আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাইকো থ্রিলারঃ (!) (বীভৎসতার রেটিং এ ১৮+)

কিচ কিচ কুচ কুচ কাচ কাচ কোচ কোচ!!! (প্রথমেই হামা ভাইয়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। হামা ভাইকে কথা দিয়েছিলাম এরকম লেখা আর লিখব না, অথচ প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে লিখেই ফেললাম। সরি হামা ভাই। ) পর্ব একঃ দুঃস্বপ্ন ১ আমি পিছনে হাত বেঁধে যে জিনিসটার সামনে দাঁড়িয়ে আছি সেটা একটা ঘর। কাঁচের ঘর।

আমার পাশে যে লোকটা দাঁড়িয়ে আছে তার নাম কর্নেল রুহিন। পরনে তার সামরিক পোশাক, বুকে কাঁধে চকচকে ধাতব ব্যাজ। কর্নেল রুহিন আমার কাঁধে হাত রেখে বলল, শুরু করব? কি শুরু করতে হবে এটা আমার ঠিক মনে পড়ল না। তবুও বললাম, করুন। সাথে সাথে কাঁচের ঘরের মধ্যে ঘড়ঘড় একটা শব্দ শুরু হল।

কাঁচের ঘরটা অস্পষ্ট থেকে ক্রমশ স্পষ্ট এবং স্পষ্টতর হতে লাগল। ভিতরে আবছাভাবে কিছু একটা যেন হঠাৎ করেই সচল হয়ে উঠল। কাঁচের ঘরটা আরেকটু স্পষ্ট হতেই আমি ভিতরের বস্তুটাকে চিনতে পারলাম। একটা মানুষ। একটা নগ্ন মানুষ।

মানুষটি তার পায়ের দিকে ঝুঁকে কি যেন দেখছে। অথবা দেখতে চাচ্ছে। সে আপ্রাণ চেষ্টা করছে নিজের পায়ের আঙ্গুলে গাল ছোঁয়ানোর। পারছে না। কিছুতেই পারছে না সে।

এক মুহূর্তের জন্য অন্যমনস্ক হয়েছিলাম, এমন সময় হঠাৎ দেখলাম, মানুষটি তার ডান পায়ের বুড়ো আঙ্গুল কামড়ে ধরেছে। কি ব্যাপার? আমি কর্নেল রুহিনের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলাম, মানুষটা তার নিজের পায়ের আঙ্গুল কামড়ে ধরল কেন? কর্নেল রুহিন হেসে বললেন, মানুষটি তার পায়ের আঙ্গুল দিয়ে এক অবলা কুমারীর সতীচ্ছেদ হরণ করেছিল। দূষিত রক্ত জমে ছিল তার পায়ের আঙ্গুলের নখের নিচে। ছি ছি! হ্যাঁ। আর সেজন্যেই এখন প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ সে নিজের পায়ের আঙ্গুল... নাটকীয়ভাবে থেমে গেলেন কর্নেল রুহিন।

পায়ের আঙ্গুল...? জানতে চাইলাম আমি। See for yourself. ভেসে এল গমগমে কণ্ঠের উত্তর। আমি কাঁচের ঘরের দিকে তাকালাম। মানুষটার মুখ অস্পষ্ট। রক্তে একেবারে মাখামাখি অবস্থা।

ডান পায়ের বুড়ো আঙ্গুলটা স্বস্থানে নেই, ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটছে কাটা জায়গাটা থেকে। আমার অবাক চোখের সামনেই মানুষটা কচকচ করে নিজের ডান পায়ের বুড়ো আঙ্গুল খেয়ে ফেলল। ২ ভয় লাগছে? প্রশ্নটা এল কর্নেল রুহিনের মুখ দিয়ে। না। গা গোলাচ্ছে? না।

Should we proceed? হ্যাঁ। মানুষটা আবার সচল হয়ে উঠল। অদ্ভুত ভঙ্গিতে ঘাড় বেঁকিয়ে অবিশ্বাস্য ক্ষীপ্রতায় পাশে পড়ে থাকা একটা কুড়াল নিয়ে সে গোড়ালিদুটো বিচ্ছিন্ন করে ফেলল মূল শরীর থেকে। আমি কর্নেলের মুখে দিকে তাকালাম সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে। কর্নেল রুহিন বললেন, মানুষটা বিয়ে করেছিল ফুটফুটে একটা মেয়েকে।

