আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বুযুর্গদের নামাজঃ আমাদের নামাযের কি হালত ? নামাজে কেন এত উদাসীনতা ?

আল্লাহ ছাড়া আর কোন সৃষ্টিকর্তা নেই । হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল । হযরত মোজহেদ (রহঃ) বলেন, ছাহাবাদের মধ্যে যাহারা ফকীহ ছিলেন তাহারা নামাযে দাড়াইলে আল্লাহর ভয়ে ভীত হইয়া পড়িতেন । হযরত হাসান (রহঃ) যখন অযু করিতেন, তখন তাহার চেহারা বিবর্ণ হইয়া যাইত । জনৈক ব্যাক্তি ইহার কারণ জিজ্ঞাসা করিলে তিনি বলেন, এক জবরদস্ত বাদশাহর দরবারে হাজির হইবার সময় হইয়াছে ।

হযরত জয়নুল আবেদীন (রহঃ) দৈনিক এক হাজার রাকাত নামাজ পড়িতেন । অজুর সময় তাহার চেহারা হলুদ বর্ণ হইয়া যাইত এবং নামাযে দাড়াইলে সবার্ঙ্গে কম্পন আসিয়া যাইত । জনৈক ব্যাক্তি ইহার কারণ জিজ্ঞাসা করিলে বলিলেন, তুমি কি জান না কার সম্মুখে দন্ডায়মান হইয়াছি ? হযরত আলী (রা.) সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, যখন নামাজের সময় হইত, তাহার চেহারা বিবর্ণ হইয়া যাইত । শরীরে কম্পন আসিয়া যাইত । কেহ জিজ্ঞাসা করিলে তিনি বলেন, যে আমানত বহনে আসমান-জমিন পাহাড় পর্বত সকলেই অস্বীকার করিয়াছিলো , তাহা আদায় করার সময় উপস্হিত ।

জানিনা কতটুকু হক আদায় করিতে পারি । হযরত ওয়ায়েছ করণী (রহঃ) বিখ্যাত বুযুর্গ ও তাবেয়ী ছিলেন। কোন কোন সময় সারা রাত্রি রুকুর হালতে আবার কোন কোন সময় সেজদার অবস্হায় কাটাইয়া দিতেন । হযরত ছায়ীদ বিন মোছাই্যব (রহঃ) বলেন, বিশ বৎসর যাবত আমি আজানের পূর্বে মসজিদে হাজির হই । একদিনও ইহার ব্যাতিক্রম হয় নাই ।

আম্মাজান হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমরা হুজুর (সাঃ) এর সাথে পরস্পর কথা বলিতাম । কিন্তু যখন নামাজের সময় হত তখন মনে হইত তিনি আমাদের চিনেন না এবং আপাদমস্তক আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন হইয়া যাইতেন । এবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, প্রথম প্রথম হুজুর (সাঃ) যখন রাত্রে নামাজ পড়িতে উঠিতেন তখন নিদ্রায় পড়িয়া যাইবেন এই ভয়ে নিজেকে রশি দিয়া বাধিয়া লইতেন । ইহার পরিপ্রেক্ষিতে অবতীর্ণ হয় কোরআনের আয়াতঃ ' হে প্রিয় নবী ! আপনি অতি মাত্রায় কষ্ট করিবেন এই জন্য আমি আপনার উপর কুরআন নাজেল করি নাই । ' অনেক হাদিসে দেখা যায় হুজুর (সাঃ) এত লম্বা কেরাত পড়িতেন যে, দাড়াইয়া থাকিতে থাকিতে হুজুরের পা মোবারক ফুলিয়া যাইত ।

কিন্তু আমাদের জন্য দয়া পরবশ হইয়া বলিয়াছেন, সহ্যের বাহিরে তোমরা কষ্ট করিও না । বাহজাতুনুফুছ গ্রন্হে উল্লেখ আছে, জনৈক সাহাবী রাত্রিবেলায় নামায পড়িতেছিলেন । ইত্যবসরে একটি চোর আসিয়া তাহার ঘোড়া লইয়া গেল । যাওয়ার বেলায় চোরের উপর তাহার দৃষ্টি পড়িল । কিন্তু তিনি নামায ছাড়িলেন না ।

