আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আখতারুজ্জামান মোহাম্মদ ইলিয়াস

সুখীমানুষ শচীনদেব বর্মণ একবার গর্ব করে বলছিলেন যে তিনি যখন বাড়ী ফিরছিলেন তখন রাস্তায় কতগুলো ছেলে বলাবলি করছিলো - ঐ দেখ উনি হচ্ছেন আ.ডি. বর্মণের বাবা। ভারতবর্ষের সবচেয়ে জ্বলজ্বল করা সঙ্গীত তারকা হলেন শচীন কর্তা নিজে। তিনি নিজের নামেই ছিলেন বিশ্বব্যাপী নামকরা। অথচ এই তিনিই তাঁর ছেলে রাহুল দেব বর্মণের পরিচয়ে পরিচিত হয়ে সেদিন নিজেকে স্বার্থক মনে করেছিলেন। কারন এমন গুনী সন্তানের বাবা হওয়াটা সত্যিই গর্বের।

আর এমন গুনী ছেলে একজন থাকলেই এই ছেলের নামে বাবা পরিচিতি পেতে পারেন অনায়াসে। একজন লেখকের কাছে তাঁর সন্তানতুল্য হচ্ছে তাঁর সৃষ্টি। এই অর্থে, বাংলা সাহিত্যের তেমন উদাহরণ হচ্ছেন কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। তিনি একজন স্বল্পপ্রজ লেখক ছিলেন। মাত্র দুইটি উপন্যাস, গোটা পাঁচেক গল্পগ্রন্থ আর একটি প্রবন্ধ সংকলন নিয়েই তার সৃষ্টিসম্ভার।

ইতিহাস, রাজনীতি, বাস্তবতার নিগুঢ় জ্ঞান সবকিছু তিনি সহজ সরল ও কিছুটা কৌতুকবোধের মাধ্যমে শব্দবন্দী করেছেন তাঁর লেখনীতে। বাংলা সাহিত্যে সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ্’র পরেই আখতারুজ্জামন ইলিয়াসকে ধরা হয় সর্বাধিক প্রসংসিত বাংলাদেশী লেখক। বাংলাদেশের সামাজিক নিয়মেই সাধারণত মেয়েদেরা সন্তান সম্ভবা হলে বাবার বাড়ীতে নিয়ে আসা হয় একটু বেশী যতেœর জন্য। হয়ত এই সূত্র ধরেই মামার বাড়ীতে জন্ম হয় আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের। জন্মটা ১৯৪৩ সালের ১২ই ফেব্র“য়ারী গাইবান্ধা জেলার গেটিয়া গ্রামে।

আর বাবার বাড়ী বগুরা জেলায়। তাঁর ডাক নাম মঞ্জু। বাবা বদিউজ্জামান ইলিয়াস ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৩ পর্যন্ত ছিলেন পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য এবং মুসলিম লীগের পার্লামেন্টারী সেক্রেটারী। লেখকের মায়ের নাম বেগম মরিয়ম ইলিয়াস। বগুরা জেলা স্কুল থেকে আখতারুজ্জামান ১৯৫৮ সালে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন।

আর ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন ১৯৬০ সালে ঢাকা কলেজ থেকে। সব শেষে ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে বাংলায় অনার্স ও মাষ্টার্স করেন ১৯৬৪ সালে। আখতারুজ্জামান মোহাম্মদ ইলিয়াসের কর্মজীবন শুরু হয় জগন্নাথ কলেজের প্রভাষক হিসেবে। তারপর তিনি মিউজিক্যাল কলেজের উপাধ্যাক্ষ, প্রাইমারী শিক্ষাবোর্ডের উপ-পরিচালক, ঢাকা কলেজের বাংলার প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। সুরাইয়া তুতুলকে তিনি বিয়ে করেন ১৯৭৩ সালে।

মুক্তিযোদ্ধের সময় তিনি আশ্রয়দাতা হিসাবে কাজ করেন বহুমুক্তিযোদ্ধার। এমনকি গোপনে তাদের সাথে যোগাযোগও রক্ষা করেন তিনি। তাঁর লেখা প্রতিশোধ, অন্য ঘরে অন্য স্বর, খোঁয়ারী, মিলির হাতে স্টেনগান, অপঘাত, জাল স্বপ্ন স্বপ্নের জাল, রেইনকোট ইত্যাদি গল্পে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষাভাবে উঠে এসেছে মুক্তিযোদ্ধ ও তার পরের ইতিহাস ও সমাজ ও বাস্তবতা। ১৯৭৫ সালে তিনি বাকশালে যোগ দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। যদিও তখন সরকারী কলেজের শিক্ষক হিসাতে তিনি বাধ্য ছিলেন যোগ দিতে।

১৯৮৩ সালে তিনি বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরষ্কারে ভূষিত হন। আর ১৯৯৬ সালে পান আনন্দ পুরষ্কার। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সাহিত্যিক মানিক বন্দোপাধ্যায়ের মত তিনিও সারা জীবন লড়াই করেছেন রোগশোকের সাথে। ডায়বেটিস ও জন্ডিস ছিলো তার নিত্যসঙ্গী। অবশেষে ১৯৯৭ সালের আজকের দিন (৪ঠা জানুয়ারী) ঢাকা কম্যুনিটি হাসপাতালে তিনি ডান পায়ের ক্যান্সারের টানে আমাদেরকে ছেড়ে চলে যান না ফেরার দেশে।

আর্নেস্ট হেমিংওয়ে দ্যা ওল্ড ম্যান এন্ড দ্যা সি এর মত মাত্র সাতটি উপন্যাস লিখেই অচ্ছেদ্য ও অমর হয়ে আছেন ইংরেজী সাহিত্যে। আর বাংলা সাহিত্যে মাত্র দুইটি উপন্যাস চিলেকোঠার সেপাই (১৯৮৭) এবং খোয়াবনামা (১৯৯৬) লিখেই অন্যতম ও অমর হয়ে আছেন কালজয়ী লেখক আখতারুজ্জামান মোহাম্মদ ইলিয়াস। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.