আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লেখাটা একবার পড়বেন কি?

লেখাটা কিভাবে লিখব বুঝতে পারছি না। হাত কাঁপছে, চিন্তাগুলো বারবার এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। একটা ব্যাপার এখনো মেনে নিতে পারছি না, এত কম বয়সের একটা ছেলে কেন মারা যাবে? তার মৃত্যু যদি রোগে ভুগে হত বা অন্য কোথাও কোন পরিস্থিতিতে, শোক জানানো ছাড়া কিছু করার ছিল না আমার। কিন্তু সে মারা গেল তার জন্য নিরাপদতম যায়গায়, শতশত সহপাঠির সামনে। প্রকাশ্য দিবালোকে তার অন্তিম নিঃশ্বাস বেরিয়ে গেল বিভৎসতম রূপে।

বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে তাকে বিদায় নিতে হল অকালে। ধর্ম হয়ত বলে তার জীবন এই পর্যন্তই নির্দিষ্ট ছিল, তাতে সান্তনা পাওয়া যায় কিন্তু মেনে নিতে কষ্ট হয়। দেশে এই প্রথম কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষার্থী নিহত হল তারই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহনের নিচে চাপা পড়ে। আর সেই সাথে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দেখল তার একুশ বছরের ইতিহাসে ক্যাম্পাসের ওপর প্রথম মৃত্যু, প্রথম লাশ। খুবিতে ছাত্র রাজনীতি নেই, তাই সন্ত্রাস-খুন-মারামারি এগুলো অপরিচিত শব্দ এখানে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একুশ বছরে রাজনৈতিক কারণে কোন লাশ পড়েনি। আজ পড়ল। ঘটনাটাকে অনেকে দুর্ঘটনা বলেন, আমি মানি না, আমার কাছে এটা হত্যাকান্ড। লিখতে লিখতে বারবার হাত থমকে যাচ্ছে। বারবার শুধু একটাই দৃশ্য মাথায় ভেসে ওঠে।

ওর লাশটা পড়ে আছে বাসের নিচে, চাকার সমান্তরালে। চাকায় পিষ্ট হয়ে ওর মগজ বেরিয়ে গেছে, রাস্তায় তার ঘোলাটে দাগ। তার সাথে রক্তের স্রোত। প্রাথমিকভাবে ওকে ব্যানারে ঢেকে দিয়েছে কেউ। ব্যানারে ঢাকা শরীরটার মাথা থেতলানো, ওখানটা রক্তে গাঢ় লাল।

কেডস পরা পা টা বেরিয়ে ছিল। বাসের নিচে উঁকি দিয়ে এটাই দেখেছি আমি। আর যারা প্রত্যক্ষদর্শী, তাদের কথা আর কি বলব। ওদেরকে আরো বিভৎস দৃশ্য দেখতে হয়েছে। এমন কেউ ছিল না ক্যাম্পাসে যে চিৎকার করে কাঁদেনি।

ওর লাশটা দেখে চিন্তা হচ্ছিল, এই ছেলেটা একটু আগেই ক্লাস করেছে, আড্ডা দিয়েছে। আর এখন বাসের চাকার পাশে শুয়ে আছে লাশ হয়ে। কিভাবে সম্ভব? এমন কেন হয়? সৃষ্টিকর্তা এতটা নিষ্ঠুর হলেন কিভাবে? আচ্ছা, ছেলেটা কি বাসের চাকার নিচে তলিয়ে যাবার সময় 'মা' বলে ডেকেছিল? আবার মনে হচ্ছিল, ও যখন সকালে বাসা থেকে বের হয় ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে, তখন কি জানত ওর প্রিয় ক্যাম্পাসেই জীবন দিতে হবে আজ? আমি রাজনীতি বুঝি না। ওর মৃত্যু নিয়ে, লাশ নিয়ে যেসব রাজনীতি হয়েছে আমি তার জটিলতা বুঝি না। শুধু একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন কেউ, যে ক্যাম্পাসের উপর দিয়ে বাইরের গাড়ি চলে না আর নিরাপদতম পরিবেশ সেখানেই পরিবহনের গাড়িতে ছেলেটির মৃত্যু কেন হল? সবচেয়ে ব্যথা পেয়েছি যে ব্যাপারটায়, ছেলেটির বাবা চাচ্ছিলেন না ওর জানাযা ক্যাম্পাসে হোক।

কিন্তু অনেক অনুরোধের পর তিনি রাজি হয়ে ওর কাফন পরানো লাশ পাঠিয়ে দিলেন। জানাযা হল, তারপর আবার লাশ নিয়ে চলে গেল ওর আত্মীয়-স্বজন আর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীরা। জানাযায় উপস্থিত শোকার্ত শিক্ষার্থীরা জড়ো হল মুক্তমঞ্চে। আর ওমনি শ দুয়েক দাঙ্গা পুলিশ লাঠি নিয়ে ঢুকে পড়ল ক্যাম্পাসে। যেন ছাত্রদের উচিৎ শিক্ষা দেবে ওরা।

এটা নিয়ে প্রতিবাদ হল, শিক্ষকবৃন্দ তাদের পক্ষেই সাফাই গাইলেন। একজন আবার বললেন, খুলনার এএসপি এসেছেন মাত্র দুই-চারজন বডিগার্ড নিয়ে, ছাত্রদের সাথে কথা বলতে, ওদের বোঝাতে। অথচ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে দৃষ্টিসীমার ভেতরই প্রায় ত্রিশ জন পুলিশ, তাদের পেছনে অগণিত। জানাযা শেষ করে মেইন গেটে এক বন্ধুকে আনতে গিয়ে প্রথম টের পাই এত পুলিশ ঢুকেছে। এটা কেন হবে? তাহলে কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্য কি ছিল? একটা উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া? এই রাজনীতির শেষ কোথায়? সবশেষে, অপরিচিত ছোটভাইটির জন্য প্রার্থনা করি যেন ওর পরকালের জীবন শান্তিময় হয়।

 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।