহান্নাম কি তা আমাদের সকলেরই জানা আছে। জাহান্নামের ভয়াবহতা সম্পর্কেও আমাদের মোটামুটি ধারনা আছে।

যদিও আমরা তা দেখি নাই। দুনিয়াতে অপরাধ করলে তার বিচার হবে এবংশাস্তি হবে জানি কিন্তু সেই শাস্তির স্বাধ কেমন লাগবে তা কিন্তু আমরা জানি না। তো মুসলমান হিসেবেও আমাদের কিছু বিধান আছে যা না মানলে ভয়াবহ শাস্তির মুখামুখি হতে হবে জানি। কিন্তু মানি না। কেন মানিনা? কারণ আমরা স্বাধিন।

আমরা জানি নামাজ পড়া ফরজ বা বাধ্যতামূলক কিন্ত পড়ি না কারণ কেউ বলার নাই। আবার যারা পড়ি তারা ঠিকমত পড়ি না। ৫ ওয়াক্ত নামাজে ৪/৩/২ ওয়াক্ত পড়ি। আবার যারা ৫ ওয়াক্ত পড়ি তারা নামাজে এখলাস/খুশুখুজুর দিকে খেয়াল করি না। কারণ কারণ আমি কাউকে কিছু বলার অধিকার দিইনি।

অপর দিকে যারা মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে তাদের ক্ষেত্রে এই স্বাধীনতা নেই যে তারা ইচ্ছা হলো নামাজ পড়ল বা না পড়ল। ঐ হাসপাতালের মতই বাধ্য হতে হয় নিয়মমত চলতে। একজন সন্তান যতক্ষণ পিতা-মাতার অধিনে থাকে ততক্ষণ সে বাধ্য থাকে পিতা-মাতার নির্দেশমত চলতে। আর পিতা-মাতা যেমন ভাবে তার সন্তান গড়বে তেমনভাবে সেই সন্তানের মধ্যে চলার অভ্যাস তৈরী হবে। আবার অভ্যাস তৈরী হলেও একজন স্বাধীনচেতা মানুষ তার ভাল অভ্যাসকে ধরে রাখতে পারে না।

কারণ একজন মানুষ সব সময় শয়তান ও নফস্ দ্বারা প্রভাবিত হতে থাকে। ফলে মানুষের মধ্যে লোভ লালসা ও প্রবৃত্তি জাগ্রত হয় এবং মানুষ তার নিজের অজান্তেই অনেক সময় নিজ ইচ্ছার বিরুদ্ধেই সে অনেক খারাপ কিছু করে বসে। আর এই খারাপ কাজগুলি যদি সে দ্রুত দমন করতে না পারে তবে তা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। আর এভাবেই আমারা আমাদের চরিত্রকে খারাপ থেকে খারাপের দিকে নিয়ে যেতে যেতে আমরা খারাপ হয়ে যায় এবং সৃষ্টির সেরা জীব থেকে নিকৃষ্টজীবে পরিণত হই। আর এইভাব সমাজের অধিকাংশ মানুষ খারাপ হওয়ার পরও একজন আরেক জনকে খারাপ মানুষ হিসেবে চিন্হিত করি।

হয়তো জানি আমাকে সবাই খারপ বলছে। তাতে আমার কোন ভ্রক্ষেপ নেই। থাকলেও আমার সংশোধন হওয়ার কোন ক্ষমতা নাই। কারণ আমি স্বাধীন। স্বাধীনতার স্বাধ নষ্ট করে নিজকে কারো হাতে বন্দী করতে মন/নফস্ চাই না।

আসলেই কি আমরা স্বাধীন। ভেবে দেখেন তো। না আমরা কখন স্বাধীন না। কারণ আমরা নফসের কাছে বন্দী। অর্থাৎ নফসের গোলাম।

আমরা আমাদের নফসের ইচ্ছা অনুযায়ী চলি। সেক্ষেত্রে ভাল মন্দ দেখার এখতিয়ার কোন কোন ক্ষেত্রে একেবারে থাকে না। আবার লেখাপড়ার ক্ষেত্রে দেখেন আমরা স্কুলের কাছে বন্দী। অর্থাৎ শিক্ষকদের গোলাম হয়ে যায়। আর শিক্ষকক্ষের গোলমা হয়ে যায় বলেই আমাদের লেখাপড়া হয়।

যে যতো নিজকে শিক্ষকদের হাতে সর্ম্পন করবে তার লেখাপড়া ততো ভাল হবে। এক্ষেত্রে যারা নিজ স্বাধীন হয়েছে তাদের লেখাপড়া সম্ভব হয়নি। কাজেই বলা যায় আমরা যদি আমাদের অবস্থা ভেবে এবং প্রয়োজনানুযায়ী নিজকে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তির কাছে বন্দী করতে পারি তবে আমাদের পথ চলা সহজ হবে যেমন তেমনি চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রে সহায়ক ভুমিকা পালন করবে নিঃসন্দেহে। তাই স্বাধীনতাকে গুলি মারি এবং নিজকে কারো জিম্মায় রেখে নিজের চরিত্রকে গঠন করি। আমার এ লেখার উদ্দেশ্য কাউকে উপদেশ দেয়ার জন্য নয় বা স্বাধীনতাকে বিদ্রুপ করা নয়।

বরং আমি আমাকে সংশোধন করার জন্যই এ লেখা। এ বিষয়ে আপনাদের কাছে মন্তব্য চাই। বিদ্রুপ করবেন না। আর লেখালিখি আমার অভ্যাস নাই তাই ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন। আমীন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।