আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার জাতীয়তাবাদ আমার ধর্ম, আমার রাজনৈতিক দর্শন, আমার মুক্তির পয়গাম

হিন্দু না ওরা মুসলিম ঐ জিজ্ঞাসে কোনজন, কান্ডারি বলো ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা'র

আমার জাত নাই, জাতি আছে ফিরিঙ্গি সভ্যতা শাসিত আধুনিক দুনিয়ায় আমাদের জন্ম। আমাদের পরিচয় কি? আমাদের জাত কি? পশ্চিমের অন্ধ অনুকরণ আর উৎপাদনহীণ, সৃষ্ঠিশীলতাহীন আর হিপোক্রেসির জীবনাচার আমাদের জন্মগত কলঙ্ক, পায়ের শেকল। নিজের অস্তিত্ব আর আত্মপরিচয় সংকট এহেন মানুষের একমাত্র সম্বল। জাত নিয়া কামড়াকামড়ি করা তাই দাসের স্বভাব। শোষক আর উৎপিড়করে ছোবল দেয়ার সাহস, ক্ষমতা কিছুই নাই।

স্বজাতিরে তাই ভাগ করো, নিজেরা নিজেরা কামড়াকামড়ি কইরা ধর্ষকামী স্বমেহনে মত্ত্ব থাইকা নিজের ব্যাটাগিরী জাহির করো। হিন্দু না ওরা মুসলিম, ঐ জিজ্ঞাসে কোন জন কান্ডারি বলো ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মা’র। আমার কোন জাত নাই, জাতি আছে। আমি হিন্দু না, মুসলিম না, বৌদ্ধ বা খ্রীষ্টান না। আমার পরিচয় আমি বাঙালি।

এই পরিচয় নিয়া আমার কোন হতাশা নাই, সংকট নাই, গ্লানি নাই। নিজের জাত নিয়া আমার তাই ভাবনা নাই। এই ভুখন্ডের নয়া প্রজন্মের মুক্তিকামী জোয়ানদের জাতভেদের চিন্তা করার অবকাশ নাই। জাতির চেয়ে জাতের মূল্য যার কাছে অধীক কাজী নজরুলের আগের ঔপনিবশিক দুনিয়ার ফিরিঙ্গি কুটচালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ডামাডোলে তাগো ফিরা যাওয়া দরকার। নতুন প্রজন্মের কান্ডারিরা অবশ্যই তাদের প্রতিহত করবে।

আজি পরীক্ষা জাতির অথবা জাতের করিবে ত্রান দুলিতেছি তরি, ফুলিতেছে জল, কান্ডারি হুশিয়ার। বাঙলা আমার মাতৃভূমী ইউরোপিয়গো মতো পিতৃভূমীর নামে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ হয় নাই। নাজি বা ফ্যাসিস্টদের মতো পুরুষতান্ত্রিক উপনিবেশ বিস্তারের আকাঙ্খায় আমাদের জাতীয়তাবাদ বিকাশ হয় নাই। আমাদের লড়াই মাতৃভূমীর স্বাধীনতার জন্য, আমাদের রক্তক্ষয় মায়ের সম্মান রক্ষায়। আধিপত্ত্ব না, আমাদের জাতীয়তাবাদ নিপিড়িতের সম্মান আর মুক্তির পয়গাম।

রাজার হাত থেইকা বনিক শ্রেণীর হাতে সার্বভৌম রাজনৈতিক ক্ষমতা বদলের স্বার্থ আমাদের জাতি চেতনার বিকাশ হয় নাই। ভিন সংস্কৃতির আগ্রাসন প্রতিহত করতে ভাষাগত আত্মপরিচয়ের চেতনা আর শহীদের রক্তে ধোয়া ভাষা আন্দোলন থেইকা আমাদের জাতি চেতনার উদ্ভব। গোলকায়ন আর উমুক্ত বাজারের এই দুনিয়ায় পশ্চিমের দালালেরা দাবি করে কট্টর জাতি চেতনা নাকি বর্বর জিনিস, লিবারালিজমের সাথে খাপ খায় না, সাম্যবাদের সাথেও না কি যায় না। এই দাবি তারা করতেই পারে। ভিন জাতির গর্বিত ভাষা, সংস্কৃতি আর আলাদা পরিচয় থাকলে যে নিউয়র্কের জীবনাচার ঢাকায় আনা যাবে না, যাবেনা নিউয়র্কের পণ্য ঢাকায় বিক্রি আর বাংলাদেশ থেইকা দাস নিয়া আম্রিকায় আধুনিক দাস ব্যবসা চালানো।

গোলকায়ন আর লিবারিলজমের তাই আমি গুষ্টি কিলাই। আমি কট্টর জাতীয়তাবাদী পরিচয় নিয়া গর্বিত ভাবে জীবন এবং মৃত্যু দুইটাই বাইছা নিতে রাজি আছি। যে মাটির চির মমতা আমার অঙ্গে মাখা, যার নদী জল ফুলে ফলে মোর স্বপ্ন আকা, যে দেশের নীল অম্বরে মন মেলছে পাখা, সারাটি জনম সে মাটির দায়ে বদ্ধ করি। বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ উপনিবেশ বিস্তারের জন্য হয় নাই, বাঙালির মুক্তযুদ্ধ বাজার বিস্তারের জন্য হয় নাই, পশ্চিমা সভ্যতার অনুকরণ করতে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ হয় নাই, কোন আরব্য রজনীতে জাইগা জাইগা স্বপ্ন দেখার জন্য বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ হয় নাই। বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ এই সব কিছুর বিরুদ্ধে।

