আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাইকো থ্রিলারঃ বিভ্রম

কিচ কিচ কুচ কুচ কাচ কাচ কোচ কোচ!!! বিভ্রম Chapter 1 হ্যাঁ, অবশেষে। অবশেষে আমার এতদিনের পরিশ্রমের ফল মিলেছে। অবশেষে আমি শায়লার রোগটি ধরতে পেরেছি। আমি একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। শায়লা আমার দীর্ঘদিনের পেশেন্ট।

শুধু পেশেন্ট বললে ভুল হবে, দীর্ঘদিনের একমাত্র পেশেন্ট। তাই বলে আপনারা আবার ভেবে বসবেন না যে ডাক্তার হিসেবে আমার পসার প্রচার একদমই নেই। আছে, সব আছে। মানে ছিল। একসময় আমি প্রচুর পেশেন্ট পেতাম।

থিসিসও করেছি জটিল এক বিষয়ের উপর। পি এইচ ডিটা কমপ্লিট করব করব, এমন সময় হল এক্সিডেন্টটা। আমি আর আমার গার্লফ্রেন্ড, মানে যার সাথে লিভ টুগেদার করেছি আমি গত পাঁচ মাস, বাইরের সোসাইটি যাকে আমার বউ হিসেবেই জানে, সেই মৃত্তিকা, একসাথেই বেরিয়েছিলাম লং ড্রাইভে। ডাক্তারি আর পড়াশোনা করতে গিয়ে ওকে একদমই সময় দিতে পারি না তো, মেয়েটা খালি ঘুরতে যেতে চায়, তাই সময় পেলে একটু আধটু কমপেনসেশন আর কি। অনেকক্ষণ ঘুরেছিলাম আমরা, ফিরছিলাম বাড়ির পথে, কি যেন একটা গান রেডিওতে চলছিল মনে নেই।

এমন সময় হঠাৎ চোখের সামনে আলোর একটা ফ্ল্যাশ, একটা চিৎকার, ব্যস, সব অন্ধকার। জ্ঞান ফিরে দেখি আমি হাসপাতালে, আশেপাশে কেউ নেই, আমার নাক দিয়ে ঢুকানো রাইলস টিউব, হাতে ফুটানো স্যালাইনের সুচ। একটু পরে এক নার্স এল, আমি বললাম, আমার ওয়াইফ? নার্স কোন কথা না বলে চলে গেল। একটু পড়ে ডাক্তার এল, আরে এ তো আমার ক্লাসমেট রশিদ! আমরা দীর্ঘকাল একসাথে পড়েছি, প্রাইমারি স্কুল থেকে মেডিকেল পর্যন্ত, তারপর দুজন দুটো সাবজেক্ট নিয়ে আলাদা হয়ে গেছি। সেই রশিদ আজ এখানে? আমি বললাম, “আমার বউ কই?” রশিদ বলল, “দোস্ত মাথা ঠাণ্ডা কর, তোর লাক খুব ভাল, খুব বাঁচা বেঁচেছিস তুই...” আমি বললাম, “আগে বল হারামজাদা আমার বউ কই?” রশিদ আবার বলল, “দোস্ত একটু মাথা ঠাণ্ডা কর প্লিজ...” ব্যস, সব বুঝে গেলাম আমি।

নিজের দিকে তাকালাম। মাথায় হাতে পায়ে সবজায়গায় ব্যান্ডেজ। মৃত্তিকার কি হয়েছে সহজেই অনুমেয়। কেন যেন কান্না পেল না আমার। অথচ কাঁদার কথা ছিল।

প্রবলভাবে কাঁদার কথা ছিল আমার। অধিক শক মানুষকে পাথর করে দেয় – কথাটা বোধ হয় মিথ্যে নয়। রোগী দেখা শুরু করলাম আবার। কিন্তু কিছুতেই আগের সেই মনোযোগটা ফিরিয়ে আনতে পারলাম না। রোগী বকবক করে, আমি মৃত্তিকার কথা ভাবি।

