আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চুড়ামনির কিসসা ১ – মাথার খুলি

এক দেশে ছিল এক গুরু । শিষ্য বাড়ি যাবে বলে একদিন প্রস্তুত হচ্ছিলেন তিনি । ঠিক এসময় চুড়ামনি নামে এক ছেলে এসে গুরু পা ধরে বসে পড়ল । আর বলতে লাগলঃ গুরু ! আমারে তোমার শিষ্য করে নাও । গুরু বললেনঃ ঠিক আছে ।

চল আরেক শিষ্য বাড়ি । আহার করে আসি । গুরু শিষ্য দুজনে হেটে রওয়ানা হলেন । সারাদিন হেটে ক্লান্ত হয়ে গুরু বললেনঃ বাবা চুড়ামনি ,আমি এই বটগাছে নিচে একটু বসি । তুমি ঐ যে ময়দানের ঐ পাড়ের বাজার থেকে চিড়া মুড়ি কিছু নিয়ে আস ।

চুড়ামনি বললঃ ঠিক আছে । বাজারে কাছাকাছি একটা তেমাথা রাস্তা । ঐ রাস্তার মাঝে একটা মরা খুলি দেখে চুড়ামনি চমকে উঠল । আয় গন্ডায় লাথ্থি মারে যায় গন্ডায় লাত্থি মারে ! এই কান্ড দেখে চুড়ামনি গেল চিড়ামুড়ির কথা ভুলে । এক দৌড়ে এসে গুরু পায়ের কাছে চলে এলো হাপাতে হাপাতে ।

গুরু বললঃ কিরে বাবা চুড়ামনি ,চিড়ামুড়ি কই ? চিড়ামনি হাপাতে হাপাতে খুলিটির কথা গুরুকে খোলে বলল । শুনে গুরু বললঃ ও এই কথা ! তবে শোন সে কাহিনী । এক দেশে ছিল এক রাজা । লোক লস্কর ,ধন দৌলতের তার অভাব ছিল না । তার ছিল একটি মাত্র ছেলে ।

ছেলেকে পড়ানোর জন্য রাজা এক পন্ডিত রেখে দিলেন । ছেলে পন্ডিতের কাছে যায় – আসে । এইভাবে কয়েকদিন কেটে গেল । একদিন পন্ডিত সাহেব কথায় কথায় বললেনঃ আল্লায় যারে দিছে বিদ্যা ,তার বিদ্যা দিমু কিদ্দা ? এই কথায় রাজকুমার শুনে গেলেন হড়কে । লেখাপড়া দিল ছেড়ে ।

সকলে কতযে চেষ্টা করল কিন্তু তার এক কথা ‘বিদ্যা পামু আল্লারথন’ । শুনে রাজা গেলেন রেগে । সেই দেশেরই এক সওদাগর ছিল । সে আজ তার জাহাজ ভাসাবে । তাই আসল রাজার অনুমতি নিতে ।

রাজা ভাবলেন এই মোক্ষম সময় । এ কুলাঙ্গার মুর্খ ছেলে রেখ বদনাম করে লাভ নাই । সওদাগরকে হুকুম দিয়ে বললেনঃ এই মুর্খরে তোমার লগে নিয়া যাও । সমুদ্রে বাক্সবন্দি করে ফেলে দিও । এরপর রাজার ছেলেকে নিয়ে সওদাগড় জাহাজ ছেড়ে দিল ।

এইদিকে রাণী খবর পেয়ে তো কেঁদে হয়রান । পশু কাঁদে পাখি কাঁদে কাঁদে গাঙের ঢেউ রাজারকুমার যায়রে মরে রুখলনা রে কেউ ! একদিন দুইদিন করে কেটে যায় সাতদিন । জাহাজ তখন সমুদ্রের মাঝে । রাজকুমারকে ঘুমন্ত অবস্থায় সওদাগর দিল তাকে সমুদ্রে ফেলে । পানিতে পড়েই রাজকুমারের ঘুম গেল ছুটে ।

প্রানপনে চেষ্টা করতে লাগল ভেসে থাকার । জাহাজ পেরিয়ে যায় ,দুর দুরান্তে । রাজকুমার প্রায় অবশ । ঠিক সেইসময় গেলে ঐ সাগরে চর জেগে । আর তাতে ঠাঁই নিয়ে রাজকুমার পেলেন রক্ষা ।

দয়ার সাগর দয়াল আল্লা এই অকুল সায়রে কেরামতে চর জাগাইয়া বাচাইলা আমারে । রাজকুমার চরে খাদ্যের খোঁজে লেগে গেলে । দেখতে দেখতে সুর্য ডুবে দেখা দিল চাঁদ । এমন সময় রাজকুমার দেখতে পেলেন চরের ঠিক মাঝখানে একটা অদ্ভুত গাছে । সেইগাছের ঝাকরা পাতার নিচে সেই গাছের ফল গেয়ে রাজকুমার বসলেন বিশ্রাম নিতে ।