তাদের প্রথম সন্তান যখন স্ত্রীটির গর্ভে - তখন তারা আলট্রাসনোগ্রাফি করে বের করেছিল বাচ্চাটা মেয়ে। তারপর? তারপর মানুষটা বেঁকে বসেছিল। সে বলেছিল এ সন্তান তার নয়। সে বলেছিল - এ সন্তান তার স্ত্রীর বিবাহপূর্ব অথবা বর্তমান কোন অবৈধ অনৈতিক বিকৃত ভালোবাসার ফসল। সে চেয়েছিল তার বউ যাতে সন্তানটা নষ্ট করে ফেলে।

তাই? আসলেই কি করেছিল? বউ প্রথমে রাজি হয় নি। পরে মানুষটা নিজেই বউকে বিছানায় ফেলে এই গোড়ালিদুটো দিয়ে পাড়া দিয়েছিল গর্ভবতী বউয়ের পেটের উপর। Oh My God! হ্যাঁ। বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, দুদিন পর মারা গিয়েছিল বউটাও। আর সেটারই প্রায়শ্চিত্ত আজ, এভাবে করল লোকটা।

৩ রক্তে ভেসে যাচ্ছে কাঁচের ঘরটা। মানুষটা কি মারা যাবে? বললাম আমি। কর্নেল রুহিন অদ্ভুত একটা হাসি হাসলেন। বললেন, মারা যাবে, তবে এখন নয়। তবে কখন? সেটা তুমি নিজেই দেখবে।

মানুষটা আবার নড়াচড়া শুরু করেছে। তার হাতের কুড়ালটার জায়গায় এখন দেখতে পাচ্ছি একটা করাত। লোকটা করাত দিয়ে নিজের বাম হাঁটুর উপরে কেটে ফেলছে। হাঁটু দিয়ে সে কি করেছিল? কাউকে গুঁতো দিয়েছিল? প্রশ্ন করলাম আমি। কর্নেল রুহিন বললেন, যেমন তেমন গুঁতো নয়, একেবারে প্রাণঘাতী গুঁতো।

ওদের বাসায় চুরি করতে গিয়ে একবার একটা কাজের ছেলে ধরা পড়েছিল, ও তাকে মারতে মারতে অর্ধমৃত করে ফেলেছিল। ছেলেটা তার পা জড়িয়ে অনেকক্ষণ ধরে ক্ষমা চেয়েছিল, কিন্তু তার মনে কোন মায়ার উদ্রেক ঘটাতে সক্ষম হয় নি। শেষমেশ মানুষটার হাঁটুর গুঁতোয় ছেলেটা অজ্ঞান হয়ে যায়, এবং একদিন পর ম্যাসিভ ব্রেন হেমোরেজে মারা যায় ছেলেটা। মানুষটার বিচার হয় নি? না। খোদার জগতে মানুষের বিচার হয়, মানুষের জগতে মানুষের বিচার হয় না।

মানে কি? কর্নেল রুহিন এই কথার জবাব না দিয়ে মুচকি হাসলেন। আমি অবাক হয়ে দেখলাম কাঁচের ঘরের অস্পষ্ট মানুষটা কচকচ করে নিজের বাম হাঁটু খেয়ে ফেলছে। ৪ কাঁচের ঘরটা আস্তে আস্তে স্পষ্ট হচ্ছে। ক্ষীণ একটা শব্দ আসা শুরু করেছে ঘরটা থেকে। ওটা কিসের শব্দ? মানুষটার কান্নার শব্দ।

এতক্ষণ পেলাম না কেন? এই কাঁচের ঘরটা একটা বিশেষ সীমা পর্যন্ত সাউন্ডপ্রুফ। মানুষটির যন্ত্রণাপ্রসূত আর্তনাদের সীমা এতক্ষণ পর্যন্ত সীমার মধ্যেই ছিল। কিন্তু এখন তা সীমা অতিক্রম করেছে। গা গোলানো, কেমন যেন একটা অনুভূতি আমার মধ্যে আস্তে আস্তে দানা বেঁধে উঠছে। আর কতক্ষণ সহ্য করতে পারব বুঝতে পারছি না।