এক রোগীর কথা আরেকজনকে বলে দিই, ভুল ওষুধ লিখে দিই। এ সমস্ত কারণে অচিরেই আমার রোগী সংখ্যা কমে কমে শূন্যের কোঠায় নেমে গেল। থিসিসটাও থেমে গেল আমার। প্রফেসর বললেন এক বছরের রেস্ট নিতে। আমার খুবই মন খারাপ হল।

হাসপাতাল থেকে আমাকে ছয় মাসের লিভ উইথ পে দেয়া হল, মানে হাসপাতালে যাওয়া লাগবে না, এমনিই টাকা পাব। ঠিক তখন থেকেই আমার মনে হতে লাগল আমি তো আর আগের সেই গুরুত্বপূর্ণ আমি নই। আমি এখন গুরুত্বহীন, অপাংক্তেয়। পৃথিবীর কারো আর আমাকে দরকার নেই। হতাশার চূড়ান্ত পর্যায়ে মানুষ যা করে, আমি তাই করলাম।

ঘুমের বড়ি খেলাম বেশ কয়েকটা। ভালোই লাগল। ঘুমের বড়ি মস্তিষ্ককে এতটাই নিস্তেজ করে দেয় যে নিজের নামধামও মনে থাকে না, অতীতের দুঃখ তো দূরের কথা। এভাবেই হয়তো একদিন ঘুমের বড়ি খেয়ে এক লম্বা ঘুম দেব, আর উঠব না - এমনই এক সুখস্বপ্ন হঠাৎ করেই দেখা শুরু করলাম আমি। একদিন চেম্বারে একা একা বসে আছি, হাতে ঘুমের বড়ি।

হঠাৎ দেখি দরজার পাশে এক মেয়ে দাঁড়িয়ে। মেয়েটাকে দেখে আমি ভয়াবহভাবে চমকে উঠলাম। আরে, এ তো মৃত্তিকা! সেই গাল, সেই ঠোঁট, সেই কথা বলার ভঙ্গি। আমি দাঁড়িয়ে বললাম, “মৃত্তিকা! তুমি!” মেয়েটি ছোট একটা হাসি দিল। বলল, “জি, আমি মৃত্তিকা নই।

মৃত্তিকা আমার জমজ বোন ছিল”। আমি আবারো ভয়াবহভাবে চমকে উঠলাম। মৃত্তিকা আমাকে কখনই বলে নি তার কোন জমজ বোন ছিল। আসলে ওর আমার সাথে লিভ টুগেদার করার আগের অতীতটা সম্মন্ধে প্রায় একদমই জানতাম না আমি। ওকে আসলে একটা পতিতালয় থেকে তুলে এনে আমার রাজ্যের রাজরাণী বানিয়েছিলাম।

ওর শর্ত ছিল একটাই, ওর অতীত নিয়ে কোন প্রশ্ন করা যাবে না। যে প্রতিজ্ঞা আমি ভঙ্গ করি নি কোনদিন। এই কি তবে মৃত্তিকার অজানা অতীতের অংশ? বললাম, “কি নাম তোমার?” মেয়েটি বলল, “শায়লা”। আমি বললাম, “কেন এসেছ আমার কাছে?” শায়লা বলল, “আমি আসলে একটা সমস্যায় ভুগছি”। আমি আগ্রহী হলাম।

উৎসুক হলাম। টের পেলাম পুরনো সেই উত্তেজনা, নিজের মধ্যে এতদিন যেটা সঙ্গোপনে লুকিয়ে রেখেছিলাম। আমি ওকে বসতে বললাম। ও বসল। আমি বললাম, “বল”।

শায়লা বলল, “কয়েকদিন ধরে আমি মৃত্তিকাকে দেখতে পাচ্ছি”। “হোয়াট?” “হ্যাঁ। এই তো দুই সপ্তাহ হল”। ব্যাপারটা আমাকে আরও উৎসুক করে তুলল শায়লা সম্বন্ধে। বললাম, “কিভাবে দেখেছ? কখন দেখেছ?” শায়লা বলল, “প্রতি রাতে ঘুমানোর সময় দেখি বিছানাতে কে যেন বসে আছে।