ফিরিঙ্গি উপযোগবাদী দার্শনিক মিলস, ব্যান্থাম যেই গণতন্ত্র, সেকুলারিজমের আদর্শ প্রচার করছে সেই গণতন্ত্র, সেই সেকুলারিজম নারীর ভোটাধিকার দেয় নাই, দেয় নাই বাঙালির স্বশাসনের অধীকার, সাদা আর কালোরে সমান মানে নাই, বাঙলায় এরা সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়াইছে। ফিরিঙ্গিদের গণতন্ত্র পুরুষের গণতন্ত্র, ফিরিঙ্গিদের মানবতাবাদ শুধু সাদা পুরুষের মানবতাবাদ। পশ্চিমা পূজিবাদ অথবা সমাজতন্ত্র এই দুইই প্রকৃতি আর প্রাণের বিরোধী। পরিবেশ ধ্বংস কইরা যন্ত্রমানবের দুনিয়া প্রতিষ্ঠা করা এদের লক্ষ্য। বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ এইসব কিছুর বিরুদ্ধে।

মোরা একটি ফুল’কে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি, মোরা একটি মুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি। শ্রেফ অন্ন বস্ত্রের জন্য বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ হয় নাই, হয় নাই শ্রেফ একটা পতাকা বা একটা মানচিত্রের জন্য। বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীন সৃষ্ঠিশীলতার পক্ষে হইছে, খাইয়া দাইয়া গান গাওয়ার পক্ষে হইছে। ভারতীয় উপমহাদেশে পশ্চিমা নীল নকশার বিরুদ্ধে বুক ফুলাইয়া এই মুক্তিযুদ্ধ হইছে, ভারত আর পাকিস্তান নামক উপনিবেশের তল্পিবাহক দুইটা কৃত্তিম আর জাতি নিপিড়ক রাষ্ট্ররে বুইড়া আঙুল দেখাইয়া এই রাষ্ট্রের জন্ম হইছে তৃতীয় বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের সামনে উদাহরণ হিসাবে, প্রেরণা যোগাইতে এই রাষ্ট্রের জন্ম হইছে। মোরা নতুন একটি কবিতা লিখতে যুদ্ধ করি মোরা নতুন একটি গানের জন্য যুদ্ধ করি মোরা একখানা ভালো ছবির জন্য যুদ্ধ করি মোরা সারা বিশ্বের শান্তি বাঁচাতে আজকে লড়ি।

কান্ডারি হুশিয়ার জন্ম থেইকা বাংলাদেশ এই দুনিয়ার বুকে এক বিষ্ময়। পূজিবাদী আম্রিকা, সমাজতান্ত্রিক চীন আর প্যান আরব ইসলামী দুনিয়ারে বুইড়া আঙুল দেখাইয়া এই রাষ্ট্রের জন্ম। এই রাষ্ট্র পশ্চিমা উপনিবেশের বিরুদ্ধে এক জীবন্ত বিদ্রোহ, তৃতীয় বিশ্বের নিপিড়িত মানুষের মুক্তির কান্ডারি। অথচ বহু শত্রু আক্রান্ত এই কান্ডারি রাষ্ট্র, এই কান্ডারি জাতীয়তাবাদ আজ বহু ষড়যন্ত্রের আঘাতে, কলঙ্কে মৃয়মান। এই ভুখন্ডের নতুন প্রজন্মের কান্ডারিদের তাই সতর্ক হতে হবে।

আমাদের পূর্বপুরুষরা যেমন স্লোগান তুলেছে- সোনায় মোরানো বাঙলা মোদের শ্বশান করেছে কে? ইয়াহিয়া তোমায় আসামীর মতো জবাব দিতেই হবে। আমাদেরও তেমনি স্লোগান তুলতে হবে- সোনায় মোরানো বাঙলা মোদের শ্বশান করেছে কে? হাসিনা তোমায় আসামীর মতো জবাব দিতেই হবে। খালেদা তোমায় আসামীর মতো জবাব দিতেই হবে। সবুজ ভুখন্ডে যেই লাল সূর্যের জন্ম হুয়েছে আজ থেকে ৪০ বছর আগে, শিল্প বিপ্লবের কশাঘাতে জর্জরিত বর্তমান দুনিয়ায় সেই সবুজ ভুখন্ড আমাদের সবুজ দুনিয়ার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখবে, সেই লালসূর্য সেই সবুজ ভুখন্ড রক্ষায় আমাদের রক্তক্ষয় আর আত্মত্যাগের প্রেরনা যোগাবে। আমার মাতৃভূমি বাংলাদেশ তাই কোন মানচিত্র সর্বস্ব দেশ মাত্র না, একবিংশ শতকের দুনিয়ায় পশ্চিমা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ফ্রন্টিয়ার।

মুক্তিযুদ্ধ তাই শেষ হয় নাই, নতুন প্রজন্মের কান্ডারিদের তা এক মুহুর্ত বিস্মৃত হওয়ার উপায় নাই। দুলিতেছে তরি, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ ছিড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মত? কে আছো জোয়ান হও আগুয়ান, হাকিছে ভবিষ্যত। এ তুফান ভারি, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরি পার। দুর্গম গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার, লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে যাত্রীরা হুশিয়ার। সবাইকে লাল সবুজের বিপ্লবী শুভেচ্ছা।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.