আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেডিকাল বিশ্ববিদ্যালয়

এদেশের সর্বজন স্বীকৃত , সকলের সমাদৃত,সারা-বিশ্ব পরিচিত, সময় উত্তীর্ণ , সাধারন জনগণের স্বাস্থ্য সেবার শেষ আস্রয়; ঐতিহ্যবাহী, কিছু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালকে;মেডিকেল ইউনিভার্সিটি নাম দিয়ে সাধারন জনগণের স্বাস্থ্য সেবাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিতে চাইছেন কিছু স্বার্থান্বেষী মহল। এমনিতেই এইগুলার অবস্থা শোচনীয় তার উপর ইউনিভার্সিটি নাম দিয়ে এগুলার ধারাবাহিকতা নষ্ট করে , জনগণের স্বাস্থ্য সেবাকে উপেক্ষা করে এগুলুকে দলীয় প্রতিস্থানে পরিণত করতে চাইছে এই মহল। এইসব স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানকে ইউনিভার্সিটি করে এদের ধারাবাহিকতাকে ধ্বংস করে,আমজনতার চিকিথসার শেষ আস্রয়কে নষ্ট করে ও মেডিকেল শিক্ষার মূল-উৎপাটন করে আমাদের কি লাভ? আমজনতাকে স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত করা,দলীয় লোকের নিয়োগ, বদলিহীন চাকুরির নিশ্চয়তা, নিয়োগ বাণিজ্য, এমবিবিএস কে বেসরকারি খাতে নিয়ে গিয়ে ধ্বংসের মধ্যে ঠেলে দেয়া ছাড়া ভাল কোন কিছু কি হবে? এইসব ধ্বংসাত্মক চিন্তা এখনি বন্ধ করতে হবে; নাহলে জাতিকে অনেক খেসারত দিতে হবে। ইউনিভার্সিটি করতে চাইলে আলাদা জায়গা জমি নিয়ে নুতন ভাবে করুন; কোন আপত্তি নাই। আমাদের অনেক নুতন নুতন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান দরকার।

দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য কে কেন ধ্বংস করতে চাইছেন? আমাদের প্রধান মন্ত্রিকে ভুল বুঝিয়ে সবাই তার বাড়িতে বাড়িতে একটা করে মেডিকেল ইউনিভার্সিটি করে বাহাবা নিতে চাইছে । কিন্তু অগ্রপশ্চাৎ কিছুই চিন্তা করছে না। এমন তারল্য চিন্তা দেশের জন্য অবশ্যই ক্ষতিকারক। ইউনিভার্সিটি করতে চান হাজারটা করুন; নুতন করে করুন , এতে দেশের ও আপনাদের আরও বেশী উপকার হবে। সরকারি এইসব প্রতিষ্ঠানকে ইউনিভার্সিটি করলে জনগণের বা মেডিকেল স্বাস্থ্য বেবস্থার কি উন্নয়ন হবে তার কিছু চিত্র দেখুনঃ বঙ্গবন্ধু মেডিকেল ইউনিভার্সিটি হতে আমজনতা কি পাচ্ছে? ১।

প্রথমে ফ্রী বেড ছিল ৬০% এখন তা কমে ৫০% হয়েছে। ২। বহিঃবিভাগের টিকেট এর মূল্য ১০টাকা থেকে ৩০ টাকা। আগে টিকেট এর লিখার যায়গা যতদিন থাকত ততদিন তার মেয়াদ থাকত। এখন ১মাস মেয়াদ।

৩। পেয়িং ব্যাড ১৯০ টাকা/ দিন, কেবিন- সর্বনিম্ন ৮০০ টাকা/ দিন ৪। বহিঃবিভাগের কোন রুগীর পরীক্ষা সাধারনত বিনামুল্লে হয় না। ৫। পেয়িং, কেবিন এর সব পরীক্ষা,অপারেশান টাকা ছাড়া হয় না।

৬। ফ্রী ব্যাড এর রুগীদের অনেক পরীক্ষাই বিনামুল্লে হয় না। ৭। কোন অত্যাধুনিক চিকিথসা সেবা বিনা মূল্যে হয় না। ৮।

ফ্রী রুগিকেও লেপারস্কপি এর মাধ্যমে পিত্তথলির পাথর অপারেশান এর জন্য কমপক্ষে ৭০০০ টাকা দিতে হয়। ৯। অপারেশান এর সব ঔষধ ফ্রী রুগিকে কিনতে হয়। ১০। নন ফ্রী রুগীকে শুধু এনাস্থেসিয়া এর ড্রাগ সরবরাহ করা হয় বাকি ড্রাগ কিনতে হয়।

১১। আগে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আলাদা ফ্রী কেবিন ছিল , এখন একটা সীট ও বরাদ্ধ নাই। ১২। আমাকে আমার গাড়ী আমার কেম্পাস এ পারকিং করতে ৬ মাসে ৫০০ টাকা করে দিতে হয়। মেডিকেল অফিসার দের ১০ টাকা/ ঘণ্টা করে দিতে হয়।

১৩। রুগীর আত্মীয়কে প্রতিবার হাসপাতালে ঢুকার জন্য ১০ টাকা হারে দিতে হয়। ১৪। যোগ্যতার ভিত্তিতে এখানে কোন নিয়োগ,প্রমশন হয় না। কিসের ভিত্তিতে হয় সবাই আপনারা অবগত আছেন।

১৫। একদল সুবিধা নিচ্ছে আর এক দল অপেক্ষা করছে। এ যেন গনিমতের মাল। ১৬। স্বাস্থ্য বেবস্থার কোন উন্নয়ন ঘটিয়েছে বলে আমার জানা নাই।