প্রথমদিন একবারে চিনতে পারি নি, চিনতে পেরে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়েছিল”। বললাম, “ভয় পাও নি? চিৎকার দাও নি?” শায়লা বলল, “চিৎকার দেব কেন? আমার বোন আমার কাছে ফিরে এসেছে আর আমি চিৎকার দেব কেন?” আমি বললাম, “কি বলল ও তোমাকে?” শায়লা বলল, “মৃত্তিকা প্রথমে আমি কেমন আছি সেটা জিজ্ঞেস করল। বললাম, ভালো। তারপর মৃত্তিকা বলল, ওকে নাকি হত্যা করা হয়েছে”। ভয়াবহভাবে চমকে উঠলাম আমি।

কোনমতে নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, “আর কি বলেছে সে?” শায়লা মৃদু হেসে বলল, “ও বলেছে, ওকে যে হত্যা করেছে তাকে ও অনেক বিশ্বাস করত”। আমার কপালে ঘাম জমে উঠল। বুক ধড়ফড় করতে লাগল প্রচণ্ডভাবে। আমি বললাম, “আর কি বলেছে সে?” শায়লা বলল, “হত্যাকারির নামটা। সেটাও বলেছে ও।

এবং বলেছে, যতদিন পর্যন্ত না আমি ওর হত্যার প্রতিশোধ নিব, ততদিন পর্যন্ত নাকি সে এভাবে আমার কাছে আসতেই থাকবে। দেখা দিতেই থাকবে”, শেষের দিকে কেমন রহস্যময় শোনাল শায়লার গলা। প্রশ্ন করলাম, যদিও করার দরকার ছিল না, “কে তার হত্যাকারী? কি তার নাম?” শায়লা অনেকক্ষণ ধরে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। তার সাগরের চেয়ে গভীর ব্রহ্মাস্ত্রের চেয়েও লক্ষ্যভেদী দৃষ্টির সামনে আমি এতটুকু হয়ে গেলাম যেন। অবশেষে শায়লা বলল, “নামটা বলা নিষেধ”।

আমি অবাক হয়ে বললাম, “কেন?” “কারণ”, শায়লা বলল, “নামটা বললে মৃত্তিকা বলেছে সে আমায় খুন করবে”। শায়লা সেদিনের মত বিদায় নিল। ও চলে যাবার পরে ওর ব্যাপারটা নিয়ে আমি গভীরভাবে চিন্তা শুরু করলাম। কিন্তু অবাক কাণ্ড! দিনের পর দিন চিন্তা করেও ব্যাপারটার কূলকিনারা করতে পারলাম না আমি। অবশেষে, আজ, এতদিন পর, আজ আমি সফল হয়েছি।

আজই আমি শায়লাকে ওর সমস্যার সমাধান খুলে বলব। যথাসময়ে ও এল। দারুণ সেজেগুজে। আমি বারবার ওকে মৃত্তিকা বলে ভ্রম করতে লাগলাম। আমি বললাম, “আজ আর এই বদ্ধ ঘরে বসে আমরা কথা বলব না।

আজ আমরা লং ড্রাইভে বের হব। পথেই কথা হবে তোমার সমস্যাটা নিয়ে”। শায়লা মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানাল। আমি মুচকি হাসলাম। মেয়েরা মনে হয় কোন কাজ করার আগে ভবিষ্যতের চিন্তা একদমই করে না।

করলে আজ আমার সাথে শায়লা যেতে রাজি হত না। শায়লা কি জানে, আজই আমি তার সবকিছু হরণ করব? জানলে কি সে আমার সাথে যাবে? আজগুবি চিন্তা বাদ দিয়ে লং ড্রাইভে বেরুলাম কালো সেডানটা নিয়ে। নম্বর প্লেটটা কায়দা করে ঢেকে দিলাম যেন কাছ থেকেও পড়া না যায়। অনেক অনেক দূরে একটা জনমানবহীন নির্জন ইটভাটায় থামলাম আমরা। গাড়ি থেকে নামলাম আমি।