তখন রাত দুই প্রহর । কি জানি কথার আওয়াজে রাজকুমারের ঘুম গেলে ভেঙ্গে । চমকে উঠে দেখেন গাছের মধ্যে দুটো পাখি । একটা নামঃ শুক আর একটার নাম সারী । সারী বলছেঃ শুক এই বিজন চরে মানুষ আসল কিভাবে ? শুক বলছেঃ শুন সারী ।

বিস্তারিত বলছি তোমায় । এই হচ্ছে এক রাজকুমার । ভাগ্যের ফেরে আল্লার উছিলায় ও নিয়েছে ইচ্ছায় বনবাস । তবে ও ছেলে যদি আল্লার নাম নিয়া এই গাছের পাতা ভক্ষন করে তবে খুব শীঘ্রই সে এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাবে । তবে .. সারী বললঃ তবে কি ? শুক বললঃ তবে ভাগ্য গননা যদি ভুল না হয় রাজকুমারের আরেকটা ফারা আছে ।

সেটা আমার জানা নাই । এই কথা বলে পাখি দুটো গাছে থেকে উড়ে চলে গেল । রাজকুমারও বিশ্বাসী মনে গাছের পাতা খেতে শুরু করর । আল্লারে ডাকিয়া ছাওয়াল কিনা কাম করে উত্তরের পাতারে খাইল রাত দুইফর ধরে । ।

তিন পহরের কালে ছাওয়াল কি কাম করিল পশ্চিমের ডালের পাতা ছিড়িয়া খাইল প্রভাবের শুকতারা যখনে উঠিল দক্ষিনের পাতারে ছাওয়াল খেয়ে শেষ করিল কালি আন্ধার গিয়া যখন দল পহর আসিল আল্লারে ভাবিয়া ছাওয়াল পুবের পাতা খাইল । । রাত যখন শেষ ,তখন গাছের পাতাও শেষ ,রাজকুমারের ক্ষুদা তৃষ্ণা ,ক্লান্তিও শেষ । সেখান থেকে এসে দেখে এক অবাক কান্ড । মাঠের মাঝে একটা বাড়ি ।

সোনালী সে বাড়ি খালি ঝিকিমিকি করে রাজকুমারে এসে সেথায় আস্তানা গাড়ে । রাজকুমার সোনার ঘরে থাকে ,আল্লার উপাসনা করে আর সায়রের দিকে তাকিয়ে নানা কথা ভাবে । এইভাবে দিন । সপ্তাহ পেরিয়ে মাস আসে । হঠাত্ একদিন রাজকুমার দেখে নদীতে এক ভেলা ।

ভেলার মসারী টেনে দেখেঃ সোনার বরণ কন্যা ওরে মশারীর ভেতরে রাহুতে গিড়িল যে চাঁন পালায় মেঘের আড়ে । সাপের ছোবল দাগ কন্যার পায়ে বিধে আছে চিঠি একখানে পাশে পড়ে রাজকুমারী আছে । রাজকুমার লেগে গেলেন সেবার । কাসবন , রোদ্দর পেরিয়ে আসে বর্ষার ঢালি । রাজকুমার আর রাজকুমারী দিব্বি আছে এখন ।

একদিন । সেই যে সওদাগর গিয়েছিল বানিজ্যে । সে ফিরছিল এ পথে । এসে দেখে অবাক কান্ড । সমুদ্রের মাঝে এক চর আর তাতে এক অপরুপ নারী ।

রাজকুমারকে দেখে সে গেল আরও চমকে । জাহাজ ভারে সওদাগর নামলেন চরে । তাকে দেখে রাজকুমার এলো ছুটে । ঠিক হল সোনার ঘরটার বিনিময়ে সওদাগর তাদের দেশে ফিরিয়ে দিবে । কিন্তু সওদাগরের মনে জাগল বদ মতলব ।

গভির রাতে রাজকুমার আর রাজকুমারী যখন ঘুমে বিভোর তখন সে কি করল ,রাজকুমারকে বেঁধে দিল সমুদ্রে ফেলে । ঘুমের মধ্যে রাজকুমার পড়িল সায়রে কান্দিত লাগিল মুখে আল্লা আল্লা করে । জাহাজের মধ্যে রাজকুমারীর ঘুম ভাঙতেই সেও শুরু করল কান্না । সে কান্নায় এলো ঝড় । তছনছ অবস্থা ।

এদিকে রাজপুত্র একটা কাঠ পেয়ে তাতে ঝাপটে ধরে ভেসে রইল । ওদিকে রাজকুমারীও জাহাজের একটা খোল ধরে ভেসে রইল । ধলপ্রহরের সময় তাদের হল দেখা । আর এদিকে সদাগর ঝাপটে ঝাপটে একটা চরে উঠতেই ধরল তাকে বাঘে । সবখেয়ে মাথাটা রেখে চলে গেল সে ।

আর কোন এক বনিক সে চরে নেমে মাথাটাকে নিয়ে এলো এই বাজারে । সেই থেকে এই মাথার খুলি আইতে খায় লাত্থি যাইতে খায় লাত্থি (ঢাকার লোককথা অবলম্বনে ) প্রথম প্রকাশ এখানে ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.