মানুষটাকে এখন আর মানুষ বলা যাবে কি না বুঝতে পারছি না। বরং তাকে এখন অর্ধমানব বলা যেতে পারে। তার দুটো পা ইতোমধ্যেই তার উদরগত হয়েছে। অর্ধমানবের কোমরের কাছে ছোট্ট একটা মাংসপিণ্ড ঝুলছে। অর্ধমানবের হাতে একটি ছুরি উঠে এসেছে।

অর্ধমানব নিজের শিশ্নকে ঘ্যাঁচ করে কেটে ফেলেছে। আর্তনাদের শব্দ তীক্ষ্ণ থেকে তীক্ষ্ণতর হচ্ছে। আমি বললাম, এটা দিয়ে সে কি করেছিল? ব্যাভিচার? ধর্ষণ? সোডোমি? ইনসেস্ট? কর্নেল রুহিন বললেন, তুমি ইডিপাসের কাহিনী শুনেছ? হ্যাঁ শুনেছি। সংক্ষেপে বলতে পারবে? ইডিপাস ছিল এক রাজার পুত্র। রাজা তাকে কোন কারণে দেবতার জিম্মায় পাহাড়ের উপর রেখে আসেন।

কোন একটা খেলায় তরুণ ইডিপাসের ছোড়া চাকতি অনেক দূরে গিয়ে বৃদ্ধ রাজার শরীরে আঘাত করে। তৎকালীন রীতি অনুযায়ী সে-ই হয় নতুন রাজা। পুরনো রাণীর সাথে শারীরিক সম্পর্কের ফলে বাচ্চাও হয় তার। তারপরেই সে জানতে পারে এই রানীই তার প্রকৃত মা। অনুতাপে লজ্জায় রাণী আত্মহত্যা করেন আর ইডিপাস রাণীর চুলের কাঁটা দিয়ে নিজেকে অন্ধ করে দেয়।

গুড। তুমি দেখি সবই জানো। এই মানুষটার মধ্যে ইডিপাস কমপ্লেক্স গ্রো করেছিল। মানে নিজের মায়ের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছিল সে। অতঃপর... থাক থাক আর বলতে হবে না।

প্লিজ। তবু কর্নেল রুহিন রসিয়ে রসিয়ে মানুষটির ভয়ঙ্কর পাপের কথা বলতে থাকেন। শুনে আমার চোখে পানি চলে আসে, ভীষণভাবে গা গোলানো শুরু করে, হঠাৎই আমি বমি করে ভিজিয়ে ফেলি ওয়াটার পালিশ করা কর্নেল রুহিনের চকচকে অক্সফোর্ড শু-র টো। কর্নেল রুহিন হা হা করে হাসতে থাকেন। আড়চোখে আমি দেখতে পাই, অর্ধমানবও কেবল বমি করেছে।

শুধু তার বমিতে টকটকে লাল রক্ত। ৫ কাঁচের ঘরের মধ্যে শুধু একটা মাথা পড়ে আছে। একটু আগে আমি দেখেছি, বা আমাকে জোর করে দেখানো হয়েছে, মানুষটা কিভাবে ছুরি দিয়ে কেটে কেটে নিজের পাকস্থলী, যকৃত, বৃক্ক, প্লীহা অবলীলায় খেয়ে ফেলেছিল। কিভাবে সে কচকচ করে নিজের দুটো ফুসফুস খেয়ে ফেলেছিল। কিভাবে বুকের ভিতর দপদপ করতে থাকা হৃদপিণ্ড সে আস্ত গিলে ফেলেছিল এবং সেটা অন্ননালীর নিচের ফুটো দিয়ে বেরিয়ে এসেও দপদপ করে স্পন্দিত হচ্ছিল।

কিভাবে সে অগনিত পাপের সাক্ষী নিজের রক্তাক্ত নোংরা আঙ্গুল কচকচ করে খেয়ে ফেলেছিল। কর্নেল রুহিন বললেন, এবার দেখবে আসল মজা। আমি দুর্বলভাবে বললাম, কি মজা? মাথাটি নিজেই নিজেকে খেয়ে ফেলবে। কিভাবে? দেখই না। মজা পাবে।