১৭। দেশে বা বিদেশে কোন সুনাম বা সুখ্যাতি অর্জন কারো চোখে পড়েছে কি? ১৮। দলীয় লোকরাই বিভিন্ন স্কলারশিপ এর সুবিধা নিচ্ছেন। ১৯। শুনিতেছি ক্ষমতা বদল হলে নাকি এই ইউনিভার্সিটি এর অস্তিত্বই থাকবে না।

আল্লাই জানে কি যে হবে? ২০। এভাবে জাতীকে নিয়ে, জাতীর সম্পদ কে নিয়ে খেল তামাশা কি ঠিক? অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা পয়েন্ট বাদ পড়েছে আর তা হল অবৈতনিক মেডিকেল প্রসিক্ষন এর জন্য মাত্র ৬০০০ টাকা জমা দিয়ে ১ ইয়ার এর জন্য নাম লিখাতে হয়। তাও সীট সংখ্যা প্রতি ইউনিট এ ২-৩ জন। এটাও খুব শীঘ্রই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমার প্রশ্ন জাতি এ ইউনিভার্সিটি থেকে কি পেল? জাতীর কি ফায়দা হলো ? আরও অনেক কিছুই আছে যা আমি জানি না ।

এখন আবার দেশ ও বিশ্ব বরেণ্য ; দেশ ও জাতীর গর্ব, আস্থা, ও আস্রয় দেশের ঐতিহ্যবাহী প্রথম শ্রেণীর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল গুলুকে ইউনিভার্সিটি বানিয়ে , দেশ ও জাতীকে নতুন কিছুই না দিয়ে সাধারন মানুষের স্বাস্থ্য সেবাকে উপেক্ষা করার প্রয়াস চলছে। এ অবস্থা কিছুতেই জাতি মেনে নিতে পারে না। দেশের স্বাস্থ্য বেবস্থা এখনো অপ্রতুল। আমাদের আরও অনেক বড় বড় হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজ , ইউনিভার্সিটি দরকার। তা না করে সাধারন জনগনের চিকিথসার শেষ আস্রয় এইসব মেডিক্যাল কলেজ গুলুকে নামে মাত্র ইউনিভার্সিটি বানিয়ে আমজনতা কে স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত করার প্রয়াস বন্দ করতে হবে।

অনেক দলীয় ডাক্তার, মেডিকেল এর অনেক শিক্ষকই তড়িঘড়ি করে জনগনের সম্পদ, এইসব মেডিকেল কে ইউনিভার্সিটি করার পক্ষে কাজ করছেন ;অনেক সাফাই গাইছেন। কিন্তু ওঁদের যদি আপনি বলেন যে ইউনিভার্সিটি এর শিক্ষকরা প্রাকটিস করতে পারবেনা; তাহলে আপনি ওঁদের কাউকেই ইউনিভার্সিটি এর পক্ষে পাবেন না। প্রাইভেট প্রাকটিস জমানো, বদলি বন্ধ করা, চাকুরির মেয়াদ বাড়ানো, চাকুরি বাগানো,বিভিন্ন পোস্ট বাগানোর ধাঁদায় আজ তাঁরা ইউনিভার্সিটি এর পক্ষ নিয়েছে। সাধারন,জনগন এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। আমাদের কেউ যেন ধোঁকা না দিতে পারে ।

বিএসএমএমএউ এর মতো দলীয়করণ এর জন্য জনতার শেষ আস্রয় এইসব প্রতিষ্ঠানকে কোন ভাবেই দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা চলবে না। আমরা কোন ভাবেই মেডিকেল ইউনিভার্সিটি এর বিপক্ষে না। আমাদের চাওয়া হল জনতা যেন বঞ্চিত না হয়। দেশের ঐতিহ্য কে কেন ধ্বংস করতে হবে? দেশে কি যায়গার বা লোকবলের অভাব? নুতন নুতন প্রতিষ্ঠান করুন, নুতন নুতন কর্মসংথান তৈরি করুন। দেশ কিছু পাবে।

কেন জনগনের একটা সম্পদকে নষ্ট করে শুধু দলীয় বা বেক্তি স্বার্থকে বড় করে দেখছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রংপুর এ কারমাইকেল কলেজ কে ইউনিভার্সিটি না করে নুতন একটা ইউনিভার্সিটি করেছেন এবং বলেছেন কারমাইকেল কে ইউনিভার্সিটি করলে রংপুর বাসি তো নুতন কিছুই পাবে না; তাই তিনি নুতন ইউনিভার্সিটি করেছেন। আমাদের এটাই চাইতে হবে যে, নুতন নুতন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান হউক। তাতে জাতি কিছু হলেও পাবে কোন কিছুই হারাবে না। আসুন আমরা সবাই মিলে স্বাস্থ্য সেবার মান ও পরিধি বাড়াতে নুতন করে, নিজস্ব যায়গা নিয়ে নুতন নুতন মেডিকেল ইউনিভার্সিটি বা প্রতিষ্ঠান বানানোর জন্য চেষ্টা করি।

কোন অবস্থাতেই বেক্তি বা দলীয় স্বার্থ বিবেচনা করে ;জনগণকে বঞ্চিত করে; জনগণের সম্পদ ,এইসব মেডিকেল কলেজ গুলকে শুধু নাম পরিবর্তন এর মাধ্যমে দলীয় প্রতিস্থানে পরিণত করা চলবে না। বিবেককে জাগ্রত করুন। দেশ ও জনগণের স্বার্থে কাজ করুন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।