কেহ জিজ্ঞাসা করিল, চোরকে আপনি কেন ধরিলেন না ? উত্তর করিলেন, আমি যে কাজে মশগুল ছিলাম উহা ঘোড়া হইতে অনেক উত্তম । হযরত আলী (রাঃ) এর ঘটনা সর্বজন বিদিত যে, যুদ্ধের ময়দানে তাহার শরীরে কোন তীর বিদ্ধ হইলে , নামাজের হালতেই উহা বাহির করা যাইত । একবার উনার উরুতে একটি তীর বিদ্ধ হইয়াছিলো । অনেক চেষ্টার পরও যখন উহা বাহির হইল না , তখন সকলেই পরামর্শ দিলেন নামাযের হালতেই বাহির করা যাইবে । পরে যখন তিনি যখন নামাজে দাড়াইলেন তখন সকলেই উহা বাহির করিয়া ফেলিল ।

নামাজের পর আশেপাশে তিনি লোকজন দেখিয়া বলিলেন, তোমরা কি তীর বাহির করিতে আসিয়াছ ? তদুত্তরে সকলেই বলিল, আমরা তো উহা বাহির করিয়া ফেলিয়াছি । তিনি বলিলেন, আমি তো টেরই পাইলাম না । জনৈক বুযুর্গকে জিজ্ঞাসা করা হইয়াছিলো , নামাযের মধ্যে কি কখনও আপনার দুনিয়ার চিন্তা আসে ? তিনি উত্তর করিলেন, নামাজ তো দূরের কথা নামাজের বাহিরেও আসে না । এইরূপ প্রশ্নের উত্তরে অন্য বুযুর্গ বলিয়াছেন, নামাজের চেয়ে প্রিয় কোন জিনিষ-ই নাই , যাহা নামাজের মধ্যে স্বরণ আসিতে পারে । মহান আল্লাহপাক বলেন, 'যাহারা অধার্মিক তাহাদের সহিত কি ঐসব লোকের তুলনা হইতে পারে , যাহারা রাত্রি বেলায় কখনো সিজদায় পড়িয়া আবার কখনো দাড়ানো অবস্হায় আল্লাহর ইবাদত করে ? আখেরাতকে ভয় করে এবং আপন প্রভূর রহমতের আশা রাখে ।

আপনি তাহাদিগকে জিজ্ঞাসা করুন যে, কখনও আলেম এবং জাহেল (মূর্খ) বরাবর (সমান) হইতে পারে ?একমাত্র বুদ্ধিমান ব্যক্তিরাই উপদেশ গ্রহণ করে । ' মহানবী (সাঃ) বলিয়াছেন, 'কেয়ামতের দিবসে সর্বাগ্রে নামাযের হিসাব লওয়া হইবে । যদি উহা ঠিক সাব্যস্ত হয় তবে বাকী আমলও ঠিক বলিয়া প্রমাণিত হইবে । আর নামায ক্রটিপূর্ণ হইলে অবশিষ্ট আমলও ক্রটিপূর্ণ হইবে । ' (তিবরানী) মহানবী (সাঃ) বলিয়াছেন, যাহাকে নামায নির্লজ্জ্ব অন্যায় কাজ হইতে বিরত রাখে না, তাহার নামাজ নামাজ-ই না ।

নিশ্চয়ই নামাজ এমন এক দৈালত, যদি ঠিক ভাবে উহা আদায় করা হয় তবে তাহা মন্দ কাজ হইতে বিরত রাখবেই । যদি কোথাও উহার ব্যাতিক্রম দেখা যায় তবে বুঝিতে হইবে নামায অসম্পূর্ণ রহিয়াছে । এখন আমাদের অবস্হা এমন যে, আমরা বুযুর্গদের এইরূপ মনোযোগ সহকারে নামাজ পড়ার বিষয়কে সত্য কিনা সন্দেহ পোষণ করি । অথচ এই আমারাই সিনেমা দেখিতে বসিলে এতই মজিয়া যাই যে আর কোন কিছুর-ই খেয়াল থাকেনা । বিন্দুমাত্র ক্লান্তিও আসে না ।

অথচ নামাজ কোনমতে তাড়াহুড়া সহকারে আদায় করি । এর কারণ হলো আমরা নামাযের কি গুরুত্ব তা অনুধাবন করি না । সর্বশেষে বলা যায়, আল্লাহর সাথে কোথোপকথনের করার নামই নামায । কাজেই উহা অন্যমনস্ক অবস্হায় হইতেই পারেনা । আপন সাধ্যানুযায়ী পূর্ণ মনোযোগের সহিত নামাজ পড়া নিতান্ত প্রয়োজন ।

সূত্রঃ ফাজায়েলে নামাজ ।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।