আমি প্রচণ্ড আতঙ্কের সাথে অনেকটাই স্পষ্ট হওয়া কাঁচের ঘরের দিকে তাকিয়ে রইলাম। মাথাটা হঠাৎ একদিকে গড়ানো শুরু করল। আস্তে আস্তে তার বৃত্তাকার জটিল গতির বেগ বাড়তে লাগল এবং হঠাৎ মাথাটা সশব্দে আছড়ে পড়ল কাঁচের দেয়ালের গায়ে। ঝনঝন শব্দ করে ফেটে পড়ল কাঁচের দেয়াল। কর্নেল রুহিনের হা হা হাসির শব্দ শুনতে পেলাম আমি।

মাথাটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম, প্রচণ্ড ধাক্কায় তার খুলি ফেটে গেছে। খুলি ফেটে রক্তাক্ত মগজ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। মাথাটা জিহবা দিয়ে চেটে চেটে সেই মগজ খাচ্ছে। ভয়ে আতঙ্কে চিৎকার দিয়ে উঠলাম আমি। কর্নেল রুহিন বললেন, যাও, কাছ থেকে দেখে আসো।

প্রচণ্ড ভয়ে থরথর করে কাঁপতে লাগলাম আমি। কর্নেল রুহিন সহাস্যে অভয় দিয়ে বললেন, যাও। আমি পায়ে পায়ে মাথাটার দিকে এগিয়ে গেলাম। কাছে গিয়ে চুল ধরে টেনে তুললাম সন্তর্পণে। আমার মুখোমুখি হয়ে আমারই হাতে ধরে থাকা আমারই মাথাটা আমাকে বলল, কেমন আছ সালেহ তিয়াস? সাথে সাথে জ্ঞান হারালাম আমি।

পর্ব দুইঃ বাস্তবতা ছিমছাম, গোছানো একটা ঘরে বসে আছেন দুজন মানুষ। মুখোমুখি। এদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত চিকন যিনি, তিনি অপরজনকে বললেন, আপনি বলতে চাচ্ছেন এই স্বপ্নটাই আপনি নিয়মিত দেখছেন? টেবিলের অপরপ্রান্তে বসা অপেক্ষাকৃত মোটা মানুষটি ঈষৎ হেসে বললেন, হ্যাঁ। নিয়মিত? হুম। প্রতি রাতেই? হুম।

শুনুন, আমি আপনার সমস্যাটি ধরতে পেরেছি। আপনি, বিখ্যাত লেখক সালেহ তিয়াস, জীবনে অসংখ্য গল্পে নির্দ্বিধায় ব্যবহার করেছেন বীভৎসতা ও অশ্লীলতা। আপনার গল্প পড়ে তরুণ সমাজ অশ্লীল হতে শিখেছে, জেনেছে বীভৎসতা মানুষের সাধারণ একটি ধর্ম। আপনার গল্প পড়ে ভাল কিছু কেউ শিখেছে কি না আপনি জানেন না, কিন্তু খারাপ অনেক কিছুই শিখেছে অজস্র পাঠক পাঠিকা। কিন্তু এতদিন আপনার মনে এই নিয়ে বিন্দুমাত্র অনুতাপবোধ হয় নি।

অপরপক্ষের মানুষটি শুধু হাসলেন। কিন্তু জীবনের এই শেষবেলায় এসে আপনার কাছে মনে হচ্ছে, নাহ, এতদিন যা করেছেন, ভুল করেছেন। আপনার জনপ্রিয়তা, সুখ্যাতির সবটুকুই আপনি ব্যয় করেছেন মানুষকে খারাপ কিছু শেখানোর কাজে। এই অনুতাপ ক্রমেই অধিকার করে নিয়েছে আপনার অবচেতন মনকে, যা আপনার সচেতন মন কখনও জানতেও পারে নি। এবারেও অপরপক্ষের মানুষটি শুধু হাসলেন।