আমার দেখাদেখি নেমে এল শায়লাও। আমি বললাম, “দেখ শায়লা, তোমার যা হচ্ছে সেটা হচ্ছে হ্যালুসিনেশন। সোজা বাংলায় বিভ্রম। হ্যালুসিনেশনের পেশেন্টরা কি সমস্যা নিয়ে আসে জানো? তারা যা নেই তা-ই দেখে, যা নেই তা-ই শোনে। ধর তুমি আর এক হ্যালুসিনেশনের পেশেন্ট একটা ঘরে বসে আছো, ঘরে আর কেউ নেই।

তুমি আর কাউকে দেখতে পাচ্ছো না, কিন্তু পেশেন্ট হয়তো দেখবে তার পাশের চেয়ারে তার বাবা বসে আছে। হয়তো সে তার বাবার কথা নিজের কানে শুনবে। হয়তো সে তার বাবার স্পর্শ স্পষ্ট অনুভব করবে। ব্যাপারটা এরকম। অস্তিত্বহীন কিছু জিনিস দেখা বা অস্তিত্বহীন কথা শোনার আরেক নাম হ্যালুসিনেশন।

ধর তোমার অতীতে মেজর কোন ট্রমা আছে। সেই ট্রমা তুমি কিছুতেই ভুলতে পারো না। যেমন ধর তোমার শৈশবে তোমার পরিচিত কেউ তোমাকে পাশবিকভাবে রেপ করেছিল। বা ধর তোমার বাবা মাকে তোমার চোখের সামনেই কেউ খুন করেছিল। সেই ট্রমাকে ভোলানোর জন্য তোমার ব্রেইন তোমার সঙ্গী হিসেবে একটা কাল্পনিক ক্যারেক্টার তৈরি করে ফেলবে।

এমন একটা ক্যারেক্টার যে কি না তোমাকে সবসময় নানা কাজে ডিরেকশন দেবে, এমন কিছু তোমায় করতে দেবে না যাতে তোমার কখনও ঐ ট্রমার ঘটনা মনে পড়ে যায়। শুধু তুমিই তাকে দেখবে, আর কেউ তাকে দেখবে না। সারা পৃথিবীর আর কাউকে তুমি বিশ্বাস করাতে পারবে না সে আছে, কিন্তু সে আছে। সে আছে শুধু তোমার হৃদয়ে, তোমার মস্তিষ্কে। হ্যালুসিনেশনের কি চমৎকার রূপ! তোমার ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে, তোমার বোনের মৃত্যুতে তুমি ভীষণভাবে শকড।

এতই শকড যে তোমার ব্রেইন এই মৃত্যু স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নিতে পারে নি। তাই সে তোমার মধ্যে এমন একটা বিশ্বাস তৈরি করেছে যে তাকে কেউ খুন করেছে। সেই বিশ্বাসটা পাকাপোক্ত করার জন্য তুমি নিজে নিজে তোমার বোনের একটা প্রতিকৃতি কল্পনা করে নিয়েছ। সেই প্রতিকৃতি প্রতিদিন এসে তোমাকে তার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে বলে। তার মানে প্রতিশোধ নেবার সুপ্ত ইচ্ছা তোমার মধ্যে আগে থেকেই ছিল, সেটাই প্রবল থেকে প্রবলতর হয়ে একটু অন্যভাবে সাইন সিম্পটম পেশ করেছে, আর কিছু না।

তোমার বোনের কোন অস্তিত্ব নেই, ইটস অল অ্যাবাউট ইউ অ্যান্ড ইওর হ্যালুসিনেটিং মাইন্ড। স্যাটিসফাইড নাউ?” শায়লা আমার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে। তারপর মুখ ঢেকে বলে ওঠে, “তাহলে সব মিথ্যা? আমার বোনটা যে আমার কাছে আসে, কথা বলে, আমায় স্পর্শ পর্যন্ত করে – সব মিথ্যা? সব আমার মস্তিষ্কের কল্পনা?” আমরা ইটভাটার একদম কাছে দাঁড়িয়ে আছি। একটু আগে নিভিয়ে দেয়া গনগনে আগুনের উত্তাপ আমাদের স্পর্শ করছে প্রবলভাবে। জ্যাকেটের পকেট থেকে রিভলভারটা বের করলাম আমি।

