আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘আমার দৃষ্টিতে স্বামী বিবেকানন্দ’: আকাশলীনা দাশগুপ্ত

SWAMI VIVEKANANDA NATIONAL ELOCUTION COMPETITION 2011 স্বামী বিবেকানন্দ জাতীয় বক্তৃতা প্রতিযোগিতা-২০১১ ‘ক’ বিভাগে প্রথম পুরষ্কারজয়ী বক্তৃতা মাননীয় বিচারকমন্ডলী ও উপস্থিত সুধীজন, আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় হলো ‘আমার দৃষ্টিতে স্বামী বিবেকানন্দ’’। আমি তখন অনেক ছোটো। মার কাছেই প্রথম শুনেছিলাম বিলে নামে একটা দস্যি ছেলের কথা। ছেলেটার দুরন্তপনায় অতিষ্ঠ হয়ে ওঁর মা শিব, শিব বলে মাথায় জল ঢাললে তবেই সে ঠান্ডা হতো। বীরেশ্বর বিলেকে তখনই আমার ভালো লেগেছিল।

স্বামী বিবেকানন্দের সঙ্গে সেই ছিল আমার প্রথম পরিচয়। আমি যখন দ্বিতীয় শ্রেণীতে উঠলাম, তখন হাতে পেলাম ‘ছোটদের বিবেকানন্দ’ বইটি। এক নিঃশ্বাসেই পড়ে ফেলেছিলাম গোটা বইটা। ছেলেবেলার নানা ঘটনায় নরেনের সাহসী মন, বন্ধু-প্রীতি, দয়ালু মনোভাবের পরিচয় পেয়ে আপ্লুত হয়েছি। আবার তাঁর তীক্ষ্ণ মেধা, অসীম ইচ্ছাশক্তি, একাগ্রতা ও অধ্যবসায় দেখে উৎসাহিত হয়েছি।

কারণ একজন ছাত্র হিসাবে নরেন্দ্রনাথের জীবন সকলের কাছে অনুকরণ করার মতো। একজন ছাত্রের কাছে সবচেয়ে যা জরুরী, সেই একাগ্রতার সাধনাতেই নরেন্দ্রনাথ হয়েছিলেন অনন্যসাধারণ স্মৃতিশক্তির অধিকারী। বাবার যুক্তিবাদী মানস ও মার ধর্মীয় চেতনা নরেন্দ্রনাথের চিন্তা ও ব্যক্তিত্বকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। তবে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের সঙ্গে সাক্ষাৎই নরেন্দ্রনাথের জীবনের ধারাকে একেবারে পাল্‌টে দিয়েছিল। কোনো মত গ্রহণ করার আগে তা যাচাই করে নেওয়াই ছিল নরেন্দ্রনাথের স্বভাব।

শ্রীরামকৃষ্ণদেব ধৈর্য সহকারে নরেন্দ্রনাথের তর্ক ও পরীক্ষার সম্মুখীন হন। পাঁচ বছর শ্রীরামকৃষ্ণের সান্নিধ্যে থেকে নরেন্দ্রনাথ এক অশান্ত, বিভ্রান্ত, অধৈর্য যুবক থেকে এক পরিণত ব্যক্তিতে রূপান্তরিত হলেন। ঈশ্বর উপলব্ধির জন্য তিনি সর্বস্ব ত্যাগ করতে প্রস্তুত হলেন। তখন থেকেই তিনি জাতির উন্নতিকল্পে নিজেকে আত্মনিয়োগ করলেন। হয়ে উঠলেন স্বামী বিবেকানন্দ।

স্বামী বিবেকানন্দ ভারতের ইতিহাসে সমাজসেবার এক নতুন অধ্যায় রচনা করেছিলেন। নবজাগরণের বাণী শুনিয়ে ও নতুন কর্মপস্থার নির্দেশ দিয়ে তিনি ভারতাত্মাকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। রাজনীতির ক্ষেত্রে নিজেকে না জড়ালেও তাঁর বক্তৃতা ও রচনা স্বদেশপ্রেম, স্বাধীনতার আকাঙক্ষাকে তীব্র করেছিল। ধর্ম ও সমাজের যুক্তিহীন চাপে জাতি কর্মশক্তি হারাবে এটা বিবেকানন্দের কাছে অসহ্য ছিল। সাম্প্রদায়িক ও জাত-পাতের ভেদাভেদকে তিনি ঘৃণা করতেন।

বিবেকানন্দ বলেছেন,‘‘হে ভারত, ভুলিও না, মূর্খ ভারতবাসী, দরিদ্র ভারতবাসী, মেথর, মুচি, চণ্ডাল, তোমার রক্ত, তোমার ভাই। ” তিনি বলেছিলেন, “ভারত বের হোক চাষার কুটির ভেদ করে…”। " স্বামী বিবেকানন্দ মনে করতেন, শিক্ষা ও সংস্কৃতির দিয়ে মানবমনকে পরিশীলিত করে উদারভুমিতে তুলে নিলে নীচতা ও ক্ষুদ্রতা সহজেই দূর হবে। শিক্ষার ফলে নারীসমাজ স্বাধীনভাবে নিজেদের সমস্যার সমাধান করবে। সে শিক্ষা হবে সার্বিক-দৈহিক, মানসিক, আধ্যাত্মিক।

এবং তা মানবের অন্তরাত্মাকে বিকশিত করবে। স্বামী বিবেকানন্দের মতে, ত্যাগ ও বৈরাগ্যই হলো ভারতের চিরন্তন আদর্শ। আমেরিকার ধর্মমহাসভাতেও স্বামীজী তাই বলেছিলেন: ‘‘আমরা শুধু সকল ধর্মকে সহ্য করি না। সকল ধর্মকে সত্য বলে বিশ্বাস করি। ’’ স্বামীজীর বক্তৃতার শেষ বাণীটি ছিল-“বিবাদ নয়, সহায়তা; বিনাশ নয়, পরস্পরের ভাবগ্রহণ; মতবিরোধ নয়, সমন্বয় ও শান্তি”।

তিনি ভারতাত্মাকে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন-‘‘লোভ মানুষকে পশুত্বে রূপান্তরিত করে”। তিনি বলেছিলেন- “কিছু চাহিও না, উহাই ঈশ্বর, উহাই মনুষ্যত্ব’’। আমার সামনে, ভারতবাসীর জীবনে সামগ্রিক এই বিবেকানন্দই সূর্যের মতো উজ্জ্বল হয়ে আছেন। আমার কাছে তিনি হলেন পরম মনুষ্যত্বের এক অনন্য উদাহরণ।

সবাইকে নমস্কার জানিয়ে আমার বক্তব্য এখানেই শেষ করছি। ১২ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ --আকাশলীনা দাশগুপ্ত চতুর্থ শ্রেণী, রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম শিশু বিদ্যাবীথি নরেন্দ্রপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগণা। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২৮ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.