তাই আপনার অবচেতন মন প্রায়শ্চিত্ত করার দরুণ আপনার উপর চমৎকার এক প্রতিশোধ নিচ্ছে। আপনার বিভিন্ন গল্পে বিভিন্ন চরিত্রে ব্যবহার করা ভয়াবহ বীভৎসতার ঘটনাগুলোকে একত্রিত করে আপনার অবচেতন মন তৈরি করেছে অদ্ভুত এক স্বপ্ন। সেই স্বপ্নে আপনি দেখছেন আপনার গল্পে বর্ণিত বীভৎস ঘটনাগুলোর প্রায়শ্চিত্তে কাঁচের ঘরের মানুষটা, যেটা কি না আপনি নিজেই, আস্তে আস্তে নিজের শরীরকে খেয়ে ফেলছে। হয়তো নিজের পাপ ভক্ষণ করার আদিম ধারণাটি আপনার মস্তিষ্কের কোন এক জায়গায় প্রোথিত রয়ে গেছে বিধায় আপনার দুঃস্বপ্নে মানুষটা নিজের পাপসংকুল অঙ্গ ভক্ষণ করছে। অপরপক্ষের মানুষটি এবার একটু নড়েচড়ে বসে বললেন, আমি ভালো হব তো? হ্যাঁ অবশ্যই হবেন।

তবে তার জন্য সময় লাগবে। আপনার সঠিক চিকিৎসার জন্য আমি আপনাকে আমার প্রাইভেট মানসিক রোগ হাসপাতালে ভর্তি করছি। সেখানে কয়েকদিন থেকে সঠিক চিকিৎসা নিলেই আপনি ভালো হয়ে যাবেন। এবার অপরপক্ষের মানুষটি যেন একটু হতাশ হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা এই জায়গাটা কি? এই জায়গাটা? এটা তো আমার প্রাইভেট চেম্বার। আপনি কে? এটা কি ধরণের প্রশ্ন? আমি সাইকিয়াট্রিস্ট অনিক রহমান, পিএইচডি।

আমি কে? আপনি? আমার পেশেন্ট, বিখ্যাত লেখক সালেহ তিয়াস। আপনি এখানে কিভাবে আসলেন? মানে? মানে এখানে আসার আগে আপনি কোথায় ছিলেন? আমি ছিলাম...আমি ছিলাম... আপনার হাতে যে কলমটা, ওটা কার? আমার...আমার কলম। ওটা আপনার কাছে কিভাবে এল? আমি...আমার... আপনি কোথা পিএইচডি করেছেন? এডিনবরা...হ্যাঁ, এডিনবরা। এডিনবরা কোন দেশে অবস্থিত? কোন দেশে...কোন দেশে... অপরপক্ষের মোটা মানুষটি এবার অন্তর্ভেদী দৃষ্টিতে প্রথম মানুষটির দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনি কোন সাইকিয়াট্রিস্ট নন, আপনি অনিক রহমানও নন। আপনার নাম সালেহ তিয়াস।

হ্যাঁ, বিখ্যাত লেখক সালেহ তিয়াস আপনি নিজেই। হোয়াট? প্রথম মানুষটার কণ্ঠে দুর্বল বিস্ময়। আর এটা আপনার প্রাইভেট চেম্বার নয়, এটা হচ্ছে আমার প্রাইভেট হাসপাতালের কেবিন। আমি সাইকিয়াট্রিস্ট ডিগ নাট, আপনি এখানে ভর্তি আছেন প্রায় দুই মাস। এসব আপনি কি বলছেন? হ্যাঁ।

স্বপ্নটা আসলে আপনি নিজেই দেখেন। অনেকদিন আগ থেকেই দেখছেন। কিন্তু কখনই কোন সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যান নি আপনি। কারণ আপনার অবচেতন মন ভাবত যে আপনি নিজেই নিজের সমস্যার সমাধান করতে পারবেন। অর্থাৎ, আপনি নিজেই হতে পারবেন নিজের সাইকিয়াট্রিস্ট।