বললাম, “হ্যাঁ। শুধু একটা জিনিস কল্পনা নয়। তোমার বোনকে কেউ হত্যা করে নি ঠিকই, তবে হত্যা করতে চেয়েছিল। তুমি তো জানোই সেটা কে”। শায়লা চোখ তুলে তাকায়।

তার টলটলে চোখের অবাক বিস্ময় আমাকে এতটুকু বিস্মিত করে না। ক্রূর হাসি হেসে আমি বলে উঠি, “হ্যাঁ, তুমি ঠিকই জানো। আর সেজন্যেই তুমি আমার কাছে এসেছ। প্রতিশোধ তুমি নিতে এসেছ আমার উপর। তোমার ব্রেইন তোমার সাথে বিট্রে করে নি।

তোমার বোনকে যে হত্যা করতে চেয়েছিল, সে আমিই। আমিই, প্রখ্যাত মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ সালেহ। হা হা হা হা”। শায়লা আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। তার চোখে ঝরে পড়ে অসীম ঘৃণা।

আমি রিভলভারটা শায়লার ধবধবে ফর্সা কপালের দিকে তাক করি। “কিন্তু লাভ হল না। তোমার প্রতিশোধ নেবার আগেই আমি তোমার ট্রিকটা ধরে ফেললাম। সো আই উইন। ইউ লুজ।

” শায়লার চোখ থেকে আগুন ঠিকরে পড়ে যেন। “আমার ইচ্ছাটা আজ পূর্ণ হোক”, ফিসফিসিয়ে বলি আমি। রিভলভারের সেফটি ক্যাচ ওপেন করার একটা খট্ শব্দ হয়। শায়লার অবাক চোখ আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। তার অশ্রুসজল চোখে ধীরে ধীরে জমা হয় জীবনের আকুতি।

বাঁচার আকুতি। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ট্রিগার টিপে দিই আমি। Chapter 2 আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এককালের প্রখ্যাত মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ সালেহকে। এদিকে পুলিশ ইনভেস্টিগেশনে বেরিয়ে এসেছে তার জীবনের চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য। পুলিশ কমিশনার কামরুল হাসান বলেছেন, ডাঃ সালেহ প্রকৃতপক্ষে একজন কোল্ড ব্লাডেড ক্রিমিনাল ছিলেন।

তিনি বিভিন্ন পতিতালয় থেকে বেশ্যা ধরে এনে তার বাড়িতে রাখতেন এবং কয়েক মাস ভোগ করে মেয়েটাকে খুন করে ইটভাটায় ফেলে দিয়ে আসতেন, অথবা জ্যান্ত অবস্থায়ই জ্বলন্ত ইটভাটার মধ্যে ফেলে দিয়ে আসতেন। ক’মাস আগে তার যে এক্সিডেন্ট হয় তাতে তার সহযাত্রী মৃত্তিকা মারা পড়ে, যে কিনা ছিল পতিতাপল্লীর একজন বেশ্যা। পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে আসে যে ঐ এক্সিডেন্টের আগেই মৃত্তিকাকে প্রচুর পরিমাণে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়েছিল। সম্ভবত সে আগে থেকেই বুঝে গিয়েছিল তার ভাগ্যে এরকম কিছু ঘটতে যাচ্ছে, তাই হয়তো সে ডাঃ সালেহর সাথে লং ড্রাইভে বেরুতে সম্মত হয় নি। আর এজন্যেই হয়তো ডাঃ সালেহ তাকে তাকে প্রচুর পরিমাণ ঘুমের ওষুধ পুশ করে নিস্তেজ করে ফেলেন।