এই ভাবনাটাই অনেক দিন ধরে আপনার মস্তিষ্কে জমা হতে হতে শেষমেশ অনিক রহমান নামের এক দ্বিতীয় সত্ত্বার জন্ম দেয় আপনার ভিতরে। সেই অনিক রহমান অনেক বড় সাইকিয়াট্রিস্ট, যে কি না সালেহ তিয়াসের দুঃস্বপ্ন সমস্যার সমাধান করতে পারবে। আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি ছোটবেলায় অনিক রহমান নামের আপনার এক অতি কাছের বন্ধু ছিল, এক সড়ক দুর্ঘটনায় সে মারা যায়। তার জমানো কিছু টাকা আপনার কাছে ছিল, যেটা তার বাবা তার মৃত্যুর পর ফেরত নিতে চান নি, যে টাকায় প্রথম বইটা পাবলিশ করেই মূলত আপনি লেখক হিসেবে প্রথম পরিচিতি পেয়েছিলেন। আমি আপনার একটা কথাও বিশ্বাস করি না।

একটা কথাও না। তাহলে বলুন, আপনি এখানে আসার আগে কোথায় ছিলেন? আমি ছিলাম...হ্যাঁ, এই তো...কেন যে মনে করতে পারছি না... আপনার হাতের কলমটা কোথা থেকে পেয়েছেন আপনি? আমি...আমি...কোম্পানির লোক গিফট করেছে...এইতো গতকালই...ইস, কেন যে কিছু মনে পড়ছে না... আপনার গ্রামের বাড়ি কোথায়? বরিশাল...না না...মানে... শুনুন, একটা সেকেন্ড পারসোনালিটি বা দ্বিতীয় সত্ত্বা যখন তৈরি হয় তখন কিন্তু এরকম ছোটখাট ডিটেইলস নতুন করে তৈরি হয় না। সালেহ তিয়াসের গ্রামের বাড়ি কিন্তু বরিশাল। তার মানে... তার মানে আপনিই সালেহ তিয়াস। আপনি কি আমার কথা বুঝতে পারছেন? না।

ইউ লায়ার। ইউ গ্রেট লায়ার। এই বলে চিকন মানুষটা মোটা মানুষটার উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে গেল। কিন্তু চেয়ারের সাথে চেন বাঁধা থাকার জন্য সে কিছুই করতে পারল না। দরজা খুলে দুজন গার্ড হুড়মুড় করে ঢুকে তার কাঁধ চেপে ধরল।

আমি মামলা করব, আমি সাইকিয়াট্রিস্ট অনিক রহমান পিএইচডি, তোমরা আমার গায়ে হাত তুলেছ...চিৎকার করতে থাকে চিকন মানুষটা। মোটা মানুষটা, মানে সাইকিয়াট্রিস্ট ডিগ নাট হতাশ ভঙ্গিতে একটা ইঞ্জেকশন নিয়ে সালেহ তিয়াসের দিকে এগিয়ে যান। সবাই জানে এটায় সিডেটিভ ড্রাগ, শুধু তিনিই জানেন এটার মধ্যে আছে পাওয়ারফুল হ্যালুসিনোজেন। হাজার হোক, তার বউ অদ্ভুতভাবে আত্মহত্যা করার পর বউয়ের পড়ার টেবিলে সালেহ তিয়াসের একটা বই পাওয়া গিয়েছিল, যার মধ্যে মরার এই অভূতপূর্ব সিস্টেমের কথা লেখা ছিল। আসলে সে কারণেই সালেহ তিয়াসের কেসটা খবর পাবার সাথে সাথে তিনিই নিয়েছেন।

ডিগ নাট এক ইঞ্জেকশনেই সালেহ তিয়াসের ভবলীলা সাঙ্গ করে দিতে পারতেন, কিন্তু তিনি তা করেন নি, কারণ এত প্রতিভাবান একজন লেখক যে কিনা এমনিতেই প্রবল অনুতাপে ডুয়াল পারসোনালিটি সিনড্রোমে আক্রান্ত, তাকে হ্যালুসিনোজেন দেয়া হলে না জানি কি হবে সেটা নিজ চোখে দেখার লোভ তিনি সামলাতে পারেন নি। তবে যা-ই হোক, সেটা তার একটা গোপন গবেষণায় বেশ খানিকটা সাহায্য করবে, হয়তো এরই কল্যাণে একটা নোবেলও জুটে যেতে পারে তার কপালে। ডিগ নাট বেশ খানিকটা আনন্দের সাথে ইঞ্জেকশনের কনটেন্ট পুশ করলেন সালেহ তিয়াসের শরীরে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৩৪ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।