ঐ অবস্থায় মৃত্তিকাকে ইটভাটায় এনে ফেলে দেয়াই হয়তো তার প্ল্যান ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে রাস্তায় থাকতেই একটা ট্রাকের সাথে ধাক্কা লাগে ডাঃ সালেহর কালো সেডানের। সাথে সাথে জ্ঞান হারান ডাঃ সালেহ, আর মারা যায় আগে থেকেই অর্ধমৃত মৃত্তিকা। ডাঃ সালেহর বাসায় কাজ করা ছুটা বুয়া নিশুতি বেগম বলেছে, “অ্যাকচিডেন্টের পর স্যার মাঝে মাঝেই রুমের মইধ্যে কার লগে জানি কথা কইত। অথচ উঁকি মাইরা দেখি কেউ নাই।

স্যার সামনে তাকায়া এমুনভাবে কতা কইতাছে যেন আরেকজন উনার সামনে বইয়া আছে”। ডাঃ সালেহকে গতকাল রাতে আলমপুর ইটভাটার পাশ থেকে অর্ধচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকারী শ্রমিক মফিজ মিয়া আমাদের জানান, তাকে নাকি সামনে তাকিয়ে অদৃশ্য কারো সাথে কথা বলতে দেখা গেছে, রিভলভার বের করে অদৃশ্য কিছুর দিকে তাক করতে দেখা গেছে। বাতাসে গুলি ছুঁড়তে দেখা গেছে। সমকাল ডেস্ক।

Chapter 3 হাসপাতালের সাদা ধবধবে বিছানায় শুয়ে আছি আমি। আমার পাশে বসে আছে শায়লা, না না, মৃত্তিকা। শায়লা আমার কানে ফিস ফিস করে বলল, কেমন আছো? আমি বললাম, আমি জানি তুমি কে। শায়লা বলল, কে আমি? আমি বললাম, তুমি হচ্ছে আমার হ্যালুসিনেশন। তোমার কোন অস্তিত্ব নেই।

শায়লা হাসল। আরে! ওর হাসি এত মোহনীয় এটা তো আগে টের পাই নি! শায়লা এগিয়ে এসে আমার হাত তুলে ধরল। ওর কোমল পেলব হাত আমার শরীরে অদ্ভুত এক রিনরিনে অনুভূতি সৃষ্টি করল। আমি কেঁপে উঠলাম। শায়লা আদুরে ভঙ্গিতে বলল, এরপরেও বলবে আমি তোমার হ্যালুসিনেশন? আমার সত্যিই কোন অস্তিত্ব নেই? হ্যাঁ।

তুমি সত্যিই আমার হ্যালুসিনেশন। তোমার অস্তিত্ব শুধু আমার মস্তিষ্কে। আমার অভিশপ্ত মস্তিষ্কই শুধু তোমার বাসস্থান। শায়লা আমার হাতটা নিয়ে খেলা করতে লাগল। আমার মনে পড়ে গেল রিনা, টিনা, লিমা, কাকলি, মৃত্তিকা – সবার কথা।

শেষ কবে কে আমার হাত নিয়ে এভাবে খেলা করেছে? রিনা? টিনা? ওহ গড, আমার মনে পড়ছে না কেন? শায়লা হঠাৎ আমার হাতটা নিয়ে তার পাখির পালকের মত নরম বুকে চেপে ধরল। আমি শিহরিত হলাম। আমার সারা শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেল। শায়লা দুষ্টুমি ভরা চোখে আমার দিকে গাঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, এর পরেও বলবে আমি তোমার হ্যালুসিনেশন? আমার দুর্বল কণ্ঠে ঝরে পড়ল আকুতি, প্লিজ শায়লা, প্লিজ লিভ মি। প্লিজ।

প্লিজ গো। শায়লা হাসল। বলল, Prove it. Prove that I am not real. Prove that I am your hallucination. আমি হঠাৎ আমার অতি প্রিয় একটা গান গেয়ে উঠলাম, It’s my life, It’s now or never… শায়লা সুর মেলাল, I ain’t gonna live forever, I… তারপর সে কি বলল ঠিক বোঝা গেল না। আমি হাসলাম। শায়লার বুক থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে বললাম, দেখেছ? গানের শেষ লাইনের ঠিক ঐ অংশটুকু আমি কখনই বুঝতে পারি নি।

আজীবন সুরের সাথে গলা মিলিয়ে গিয়েছি। কখনও নেটে সার্চ দিয়েও দেখি নি। আমার ব্রেইন জানে না ঐখানে কি হবে। আর তুমিও ঠিক ঐ অংশটুকুই জানো না। এর মানেই হচ্ছে তুমি আমার ব্রেইনের সৃষ্টি।

তুমি আমার হ্যালুসিনেশন। শায়লা, না না, মৃত্তিকা, আবার হাসল। তারপর হঠাৎ, হঠাৎ সে ঝুঁকে এসে আমার তপ্ত ঠোঁট স্পর্শ করল তার লাল টুকটুকে ঠোঁট দিয়ে। আমি কেঁপে কেঁপে উঠলাম। নিতান্ত অসহায়ের মত তার চুমু শতগুণে ফিরিয়ে দিতে সচেষ্ট হলাম আমি।

শায়লার মুখ থেকে নিঃসৃত হতে লাগল লালা। কামুক শায়লার লালায় ভিজে গেল, ভরে গেল আমার নাক মুখ। শায়লা মুহূর্তেই সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে আমার উপর চড়ে বসল। আমার সম্পূর্ণ দেহ যেন মুহূর্তেই তার কাছে আত্মসমর্পণ করল। ডাইনির মত হেসে সে বলল, এর পরেও বলবে আমি তোমার হ্যালুসিনেশন, ডাঃ সালেহ? আর ঠিক সেই মুহূর্তে আমি একটা ভয়াবহ তথ্য আবিষ্কার করলাম।

শায়লার তপ্ত, ঝাঁঝালো লালায় আমার এয়ারওয়ে আটকে গেছে। আমি শ্বাস নিতে পারছি না। শায়লা পশুর মত আমায় ভোগ করছে। আমি চিৎকার করার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমার চিৎকার আমার নিজের কান পর্যন্তও পৌঁছাচ্ছে না।

Chapter 4 ডাঃ হায়দার খুব অবাক হয়ে কেবিন নং ২১২ এর পেশেন্টের দিকে চেয়ে আছেন। এই পেশেন্ট তিনদিন আগে গভীর রাতে তার হাসপাতালে Unknown Head trauma নিয়ে ভর্তি হয়েছিল। পেশেন্ট একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটিয়েছে। অজ্ঞান অবস্থাতেই পেশেন্ট বমি করেছে, এবং সেই বমি পেশেন্টের নাক মুখে জমা হয়ে এয়ারওয়ে ব্লক করে তার শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ করে দিয়েছে। এবং, যার ফলে, পেশেন্ট এখন মৃত।

ডাঃ হায়দার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে বলা হয়েছিল ২৪ ঘণ্টা কোন না কোন নার্স পেশেন্টের পাশে মজুদ থাকবে, কিন্তু গতকাল হঠাৎ ডাক্তারদের সাথে ঝামেলার প্রেক্ষিতে তিনজন নার্স চাকরি ছেড়ে চলে গিয়েছে। এইজন্যে মরার সময় পেশেন্টের পাশে কেউ ছিল না। ডাঃ হায়দার দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিপোর্টে লিখলেন, “Mister Saleh, a psychiatrist, has been admitted in Omuk hospital in cabin 212 for 3 days and suddenly died of asphyxia due to blocking of airways by his own vomit last night on 22/05/11, around 3 am” ডাঃ হায়দার রিপোর্টটা লিখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। এই নিয়ে সাতানব্বই বারের মত কোন রোগী তার আন্ডারে মৃত্যুবরণ করল।

কিন্তু, এভাবে এ-ই প্রথম। নাহ, বহু পুলিশি ঝামেলা পোহাতে হবে, বিরক্ত মনে ভাবলেন ডাঃ হায়দার। তারপর কেবিন ছেড়ে হেঁটে গেলেন নিজের অফিসের দিকে। আর ঠিক এর সাথেই, আমাদের আজকের গল্প শেষ হয়ে গেল, প্রিয় পাঠক। ধন্যবাদ।

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, এতক্ষণ আমার সাথে এই অধম ঠুনকো লেখকের কল্পনার রাজ্যে ভ্রমণ করার জন্য। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৫ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।